জুলাই ঘোষণাপত্র
জুলাই ঘোষণাপত্র সংশোধনের দাবি জানাল জামায়াত
জুলাই ঘোষণাপত্রে একটি নির্দিষ্ট দলের চিন্তা-চেতনা প্রকাশ পেয়েছে—এমন অভিযোগ তুলে এটি সংশোধনের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, রাজনীতির ময়দানে নির্দিষ্ট দলের চিন্তা-চেতনা প্রকাশ পাওয়া নিয়ে গুঞ্জন উঠেছে।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আব্দুস সালাম হলে এক অনুষ্ঠানে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল এই দাবি জানান।
তিনি বলেন, ‘জাতি জুলাই বিপ্লবের অপেক্ষায় ছিল। দেশের ইতিহাসে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান হিসেবে লিপিবদ্ধ থাকবে। তবে শত শত মানুষের রক্ত ও জীবন যদি ব্যর্থ হয়ে যায়—তাহলে আরেকটি ফ্যাসিবাদের জন্ম হতে পারে।’
পড়ুন: বিচার-সংস্কার, নির্বাচন পাশাপাশি হতে হবে: জামায়াত আমির
গোলাম পরওয়ার অভিযোগ করে বলেন, ‘বিচারিক হত্যা, পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বরের ঘটনা এবং শিক্ষকদের অবদান—এসব কিছুই জুলাই ঘোষণাপত্রে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। জুলাইয়ের যে আকাঙ্ক্ষা ছিল—তা ঘোষণাপত্রে প্রতিফলিত হয়নি। এসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে ঘোষণাপত্রটি সংশোধন করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্রে ইসলামপন্থীদের অবদান মূল্যায়িত হয়নি। প্রধান উপদেষ্টার তৈরি ঘোষণাপত্রটি অসম্পূর্ণ। বিদ্যমান ব্যবস্থায় নির্বাচন হলে নতুন ফ্যাসিবাদের জন্ম হতে পারে। নির্বাচনের সময় ঘোষণাকে ইতিবাচক বলা হলেও, প্রয়োজনীয় সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে—তা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা হবে। নির্দলীয় সরকারের অধীনেই ‘জুলাই সনদের’ আইনি ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করে সেই আলোকে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানান তিনি।
পড়ুন: জুলাই ঘোষণাপত্র অসম্পূর্ণ, গণমানুষের প্রত্যাশার প্রতিফলন নেই: জামায়াত
বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন আয়োজিত ২০২৪ সালের ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মরণে ‘ছাত্র-শিক্ষক-জনতার অবদান ও করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান বক্তার বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আলোচনা সভায় বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশনের জেনারেল সেক্রেটারি অধ্যাপক এবিএম ফজলুল করীমের সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন ফেডারেশনের সভাপতি ড. এম কোরবান আলী। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘রন্ধ্রে রন্ধ্রে ফ্যাসিবাদ লুকিয়ে আছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে জাতীয় নির্বাচন সম্ভব নয়। প্রত্যেক বিভাগে শিক্ষার মান নিশ্চিত করা সময়ের অনিবার্য দাবি। যাদের কারণে দ্বিতীয় স্বাধীনতার সূচনা হয়েছিল—সেই শ্রমিক, মুটে-মজুর ও শিক্ষকরা—জুলাই ঘোষণাপত্রে উপেক্ষিত। তাই দেশ ও জাতির স্বার্থে অন্তঃসারশূন্য এ ঘোষণাপত্র সংশোধন করতে হবে।’
এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন দলটির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ। এছাড়াও বক্তব্য দেন— বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন শিক্ষক পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজুল ইসলাম, বাংলাদেশ ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষক পরিষদ সভাপতি জিএম আলাউদ্দিন, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক পরিষদ অধ্যক্ষ ড. মো. সাখাওয়াত হোসাইন, বাংলাদেশ মাধ্যমিক স্কুল শিক্ষক পরিষদ সভাপতি অধ্যক্ষ মো. মুনজুরুল হক, বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক পরিষদ সভাপতি অধ্যাপক নূর নবী মানিক, বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষক পরিষদ সভাপতি অধ্যক্ষ ড. মাওলানা শাহজাহান মাদানী, বাংলাদেশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক পরিষদ সভাপতি অধ্যাপক ড. উমার আলী প্রমুখ।
১১৯ দিন আগে
জুলাই ঘোষণাপত্র: চব্বিশের ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানকে ‘রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হবে’
চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানকে পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে ‘রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি’ দেওয়ার ঘোষণা সম্বলিত জুলাই ঘোষণাপত্র ঘোষণা করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউনূস।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) বিকালে সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠানটি শুরু হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়। পরে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর জুলাই আন্দোলন নিয়ে একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
