ইসলামী ব্যাংক
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ৫ ইসলামী ব্যাংক একীভূতকরণের প্রস্তাব অনুমোদন
পাঁচটি বেসরকারি ব্যাংক একীভূত করে একটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক গঠনের প্রস্তাবনা নীতিগতভাবে অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক শেষে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বিষয়টি জানান।
যে পাঁচ ব্যাংক একীভূত হয়ে নতুন ব্যাংক গঠিত হবে সেগুলো হলো—ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক।
পাশাপাশি ব্যাংক ও বীমা খাতে আমানত সুরক্ষা আইনকে যুগোপযোগী করে সংশোধনীও অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।
মুল্যায়ন প্রতিবেদন অনুযায়ী উল্লিখিত ব্যাংকগুলোর বিশাল অংকের শ্রেণীকৃত ঋণ বা বিনিয়োগ এবং মূলধন ঘাটতি থাকায় বর্ণিত ৬টি ব্যাংকের মধ্যে ৫টি ব্যাংককে মার্জার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরকারি মালিকানায় শরীয়াহ্ভিত্তিক একটি ইসলামি ব্যাংক স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থ বিভাগকে অনুরোধ জানিয়েছে। তবে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক পিএলসি-এর শেয়ার মালিকানা বিষয়ে উচ্চ আদালতে মামলা চলমান থাকায় আইসিবি ইসলামী ব্যাংককে উক্ত প্রক্রিয়ার আওতা বহির্ভূত রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিগত এক বছরের অধিক সময় ধরে তারল্য সহায়তা প্রদান করা সত্ত্বেও ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থার কোনও উন্নতি ঘটেনি; বরং তাদের তারল্য সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে। ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি, শ্রেণীকৃত বিনিয়োগ বা ঋণ ও অগ্রিমের হার, প্রভিশন ঘাটতি এবং তারল্য সংকট এমন পর্যায়ে উপনীত হয়েছে যে, তাদের আমানতকারী ও অন্যান্য পাওনাদারদের প্রদেয় পাওনা পরিশোধ করতে না পারায় ব্যাংকিং সেক্টরের প্রতি জনগণের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি হচ্ছে, যা দেশের সামগ্রিক আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ।
উল্লিখিত ৫টি ব্যাংক আর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার সম্ভাবনা না থাকায় আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার, ব্যাংকিংখাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, আমানতকারীদের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নিমিত্ত টেকসই ঋণ প্রবাহ নিশ্চিত করার জন্য ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ, ২০২৫ অনুযায়ী ব্যাংকিংখাতের এ ৫টি সংকটাপন্ন ব্যাংককে অতিসত্বর রেজল্যুশন প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসা আবশ্যক বলে মনে করে অর্থ বিভাগ।
প্রস্তাবিত নতুন ব্যাংকটি বাণিজ্যিকভাবে ও পেশাদারত্বের ভিত্তিতে পরিচালিত হবে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংক আরও জানিয়েছে যে, প্রাথমিকভাবে প্রস্তাবিত নতুন ব্যাংকের ৪০ হাজার কোটি টাকার ‘অনুমোদিত মূলধনের’ বিপরীতে ‘পরিশোধিত মূলধন’ হিসেবে আনুমানিক ৩৫ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হবে।
প্রস্তাবিত নতুন ব্যাংকটির মূলধন বিষয়ে প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, বেইল ইন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিদ্যমান প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের ১৫ হাজার কোটি টাকার আমানত মূলধনে রূপান্তর করা যেতে পারে এবং অবশিষ্ট ২০ হাজার কোটি টাকা সরকার মূলধন হিসেবে প্রদান করতে পারে।
প্রাথমিকভাবে ব্যাংকটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে কার্যক্রম শুরু করবে, তবে ধীরে ধীরে এর মালিকানা বেসরকারি খাতে হস্তান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা আশা করছি আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ব্যাংকটি বেসরকারি খাতে হস্তান্তর করা হবে।’
একীভূতকরণ প্রক্রিয়া তত্ত্বাবধানের জন্য গত ৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মো. কবির আহমেদের নেতৃত্বে আট সদস্যের একটি কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমিটিতে বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ বিভাগ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে প্রতিনিধিরা রয়েছেন।
