জুলাই অভ্যুত্থান
জুলাই অভ্যুত্থানে ৪১টি জেলার ৪৩৮টি স্থানে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে: ট্রাইব্যুনালে তদন্ত কর্মকর্তার জবানবন্দি
চব্বিশের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান চলাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকার দলীয় সশস্ত্র নেতাকর্মীরা দেশের ৪১টি জেলার ৪৩৮টি স্থানে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে চলমান মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ৫৪তম সাক্ষীর জবানবন্দিতে এ তথ্য দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর (পিপিএম)।
আজ বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ দেওয়া জবানবন্দিতে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান চলাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারদলীয় সশস্ত্র নেতাকর্মীরা দেশের ৪১টি জেলার ৪৩৮টি স্থানে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছে। এছাড়া ৫০টিরও বেশি জেলায় আন্দোলনকারীদের ওপর মারণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে।
সাক্ষীর জবানবন্দিতে তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর বলেন, আমি তদন্তকালে পেয়েছি যে ২০২৪ সালের আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার যত গুম, খুন, জখম, অপহরণ ও নির্যাতন করেছে তার মূল উদ্দেশ্য ছিল ক্ষমতায় টিকে থাকা। এছাড়া গত ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বিরোধী দল, মত ও প্রতিপক্ষের ওপর হত্যা, জঙ্গি নাটক, জোরপূর্বক অপহরণ, গুমসহ পাতানো নির্বাচনের মতো সবকিছুর মূলে ছিল দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার বাসনা। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এসেছে, তখন ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য যত রকমের ব্যবস্থা আছে তার সবই গ্রহণ করেছে। এর ফলশ্রুতিতে ২০২৪ সালের আন্দোলনে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেছে।
এ দিকে এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার জবানবন্দির অংশবিশেষ ও জব্দ করা ভিডিও বিটিভিতে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। সেই জুলাই আন্দোলনে নৃশংসতা নিয়ে বিবিসি ও আল জাজিরায় প্রচারিত ভিডিওচিত্রও জব্দ তালিকার অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রদর্শিত হয়। ঐতিহাসিক এই মামলায় এর আগে সাক্ষ্য দিয়েছেন গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের পিতাসহ স্বজনহারা অনেক পরিবার। এছাড়া স্টার উইটনেস হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক ও জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
এই মামলায় প্রসিকিউশন পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এসএইচ তামিম শুনানি করছেন। অপর প্রসিকিউটররাও শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন। পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। আর এই মামলায় গ্রেফতার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এক পর্যায়ে এই মামলায় দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদঘাটনে (অ্যাপ্রোভার) রাজসাক্ষী হতে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের আবেদন মঞ্জুর করেন ট্রাইব্যুনাল। পরে রাজসাক্ষী হয়ে তিনি সাক্ষ্য দেন।
এই মামলাটি ছাড়াও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে গুম-খুনের ঘটনায় তাকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হয়েছে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, এর দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে। বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসব অপরাধের বিচার চলছে।
৬৫ দিন আগে
জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী এক বছরে অর্জন অনেক: শেখ বশিরউদ্দীন
জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী এক বছরে অনেক অর্জন হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন বাণিজ্য এবং বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