পরে রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষনেতাদের সঙ্গে নিয়ে জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করেন প্রধান উপদেষ্টা।
জুলাই ঘোষণাপত্র-
১। যেহেতু উপনিবেশ বিরোধী লড়াইয়ের সুদীর্ঘকালের ধারাবাহিকতায় এই ভূখণ্ডের মানুষ দীর্ঘ ২৩ বছর পাকিস্তানের স্বৈরশাসকদের বঞ্চনা ও শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল এবং নির্বিচার গণহত্যার বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করে জাতীয় মুক্তির লক্ষ্যে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিল;
২। যেহেতু, বাংলাদেশের আপামর জনগণ দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এই ভূখণ্ডে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বিবৃত সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের ভিত্তিতে উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়নের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছে;
৩। যেহেতু স্বাধীন বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণয়ন পদ্ধতি, এর কাঠামোগত দুর্বলতা ও অপপ্রয়োগের ফলে স্বাধীনতা-পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযুদ্ধের জনআকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয়েছিল এবং গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকারিতা ক্ষুণ্ণ করেছিল;
৪। যেহেতু স্বাধীনতা-পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার স্বাধীনতার মূলমন্ত্র গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার বিপরীতে বাকশালের নামে সাংবিধানিকভাবে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করে এবং মতপ্রকাশ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ করে, যার প্রতিক্রিয়ায় ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর দেশে সিপাহী-জনতার ঐক্যবদ্ধ বিপ্লব সংঘটিত হয় এবং পরবর্তী সময়ে একদলীয় বাকশাল পদ্ধতির পরিবর্তে বহুদলীয় গণতন্ত্র, মতপ্রকাশ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা পুনঃপ্রবর্তনের পথ সুগম হয়।
৫। যেহেতু আশির দশকে সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ নয় বছর ছাত্র-জনতার অবিরাম সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয় এবং ১৯৯১ইং সনে পুনরায় সংসদীয় গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়।
৬। যেহেতু, দেশী-বিদেশি চক্রান্তে সরকার পরিবর্তনের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ায় ১/১১ -এর ষড়যন্ত্রমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার একচ্ছত্র ক্ষমতা, আধিপত্য ও ফ্যাসিবাদের পথ সুগম করা হয়।
৭। যেহেতু, গত দীর্ঘ ষোল বছরের ফ্যাসিবাদী, অগণতান্ত্রিক এবং গণবিরোধী শাসনব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্যে এবং একদলীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার অতি উগ্র বাসনা চরিতার্থ করার অভিপ্রায়ে সংবিধানের অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক পরিবর্তন করা হয় এবং যার ফলে একদলীয় একচ্ছত্র ক্ষমতা ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়।
৮। যেহেতু, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসন, গুম-খুন, আইন-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ এবং একদলীয় স্বার্থে সংবিধান সংশোধন ও পরিবর্তন বাংলাদেশের সকল রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে ধ্বংস করে।
৯। যেহেতু, হাসিনা সরকারের আমলে তারই নেতৃত্বে একটি চরম গণবিরোধী, একনায়কতান্ত্রিক, ও মানবাধিকার হরণকারী শক্তি বাংলাদেশকে একটি ফ্যাসিবাদী, মাফিয়া এবং ব্যর্থ রাষ্ট্রের রূপ দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে।
পড়ুন: জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস
১০। যেহেতু, তথাকথিত উন্নয়নের নামে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী নেতৃত্বে সীমাহীন দুর্নীতি, ব্যাংক লুট, অর্থ পাচার ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসের মধ্য দিয়ে বিগত পতিত দুর্নীতিবাজ আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশ ও এর অমিত অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে বিপর্যস্ত করে তোলে এবং এর পরিবেশ, প্রাণবৈচিত্র্য ও জলবায়ুকে বিপন্ন করে।