৫৬ দিন আগে
ইসলামী ব্যাংকে ‘এস আলম গ্রুপ’ সংশ্লিষ্ট অবৈধ নিয়োগ বাতিলের দাবিতে গ্রাহকদের মানববন্ধন
দেশের ব্যাংকিং খাতে এস আলম গ্রুপের কথিত ‘অবৈধ নিয়োগ ও একচেটিয়া দখলদারিত্ব’ বাতিলের দাবিতে আজ রবিবার (৫ অক্টোবর) রাজধানীর দিলকুশায় ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারের সামনে মানববন্ধন করেছে ইসলামী ব্যাংক গ্রাহক ফোরাম।
মানববন্ধনে বক্তারা ২০১৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এস আলম গ্রুপের প্রভাব খাটিয়ে ইসলামী ব্যাংকে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক পর্যায়ে দেওয়া অবৈধ নিয়োগগুলো অবিলম্বে বাতিলের দাবি জানান। একইসঙ্গে তারা সারা দেশ থেকে মেধা যাচাইয়ের মাধ্যমে সৎ ও যোগ্য প্রার্থী নিয়োগের আহ্বান জানান।
মানববন্ধনে ব্যবসায়ী শাহিন আহমেদ খান, মো. মোতাসিম বিল্লাহ, মো. দেলোয়ার হোসেন, মো. ইমাম হোসাইন, অ্যাডভোকেট ওয়ালিউল্লাহ, হাফিজুর রহমান এবং ডিএম শওকত আলী বক্তব্য দেন।
সচেতন পেশাজীবী গ্রুপ, ইসলামী ব্যাংক সিবিএ এবং সচেতন ব্যাংকার সমাজও একই দাবিতে পৃথকভাবে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।
অদক্ষ কর্মীদের কারণে ইসলামী ব্যাংকের বার্ষিক ক্ষতি ১৫০০ কোটি টাকা
বক্তারা অভিযোগ করেন, এস আলম গ্রুপ ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর ২০১৭ সালের পর থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন পদে ৮ হাজার ৩৪০ জনকে অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়েছে, যাদের অধিকাংশেরই মূল উৎস চট্টগ্রাম অঞ্চল। নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে ৪ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি শুধুমাত্র পটিয়া উপজেলার বাসিন্দা বলে দাবি করা হয়। দেশের ৬৩ জেলার প্রার্থীদের বঞ্চিত করে একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের প্রার্থীদের প্রাধান্য দেওয়ায় ব্যাংকের সেবার মান ও প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে।
নিয়োগপ্রাপ্তদের অধিকাংশই গ্রাহকদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন, পেশাদার সেবা দিতে অক্ষম এবং আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলার কারণে গ্রাহকদের যোগাযোগে সমস্যা তৈরি হয়।
বক্তারা অবিলম্বে এসব অবৈধ নিয়োগ বাতিল করে সারা দেশ থেকে মেধাভিত্তিক নিয়োগ নিশ্চিত করার দাবি জানান।
নিয়োগপ্রাপ্তদের যোগ্যতা যাচাইয়ের জন্য ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি একটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। গত ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ’র মাধ্যমে একটি মূল্যায়ন পরীক্ষা আয়োজন করা হয়।
এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য ৫ হাজার ৩৮৫ জন কর্মকর্তাকে ডাকা হলেও মাত্র ৪১৪ জন অংশ নেন। গণ-অনুপস্থিতির কারণে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অবশিষ্ট ৪ হাজার ৯৭১ জন কর্মকর্তাকে ওএসডি (অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি) করেছে। তাদের মধ্যে ৪০০ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তাদের সব ধরনের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
বক্তারা হুঁশিয়ারি দেন, কথিত ‘ব্যাংক লুটেরা এস আলম’ এবং তার নিয়োগ দেওয়া অযোগ্য কর্মকর্তাদের অপসারণ না করা হলে গ্রাহকরা ধীরে ধীরে ইসলামী ব্যাংক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।
৬০ দিন আগে
অদক্ষ কর্মীদের কারণে ইসলামী ব্যাংকের বার্ষিক ক্ষতি ১৫০০ কোটি টাকা
সাত বছর ধরে এস আলম গ্রুপ-সংশ্লিষ্ট পূর্ববর্তী ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত ৮ হাজার ৩৪০ জনের বেশি অদক্ষ ও অর্ধশিক্ষিত কর্মীর জন্য প্রতি বছর ১৫০০ কোটি টাকারও বেশি আর্থিক ক্ষতির বোঝা টানছে দেশের বৃহত্তম বেসরকারি ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি (আইবিবিএল)।
এস আলমের মাধ্যমে পাচার হওয়া বিপুল অর্থের দায় মেটাতে গিয়ে ব্যাংকটি সঠিক পথে ফেরাতে বর্তমানে কঠিন সংগ্রাম করছে কর্তৃপক্ষ।
