বাকৃবি প্রশাসন
‘কম্বাইন্ড ডিগ্রি’ প্রসঙ্গে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করল বাকৃবি প্রশাসন
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ভেটেরিনারি ও পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীদের ‘কম্বাইন্ড’ বা সম্মিলিত ডিগ্রির বিষয়টির সমাধানে একাডেমিক কাউন্সিল-পরবর্তী সকল ঘটনায় নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) বাকৃবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. মো. হেলাল উদ্দীনের সই করা এক বিবৃতিতে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভাষ্য জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ৩১ আগস্ট অনুষ্ঠিত একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় কম্বাইন্ড ডিগ্রির বিষয়টি সমাধানের জন্য গঠিত কমিটির ছয় দফা সুপারিশ সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়। সভা শেষে শিক্ষার্থীরা কর্তৃপক্ষকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানাতে প্রস্তুত থাকলেও পরবর্তীতে স্বার্থান্বেষী মহলের প্ররোচনায় তারা প্রায় ৩০০ শিক্ষক-কর্মকর্তাকে মিলনায়তনে আটকে রাখে। তাদের মধ্যে বৃদ্ধ, হৃদরোগী, ডায়াবেটিস রোগী ও গর্ভবতী শিক্ষিকাও ছিলেন। তীব্র গরমে ও অভুক্ত অবস্থায়ও শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ আলোচনার চেষ্টা চালান এবং তাদের প্রতিনিধিদের বসতে বারবার অনুরোধ করেন, কিন্তু শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করে, এমনকি নারী শিক্ষকদের ভোগান্তির কথাও তারা উপেক্ষা করে। আট ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পরও শিক্ষকরা ধৈর্য ধরে বলপ্রয়োগ না করে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা চালান। তবে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপও ব্যর্থ হয়।
আরও পড়ুন: বাকৃবি প্রশাসনকে এবার ৬ দফা দাবি বাস্তবায়নের আল্টিমেটাম শিক্ষার্থীদের
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, এ নিয়ে উত্তেজনা বাড়লে অডিটরিয়ামের দক্ষিণ ও মুক্তমঞ্চ দিকের গেটের তালা কে বা কারা ভেঙে দেয়। ফলে দীর্ঘ সময় আটকে থাকা শিক্ষকরা বাইরে আসার সুযোগ পান। এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বাধা দিলে ধাক্কাধাক্কির ঘটনায় কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী আহত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এতে মর্মাহত হয়ে আহতদের প্রতি দুঃখ প্রকাশ করেছে।
শিক্ষকদের স্বজন, কর্মচারী ও শুভানুধ্যায়ীদের ‘বহিরাগত’ আখ্যা দিয়ে শিক্ষার্থীদের উত্তেজিত করা হয়েছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। গেটের তালা ভাঙার ঘটনাটি কারা করেছে তা নিশ্চিত নয়। এটি শিক্ষকদের স্বজন, এলাকাবাসী বা কর্মচারীরা করেছেন কিনা, তা তদন্তে বের হবে। যদি বহিরাগত কেউ জড়িত থাকে তবে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় তাকে আইনের আওতায় আনা হবে বলেও জানানো হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার পরও স্বার্থান্বেষী মহলের প্ররোচনায় ক্যাম্পাসে ভাঙচুর চালানো হয়, যা ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় ৩১ আগস্ট রাত সাড়ে ৯টায় অনলাইনে সিন্ডিকেটের জরুরি সভা আহ্বান করা হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয়— বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনশৃঙ্খলা জেলা প্রশাসনের হাতে ন্যস্ত থাকবে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সব ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ থাকবে।
রেজিস্ট্রারের সেই করা বিবৃতিতে আরও বলা হয়, শিক্ষার্থীদের স্বার্থ ক্ষুণ্নকারী বা হামলাকারী যেই হোক, তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে এবং তদন্ত শেষে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।
৯৪ দিন আগে
বিগত ১৫ বছরের অপরাধের বিচার কার্যক্রম শুরু করেছে বাকৃবি প্রশাসন