১১। যেহেতু শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দল, ছাত্র ও শ্রমিক সংগঠনসহ সমাজের সর্বস্তরের জনগণ গত প্রায় ষোল বছর যাবত নিরন্তর গণতান্ত্রিক সংগ্রাম করে জেল-জুলুম, হামলা-মামলা, গুম-খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়;
১২। যেহেতু বাংলাদেশে বিদেশী রাষ্ট্রের অন্যায় প্রভুত্ব, শোষণ ও খবরদারিত্বের বিরুদ্ধে এদেশের মানুষের ন্যায়সংগত আন্দোলনকে বহিঃশক্তির তাবেদার আওয়ামী লীগ সরকার নিষ্ঠুর শক্তিপ্রয়োগের মাধ্যমে দমন করে।
১৩। যেহেতু অবৈধভাবে ক্ষমতা অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগ সরকার তিনটি প্রহসনের নির্বাচনে (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ এর জাতীয় সংসদ নির্বাচন) এদেশের মানুষকে ভোটাধিকার ও প্রতিনিধিত্ব থেকে বঞ্চিত করে। ১৪। যেহেতু, আওয়ামী লীগ আমলে ভিন্নমতের রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, শিক্ষার্থী ও তরুণদের নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন করা হয় এবং সরকারী চাকুরীতে একচেটিয়া দলীয় নিয়োগ ও কোটাভিত্তিক বৈষম্যের কারণে ছাত্র, চাকুরী প্রত্যাশী ও নাগরিকদের মধ্যে চরম ক্ষোভের জন্ম হয়;
১৫। যেহেতু বিরোধী রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের ওপর চরম নিপীড়নের ফলে দীর্ঘদিন ধরে জনরোষের সৃষ্টি হয় এবং জনগণ সকল বৈধ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াই চালিয়ে যায়।
১৬। যেহেতু, সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটাব্যবস্থার বিলোপ ও দুর্নীতি প্রতিরোধে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক ব্যাপক দমন-পীড়ন, বর্বর অত্যাচার ও মানবতাবিরোধী হত্যাকাণ্ড চালানো হয়, যার ফলে সারা দেশে দল-মত নির্বিশেষে ছাত্র-জনতার উত্তাল গণবিক্ষোভ গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়।
১৭। যেহেতু ফ্যাসিস্ট শক্তির বিরুদ্ধে অদম্য ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক দল, ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী, শ্রমিক সংগঠনসহ সমাজের সকল স্তরের মানুষ যোগদান করে এবং আওয়ামী ফ্যাসিবাদী বাহিনী রাজপথে নারী-শিশুসহ প্রায় এক হাজার মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে, অগনিত মানুষ পঙ্গুত্ব ও অন্ধত্ব বরণ করে এবং আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে সামরিক বাহিনীর সদস্যগণ জনগণের গণতান্ত্রিক লড়াইকে সমর্থন প্রদান করে।
১৮। যেহেতু, অবৈধ শেখ হাসিনা সরকারের পতন, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের লক্ষ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে জনগণ অসহযোগ আন্দোলন শুরু করে, পরবর্তী সময়ে ৫ আগস্ট ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ পরিচালনা করে এবং ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনরত সকল রাজনৈতিক দল, ছাত্র-জনতা তথা সর্বস্তরের সকল শ্রেণী, পেশার আপামর জনসাধারণের তীব্র আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে গণভবনমুখী জনতার উত্তাল যাত্রার মুখে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
১৯। যেহেতু বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংকট মোকাবেলায় গণঅভ্যূত্থানের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত জনগণের সার্বভৌমত্বের প্রত্যয় ও প্রয়োগ রাজনৈতিক ও আইনি উভয় দিক থেকে যুক্তিসঙ্গত, বৈধ ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত;
২০। যেহেতু জনগণের দাবি অনুযায়ী এরপর অবৈধ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া হয় এবং সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের মতামতের আলোকে সাংবিধানিকভাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ৮ আগস্ট ২০২৪ তারিখে একটি অন্তর্বতীকালীন সরকার গঠন করা হয়।
২১। যেহেতু, বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণের ফ্যাসিবাদবিরোধী তীব্র আকাঙ্ক্ষা এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদ, বৈষম্য ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণের অভিপ্রায় প্রকাশিত হয়।
পড়ুন: মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বে জুলাই ঘোষণাপত্র অনুষ্ঠানে অংশ নেবে বিএনপি
২২। সেহেতু, বাংলাদেশের জনগণ সুশাসন ও সুষ্ঠু নির্বাচন, ফ্যাসিবাদী শাসনের পুনরাবৃত্তি রোধ, আইনের শাসন এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে বিদ্যমান সংবিধান ও সকল রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের গণতান্ত্রিক সংস্কার সাধনের অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে।
