সংস্কারে
সংস্কারের নামে কলা দেখাচ্ছে সরকার: সালাহউদ্দিন আহমেদ
অন্তর্বর্তী সরকার ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ না নিয়ে ‘সংস্কারের’ নামে কেবল ‘কলা দেখাচ্ছে’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।
শনিবার (৩১ মে) রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে কৃষক দল।
সালাহউদ্দিন বলেন, ‘‘সংস্কারের এই নাটক কতবার উদ্বোধন করবেন? প্রথম দফায় উদ্বোধন, তারপর দ্বিতীয় দফায় আবার। এখন তৃতীয় দফায় আরেকটা উদ্বোধন! এটি আসলে সংস্কারের নামে ‘কলা দেখানো’ ছাড়া কিছু নয়।’’
তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ২ জুন আরেক দফা সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন। ‘আমরা আগেই বলেছি—যা আলোচনা হয়েছে, সব একত্র করে জাতির সামনে উপস্থাপন করুন। কিন্তু আপনারা শুধু আনুষ্ঠানিকতা করছেন, কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। ২ জুন আবার নতুন করে আলোচনার কী প্রয়োজন?’
তিনি আরও বলেন, ‘সংস্কারের চেয়েও বড় অগ্রাধিকার হওয়া উচিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিশ্চিত করা—ফ্যাসিস্টদের বিচারের দাবিই এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।’
আরও পড়ুন: দেশে পদে পদে গণতন্ত্র বাধাগ্রস্ত হচ্ছে: খালেদা জিয়া
সালাহউদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে সরকারের আগের প্রতিশ্রুতি থেকে তারা সরে এসেছে। ‘আপনারা বলেছিলেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হবে। এখন আবার পিছু হটলেন—এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।’
২০১৫ সালের ১০ মার্চ উত্তরার বাসা থেকে গোয়েন্দা পরিচয়ে অপহরণের শিকার হওয়া সালাহউদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, ‘বিএনপির নেতাকর্মীরা রক্ত দিয়েছে, নির্যাতনের শিকার হয়েছে, কারাবরণ করেছে, ‘আয়নাঘরে’ বন্দী হয়েছে। এসব কিছু কি শুধু গল্প? আমরা এসব ভোগ করেছি এমনি এমনি।’
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনা এবং বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার লক্ষ্যেই বিএনপি আন্দোলন করছে বলে মন্তব্য করেন দলটির এই নেতা।
প্রধান উপদেষ্টার প্রতি ইঙ্গিত করে সালাহউদ্দিন আরও বলেন, ‘আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকারের কথা বললেই যদি আপনি অস্বস্তি বোধ করেন, তবে সেটা অত্যন্ত হতাশাজনক। সংস্কারের নামে কতদিন আর নির্বাচন বিলম্ব করবেন?’
নির্বাচন পেছানোর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন বিলম্ব করার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। আপনার (ড. ইউনূস) কোনো যুক্তি নেই। ডিসেম্বরে নির্বাচন আয়োজন না করার একটি কারণও যদি থাকে—তা জাতির সামনে তুলে ধরুন।’
সংস্কারকে একটি চলমান প্রক্রিয়া বলে উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, সংস্কারকে অজুহাত বানিয়ে নির্বাচন পেছানো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ‘সংস্কার কখনও সম্পন্ন করার মতো কাজ নয়, সময় ও দেশের প্রয়োজন অনুযায়ী তা বিকশিত হয়। কিন্তু তাই বলে এর অর্থ এই নয় যে, আপনি এটিকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে দিতে পারেন।’
আরও পড়ুন: নির্বাচনের সঙ্গে সংস্কার ও আ.লীগের বিচার মেলানোর সুযোগ নেই: বিএনপি
কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদি আমিন, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়ালসহ কৃষক দলের নেতারা।
১৮৭ দিন আগে
শ্রম-মানবাধিকার খাতে প্রয়োজনীয় সংস্কারে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান ইইউ প্রতিনিধি দলের
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নীতি ও চর্চা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে জোরদার করার সুপারিশ করেছে সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধি দল।
শ্রম খাতের উপর জাতীয় কর্মপরিকল্পনা সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছে পর্যবেক্ষক মিশন। বিশেষ করে সমিতির স্বাধীনতা, সম্মিলিত দরকষাকষি এবং ত্রিপক্ষীয় পরামর্শের মাধ্যমে শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং প্রতিনিধিত্বমূলক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ওপর জোর দেয় মিশনটি।
