নেতানিয়াহু
গাজায় যুদ্ধবিরতির নতুন প্রস্তাবে হামাসের সম্মতি
গাজায় ৬০ দিনের নতুন যুদ্ধবিরতির সর্বশেষ প্রস্তাবে রাজি হয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস। যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির বিষয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তি করতে আঞ্চলিক মধ্যস্থতাকারীদের প্রস্তাব মেনে নিয়েছে হামাস।
স্থানীয় সময় রবিবার (১৭ আগস্ট) কাতার ও মিসর যে প্রস্তাব উপস্থাপন করেছিল, সেটি গ্রহণ করেছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে হামাস।
হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর জ্যেষ্ঠ সদস্য বাছেম নাইম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছেন, মধ্যস্থতাকারীদের নতুন প্রস্তাব গ্রহণ করেছে হামাস। এর মধ্য দিয়ে গাজার মানুষ সহিংসতা থেকে মুক্তি পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
দ্য গার্ডিয়ান জানিয়ছে, নতুন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব অনুযায়ী, ৬০ দিনের প্রাথমিক যুদ্ধবিরতির মধ্যে ২০ জন জীবিত জিম্মির প্রায় অর্ধেককে দুই দফায় মুক্তি দেবে হামাস, বিনিময়ে কারাবন্দি ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দেবে ইসরায়েল। একইসঙ্গে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনাও চলবে বলে জানিয়েছে মিসরের একটি সূত্র।
হামাসের সম্মতির বিষয়টি ইসরায়েলি সরকারও অবগত রয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির দুই কর্মকর্তা। তবে তারা সিএনএনকে বলেন, সব জিম্মির মুক্তি, হামাসের নিরস্ত্রীকরণ, গাজার পূর্ণ সামরিক নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার শর্তেই কোনো চুক্তি যাবে তেল আবিব।
এমন একটি সময়ে এই প্রস্তাবে হামাসের সম্মতি এল, যখন গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করে জিম্মিদের মুক্তির জন্য রোববার সবচেয়ে বড় গণবিক্ষোভের মুখে পড়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এসব বিক্ষোভ হামাসের দর কষাকষির অবস্থানকে আরও শক্ত করছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
আরও পড়ুন: জেলেনস্কি চাইলে মুহূর্তেই যুদ্ধ বন্ধ করতে পারেন: ট্রাম্প
কাতার ও মিসরের নতুন প্রস্তাবটি গতকাল সোমবার ইসরায়েলের কাছে উপস্থাপনের কথা ছিল। তবে ইসরায়েল আর কোনো আংশিক চুক্তিতে আগ্রহী নয় বলে জানান নেতানিয়াহু।
তিনি বলেছেন, যুদ্ধ কেবল তখনই শেষ হবে, যখন হামাস একসঙ্গে সব জিম্মিকে মুক্তি দেবে, নিরস্ত্র হবে এবং গাজার সামরিকীকরণ শেষ করতে সম্মত হবে। হামাসের সম্মতির খবর প্রকাশ হওয়ার পর এক ভিডিও বার্তায় নেতানিয়াহু বলেন, ‘হামাস তীব্র চাপে রয়েছে।’
এদিকে, সম্প্রতি সম্পূর্ণ গাজা উপত্যকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা। গাজায় প্রায় ১০ লাখ বাসিন্দাকে সরিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে এই অভিযান শুরুর পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি গণমাধ্যম।
গত বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু বলেন, ইসরায়েল পুরো গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়।
তবে দীর্ঘমেয়াদে দখলে রাখার পরিকল্পনা নেই জানিয়ে তিনি জানিয়েছেন, ‘আমরা গাজাকে নিজেদের দখলে রাখতে চাই না। আমরা সেখানে একটি নিরাপত্তা বলয় চাই।’
তবে এই পরিকল্পনা দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। তাছাড়া, ইসরায়েলের অবরোধের কারণে গাজায় খাদ্য সংকট ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। অনাহারে একের পর এক মৃত্যু ঘটে চলেছে। এ পরিস্থিতি যুদ্ধবিরতির জন্য আন্তর্জাতিক চাপ জোরালো হচ্ছে।
আরও পড়ুন: চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধবিরতি আরও ৯০ দিন বাড়ালেন ট্রাম্প
গত জুলাই মাসে যুদ্ধবিরতির আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পর নতুন করে আলোচনা শুরু করতে নতুন এই প্রস্তাব এনেছে কাতার ও মিসর।