২৩। সেহেতু, বাংলাদেশের জনগণ বিগত ষোল বছরের দীর্ঘ ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রাম কালে এবং ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালীন সময়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক সংঘটিত গুম-খুন, হত্যা, গণহত্যা, মানবতা বিরোধী অপরাধ ও সকল ধরনের নির্যাতন, নিপীড়ন এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুণ্ঠনের অপরাধসমূহের দ্রুত উপযুক্ত বিচারের দৃঢ় অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে।
২৪। সেহেতু, বাংলাদেশের জনগণ জুলাই গনঅভ্যুত্থানের সকল শহীদদের জাতীয় বীর হিসেবে ঘোষণা করে শহীদদের পরিবার, আহত যোদ্ধা এবং আন্দোলনকারী ছাত্রজনতাকে প্রয়োজনীয় সকল আইনি সুরক্ষা দেওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে।
২৫। সেহেতু, বাংলাদেশের জনগণ যুক্তিসঙ্গত সময়ে আয়োজিতব্য অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত জাতীয় সংসদে প্রতিশ্রুত প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে দেশের মানুষের প্রত্যাশা, বিশেষত তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী আইনের শাসন ও মানবাধিকার, দুর্নীতি, শোষণমুক্ত, বৈষম্যহীন ও মূল্যবোধসম্পন্ন সমাজ এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে।
২৬। সেহেতু বাংলাদেশের জনগণ এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছে যে একটি পরিবেশ ও জলবায়ু সহিষ্ণু অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই উন্নয়ন কৌশলের মাধ্যমে বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের অধিকার সংরক্ষিত হবে। এবং ২৭। বাংলাদেশের জনগণ এই অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে যে, ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান ২০২৪-এর উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করা হবে এবং পরবর্তী নির্বাচনে নির্বাচিত সরকারের সংস্কারকৃত সংবিধানের তফসিলে এ ঘোষণাপত্র সন্নিবেশিত থাকবে।
২৮। ৫ আগস্ট ২০২৪ সালে গণঅভ্যুত্থানে বিজয়ী বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবে এই ঘোষণাপত্র প্রনয়ণ করা হলো।
অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ রেজাউল করিম, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, এবি পার্টির সভাপতি মুজিবুর রহমান মঞ্জু, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর,গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী, ইসলামিক দলগুলোর নেতারাসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
ঘোষণাপত্র পাঠ অনুষ্ঠানের আগে বেলা ১১টা থেকে সাইমুম শিল্পী গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক পরিবেশনা মাধ্যমে জুলাই অভ্যুত্থান দিবস উদযাপন অনুষ্ঠান শুরু হয়। পরে ধারাবাহিকভাবে অন্যান্য সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো পরিবেশনা করেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বিশেষ ড্রোন শো এবং রাত ৮টা থেকে আর্টসেল পরিবেশনা রয়েছে।
১২১ দিন আগে
কোচ পছন্দ না হওয়ায় বিক্ষোভ, রাজশাহী থেকে ১ ঘণ্টা পর ছাড়ল বিশেষ ট্রেন
জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য বরাদ্দ দেওয়া বিশেষ ট্রেনের কোচ পছন্দ না হওয়ায় রাজশাহী রেল স্টেশনে বিক্ষোভ করেছেন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আগ্রহীরা। তার প্রায় এক ঘণ্টা বিলম্বের পর ঢাকার উদ্দেশে স্টেশন ছাড়ে ওই বিশেষ ট্রেনটি।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) সকাল সোয়া ৭টার দিকে বিশেষ ট্রেন যাত্রা উপযোগী নয় দাবি করে স্টেশনের এক নম্বর প্লাটফর্মের রেলপথে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আগ্রহীরা। বিশেষ ট্রেন পছন্দ না হওয়ায় তারা রাজশাহী রেল স্টেশনে রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী সিল্কসিটি ট্রেনটি আটকে দেন।
আন্দোলনের মুখে জুলাই যোদ্ধাদের ঢাকাগামী বিশেষ ট্রেন ৭টা ২০ মিনিটের পরিবর্তে ৮টা ১৩ মিনিটে ছেড়ে যায়। সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেন ৭টা ৪০ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও আন্দোলনের মুখে ছেড়ে যায় ৮টা ২৫ মিনিটে।
রাজশাহী, পাবনা, ঈশ্বরদী, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ স্টেশন থেকে শিক্ষার্থীদের নিয়ে ঢাকা পৌঁছানোর কথা রয়েছে ওই বিশেষ ট্রেনটির।
আরও পড়ুন: অধিকাংশ খালি আসন নিয়েই ফরিদপুর ছাড়ল স্পেশাল ট্রেন