তদন্তে জানা গেছে, কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বা আনুষ্ঠানিক পরীক্ষা ছাড়াই কেবল মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে পানের দোকানদার, গৃহকর্মী, অটোরিকশা চালক, রাজমিস্ত্রির সহকারী এবং রংমিস্ত্রীসহ বিভিন্ন শ্রেণির ব্যক্তিকে এই বিশাল সংখ্যক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।
অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত এসব কর্মকর্তার পেছনে বছরে ১৫০০ কোটি টাকারও বেশি ব্যয় হওয়ায় গত সাত বছরে ব্যাংকটির ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে। এই বিশাল আর্থিক বোঝা এবং ব্যাংক থেকে ১ লাখ কোটি টাকারও বেশি লোপাট হওয়ার অভিযোগ—সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যৎ আর্থিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখা ‘প্রায় অসম্ভব’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ব্যাংকিং বিশেষজ্ঞ ও পেশাজীবীরা মন্তব্য করেছেন, ইসলামী ব্যাংকের অবৈধ নিয়োগ এবং অর্থ আত্মসাতের কারণে পুরো ব্যাংকিং খাতই ধ্বংসের মুখে পড়েছে।
ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তাদের যোগ্যতা যাচাইয়ের প্রক্রিয়া শুরু হলে দেখা যায়, নিয়োগপ্রাপ্ত এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর অনেকেই জাল সার্টিফিকেট ব্যবহার করে চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। ইতিমধ্যে জালিয়াতির প্রমাণ মেলায় অনেককে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং সার্টিফিকেট যাচাই প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
কর্মকর্তাদের বিদ্রোহ ও নিরাপত্তা উদ্বেগ
সম্প্রতি সংকট আরও তীব্র হয়েছে, যখন বর্তমান ব্যাংক ব্যবস্থাপনা তাদের পেশাগত দক্ষতা পুনর্মূল্যায়নের জন্য বিশেষ দক্ষতা যাচাই পরীক্ষা আয়োজন করে। অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রায় ৯০ শতাংশ কর্মকর্তা সেই পরীক্ষা বয়কট করেন, যা ব্যাংক কর্তৃপক্ষের প্রতি তাদের প্রকাশ্য অবাধ্যতা প্রকাশ করে।
এই কর্মকর্তারা ব্যাংকের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার, সংবাদ সম্মেলন এবং বর্তমান ম্যানেজমেন্টকে নানা ধরনের হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। এসব কার্যকলাপের অংশ হিসেবে শুক্রবার ভোরে ব্যাংকের ফেসবুক পেজও হ্যাক করা হয়, যার পেছনে ‘বাইরের লোকের’ ইন্ধন রয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
প্রশাসক বসবে একীভূত হতে যাওয়া সংকটাপন্ন পাঁচ ইসলামী ব্যাংকে
ইসলামী ব্যাংকের সাবেক একজন পরিচালক এ বিষয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, এসব বিদ্রোহী কর্মীর হাতে গ্রাহকের টাকা নিরাপদ নয়। তাদের এই প্রকাশ্য অবাধ্যতা প্রমাণ করে যে ব্যাংকের ভল্ট বা ক্যাশ কাউন্টার তাদের কাছে কোনোভাবেই সুরক্ষিত নয়। তিনি সতর্ক করে বলেন, দ্রুত সিদ্ধান্ত না নিলে ব্যাংকটি ভয়ঙ্কর সংকটে পড়বে।
গ্রাহক সেবার মান তলানিতে
গত সাত বছরে অনিয়ন্ত্রিত নিয়োগের ফলে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই ব্যাংকটি কার্যত আঞ্চলিক ব্যাংকে পরিণত হয়েছে, যেখানে চট্টগ্রাম অঞ্চলের কর্মীদের প্রাধান্য বেশি। এই কর্মীরা অফিসে সবসময় চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতেন এবং বারবার নির্দেশনার পরও নিজেদের পরিবর্তন করেননি। তাদের অদক্ষতা ও উদ্ধত আচরণে গ্রাহক সেবার মান চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ব্যাংকটির সাবেক ওই পরিচালক বলেন, ভাষা বুঝতে না পারা ও সেবার মান নিম্ন হওয়ায় গ্রাহক সেবায় ইসলামী ব্যাংকের যে সুনাম ছিল, তা তলানিতে চলে গেছে এবং গ্রাহকদের মাঝে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।
ক্ষমতার অপব্যবহার ও বিশৃঙ্খলা
ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এস আলম-সমর্থিত পূর্ববর্তী ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অধিকাংশেরই পেশাগত দক্ষতা ছিল না। তারা এস আলমের ক্ষমতা দেখিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেন, ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশনা মানতেন না এবং খেয়ালখুশি মতো চলতেন। নিজেদের পছন্দের চট্টগ্রাম অঞ্চল বা সুবিধাজনক জায়গায় বদলি করতে বাধ্য করতেন।