তিনি বলেন, আমরা কাঠামোগত সংস্কার করে একটি পর্যায়ে উপনীত হতে পারবো, যার মাধ্যমে পরবর্তী নির্বাচিত সরকার দেশকে সুষ্ঠু অর্থনীতি ও বৈষম্যহীন যাত্রায় অগ্রসর করতে পারবে।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট ) বিকালে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) মিলনায়তনে ছাত্র জনতার জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মরণে জুলাই পুনর্জাগরণ উদযাপনের অংশ হিসেবে আয়োজিত বিশেষ অনুষ্ঠানমালায় তিনি একথা বলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। বাণিজ্য এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
পড়ুন: দেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তির বিষয়টি সম্পূর্ণ অবান্তর: বাণিজ্য উপদেষ্টা
উপদেষ্টা বলেন, প্রস্তাবিত সংস্কারসমূহ স্বল্প সময়ে শতভাগ বাস্তবায়ন করা না গেলেও উপযুক্ত রোডম্যাপ নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে। কিভাবে আরও ভালো পারফর্ম করা যায় ,একটা ভালো নির্বাচন অনুষ্ঠান করা যায়, এ ব্যাপারে সকল উপদেষ্টা প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ।
জুলাই পরবর্তী এক বছরে অনেক অর্জন হয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, আমরা বাজার ব্যবস্থায় সিন্ডিকেশন নির্মূল করতে পেরেছি। টিসিবির কার্যক্রমকে অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে পেরেছি। এক কোটি পরিবারকে কার্ড দেওয়ার কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। আমাদের ম্যাক্রো ইকনোমিতে ব্যালেন্স সারপ্লাস, আমাদের ফিনান্সিয়াল একাউন্টে আমরা সারপ্লাস, রিজার্ভ যেটা সম্ভবত ১০ বিলিয়নে নেমে গিয়েছিল সেটা এখন ৩০ বিলিয়নে উঠে এসেছে। রপ্তানি বিগত ৩২ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ হয়েছে। বৈষম্য দূরীকরণেও আমাদের অগ্রগতি হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
উপদেষ্টা বলেন , জুলাইয়ে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল এবং আমরা যে সমন্বিতভাবে, সমস্বরে অন্যায়ের বিরুদ্ধে না বলতে পেরেছি তার জন্য আমাদের মূল্য দিতে হয়েছে। ছোট্ট শিশু প্রিয়া গোপ থেকে ইয়ামিনকে জীবন দিতে হয়েছে। জুলাই-আগস্টে আরও যে স্যাক্রিফাইস করতে হয়েছে তা অবর্ণনীয়। সেই দায়বোধ থেকে জুলাইকে স্মরণ করতে এসেছি, আরও বেশি জানতে এসেছি।
বিশেষ অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ছিলো দুইজন জুলাই যোদ্ধার স্মৃতিচারণ, শোন মহাজন, টেস্টিমনি অব মার্টায়ার্স ফ্যামিলি ও কত বিপ্লবী বন্ধুর রক্তে রাঙা তথ্যচিত্র প্রদর্শন, জুলাই কেন্দ্রিক গীতি আলেখ্য ও আলোচনা সভা।
পড়ুন: আগামী বছর চামড়া সংরক্ষণে মানুষের আগ্রহ আরও বাড়বে: বাণিজ্য উপদেষ্টা
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুর রউফ বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের তাৎপর্যকে হৃদয়ে ধারণ করে যদি আন্তরিকতা, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করা যায়— তবেই আমরা বৈষম্যহীন, মানবিক ও কল্যাণমূলক একটি টেকসই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবো।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, বিগত ১৭ বছর ক্রণিক ক্যাপিটালিজম হয়েছে। কতিপয় মানুষকে সুবিধা দেওয়ার জন্য সমগ্র রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করা হয়েছে। এই ব্যবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে জুলাইয়ের চেতনাকে ধারণ করে বৈষম্যহীন ন্যায়ভিত্তিক সমাজ কাঠামো, ন্যায়ভিত্তিক নীতি কাঠামো ও ন্যায়ভিত্তিক আচরণ প্রতিষ্ঠা করা দরকার।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ ফয়সল আজাদ। ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী আরিফুল ইসলাম আরিফ ও সায়লা আক্তার শশী জুলাই অভ্যুত্থানের স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য দেন।
১১৯ দিন আগে
বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গড়ার অদম্য পথযাত্রার সূচনা করেছে জুলাই অভ্যুত্থান: শেখ বশিরউদ্দীন
জুলাই গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের আন্দোলন সংগ্রামের একটি মাইলফলক। এটি বৈষম্যহীন ও ন্যায়নিষ্ঠ রাষ্ট্র গড়ার অদম্য পথযাত্রার সূচনা করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন এবং বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