আন্দোলনকারীদের ভাষ্য, বিশেষ ট্রেন হিসেবে বরাদ্দ দেওয়া কোচ ও ইঞ্জিন অনেক পুরনো ও লোকাল মানের। এতে গাদাগাদি করে বসার মতো পরিবেশ তৈরি হয়। দ্রুতগতিতে ঢাকায় পৌঁছানো সম্ভব নয় বুঝতে পেরে তারা ভালো মানের ট্রেনের দাবিতে রেলপথে অবস্থান নেন।
এরপর একপক্ষ রেল বিভাগের বরাদ্দ দেওয়া বিশেষ ট্রেনে চড়ে ঢাকা রওনা দেন। অন্যপক্ষ সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনে ঢাকা রওনা হন।
এ বিষয়ে রাজশাহী স্টেশন ম্যানেজার শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। যে ট্রেন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সেগুলো যথেষ্ট মানসম্মত। বিষয়টি ভুল বোঝাবুঝি ছিল।’
১২১ দিন আগে
অধিকাংশ খালি আসন নিয়েই ফরিদপুর ছাড়ল স্পেশাল ট্রেন
ফরিদপুর থেকে জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ঢাকাগামী একটি বিশেষ ট্রেন ভাঙ্গা রেলস্টেশন থেকে যাত্রা করে।
আজ (মঙ্গলবার) বেলা ১১টা ২৩ মিনিটে ট্রেনটি ঢাকা অভিমুখে যাত্রা করে। তবে জেলাজুড়ে অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে জুলাইযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দ এই বিশেষ ট্রেনটির অধিকাংশ বগিই ছিল ফাঁকা। ৬৭৬ আসনবিশিষ্ট এই ট্রেনটি মাত্র ১৭ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়।
ভাঙ্গার স্টেশন মাস্টার জিল্লুর রহমান জানান, ‘ঢাকাগামী এই স্পেশাল ট্রেনটি ১১টা ২৩ মিনিটে ভাঙ্গা থেকে রওনা দেয় ঢাকার উদ্দেশ্যে। ট্রেনটিতে আসন সংখ্যা ছিল ৬৭৬। তবে অধিকাংশ বগি ফাঁকা ছিল।
১২১ দিন আগে
মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বে জুলাই ঘোষণাপত্র অনুষ্ঠানে অংশ নেবে বিএনপি
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠের অনুষ্ঠানে অংশ নেবে বিএনপির পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।
রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে আজ মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) ঘোষণাপত্র পাঠের অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে সরকার।
বিএনপির মিডিয়া সেল সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন—বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান এবং সালাহউদ্দিন আহমেদ।
তিনি আরও জানান, সোমবার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
শায়রুল বলেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিএনপি নেতাদের কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি না করে একসঙ্গে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আহ্বান ফখরুলের
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিনকেও কর্মসূচিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
আজ বিকাল ৫টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
১২২ দিন আগে
মঙ্গলবার জাতির সামনে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ উপস্থাপন
আগামী মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) বিকেল ৫টায় ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ জাতির উদ্দেশ্যে উপস্থাপন করা হবে, যা আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের এক বছর পূর্তির প্রতীক হিসেবে গণ্য হবে।
শনিবার (২ আগস্ট) প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানান, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’র খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে এবং তা মঙ্গলবার জাতির সামনে উন্মোচনের পরিকল্পনা রয়েছে।
পড়ুন: এনসিপির ‘নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার’ ঘোষণা
তিনি বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া সকল রাজনৈতিক দলের উপস্থিতিতে আগামী মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) বিকেল ৫টায় ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে।’
১২৩ দিন আগে
গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার রূপকল্প হচ্ছে জুলাই ঘোষণাপত্র: তথ্য উপদেষ্টা
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার রূপকল্প হচ্ছে জুলাই ঘোষণাপত্র বলে দাবি করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তিনি বলেন, এটি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার দালিলিক প্রমাণ। আগামী ৫ আগস্ট বা তার আগেও জুলাই ঘোষণাপত্র হতে পারে।
শনিবার (২ আগস্ট) ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ র্যালি’ পরবর্তী বক্তব্যে এসব কথা বলেন উপদেষ্টা।