যেসব ম্যানেজার বা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাদের নিয়মের মধ্যে আনতে চেয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে তাদের পোস্টিং বা চাকরি ঝুঁকিতে ফেলা হয়েছে। কর্মকর্তাদের ক্ষমতা ও ঔদ্ধত্যের কারণে পুরো ব্যবস্থাপনা, এমনকি জোনাল হেডরাও আতঙ্কে ছিল।
নির্বাচনের আগে ব্যাংকিং সেক্টরে সাইবার নিরাপত্তা বড় চ্যালেঞ্জ: ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, এই কর্মকর্তারা এখনো এস আলমসহ আগের অবস্থানে ফিরে আসার হুমকি দিচ্ছেন।
সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, “এস আলম একাই পুরো ব্যাংক খাত ধ্বংস করেছেন।”
আমিনুল ইসলাম নামের এক গ্রাহক ব্যক্তিগত ফেসবুক পোস্টে প্রশ্ন তুলেছেন, “পটিয়ার অবৈধ ব্যাংকাররা চাকরি রক্ষার আন্দোলন করেন, কিন্তু আপনাদের ডাকাত সর্দার এস আলম ব্যাংক থেকে যে ১ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে, তা ফিরিয়ে আনার আন্দোলন করেন না কেন?”
৬১ দিন আগে
প্রশাসক বসবে একীভূত হতে যাওয়া সংকটাপন্ন পাঁচ ইসলামী ব্যাংকে
সমস্যাগ্রস্ত পাঁচটি শরিয়াভিত্তিক বেসরকারি ব্যাংককে একীভূত করে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ইসলামী ব্যাংক গঠনের লক্ষ্যে প্রশাসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিশেষ বোর্ড সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অন্যান্য বোর্ড সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ইউএনবিকে জানিয়েছেন, খুব শিগগিরই প্রশাসক নিয়োগ ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর বিদ্যমান পরিচালনা পর্ষদ বিলুপ্ত করার বিষয়ে অফিস আদেশ জারি করা হবে।
তিনি জানান, এ প্রক্রিয়া সহজ করতে ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ ও সহায়ক আইনসমূহে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে।
প্রতিটি ব্যাংকে একজন করে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হবে, যিনি চারজন কর্মকর্তার সহায়তায় দায়িত্ব পালন করবেন। আমানতকারীদের অর্থ সুরক্ষিত রাখা এবং ব্যাংকিং খাতে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করাই এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য বলে জানান তিনি।
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংককে একীভূত করে গঠন করা হবে একটি নতুন রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক, যার সম্ভাব্য নাম হবে ‘ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক’। নতুন এ ব্যাংকটির জন্য লাইসেন্স ইস্যু করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা মনে করেন, এ একীভূতকরণ দীর্ঘদিনের অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ করবে এবং পুনর্গঠনের মাধ্যমে গ্রাহকদের আস্থা পুনরুদ্ধার সম্ভব হবে।
একীভূত হওয়ার পর বিদ্যমান পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা বিলুপ্ত হবেন এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর শেয়ার বাতিল ঘোষণা করা হবে। ব্যাংকগুলোর সব সম্পদ ও দায় নতুন প্রতিষ্ঠানের অধীনে স্থানান্তরিত হবে।
সরকারি বিনিয়োগ পুনরুদ্ধারের জন্য নতুন ব্যাংকের শেয়ার পরবর্তীতে বেসরকারি খাতে বিক্রি করা হবে। বড় অঙ্কের আমানতকারীদের ক্ষেত্রে তাদের আমানতের একটি অংশ শেয়ারে রূপান্তরের সুযোগ দেওয়া হতে পারে, তবে ছোট আমানতকারীরা বিনা বাধায় অর্থ উত্তোলন করতে পারবেন।
উল্লেখ্য, পাঁচ ব্যাংকের মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি, ইউনিয়ন, গ্লোবাল ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, আর এক্সিম ব্যাংকের মালিক নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নাজরুল ইসলাম মজুমদার।
৭৯ দিন আগে
ইসলামী ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম জুবায়দুর
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন অধ্যাপক ড. এম জুবায়দুর রহমান। বুধবার (২৩ জুলাই) ব্যাংকের বোর্ড সভায় চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। এর আগে তিনি ইসলামী ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন জুবায়দুর।