শনিবার (২৬ জুলাই ) দুপুরে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে জুলাই গণঅভ্যুত্থান উপলক্ষে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘জুলাই পুনর্জাগরণ-২০২৫’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, জুলাই আন্দোলন আমাদের রাষ্ট্র ও প্রশাসনের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এই অধ্যায় কেবল প্রতিবাদ কিংবা বিরোধের নয়—এটি আশাবাদ ও পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা আর জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার এক সাহসী আহ্বান। এটি বাংলাদেশে নতুন এক বৈষম্যহীন ও ন্যায়নিষ্ঠ রাষ্ট্র গড়ার জন্য অদম্য পথযাত্রার সূচনা করেছে। ছাত্ররা এই আন্দোলনে পথ দেখিয়েছিল, আর আপামর জনগণ সেদিন এই আন্দোলনে শরিক হয়েছিল।
তিনি বলেন, আমরা জনগণের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ বাড়িয়েছি, কার্যকরী পরিবর্তন আনতে সচেষ্ট হয়েছি। সবচেয়ে বড় কথা, আমরা জনগণের উপর আস্থা রাখতে শিখেছি। জনগণ শুধু সংখ্যা নয়, জনগণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই অর্জন আমাদের সকলের।
পড়ুন: পুরোনো আইনে বাংলাদেশকে আর চলতে দেবো না: নাহিদ ইসলাম
উপদেষ্টা আরও বলেন, আমরা যদি সেবাকে দায়িত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তবেই বুঝবো জুলাই গণআন্দোলনের মূল শিক্ষা আমরা ধারণ করতে পেরেছি। আমরা যেন এমন একটি রাষ্ট্র ও প্রশাসন গড়ে তুলি, যেখানে নাগরিকের কণ্ঠস্বর উপেক্ষিত হবে না, যেখানে সিদ্ধান্ত হবে তথ্যভিত্তিক ও জনস্বার্থে —যেখানে প্রশাসন জনগণের সবচেয়ে বড় মিত্র হয়ে উঠবে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসরীন জাহানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয় সংক্রান্ত বিশেষ দূত (উপদেষ্টা পদমর্যাদা ) লুৎফে সিদ্দিকী। স্বাগত বক্তব্য দেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিমান ও সিএ) আব্দুন নাসের খান। ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে ৪ আগস্ট দৃষ্টি হারানো মো. সাব্বির আহমেদ জুলাই অভ্যুত্থানের স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য দেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ছিল ২০২৪ এর ছাত্র-জনতার জুলাই অভ্যুত্থানকে স্মরণ করে চিত্রাঙ্কন ও রক্তদান কর্মসূচি। উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন রক্তদানের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সুচনা করেন। এছাড়াও জুলাই অভ্যুত্থানকে স্মরণীয় করতে পর্যটন মেলার আয়োজন ছিল। মোট ১০টি স্টল মেলায় অংশ নেয়। অতিথিদের নিয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন।
অনুষ্ঠানে জুলাই অভ্যুত্থানে সম্পূর্ণভাবে দৃষ্টি হারানো ১১ জন জুলাই যোদ্ধার হাতে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের দেওয়া পবিত্র ওমরাহ পালনের জন্য (ঢাকা- জেদ্দা- ঢাকা ) ২টি করে টিকিটের কনফার্মেশন লেটার ও স্কাই ক্যাপিটাল এয়ারলাইনসের পক্ষ থেকে দেওয়া ওমরাহ হজ পালনের অন্যান্য ব্যয়ের পঞ্চাশ হাজার টাকার চেক হস্তান্তর করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
এরপর জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে আয়োজিত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী তিন জনের হাতে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের টিকিট তুলে দেন তিনি। এ ছাড়াও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দপ্তর সংস্থার বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
১৩১ দিন আগে
এতগুলো মাসেও হত্যা, নিপীড়ন ও গুমের বিচারে অগ্রগতি নেই: আখতার
জুলাই অভ্যুত্থানের পর এতগুলো মাস পেরিয়ে গেলেও শেখ হাসিনার আমলের হত্যা, নিপীড়ন ও গুম-খুনের বিচারে কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন।
শনিবার (১৯ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জুলাই-আগস্ট গণ–অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে এক আলোচনা সভায় তিনি এমন মন্তব্য করেন।
আখতার বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের প্রত্যাশা ছিল, বাংলাদেশের বিচার কাঠামো এমন হবে, যেখানে বিগত সময়ে দেশের মানুষের ওপর যে অত্যাচার, নিপীড়ন, গুম-খুন ও গণহত্যা হয়েছে, সেগুলোর পরিপূর্ণ বিচার হবে। কিন্তু এতগুলো মাস পেরিয়ে গেলেও আমরা বিচারের কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি খেয়াল করিনি।’