ইইউ কর্মকর্তারা পোশাক খাতে নিরাপত্তার মানোন্নয়নের অগ্রগতিকে স্বাগত জানান এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার উন্নয়নে কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন।
আরও পড়ুন: শ্রম পরিস্থিতি মূল্যায়নে ইইউ প্রতিনিধি দল ঢাকায়
এক বিবৃতিতে ইইউ বলেছে, 'শ্রম ও মানবাধিকার উভয় ক্ষেত্রেই চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।’
এতে বলা হয়, মানবাধিকারের ক্ষেত্রে, নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক চুক্তি (আইসিসিপিআর), মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সংগঠনের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার এবং সুশীল সমাজের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করার মতো মূল ইবিএ কনভেনশনগুলো মেনে চলার জন্য আরও প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের ২০২৩ সালের ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউয়ের (ইউপিআর) সুপারিশ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে উৎসাহিত করেছে ইইউ।
'এভরিথিং বাট আর্মস' (ইবিএ) বাণিজ্য ব্যবস্থার আওতায় বাংলাদেশের অঙ্গীকার পূরণের বিষয়টি মূল্যায়ন করতে ঢাকায় অবস্থান করছে ইইউ পর্যবেক্ষক মিশন।
ইবিএ ব্যবস্থা স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার দেয়, যা ইউরোপীয় বাজারে মানবাধিকার ও শ্রম অধিকার সম্পর্কিত মূল কনভেনশনগুলোকে সম্মান করে।
বাংলাদেশ ইবিএর সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী। ২০২২ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে দেশটির রপ্তানি ২৪ বিলিয়ন ইউরোতে পৌঁছেছে।
ইইউ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইউরোপিয়ান এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর পাওলা পাম্পালোনি এবং এতে কর্মসংস্থান ও বাণিজ্যবিষয়ক ইউরোপীয় কমিশনের প্রতিনিধিরা রয়েছেন।
পর্যবেক্ষক মিশন বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, ট্রেড ইউনিয়ন, তৈরি পোশাক ব্র্যান্ড ও বিজিএমইএ'র সঙ্গে বৈঠক করে।
মিশন দুঃখ প্রকাশ করে বলেছে, বাংলাদেশ শ্রম আইনের সাম্প্রতিক সংশোধনীগুলো ইইউ ও আইএলও'র উদ্বেগের আংশিক সমাধান করেছে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা সংকটে ‘নিজেদের সমর্থন অব্যাহত রাখছে’ ইইউ: রাষ্ট্রদূত হোয়াইটলি
এসব লক্ষ্যে বাংলাদেশ শ্রম আইনের আরও সংশোধনী দ্রুত প্রবর্তনের জন্য সরকারের অঙ্গীকারকে স্বাগত জানায় মিশন।
ন্যাশনাল অ্যাকশন প্লানের (ন্যাপ) অধীনে সম্মত সময়সূচিতে বিলম্বের কথা উল্লেখ করে ইইউ দলটি প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো ত্বরান্বিত করার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
পাওলা পাম্পালোনি বলেন, বাংলাদেশ সফর ইবিএ ব্যবস্থার অন্তর্নিহিত অংশ মানবাধিকার ও শ্রম অধিকার পূরণের গুরুত্ব সম্পর্কে মূল অংশীজনদের সঙ্গে জড়িত হওয়ার একটি মূল্যবান সুযোগ দিয়েছে।
তিনি বলেন, 'প্রয়োজনীয় সংস্কার ত্বরান্বিত করতে আমরা বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ, ব্যবসায়ী, সুশীল সমাজ ও ট্রেড ইউনিয়নগুলোর সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাব।’
ইইউ বাংলাদেশ সরকার এবং সকল অংশীজনদের সঙ্গে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সংলাপের মাধ্যমে ইবিএ কমপ্লায়েন্সের বর্ধিত মনিটরিং প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখবে।
ইবিএ শর্তাবলী মেনে চলার বিস্তারিত মূল্যায়ন অন্তর্ভুক্ত ইইউ'র পরবর্তী জিএসপি প্রতিবেদনটি নভেম্বরের শেষে প্রকাশিত হবে।
২০২৪ সালের বসন্তে অনুষ্ঠেয় পরবর্তী ইইউ-বাংলাদেশ যৌথ কমিশনে সংস্কারের অগ্রগতি পর্যালোচনা করবে ইইউ।
আরও পড়ুন: মজুরি নয়, অধিকারের বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে সফররত ইইউ প্রতিনিধি দল: পররাষ্ট্র সচিব
৭৫০ দিন আগে