অধ্যাপক ড. এম জুবায়দুর রহমান ১৯৭৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে তিনি যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টার থেকে ফিন্যান্স বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউ ইয়র্ক-এ অধ্যাপক, ইতালির ইউনিভার্সিটি অব বোকোনিতে ভিজিটিং প্রফেসর, যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়, আরবানা শ্যাম্পেইন এবং রাশিয়ার মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ভিজিটিং স্কলার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ঢাকার জেডএনআরএফ ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সেস’র (জুমস) প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য।
বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা অধ্যাপক রহমান উন্নয়নশীল ও উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোতে বিভিন্ন কোম্পানি, সরকারি এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার একজন অভিজ্ঞ স্বতন্ত্র উপদেষ্টা। তিনি কৌশলগত পরামর্শ এবং পরিবর্তন ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করে থাকেন। আর্থিক জবাবদিহিতা এবং কর্পোরেট গভর্ন্যান্স বিষয়ক ব্যবস্থাপনায় তার দক্ষতা রয়েছে।
পড়ুন: বড় উত্থানে লেনদেন চলছে ঢাকা-চট্টগ্রামের পুঁজিবাজারে
অধ্যাপক ড. এম জুবায়দুর রহমানের কাজের কেন্দ্রবিন্দু ছিল প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম, যার মাধ্যমে বিশ্ব ব্যাংকের সদস্য দেশগুলোকে আর্থিক স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং গভর্ন্যান্সের ভিত্তি শক্তিশালী করতে সহায়তা করা। তার কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট অনেক দেশে দীর্ঘমেয়াদি ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
বিশ্বব্যাংকে থাকাকালীন, অধ্যাপক জুবায়দুর রহমান আন্তর্জাতিক আর্থিক কাঠামোকে শক্তিশালী করতে ‘স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড কোডস ইনিশিয়েটিভ’ নামে একটি কর্মসূচি ডিজাইন ও বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দেন। এ কার্যক্রমের আওতায় তিনি বিভিন্ন দেশের উচ্চপর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে নীতিনির্ধারণী সংলাপে অংশগ্রহণ করেন, বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ ও বাইরের অংশীজনদের সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং প্রতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির কার্যক্রম গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
অধ্যাপক রহমান রাশিয়া, কাজাখস্তান ও উজবেকিস্তানে ডেলোয়েট নামক আন্তর্জাতিক পেশাদারী প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনায় নেতৃত্বস্থানীয় ভূমিকা পালন করেন। এসব দেশে তিনি বাজার অর্থনীতি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।
বিশ্বের সকল মহাদেশের বহু দেশে তার কাজের পরিধি বিস্তৃত রয়েছে।
১৩৪ দিন আগে
এস আলম গ্রুপকে ভুয়া ঋণ: ইসলামী ব্যাংকের ১০ কর্মকর্তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
এস আলম গ্রুপের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ঋণ প্রদান করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন থাকায় ইসলামী ব্যাংকের ১০ কর্মকর্তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ জাকির হোসেন গালিব দুদকের আবেদন মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন।
নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা হলেন- ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ মনিরুল মাওলা, ব্যাংকটির কর্মকর্তা মিফতাহ উদ্দিন, মোহাম্মদ ইহসানুল ইসলাম, মোহাম্মদ সিরাজুল কবির, মুহাম্মদ কায়সার আলী, তাহের আহমেদ চৌধুরী, মোহাম্মদ মোস্তাক আহমেদ, হোসেন মোহাম্মদ ফয়সাল, আহমেদ জুবায়েতুল হক ও এস. এম. তানভির হাসান।
এদিন তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন দুদকের উপপরিচালক তাহাসিন মুনাবীল হক।