গণঅভ্যুত্থানের প্রত্যাশা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
‘১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পরে বাহাত্তরের সংবিধান পেয়েছিলাম, সেটা আমাদের কাঙ্ক্ষিত সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সুবিচারের দেশ আমাদের উপহার দিতে পারেনি। যে অর্থনৈতিক অধিকারগুলো আছে, সেগুলোর সাংবিধানিক স্বীকৃতি অর্জন করতে পারেনি বাংলাদেশের মানুষ। আমরা আমাদের অর্থনৈতিক অধিকারগুলোকে সাংবিধানিক স্বীকৃতির পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারিনি।’
এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, ‘আমাদের যে সংবিধান প্রণীত হয়েছিল, সেটি এক ব্যক্তিকে রাষ্ট্রকাঠামোর মূলে রেখে হয়েছিল। যে কারণে গেল অর্ধশতাব্দিতে বাংলাদেশে কোনো ক্ষমতার ভারসাম্য আমরা দেখিনি। আমরা মনে করি, বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক সংবিধানের বাস্তবতা রয়েছে।
‘একটি গণপরিষদের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন একটি সংবিধান প্রণয়ন করে, সেটি যাতে একক কোনো দলের ইশারায় পরিবর্তিত হতে না পারে— এমন এক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যেখানে সরকারি দল, বিরোধী দল ও জনগণের মতামতের ভিত্তিতে এটি গ্রহণ করা সম্ভব হবে।’
ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোর এক থাকার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘নানা কারণে আমাদের মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনার জায়গা তৈরি হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক চাওয়া–পাওয়ার হিসাব–নিকাশ থেকে পরস্পরের বিরুদ্ধাচরণের জায়গা তৈরি হয়েছে।’
কিন্তু এটা গণঅভ্যুত্থানের প্রত্যাশার জায়গা ছিল না বলে উল্লেখ করে আখতার বলেন, ‘আমরা এমন এক বাংলাদেশ চেয়েছিলাম, যেখানে প্রতিহিংসা, বিদ্বেষ ও পেশিশক্তির রাজনীতি উতরে গিয়ে আমরা মানুষের সমস্যা সমাধানে নাগরিক ও মানবিক মর্যাদার সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারব।’
‘সেই পথে আমরা কতদূর অগ্রসর হতে পেরেছি, সেটা ইতিহাস বিবেচনা করবে। আমার কাছে এখনো মনে হয়, এক বছর পার হলেও আমাদের অপূর্ণ আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের আশা নিঃশ্বেষ হয়ে যায়নি।’
আখতার আরও বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দলের হাত থেকে সরে গিয়ে গণঅভ্যুত্থান মুষ্টিমেয় কিছু রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীর কাছে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ুক— আমরা সেটা চাই না। এই গণঅভ্যুত্থান আমাদের সবার। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান একক কোনো রাজনৈতিক দলের কাছে বন্দি না রেখে ফ্যাসিবাদবিরোধী সবপক্ষ সমানভাবে ধারণ করে আমরা নিজেদের লক্ষ্য অর্জনে সামনে অগ্রসর হতে পারব।
আলোচনা সভার সভাপতিত্ব করেন গণতন্ত্র মঞ্চের প্রধান সমন্বয়ক রফিকুল ইসলাম বাবলু। আরও বক্তব্য দেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ১২–দলীয় জোট প্রধান ও জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদ উল্লাহ কায়সার, জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের আহ্বায়ক নাঈম জাহাঙ্গীর, নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত প্রমুখ।
১৩৮ দিন আগে
জুলাই অভ্যুত্থান ইতিহাসের ধারাবাহিকতা: ঢাবি ডিন সিদ্দিকুর রহমান
জুলাই গণঅভ্যুত্থান কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়— এটি ’৫২-র ভাষা আন্দোলন ও ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের ধারাবাহিকতা বলে মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. সিদ্দিকুর রহমান খান।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারডিসিপ্লিনারি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কনসোর্টিয়াম (আইআরডিসি) আয়োজিত “জুলাই বিপ্লব ও আগামীর বাংলাদেশ” শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, “জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান ছিল রাজনৈতিক অনিবার্যতা। ১৯৫২ ও ১৯৭১-এর আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের ভোটাধিকার হরণের বিরুদ্ধে এই অভ্যুত্থান ঘটে। যুবক, ছাত্র-ছাত্রী ও নারীদের নেতৃত্বে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটে। এখন আমাদের লক্ষ্য— গণতান্ত্রিক সমাজ ও নতুন ধারার রাজনীতি গড়ে তোলা।”
