নৃশংসতা
হাসিনার নৃশংসতার দলিল সংরক্ষণ করা দরকার: প্রধান উপদেষ্টা
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে করা নৃশংসতার দলিল সংরক্ষণ করা জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রবিবার (২ মার্চ) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লুইস ও জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ের অফিসের সিনিয়র মানবাধিকার উপদেষ্টা হুমা খানের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
মাওলানা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর বিরুদ্ধে রায়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভে পুলিশি নৃশংসতা, মতিঝিলের শাপলা চত্বরে বিক্ষোভকারীদের ওপর ধরপাকড় ও বিভিন্ন সময়ে বিচারবহির্ভূত হত্যার মতো নৃশংস ঘটনাবলীর দলিল সংরক্ষণে জোর দেন প্রধান উপদেষ্টা।
‘দেশের নাগরিকদের ওপর যেসব নৃশংসতা চালানো হয়েছে, তার প্রমাণ রাখা জরুরি। যদি এটা করা না হয়, তাহলে সত্য জানা যেমন কঠিন হয়ে যাবে, তেমন ন্যায়বিচারও নিশ্চিত করা যাবে না,’ বলেন ড. ইউনূস।
গোয়েন লুইস বলেন, জাতিসংঘ এই বিষয়ে কারিগরি সহায়তা দিতে ও বাংলাদেশের জনগণের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। এটি হলো সুস্থতা ও সত্য প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া।
আরও পড়ুন: রমজান উপলক্ষে জীবনের সর্বস্তরে সংযমের বার্তা প্রধান উপদেষ্টার
আগামী ১৩ থেকে ১৬ মার্চ জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস বাংলাদেশ সফরে আসবেন বলে প্রধান উপদেষ্টার গণমাধ্যম শাখার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
জুলাই অভ্যুত্থানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্য সংস্থাটিকে ধন্যবাদ জানান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, আমরা খুবই আনন্দিত যে জাতিসংঘ এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে; এটি যথাসময়ে এসেছে। এটি সহজ কাজ ছিল না।
প্রধান উপদেষ্টাকে লুইস বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার টার্ক ৫ মার্চ জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের অধিবেশনে এই প্রতিবেদন তুলে ধরবেন।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিবের আসন্ন বাংলাদেশ সফর রোহিঙ্গা সংকটকে আবারও বিশ্ব-দরবারে তুলে ধরবে, যখন ত্রাণ সহায়তা ক্রমাগত কমছে। আমরা অর্থায়ন পরিস্থিতি নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। প্রতি মাসে শুধু খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতেই দেড় কোটি ডলার প্রয়োজন। সঙ্গে যোগ হয় অন্যান্য মৌলিক চাহিদা ব্যয়।
২৭৮ দিন আগে
রোহিঙ্গাদের ওপর ২০১৭ সালের নৃশংসতার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধানের
মিয়ানমার পরিস্থিতির তীব্র অবনতি এবং রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘাতের মধ্যে পালানোর সময় কয়েকশ’ বেসামরিক লোক নিহত হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান ভলকার তুর্ক।
শুক্রবার (২৩ আগস্ট) মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন তুর্ক।
তিনি বলেন, ‘এই নৃশংসতা একটি দ্ব্যর্থহীন প্রতিক্রিয়া দাবি করে- দায়ীদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে এবং ন্যায়বিচার অবশ্যই নিরলসভাবে নিশ্চিত করতে হবে।’
জেনেভা থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, নৈতিক দায়িত্ব এবং আইনগত বাধ্যবাধকতা হিসেবে অতীতের অপরাধ ও ভয়াবহতার পুনরাবৃত্তিকে অবশ্যই প্রতিরোধ করতে হবে।
তিনি উল্লেখ করেন, 'রোহিঙ্গা ও এই নিষ্ঠুর সংঘাতের শিকার অন্যান্য বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষায় এগিয়ে এসে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা আসিয়ান ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব।’