সিএনএন বলছে, মিসর ও কাতারের পক্ষ থেকে দেওয়া প্রস্তাবটি গত জুনে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের দেওয়া দুই পর্যায়ের কর্মপরিকল্পনার ভিত্তিতেই তৈরি হয়েছে। তার প্রস্তাবের ৯৮ শতাংশই সর্বশেষ প্রস্তাবে বজায় রাখা হয়েছে। ইসরায়েল ওই প্রস্তাবে আগেই সম্মতি দিয়েছিল। মধ্যস্থতাকারীরা হামাসকে প্রস্তাবটি গ্রহণ করতে চাপ দিয়েছেন।
হামাসের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সিএনএনকে জানিয়েছেন, প্রস্তাবে ১০ জন জীবিত জিম্মি এবং ১৮ জনের মরদেহ হস্তান্তরের কথা বলা হয়েছে। এর বিনিময়ে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ১৪০ জন ফিলিস্তিনি বন্দি এবং ১৫ বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্ত ৬০ জন বন্দিকে মুক্তি দেবে ইসরায়েল। এ ছাড়া সব অপ্রাপ্তবয়স্ক ও নারী বন্দিকেও মুক্তি দেওয়ার কথা রয়েছে বলে ওই কর্মকর্তা জানান।
আলোচনা সংশ্লিষ্ট এক কূটনীতিক বলেছেন, পরিস্থিতির উন্নয়ন বিবেচনায় উইটকফকে কায়রোয় আসার আমন্ত্রণ জানাবে মধ্যস্থতাকারীরা।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরায়েল গাজায় অভিযান শুরু করার পর থেকে এখন পর্যন্ত দুই দফা যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি-মুক্তির চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে।
১০৭ দিন আগে
তিন মাস পর গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশে সম্মত নেতানিয়াহু
প্রায় তিনমাসের অবরোধ শেষে অবশেষে সীমিত পরিসরে মানবিক সহায়তা প্রবেশ করতে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল।
স্থানীয় সময় রবিবার (১৮ মে) এই ঘোষণা দেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। গাজার খাদ্যসংকট নতুন সামরিক অভিযানের জন্য হুমকি হওয়ার শঙ্কা থেকে নেতানিয়াহুর মন্ত্রিপরিষদ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানান তিনি।
গত ২ মার্চ গাজা উপত্যকায় খাদ্যসহ সব ধরনের মানবিক সেবা প্রবেশ বন্ধ করে দেয় ইসরায়েল। এতে উপত্যকাটি দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। মানবিক সহায়তায় কাজ করা কর্মীরাও নিজেদের অসহায়ত্বের কথা জানিয়েছেন।
এছাড়া বেশ কিছুদিন ধরেই বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা গাজায় দুর্ভিক্ষের সতর্কবার্তা দিয়ে আসছিলেন। এরপরই এই সিদ্ধান্ত নেয় ইসরায়েল।
তবে ঠিক কখন এবং কীভাবে গাজায় সহায়তা প্রবেশ করবে তা তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট করেনি নেতানিয়াহু প্রশাসন। সহায়তা তত্ত্বাবধানে থাকা ইসরায়েলি সামরিক সংস্থাও এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি।
আরও পড়ুন: ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফর শেষ হতেই গাজা, ইয়েমেনে ইসরায়েলের হামলা জোরাদার
এ ছাড়া, সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে ইসরায়েল একটি নতুন ব্যবস্থা চালু করতে চাইছে। তারা নিশ্চিত করতে চায়, হামাস যোদ্ধাদের কাছে যেন সহায়তা না পৌঁছায়। যদিও সাহায্যকর্মীরা এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে।
এদিকে, গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে নতুন করে হামলা শুরু করার পর থেকে এলাকাটিতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। রবিবারের ভোরের দিকে চালানো ওই বিমান হামলায় অন্তত ১০৩ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে বেশিরভাগ শিশু।
এ সময় উত্তর গাজার প্রধান হাসপাতালটিতে সরাসরি হামলা চালানোর কারণে সেটি বন্ধ করে দিতে হয়েছে বলে জানিরয়েছেন স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
ইসরায়েলের দাবি, হামাস একটি সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়ে তাদের কাছে জিম্মি থাকা সব বন্দিকে মুক্তি দিক। অন্যদিকে হামাস চাইছে গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী পুরোপুরি প্রত্যাহার, তাদের দাবি স্থায়ী সমাধান।