তিনি আরও বলেন, “আগামীর বাংলাদেশে আমরা ফ্যাসিবাদবিহীন, মূল্যভিত্তিক রাজনীতি চাই। এজন্য চাই নতুন নেতৃত্ব, সচেতন নাগরিক ও দায়িত্ববান শাসক। আর তা সম্ভব একমাত্র সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে।”
এ সময়ে মার্কিন হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. মির্যা গালিব বলেন, “আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার রাজনৈতিক ব্যবহারে আজ ফ্যাসিস্ট ধারায় রূপ নিয়েছে। একই ধরনের অপব্যবহারে এনসিপিও সেই পথ অনুসরণ করতে পারে যদি জুলাই বিপ্লবের আদর্শকে রাজনৈতিক অস্ত্র বানানো হয়।”
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, জুলাই আন্দোলনের শহিদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। ২০০৮ সালের নির্বাচন আমাদের মতে স্বচ্ছ ছিল না। বিভিন্ন সময়ে আমাদের সুযোগ এসেছে, যা আমরা হারিয়েছি— তার থেকে শিক্ষা নিয়ে জুলাইয়ের সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে।
আরও পড়ুন: জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে ঢাবিতে কনসার্ট ও ড্রোন শো
‘আমাদের মূলত ভালো শাসক, ভালো লোক ও ভালো নাগরিক দরকার— যাতে ভূমিকা রাখতে পারে আমাদের এডুকেশনাল ইনস্টিটিউশনগুলো,’ বলেন তিনি।
সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন আইআরডিসি’র সাধারণ সম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক এবং সভাপতিত্ব করেন আইআরডিসি সভাপতি ও ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বিলাল হোসেন।
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. সাবিনা শারমীন, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দীন, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
১৪০ দিন আগে
রাষ্ট্র সংস্কারের সব বিষয়ে আমরা একমত হবো না: আলী রীয়াজ
জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী রাষ্ট্র সংস্কারে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে সবগুলো বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হবে না বলে মন্তব্য করেছেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ।
তিনি বলেন, ‘যাতে করে কোনো রকম ভুলবোঝাবুঝি কিংবা বিভ্রান্তির সৃষ্টি না হয়, সে জন্য আমাদের দিক থেকে আন্তরিক চেষ্টা থাকছে। আপনাদের (রাজনীতিবিদ) বক্তব্য কিংবা আকাঙ্ক্ষার সাথে সামঞ্জস্যবিধান করা যায়, সেটা দেখা হচ্ছে।’
সোমবার (৭ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের দশম দিনের আলোচনার শুরুতে তিনি এমন মন্তব্য করেন। এই আলোচনায় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন।
বৈঠক সভাপতিত্ব করছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ। কমিশনের সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফররাজ হোসেন, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি এমদাদুল হক এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান।
আরও পড়ুন: তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার ব্যাপারে কোনো দ্বিমত নেই: আলী রীয়াজ
আলী রীয়াজ বলেন, ‘যখন দলগুলোর সঙ্গে আলাদাভাবে যোগাযোগ করা হচ্ছে, তখন কমিশনের পক্ষ থেকে আমি সুস্পষ্টভাবে বলেছি, কমিশন যে প্রস্তাবই দিচ্ছে, সববিষয়ে একমত হওয়ারও কোনো বিষয় নেই। আমি বারবার বলেছি, সববিষয়ে আমরা একমত হবো না।’
উদহারণ দিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘জাতীয় সাংবিধানিক কমিশন (এনসিসি) নিয়ে যে প্রস্তাব ছিল, সেটা নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলগুলো আপত্তি জানিয়েছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ভিন্ন একটি প্রস্তাব এনেছি। নতুন কোনো প্রস্তাব না, সংশোধিত প্রস্তাব। সবাই যখন কাঠামোগত পরিবর্তনে জোর দিচ্ছেন, আমরা সেই জায়গাগুলোতে আপনাদের সাথে থাকছি।’