গত চার মাসে বুথিডং ও মংডু শহর সেনাবাহিনীর কাছ থেকে দখল নিতে আরাকান আর্মির বড় ধরনের অভিযানে হাজার হাজার মানুষ পালিয়ে গেছে, যাদের বেশিরভাগই রোহিঙ্গা।
গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী নাফ নদীতে সবচেয়ে মারাত্মক সশস্ত্র ড্রোন হামলায় অনেক লোক নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে কারা এই হামলার জন্য দায়ী তা এখনও স্পষ্ট নয়।
তুর্ক বলেন, ‘হাজার হাজার রোহিঙ্গা পায়ে হেঁটে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। আরাকান আর্মি তাদের বারবার এমন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে, যেখানে তাদের আশ্রয় গ্রহণ খুবই কম নিরাপদ।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে সীমান্ত পারাপার বন্ধ থাকায় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের সদস্যরা সামরিক বাহিনী ও তাদের মিত্র এবং আরাকান আর্মির মাঝে আটকা পড়ছে, তাদের নিরাপদ কোনো পথ নেই।’
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান বলেন, বারবার সতর্ক করা এবং ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান সত্ত্বেও চলমান সহিংসতা বিদ্যমান দায়মুক্তির বোধ এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অব্যাহত চ্যালেঞ্জকে তুলে ধরে।
তুর্ক বলেন, 'চলতি মাসে মিয়ানমারে সামরিক অভিযানের সাত বছর পূর্ণ হলো। ওই অভিযানে সীমান্ত পেরিয়ে ৭ লাখ মানুষ বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। বিশ্ব বলছে 'আর পুনরাবৃত্তি নয়' বলা সত্ত্বেও আমরা আবারও রাখাইনে হত্যা, ধ্বংসযজ্ঞ ও বাস্তুচ্যুতি প্রত্যক্ষ করছি। সশস্ত্র সংঘাতের পক্ষগুলো রোহিঙ্গা ও অন্যদের বিরুদ্ধে হামলার দায় অস্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে। তারা এমন আচরণ করছে যেন তাদের রক্ষা করার ক্ষমতা নেই। এটি বিশ্বাসযোগ্যতার সীমা ছাড়িয়েছে।’
জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের নথিভুক্ত তথ্য অনুসারে, সেনাবাহিনী এবং আরাকান আর্মি এখন রাখাইনের বেশিরভাগ জনপদ নিয়ন্ত্রণ করে। উভয়ই রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড- কিছু শিরশ্ছেদ, অপহরণ, জোরপূর্বক নিয়োগ, ড্রোন এবং আর্টিলারি ব্যবহার করে শহর ও গ্রামে নির্বিচারে বোমা হামলা এবং অগ্নিসংযোগসহ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতন করছে।
এ ধরনের হামলা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের আলোকে সব পক্ষের বাধ্যবাধকতা এবং রোহিঙ্গাদের আরও ক্ষতির ঝুঁকি থেকে রক্ষায় আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের আদেশের অস্থায়ী ব্যবস্থার সম্পূর্ণ বিপরীত।
বিশ্বাসযোগ্য সূত্রগুলোর মতে, সংঘাত-সম্পর্কিত আঘাতের জন্য সহায়তা চাওয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বাড়ছে- যাদের প্রায় অর্ধেকই শিশু।
এছাড়া ডায়রিয়ায়, বিশুদ্ধ পানির অভাব এবং জীবনযাত্রার অপ্রতুলতার কারণেও মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বেসামরিক নাগরিকদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় রসদ রাখা খাদ্যগুদামগুলোতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
সহিংসতার কারণে বুথিডং এবং মংডু হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ব্যাপক টেলিযোগাযোগ বন্ধের কারণে ইতোমধ্যে বিপর্যয়কর মানবিক সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
তুর্ক বলেন, ‘রাখাইনে যে মানবিক বিপর্যয় ঘটছে তার জন্য সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মি উভয়ই সরাসরি দায়ী।’
তিনি বলেন, 'উভয় পক্ষকে অবিলম্বে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা বন্ধ করতে হবে। সংঘাত থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের রক্ষা করতে হবে। তাদের জীবন রক্ষাকারী মানবিক সহায়তা পাওয়ার অবাধ সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।’
৪৬৯ দিন আগে