দুই পক্ষের কেউই নিজের অবস্থান থেকে ছাড় দিতে রাজি নয়; এতে দুর্ভোগ বাড়ছে সাধারণ গাজাবাসীর।
জাবালিয়া এলাকার বাসিন্দা আবু মোহাম্মদ ইয়াসিন বলেন, ‘যখন ইহুদিরা যুদ্ধবিরতি চায়, তখন হামাস তা প্রত্যাখ্যান করে, আর যখন হামাস যুদ্ধবিরতি চায়, তখন ইহুদিরা তা মানে না। তবে উভয় পক্ষই ফিলিস্তিনি জনগণকে নির্মূল করতে সম্মত।’
আরও পড়ুন: গাজায় রাতভর ইসরায়েলি হামলায় সাংবাদিকসহ নিহত ৮২
হতাশা ভরা কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আল্লাহর দোহাই, আমাদের প্রতি দয়া করুন। বারবার এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পালাতে পালাতে আমরা ক্লান্ত।’
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় প্রায় ৫৩ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। বাস্তুচ্যুত প্রায় ৯০ শতাংশ বাসিন্দা। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগ নারী ও শিশু।
১৯৯ দিন আগে
গদি রক্ষায় পাখির মতো মানুষ মারছে নেতানিয়াহু?
গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ কার্যকর হওয়া নিয়ে টানাপোড়েন চলছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। দুইপক্ষ শর্তারোপ করে যাচ্ছিল নিজেদের মতো করে। কিন্তু সবকিছু উড়িয়ে দিয়ে মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) সেহরির সময় নতুন করে আগ্রাসন শুরু করে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। এতে নারী-শিশুসহ চার শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হন।
দ্বিতীয় দিনেও জাতিসংঘের এক কর্মকর্তাসহ ২০ ফিলিস্তিনির প্রাণহানি ঘটেছে। গাজায় এখনো ইসরায়েলের সামরিক হামলা অব্যাহত রয়েছে। বিশ্লেষকদের অভিযোগ, গদি রক্ষায় পাখির মতো মানুষ হত্যায় মেতে উঠেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
এই হামলার মধ্য দিয়ে নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতি চুক্তি থেকে বের হয়ে গেছেন বলে দাবি করছেন বিশেষজ্ঞরা। ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসকে গুঁড়িয়ে দিতে এই বিমান হামলা বলে দাবি করছেন তিনি। তবে এতে হামাসের হাতে থাকা ইসরায়েলিদের জীবন সংকটে পড়তে পারে বলে শঙ্কা করা হচ্ছে।-খবর অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি)।
আরও পড়ুন: গাজায় মানবিক সহায়তা বন্ধের নির্দেশ দিলেন নেতানিয়াহু
হামাসও সেই হুমকি দিয়ে রেখেছে। বলেছে, ইসরায়েলের বোমা শুধু ফিলিস্তিনিদের নয়, তাদের হাতে জিম্মি ইসরায়েলিদের জীবনও হুমকিতে ফেলবে।
সবকিছু জেনেশুনে নেতানিয়াহু কেন এই হামলা শুরু করল, তা নিয়ে স্বভাবতই উঠেছে প্রশ্ন। এর জবাব পেতে হলে খোঁজ নিতে হবে ইসরায়েলি প্রশাসনের ভেতর থেকে। মূলত ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলার পর থেকে নিজ দেশে দুটি পরস্পর বিপরীত মতের সম্মুখীন হয়েছে নেতানিয়াহু।
একদিকে, হামাসের হাতে জিম্মিদের পরিবারগুলো চাচ্ছেন নেতানিয়াহু যেন একটি চুক্তি করে বন্দিদের ফিরিয়ে আনে। অন্যদিকে, নেতানিয়াহুর জোট সরকারের কট্টর ডানপন্থি নেতাদের কাছ থেকে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার চাপ রয়েছে। তারা যেকোনো মূল্যে হামাসের নির্মূল চান।
ফিলিস্তিনিদের জীবনের প্রতি মায়া তো নেতানিয়াহুর দর্শনে নেই। এবার নিজ দেশের নাগরিকদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে তিনি বেছে নিয়েছেন দ্বিতীয় পথ। ফলে মন্ত্রিসভার ভোটে আস্থা অটুট রেখে টিকে থাকবে তার গদি—এমনই ধারণা অনেক বিশ্লেষকের।
লক্ষণীয় হচ্ছে, এ দফার হামলাতে মদত দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্পের নির্দেশেই নেতানিয়াহু ফের যুদ্ধ শুরু করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট। অথচ এই যুক্তরাষ্ট্র ১৯ জানুয়ারি কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির অন্যতম মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দাবি করে নিজেদের।