“মূলনীতির ক্ষেত্রে বহুত্ববাদ নিয়ে সবার আপত্তি ছিল, দ্বিতীয় সংশোধিত সংস্করণে সেটা ছিল না। কিংবা ধরুন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন থেকে বলা হয়েছিল, চারটি প্রদেশ করার বিষয়ে, সেই আলোচনাও প্রাথমিকভাবে বেশিরভাগ দল থেকে ‘এই অবস্থায় বর্তমানে করার’ বিষয়ে একমত হওয়া যায়নি। কাজেই সেটা আলোচনায় আসিনি।”
আলী রীয়াজ বলেন, ‘অনেক কিছু বাদ দিয়ে অগ্রসর হতে হচ্ছে। কারণ সব বিষয়ে একমত হওয়া যাবে না। তবুও আমাদের চেষ্টা করতে হবে, এগুলো বাদ দিয়ে যেসব জায়গায় আমরা একমত হতে পারি, সেই জায়গায় যেতে আসতে পারি, সেই চেষ্টা করতে হবে।’
‘আলোচনায় কিছু বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে। কিছু বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কিছু বিষয় এখনো আলোচিত হয়নি। তবে, যেসব বিষয়ে প্রাথমিকভাবে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো আজ আলোচনায় আনিনি। রাজনৈতিক দিক বিবেচনায় আপনারা যে-যার অবস্থানে থাকবেন। কিন্তু সবাই চেষ্টা করছেন, এক জায়গায় আসার, ঐকমত্যে পৌঁছানোর। আমরা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে আলোচনা করে একমত হওয়ার চেষ্টা করছি।’
তিনি বলেন, ‘সময়ের স্বল্পতা আছে আমাদের। সেটা আপনারা নিশ্চিয়ই বিবেচনা করবেন। এই সপ্তাহে প্রাথমিকভাবে ভেবেছিলাম, আজকের পরে বাকি সময়টা আপনাদের সাংগঠনিক ও অন্যান্য কাজে ব্যস্ততার জন্য কিংবা অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগের জন্য।’
‘কিন্তু বেশিরভাগ দলের পক্ষ থেকে যে মত পাওয়া গেছে, তাতে সম্ভবত এ সপ্তাহে আরও একদিন আমরা বসব। আগামী সপ্তাহে শহীদ আবু সাঈদ ও মুগ্ধের শাহাদাতবার্ষিকীসহ বেশ কিছু কর্মসূচি রয়েছে। তারমধ্যেও একটু সময় বের করে আমাদের এই আলোচনাটা অব্যাহত রাখতে হবে,’ যোগ করেন তিনি।
আরও পড়ুন: জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে একটি ‘সনদের’ জায়গায় পৌঁছানোর আশা আলী রীয়াজের
রাজনীতিবিদদের উদ্দেশ্যে কমিশনের সহাসভাপতি আরও বলেন, আপনারা সাংগঠনিক কর্মসূচির পাশাপাশি, ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টিও যদি বিবেচনায় রাখেন, তাহলে আমাদের সবার কাজের অগ্রগতির সুযোগ হবে।
তিনি বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে আলোচনা শেষ করে কমিশন বসছে, কীভাবে সংশোধিতভাবে জিনিসগুলোকে আপনাদের অবস্থানকে ধারণ করেই তৈরি করা যায়, সেই চেষ্টা আমাদের আছে। সেটা আমরা অব্যাহত রাখবো। যাতে করে কোনো রকম ভুলবোঝাবুঝি কিংবা বিভ্রান্তির সৃষ্টি না হয়, সে জন্য আমাদের দিক থেকে সর্বান্তকরণে আন্তরিক চেষ্টা থাকছে। আপনাদের বক্তব্য কিংকা আকাঙ্ক্ষার সাথে সামঞ্জস্যবিধান করা যায়।’
১৫০ দিন আগে
জুলাই অভ্যুত্থান স্মরণে মাসব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধন প্রধান উপদেষ্টার
জুলাই অভ্যুত্থান স্মরণে মাসব্যাপী কর্মসূচি উদ্বোধন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার (১ জুলাই) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। এ সময়ে অনুষ্ঠানমালার কিউআর কোড উন্মুক্ত করেন প্রধান উপদেষ্টা। এছাড়াও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থীর হাতে শিক্ষা বৃত্তির চেক তুলে দেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আজ ইতিহাসের এক গৌরবময় ক্ষণ। এক বছর আগে, এই জুলাই মাসে আমাদের শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন শুরু করেছিলেন, তা এক অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থান রচনা করে আমাদের মুক্তির স্বাদ দিয়েছিল।’
‘জুলাই ছিল দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে এক অমোঘ ডাক, এক জনতার জাগরণ। সেই আন্দোলনের মর্মবাণী ছিল— ফ্যাসিবাদের বিলোপ করে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ, রাষ্ট্রকে জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া,’ যোগ করেন তিনি।
ড. ইউনূস আরও বলেন, ‘আজকে আমরা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে স্মরণ করার অনুষ্ঠানমালা নিয়েছি। এটা শুধু ভাবাবেগের বিষয় নয়, ক্ষোভ প্রকাশের বিষয় নয়। আমরা ১৬ বছর পরে বিরাট বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলাম যে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এবং যে কারণে অভ্যুত্থান হয়েছিল তাৎক্ষণিক যেটা টার্গেট ছিল সেটা আমরা পূরণ করতে পেরেছি। কিন্তু তার পেছনে ছিল একটা বিরাট স্বপ্ন- নতুনভাবে রাষ্ট্রব্যবস্থা বিনির্মাণ, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ।’আরও পড়ুন: আগামী বছরের শুরুর দিকেই নির্বাচন: রুবিওকে প্রধান উপদেষ্টা