আবেদনে বলা হয়, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য টিম গঠন করা হয়েছে। অভিযোগ অনুসন্ধানকালে জানা যায় যে, এস আলমের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে নিয়মবহির্ভূতভাবে ঋণ প্রদানে সহায়তা করা ইসলামী ব্যাংকের অভিযুক্ত কর্মকর্তারা দেশত্যাগ করার চেষ্টা করছেন। তারা বিদেশে চলে গেলে অনুসন্ধান কাজ ব্যাহত হতে পারে। এজন্য অনুসন্ধান কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য তাদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দেয়া একান্ত আবশ্যক।
প্রসঙ্গত, দুর্দকের করা মামলায় মনিরুল মাওলাকে গতকাল (২৩ জুন) কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন একই আদালত।
আরও পড়ুন: সংকটে থাকা ইসলামী ব্যাংকগুলোকে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় একীভূত করা হবে: গভর্নর
১৬৩ দিন আগে
ইসলামী ব্যাংকিংয়ের পৃথক বিধিমালা প্রণয়ন, বিভক্ত ব্যাংকাররা
দেশে ইসলামি ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে পৃথক বিধিমালা প্রণয়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগ নিয়ে ব্যাংকার ও বিশ্লেষকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
বিধিমালা প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন নির্বাহী পরিচালক বলেন, প্রস্তাবিত বিধিমালায় প্রচলিত ব্যাংকগুলো এখন থেকে সরাসরি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং সেবা দিতে পারবে না। এর পরিবর্তে ব্যাংকগুলোকে ইসলামী ব্যাংকিং পরিচালনার জন্য সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
কর্মকর্তা বলেন, ‘এ আইন কার্যকর হলে প্রচলিত ব্যাংকগুলো শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং সেবা দিতে পারবে না।’
তবে কিছু ব্যাংকার যুক্তি দেখিয়েছেন, এই পদক্ষেপটি ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) অধীনে বাংলাদেশের দীর্ঘকালীন প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে।
১৯৮০-এর দশকে আইডিবিতে সইকারী দেশের তালিকায় যুক্ত হয় বাংলাদেশ। যা প্রচলিত ব্যাংকগুলোকে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিংয়ে প্রবর্তনকে সহজতর করেছে।
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল মান্নান প্রস্তাবিত নীতিমালার প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
তিনি ইউএনবিকে বলেন, 'প্রচলিত ব্যাংকিংয়ের জন্য ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডোর পরিবর্তে সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান স্থাপনের বিষয়ে নতুন আইন (বিধিমালা) আইডিবির ঘোষণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে।’
তিনি বলেন, আইডিবির ঘোষণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকগুলোতে শরিয়াহ পরিপালন ও তহবিল ব্যবস্থাপনা পর্যবেক্ষণের জন্য একটি স্বতন্ত্র বিভাগ স্থাপন করতে পারে।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান প্রচলিত ব্যাংকগুলোর ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডো ও শাখাসমূহের বর্তমান সাফল্য তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘উইন্ডোজ বা শাখার মাধ্যমে যেসব ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকিং করছে তাদের সবার অবস্থা ভালো। একটি ইসলামি অন্যটি প্রচলিত ব্যাংকিং করে তুললেই ভালো ফল পাওয়া যাবে বলে আমি মনে করি না। আমরা যদি পৃথক ব্যালান্সশিট ও আয় বিবরণী প্রস্তুত করি এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করি, তাহলে এটি আরও কার্যকর ও সময়োপযোগী হবে।’
মাহবুবুর রহমান আরও বলেন, 'তারা যদি সঠিকভাবে মনিটরিং করে এবং শরিয়া বোর্ড যদি যথাযথভাবে থাকে, তাহলে আমার মনে হয় এখানে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’
তবে কিছু বিশ্লেষক পরিস্থিতিকে ভিন্নভাবে দেখছেন।
আরও পড়ুন: ব্যাংকে চাকরি প্রার্থীদের বয়সসীমা বাড়াল বাংলাদেশ ব্যাংক
প্রচলিত ব্যাংকগুলোর অধীনে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের আর্থিক সক্ষমতার কথা স্বীকার করে তারা শরিয়াহ পরিপালনের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করেন।
অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন বর্তমান চর্চার সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ‘প্রচলিত ব্যাংকের ব্যালান্স শিটও ইসলামী শাখার মতোই। এটি কতটা শরিয়া ভিত্তিক ও সঠিক?'