জুলাই সনদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে জুলাই সনদ তৈরির কাজ চলছে। আগামী ৫ আগস্ট বা তার আগেই এই সনদ স্বাক্ষরিত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, অভ্যুত্থানকে জনস্মৃতিতে ধরে রাখতে মন্ত্রণালয় সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অধীন ১৫টি দপ্তর–সংস্থার অধিকাংশই জুলাই গণঅভ্যুত্থানকেন্দ্রিক ঘটনাপ্রবাহের তথ্য প্রচার, দলিল সংরক্ষণ ও প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণে কাজ করছে। বাংলাদেশ বেতার ও বিটিভি গণঅভ্যুত্থানকেন্দ্রিক প্রামাণ্যচিত্র ও অনুষ্ঠান প্রচার করছে।
তথ্য অধিদপ্তর (পিআইডি) ও প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) গণঅভ্যুত্থান নিয়ে গবেষণাধর্মী কাজ করছে। এর পাশাপাশি চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর (ডিএফপি) জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে বেশ কিছু প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করেছে। বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের দলিল সংরক্ষণে ইতিমধ্যে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহিদ ও আহত সাংবাদিকদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে।
পড়ুন: জুলাই ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত, প্রকাশিত হবে মঙ্গলবার
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতিচারণা করে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা বলেন, দল–মত–নির্বিশেষে মানুষ এই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছেন। গণঅভ্যুত্থানের শেষ পর্যায়ে সব পেশাজীবী, বিশেষ করে শিক্ষক, সমাজকর্মী ও সংস্কৃতিকর্মীরা রাজপথে নেমে এসেছিলেন।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারকে প্রতিবাদ ও বিজয়ের অনুষঙ্গ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা এখান (কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার) থেকে গণঅভ্যুত্থান শুরু করেছিলাম, এখানে এসে বিজয় উদ্যাপন করতে পেরেছিলাম।
মাহফুজ আলম বলেন, গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের আমরা যত দিন স্মরণে রাখব, আহতদের মর্মপীড়া যত দিন অনুভব করব, তত দিন আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়ার কাজে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকব। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিশ্রুতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত এক বছরে সরকার অনেকগুলো প্রতিশ্রুতি দিয়েছে; এর মধ্যে একটি বড় অংশের বাস্তবায়নের পথে সরকার অগ্রসর হয়েছে।
গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের স্মরণ করে তিনি বলেন, আমরা শহিদদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে নতুনভাবে স্বাধীনতা পেয়েছি, নতুনভাবে দেশ গড়ার সুযোগ পেয়েছি। তিনি দেশ গড়ার কাজে মনোনিবেশ করতে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানান।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে র্যালি–পরবর্তী সমাবেশে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা, মন্ত্রণালয় ও এর অধীন দপ্তর–সংস্থার কর্মকর্তা–কর্মচারী এবং সাংবাদিকেরা উপস্থিত ছিলেন।
১২৪ দিন আগে
জুলাই ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত, প্রকাশিত হবে মঙ্গলবার
গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাঁচিয়ে রাখতে জুলাই ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। তিন দিন পরেই এটি জাতির সামনে তুলে ধরা হবে। এ সময়ে গণঅভ্যুত্থানের সব পক্ষ উপস্থিত থাকবে। শনিবার (২ আগস্ট) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে এমন তথ্য জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়া চূড়ান্ত করেছে। আগামী মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) বিকেল ৫টায় গণঅভ্যুত্থানের সব পক্ষের উপস্থিতিতে জুলাই ঘোষণাপত্র জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত অবিলম্বে ঘোষণা করা হবে।
এর আগে শুক্রবার (১ আগস্ট) রাতে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র এখন বাস্তবতা। ৫ আগস্টের মধ্যেই তা ঘোষিত হবে। ঘোষণাপত্র ইস্যুকে গণআকাঙ্ক্ষায় বাঁচিয়ে রেখে এটা বাস্তবায়নের পথ সুগম করার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।’
আরও পড়ুন: জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদের দাবিতে ‘জুলাই শহীদ পরিবার’র শাহবাগ অবরোধ
গত বছর জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে, বিশেষ করে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানে সম্পৃক্ত দল ও সংগঠনগুলোর মাঝে অন্যতম আলোচিত বিষয় এই জুলাই ঘোষণাপত্র।
অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি সামনে রেখে সম্প্রতি জুলাই ঘোষণাপত্রের চূড়ান্ত খসড়া বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) বিভিন্ন দলকে পাঠিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
ঐকমত্য কমিশন এ নিয়ে রাজনৈতিক দলসমূহের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক ও মতবিনিময় করেছে।
১২৫ দিন আগে
জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদের দাবিতে ‘জুলাই শহীদ পরিবার’র শাহবাগ অবরোধ
জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিতে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছেন জুলাই যোদ্ধারা।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সকাল ৯টা থেকে ‘জুলাই শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধা (আহত)’ ব্যানারে একদল আন্দোলনকারী শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন।
আন্দোলনকারীরা বলেন, জুলাই মাসের আন্দোলনে নিহত ও আহতদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হবে এবং তাদের সামাজিক ও আইনগত সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
জুলাই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচারের জন্য একটি নির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিও জানান তারা।
পড়ুন: ডাকসুর খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ, ৬ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ
আন্দোলনের নেতৃত্বে রয়েছেন মাসুদ রানা সৌরভ। তিনি গত বছরের জুলাই আন্দোলনের সময় মহাখালী এলাকায় আহত হয়েছিলেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দাবি আদায় না হওয়া বা সরকারের আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত আমরা রাস্তা ছাড়ব না।’
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শাহবাগ মোড়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে এবং আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
১২৬ দিন আগে
জুলাই ঘোষণাপত্র প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন: সংবিধান কোনো ‘সাহিত্য’ নয়
জুলাই ঘোষণাপত্র সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘সংবিধান কোনো সাহিত্য নয়; যেখানে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পর্যন্ত সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, সেখানে জুলাই ঘোষণাপত্র অন্তর্ভুক্তির কোনো কারণ নেই।’
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘২৪-এর গণঅভ্যুত্থানকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে বিএনপি আন্তরিক। তবে একটি পুরো ঘোষণাপত্রকে সংবিধানে যোগ না করে জুলাইয়ের চেতনা এবং বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বৈধতা সংবিধানের চতুর্থ তফসিলে যোগ করা যেতে পারে।’
‘মুক্তিযুদ্ধের সময় ১০ এপ্রিলের ঘোষণাপত্রের ওপর ভিত্তি করে ১৭ এপ্রিল প্রবাসী সরকার গঠন হয়েছিল। যুদ্ধ শেষে ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর নতুন সংবিধান প্রণয়ন হলে সেখানে এই ঘোষণাপত্র পুরোটা যুক্ত না করে এর গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় যোগ করা হয়েছিল। এখন জুলাই ঘোষণাপত্র যোগ করতে গেলে প্রশ্ন উঠবে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র, ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস এবং ‘৯০-এর গণঅভ্যুত্থান কেন সংবিধানে যোগ করা হবে না।’
আরও পড়ুন: শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করতে অন্তর্বতী সরকারকে আহ্বান ফখরুলের
জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে বিএনপির আগ্রহ নেই—এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘১২ ফেব্রুয়ারি সরকারের দুই উপদেষ্টার কাছে এই ঘোষণাপত্রে বিএনপির অবস্থান নিয়ে খসড়া প্রেরণ করা হলেও এ কয় মাসে এর কোনো উত্তর আসেনি। গত কয়েকদিন আগে সরকারের পক্ষ থেকে এক উপদেষ্টা যোগাযোগ করলে একদিনের মাথায় বিএনপি প্রতিউত্তর দিয়েছে। জুলাই প্রসঙ্গে বিএনপি বরাবরই আন্তরিক।’
ঐকমত্য কমিশনে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ প্রসঙ্গে বিএনপির অবস্থান প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন জানান, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই আপিল বিভাগের সর্বজ্যেষ্ঠ দুই বিচারপতির মধ্য থেকে একজনকে বেছে নিতে পারবেন রাষ্ট্রপতি। এই প্রস্তাবে বিএনপি একমত হলেও বেশ কিছু রাজনৈতিক দলের মধ্যে মতানৈক্য দেখা গেছে। তাই এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়নি।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৃহস্পতিবারের আলোচনায় বিএনপি ছাড়াও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
১৪৭ দিন আগে