‘আমরা প্রতি বছর এই সময়কালটা উদযাপন করব যাতে পরবর্তীতে ১৬ বছর আমাদের অপেক্ষা করতে না হয় আবার এই অভ্যুত্থান করার জন্য। আমরা প্রতি বছর এটা করব যাতে কোনো স্বৈরাচারের কোনো চিহ্ন দেখা গেলে সেটা তাৎক্ষণিকভাবে আমরা বিনাশ করতে পারি সেটার জন্য এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বৈরাচারের প্রথম পাতা মেলার আগেই যেন আমরা তাকে ধরে ফেলতে পারি। ১৬ বছর যেন আমাদের অপেক্ষা করতে না হয়,’ বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, আজকের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি সেই সব তরুণ-তরুণী, নারী-পুরুষ, শিশু- বৃদ্ধ, কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষক, রিকশাচালকদের—যারা রাস্তায় নেমে গণতন্ত্রের পতাকা উঁচিয়ে ধরেছিলেন; সাহস, ত্যাগ আর দৃঢ়তার প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন।
১৫৬ দিন আগে
বিভিন্ন উৎসবে ড্রোন শোয়ের জনপ্রিয়তা বাড়ছে যে কারণে
২০২৪ সালের নববর্ষের রাতে নিউইয়র্কে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন আন্ডারউড দম্পতি। তাদের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার শেষে ছিল একটি চমক। এক-দেড় শ ড্রোন রাতের আকাশে উড়িয়ে বিভিন্ন রঙের আলোকচ্ছটায় বর-কনের ছবি ফুটে ওঠে।
মিস্টার আন্ডারউড বেসবলের ভক্ত হওয়ায় ড্রোন দিয়ে একজন বেসবল খেলোয়াড়ের বল মারার দৃশ্যও চিত্রণ করা হয়। তাছাড়া, একটি হীরার আংটি একটি আঙুলে পরানো হচ্ছে, এমন দৃশ্যও দেখানো হয় ড্রোনে।
বিবিসিতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজেদের বিয়ের রাতের ড্রোন প্রদর্শনীর দৃশ্য এভাবে বর্ণনা করছিলেন আন্ডারউড-পত্নী।
তবে এরকম প্রদর্শনী এখন আর নতুন নয়। বিয়েসহ বিভিন্ন উৎসবে হরহামেশাই দেখা যায় ড্রোনের কীর্তি।
প্রযুক্তির উন্নতির ধারায় সবশেষ সংযোজনগুলোর মধ্যে অন্যতম এই ড্রোন প্রদর্শনী। একসময় যা ছিল বিরল, এখন তা জন্মদিন, বিয়ে থেকে শুরু করে বড় বড় ক্রীড়া অনুষ্ঠানে পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে। এমনকি কিছু থিম পার্কে নিয়মিতভাবে প্রতিদিন ড্রোন প্রদর্শনী হয়।
ইউরোপ-আমেরিকা জয় করে ভারতীয় উপমহাদেশেও তা ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এই তো সেদিন, পয়লা বৈশাখের সন্ধ্যায় ঢাকাতেও দেখা মিলল অভিনব এক ড্রোন প্রদর্শনীর। সেদিন জাতীয় সংসদ ভবন এলাকার আকাশে জুলাই অভ্যুত্থানের থিমে ফুটিয়ে তোলা হয় নানা দৃশ্য। সেই সঙ্গে ছিল আরও কত কী!
আরও পড়ুন: মাথা-ঘাড়ের ক্যানসারে দ্বিগুণ কার্যকরী ওষুধ আবিষ্কার
২০২৪ সালে যুক্তরাজ্যের গ্লাস্টনবারি মিউজিক ফেস্টিভ্যালে প্রথম ড্রোন প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। এরপর গত অক্টোবরে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ড্রোন প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয় চীনে। এতে অংশ নেয় মোট ১০ হাজার ২০০টি ড্রোন, যা আগের মাসেই গড়া একটি রেকর্ড ভেঙে দিয়েছিল।
‘দ্য ড্রোন গার্ল’ নামে পরিচিত ড্রোন পাইলট ও সাংবাদিক স্যালি ফ্রেঞ্চ বলেন, ‘ড্রোন প্রদর্শনী অসাধারণ শিল্পকর্ম। বর্তমানে বেসবল খেলা, করপোরেট সম্মেলন এমনকি সমুদ্রবন্দরে নতুন ক্রুজ লঞ্চ উদ্বোধনের মতো অনুষ্ঠানেও ড্রোন প্রদর্শনী হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে এটি আরও উন্নত হয়ে উঠেছে।’
তিনি বলেন, ‘কিছু প্রদর্শনীতে হাজার হাজার ড্রোন থাকে যা দিয়ে অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে চিত্র বা অ্যানিমেশন তৈরি করা সম্ভব। আমি একবার একটি স্টার ওয়ার্স থিমের ড্রোন শো দেখেছিলাম, যেখানে পুরো একটি যুদ্ধ দেখানো হয়েছিল।’
স্যালির মতে, ড্রোন প্রদর্শনীর ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা হতে পারে খরচ। যুক্তরাজ্যে প্রতিটি ড্রোনের জন্য প্রায় ৩০০ ডলার (প্রায় ২২০ পাউন্ড), বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৩৬ হাজার টাকার বেশি খরচ হয় বলে জানান তিনি।