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের সাবেক মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী ইসলামী ব্যাংকিংয়ের বর্তমান রূপের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে পৃথক বিধিবিধানের ধারণাকে সমর্থন করেন।
তিনি বলেন, 'আমি ব্যক্তিগতভাবে আলাদা আইনের পক্ষে। এখানে আমরা আসলে ব্যবসা পরিচালনার জন্য শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং করছি না। আমরা এটা করছি টাকা কামানোর জন্য। ইসলামের নামে মানুষের কাছ থেকে কিছু টাকা নিচ্ছি। যখন চালু হয়, তখন কি এটা আসলেই ইসলামী ব্যাংকিং? মোট পোর্টফোলিওর ১.০ শতাংশও পিএলএস নয়। তাহলে এটাকে ইসলামী ব্যাংকিং বলা হচ্ছে কেন?’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মতে, খসড়া আইনটি এখনও পর্যালোচনাধীন। কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনেয়ারা শিখা বলেন, আইনটি চূড়ান্ত করার আগে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা জরুরি।
তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, 'আইন প্রণয়নের সময় অংশীজনদের সঙ্গে নানা ধরনের পরামর্শ ও বিশ্লেষণ করতে হয়। আন্তর্জাতিক নীতিগুলো কী? আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রচলিত ব্যাংকগুলো কখনো ইসলামিক শাখা খোলে না।’
সব অংশীজনদের মতামত নিয়ে ইসলামিক ব্যাংক কোম্পানি আইন চূড়ান্ত করা হবে।
ইসলামী ব্যাংকিং ইসলামের চেতনা, নীতি ও মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি ব্যাংকিং ব্যবস্থা, যা ইসলামী শরিয়াহর নীতি অনুসারে পরিচালিত হয়।
বর্তমানে বাংলাদেশে ৩০টি প্রচলিত ব্যাংক ছাড়াও ১০টি পূর্ণাঙ্গ শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। প্রচলিত এসব ব্যাংক ৩৩টি ইসলামি ব্যাংকিং শাখা এবং শরিয়াহভিত্তিক সেবার জন্য প্রায় ৭০০ উইন্ডো পরিচালনা করে।
আরও পড়ুন: রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে কোটিপতির অ্যাকাউন্টের সংখ্যা কমেছে: বাংলাদেশ ব্যাংক
৩৫৩ দিন আগে
ইসলামী ব্যাংকের ডিএমডি পদে ৬ জনের পদোন্নতি
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ডিএমডি) হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন ছয়জন।
এরা হলেন- মাহমুদুর রহমান, মো. রফিকুল ইসলাম, মুহাম্মদ সাঈদ উল্লাহ, কে. এম. মুনিরুল আলম আল-মামুন, ড. এম কামাল উদ্দীন জসীম ও মো. মাকসুদুর রহমান। এর আগে উনার সবাই ব্যাংকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
মাহমুদুর রহমান ঢাকা সেন্ট্রাল জোনের প্রধান হিসেবে কর্মরত। তিনি ১৯৯৫ সালে প্রবেশনারি অফিসার হিসেবে ব্যাংকে যোগদান করেন এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড উইং, নোয়াখালী জোনসহ প্রধান কার্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
আরও পড়ুন: তরুণরা আগামীতে নতুন বাংলাদেশ নির্মাণে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে: ভিপি নূর
মো. রফিকুল ইসলাম ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড উইংয়ের প্রধান হিসেবে কর্মরত। তিনি ১৯৯৮ সালে সিনিয়র অফিসার হিসাবে ব্যাংকে যোগদান করেন এবং ব্যাংকের ক্যামেলকো এবং ইনভেস্টমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ডিভিশনের প্রধানসহ প্রধান কার্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মুহাম্মাদ সাঈদ উল্লাহ স্পেশাল ইনভেস্টমেন্ট উইংয়ের প্রধান হিসেবে কর্মরত। ১৯৯২ সালে প্রবেশনারি অফিসার হিসেবে ব্যাংকে যোগদান করেন এবং ব্যাংকের হিউম্যান রিসোর্সেস উইং, ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট উইং, রিটেইল ইনভেস্টমেন্ট উইং, ঢাকা নর্থ জোন ও সিলেট জোনসহ প্রধান কার্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
কে. এম. মুনিরুল আলম আল-মামুন ইসলামী ব্যাংক ট্রেনিং অ্যান্ড রিসার্চ একাডেমির প্রিন্সিপাল হিসেবে কর্মরত। তিনি ১৯৯২ সালে প্রবেশনারি অফিসার হিসেবে ব্যাংকে যোগদান করেন এবং ব্যাংকের ফরেন ট্রেড অপারেশন্স ডিভিশনের প্রধান, নওয়াবপুর রোড ও পল্টন শাখার প্রধানসহ প্রধান কার্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও শাখায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