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) গত সাড়ে ১৫ বছরে ঘটে যাওয়া নির্যাতন, যৌন হয়রানি, র্যাগিং, ইভটিজিং, গেস্ট রুমে নির্যাতন, সিট বাণিজ্য এবং চাঁদাবাজির বিচার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিচার কার্যক্রমের শুরুতেই অনলাইন ও অফলাইন পদ্ধতিতে নির্ধারিত ফরম পূরণের মাধ্যমে অভিযোগ দায়ের করার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে।
বুধবার (৯ অক্টোবর) অফলাইনে নির্ধারিত ফরম পূরণের করে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ দায়েরের পদ্ধতি শুরু হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) থেকে অনলাইনেও অভিযোগ করতে পারবে শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে বেলা সাড়ে ১২টায় অভিযোগনামা বক্সের উদ্ভোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া।
আরও পড়ুন: পুলিশকে জনবান্ধব ফোর্সে রূপান্তরের নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার
শিক্ষার্থীদের বিচারের আশ্বাস দিয়ে অভিযোগ কার্যক্রমে তাদের সহযোগিতা কামনা করে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বাকৃবির গণতদন্ত কমিশন।
বিজ্ঞপ্তি সূত্রে জানা যায়, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হওয়া শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, যৌন হয়রানি, র্যাগিং, ইভটিজিং, গেস্ট রুমে নির্যাতন, সিট বাণিজ্য এবং চাঁদাবাজিসহ সব অন্যায়ের সুষ্ঠু বিচারের লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ দায়ের করার আহ্বান জানিয়েছে বাকৃবির তদন্ত কমিশন। গত সাড়ে ১৫ বছর সময়কালে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা এ অভিযোগ জানাতে পারবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে অনলাইন ফর্মপূরণ, অভিযোগ পত্রের ফর্ম ডাউনলোড করে হাতে পূরণ বা সরাসরি ফর্মটি হাতে লিখে প্রশাসন ভবন, ছাত্রবিষয়ক বিভাগ এবং কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে স্থাপিত নির্দিষ্ট অভিযোগ বাক্সের জমা দিতে পারবেন শিক্ষার্থীরা। বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অভিযোগকারী শিক্ষার্থীদের পরিচয় এবং সার্বিক গোপনীয়তা রক্ষার বিষয়েও আশ্বাস দিয়েছেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। পাশাপাশি, অভিযুক্ত ব্যক্তি/ব্যক্তিবর্গ-কে চিহ্নিত করে শাস্তির সুপারিশের উদ্দেশ্যে আগামী ১০ নভেম্বরের মধ্যে নির্ধারিত ফর্ম পূরণ করে তদন্ত কমিটির নিকট অভিযোগ দায়েরের অনুরোধও জানানো হয়েছে।
অপরাধীদের শাস্তির বিষয়ে তদন্ত কমিশনের সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান সরকার বলেন, অভিযুক্তদের অপরাধ প্রমাণ হলে যথাযুক্ত শাস্তির জন্য সুপারিশ করা হবে। তবে অপরাধের মাত্রা বিবেচনায় চলমান শিক্ষার্থী অন্যারকারী হলে ছাত্রত্ব বাতিল, সাময়িক বহিষ্কার বা বহিষ্কারও করা হতে পারে। যদি অপরাধী চাকরিতেও চলে যায় তাকে/ তাদের সার্টিফিকেট বাতিলসহ ফৌজদারি মামলার জন্যও প্রশাসনকে সুপারিশ করবে তদন্ত কমিশন। আমাদের সঙ্গে আইনজীবী প্যানেলও থাকবে। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী বিষয়টি ফৌজদারি মামলার অন্তর্ভুক্ত হলে সেভাবে আগানো হবে।
চাকরিতে চলে গেছেন বা বিদেশে অবস্থানরত সাবেক শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে জানান, চলে যাওয়া শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে না এসেও অনলাইনে সংযোগ থেকে তাদের অভিযোগ কিংবা প্রমাণ দিতে পারবে। অন্যায়কারী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী হলে তার সার্টিফিকেট বাতিল বা তার কর্মক্ষেত্রে নোটিশ পাঠিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত ২২ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোফরেস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক ড. জি এম মুজিবর রহমানকে সভাপতি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক, কৃষি সম্প্রসারণ শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান সরকারকে সদস্য সচিব করে এবং ময়মনসিংহ জজ কোর্টের আইনজীবী মো. খালেদ হোসেন টিপুকে উপদেষ্টা করে মোট ২৬ সদস্যের তদন্ত কমিশনটি গঠন করা হয়।
আরও পড়ুন: অনুপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
৪২১ দিন আগে