লাটভিয়াভিত্তিক বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান এসপিএইচ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ৫০০টি ড্রোনের একটি প্রদর্শনীর খরচ দাঁড়ায় ১ লাখ ৫০ হাজার ডলারের বেশি, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় দুই কোটি টাকা।
১৭৭ দিন আগে
জুলাই অভ্যুত্থান: জাতিসংঘের রিপোর্টকে ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে সংরক্ষণে রুল
জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদনকে ঐতিহাসিক দলিল ও এভিডেন্স হিসেবে সংরক্ষণ, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নলেজে রাখা ও রিসার্চের উদ্দেশ্যে সংরক্ষণের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
এক সম্পূরক আবেদনের শুনানি শেষে বুধবার (১৪ মে) বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন রিটকারী আইনজীবী তানভীর আহমেদ।
গণহত্যাকারী ও স্বৈরশাসককে টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে গত বছরের ১৩ আগস্ট হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী। তখন আদালত কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সাধারণ জনগণের হত্যাকারীদের যথাযথ বিচারের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন।
এর মধ্যে জাতিসংঘের প্রতিবেদন প্রকাশ পায়, সেই প্রতিবেদন যুক্ত করে আবেদন করেন আইনজীবী তানভীর আহমেদ।
আরও পড়ুন: মুক্তিযুদ্ধ-জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনায় এগোতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার: প্রধান উপদেষ্টা
আদেশের পর আইনজীবী তানভীর আহমেদ জানান, দোষীদের বিচার নিয়ে আগস্টে রিট করি। তখন রুল ইস্যু করেন। সে অনুযায়ী সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। ট্রাইব্যুনালকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আইন সংশোধন করা হয়েছে। তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন টিম কাজ করছে। এর মধ্যে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। রিপোর্টে ১৪০০ মানুষকে খুন করার কথা বলা হয়েছে। তখনকার রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, কীভাবে সহিংসতা চালানো হয়েছে, বিচার ব্যবস্থা কেমন ছিল—অর্থাৎ একটি যথাযথ পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট।
তিনি বলেন, আমাদের দৃষ্টিতে তিনটি উদ্দেশ্যে এটিকে সংরক্ষণ করা উচিত। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জানার জন্য—কী ঘটনা ঘটেছিল। এভিডেন্স হিসেবে সংরক্ষণ করার জন্য। যদিও ইতোমধ্যে ট্রাইব্যুনাল এটাকে নিয়েছে বলে জেনেছি। ভবিষতে রিসার্চের উদ্দেশ্যে অন্য দেশে ব্যবহার করা। এ জন্য কোর্ট অব রেকর্ড হিসেবে হাইকোর্টে রিপোর্টসহ আবেদন দাখিল করেছি। আদালত রুল জারি করেছেন।
২০৪ দিন আগে
আ.লীগকে পরিপূর্ণ নিষিদ্ধের দাবিতে জুলাই আহতের অবস্থান কর্মসূচি
আওয়ামী লীগের ওপর পূর্ণাঙ্গ নিষেধাজ্ঞা ও ন্যায়বিচারের দাবিতে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন জুলাই অভ্যুত্থানের আহতরা।
রবিবার (১১ মে) শাহবাগ মোড়ে সকাল থেকে এই কর্মসূচি শুরু করেন তারা। এতে ওই এলাকার স্বাভাবিক যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে, বিশেষ করে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাওয়া রোগী ও স্বজনরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন।
গতকাল (শনিবার) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগ ও এর নেতাদের বিচারকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেসসহ দলটির যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে সরকার।
আরও পড়ুন: আ.লীগ নিষিদ্ধ করায় নেতিবাচক আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া আশা করে না সরকার: প্রেস সচিব
এরপর আজ (রবিবার) এই প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হয়। অবস্থান কর্মসূচিটি পরিচালনা করছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যরা।
জুলাই অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডে আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে অভিযোগ তুলে দলটি নিষিদ্ধ করার ও নেতাকর্মীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলনে নামেন তারা।
২০৭ দিন আগে