ড. এম কামাল উদ্দীন জসীম ব্যাংকের ক্যামেলকো এবং অপারেশন্স উইংয়ের প্রধান হিসেবে কর্মরত। ১৯৯২ সালে প্রবেশনারি অফিসার হিসেবে ব্যাংকে যোগদান করেন এবং ব্যাংকের ঢাকা ইস্ট জোনপ্রধান ও বিজনেস প্রমোশন অ্যান্ড মার্কেটিং ডিভিশন, হেড অফিস কমপ্লেক্স করপোরেট শাখা, ধানমন্ডি ও ফার্মগেট শাখার প্রধানসহ প্রধান কার্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মো. মাকসুদুর রহমান ব্যাংকের ইন্টারনাল কন্ট্রোল অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স উইংয়ের প্রধান হিসেবে কর্মরত। তিনি ১৯৯৫ সালে প্রবেশনারি অফিসার হিসেবে ব্যাংকে যোগদান করেন এবং ব্যাংকের ডেভেলপমেন্ট উইং, ফাইন্যান্সিয়াল লিটারেসি উইং, ফরেন রেমিট্যান্স ডিভিশনের প্রধান, যশোর ও খুলনা জোনপ্রধানসহ প্রধান কার্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
আরও পড়ুন: মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে না: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব
৩৯৭ দিন আগে
ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের অস্বাভাবিক দর বাড়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ডিএসইকে নির্দেশ
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের (পিএলসি) শেয়ারের অস্বাভাবিক দর বাড়ার কারণ অনুসন্ধান করতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) নির্দেশ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির এক আদেশে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের দাম ও পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে ওঠানামা করেছে, যা অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক বলে মনে হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ঈদের ছুটি শেষে প্রথম দিনে ডিএসইতে ২৪৬ কোটি টাকার লেনদেন
বিএসইসির আদেশে বলা হয়, উল্লেখিত স্ক্রিপের ইউনিটের এমন অস্বাভাবিক ওঠানামার পেছনে বাজার কারসাজি, অভ্যন্তরীণ লেনদেন, অন্যান্য বাজারের অপব্যবহারসহ এবং কারসাজিসহ বিভিন্ন কারণ উদঘাটনে ৬ আগস্ট থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার কেনাবেচা তদন্ত করবে ডিএসই।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, কিছু ব্যবসায়ী গ্রুপ ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক হওয়ার চেষ্টা করছে, তাই তারা বড় অঙ্কের শেয়ার কিনছেন। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে এ ব্যাংকের শেয়ারের দাম হু হু করে বেড়েছে।
আরও পড়ুন: সমৃদ্ধ শেয়ারবাজার গড়তে মার্চেন্ট ব্যাংকের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ: ডিএসই চেয়ারম্যান
৪৩৫ দিন আগে
ইসলামী ব্যাংকে ব্যবসা পরিচালনা ও এলসি খোলায় বাধা নেই: গভর্নর
ইসলামী ব্যাংকে এখন থেকে ব্যবসা পরিচালনা ও লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খোলার ক্ষেত্রে আর কোনো বিধিনিষেধ থাকবে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) ইসলামী ব্যাংকের নবগঠিত পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে বৈঠকে গভর্নর ইসলামী ব্যাংকের চলতি হিসাবের দৈনিক ইতিবাচক ব্যালেন্স নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ‘শিগগিরই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করা হবে।’
আরও পড়ুন: ইসলামী ব্যাংকের ঋণের অর্ধেকের বেশি নিয়েছে এস আলম গ্রুপ: চেয়ারম্যান
গভর্নর বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংকে গ্রাহকদের আমানত নিরাপদ। ইসলামী ব্যাংকের নিজস্ব তহবিল গ্রাহকদের চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট। তবে প্রয়োজনে তারল্য সহায়তার বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করবে।’
সভা শেষে ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ সাংবাদিকদের বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ইসলামী ব্যাংকের নিয়মিত ব্যবসায়িক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, ইসলামী ব্যাংক গভর্নরের কাছে একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ উপস্থাপন করা হয়েছ। ব্যাংকের পারফরম্যান্স ও ব্যবসায়িক সাফল্যের মাধ্যমে কোটি কোটি গ্রাহকের আস্থার কারণে ইসলামী ব্যাংক দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঘুরে দাঁড়াবে।
আরও পড়ুন: রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ খেলাপি
৪৫৫ দিন আগে