হামাস জিম্মিদের মুক্তি দিতে সম্মত না-হওয়ায় এ দফায় হামলা চালানো হয়েছে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল। তেল-আবিব আরও দাবি করে, হামাস ফের সংগঠিত হয়ে হামলার পরিকল্পনা করছিল। তবে নিজেদের বক্তব্যের সমর্থনে ন্যূনতম কোনো প্রমাণও দেখাতে পারেনি তারা।
এই অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছে হামাস। গত সপ্তাহে যুদ্ধবিরতির আলোচনা এগিয়ে নিতে নানা তৎপরতা চালিয়েছে তারা। প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়িয়ে জিম্মিদের মুক্ত করতে চাইছিল ইসরায়েল।
সংগঠনটির সদস্যরাও জানিয়েছে, তারা অবশ্যই ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দেবেন। তবে তা কেবল যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে। যেখানে মুক্তি পাবেন ইসরায়েলের কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দিরা। এছাড়াও হামাসের দাবি একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও গাজা থেকে ইসরায়েলের সেনাপ্রত্যাহার।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম থেকে পরস্পরকে নানা কারণে দোষারোপ করে আসছিল ইসরায়ের ও হামাস। তা সত্ত্বেও ১৯ জানুয়ারি প্রথম ধাপ কার্যকর হয়েছিল। এ ধাপে ৩৩ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে ফিরিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে আটক কয়েকশ ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি পেয়েছেন।
বন্দিবিনিময় চলাকালে পাল্টাপাল্টি অভিযোগে বারবার চুক্তি ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। কোনোভাবে সেটি শেষ হলেও এগোয়নি দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা। আর এগোবে বলেও কোনো সম্ভাবনা নেই বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
কারণ, গত জুনে এক টেলিভিশন সাক্ষাতকারে নেতানিয়াহু বলেছিল, ‘যুদ্ধবিরতি থাকলেও হামাসকে নির্মূল করতে আমরা হামলা চালাতে বদ্ধপরিকর। এ বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’
আরও পড়ুন: ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের নিয়ে নেতানিয়াহুর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান সৌদির
এমনকি ১৮ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতির ঠিক আগমুহূর্তেও বলেছিল, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে যেকোনো সময়ে আমাদের যুদ্ধে ফেরার অধিকার রয়েছে।’ তবে কে তাকে নিষ্পাপ নারী-শিশু ও অগণিত ফিলিস্তিনিকে ‘হামাস নির্মূলের অজুহাতে’ হত্যা করার অধিকার দিয়েছে, সেই ব্যাখ্যা মেলেনি তার কাছ থেকে।
২৬০ দিন আগে
ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের নিয়ে নেতানিয়াহুর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান সৌদির
ফিলিস্তিনিদের নিজ ভূমি থেকে তাড়িয়ে দিয়ে সৌদি আরবের ভূখণ্ডে ‘ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠা নিয়ে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে সৌদি আরব। রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি এক বিবৃতিতে এমন তথ্য জানিয়েছে। খবর আরব নিউজের।
এরআগে সৌদি ভূখণ্ডে একটি ‘ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠার পরামর্শ দিয়েছিলেন ইসরাইলি কর্মকর্তারা।
নেতানিয়াহু-সমর্থক টেলিভিশন চ্যানেল ফোরটিনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অনেকটা রসিকতা করে সঞ্চালকের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলেন নেতানিয়াহু। সেখানে ভুলবশত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের বদলে ‘সৌদি রাষ্ট্রের’ কথা বলেছিলেন তিনি। পরে তিনি নিজেই সেটা সংশোধন করেন।
ইসরায়েলের এই পরামর্শের নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ফিলিস্তিনের প্রতিবেশী মিসর ও জর্ডান। নেতানিয়াহুর বক্তব্যকে ‘সৌদির সার্বভৌমত্বের সরাসরি লঙ্ঘন’ বলে মন্তব্য করেছে দেশ দুটি।
সৌদি আরব বলছে, ‘নেতানিয়াহুর মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করে ভ্রাতৃপ্রতিম দুই দেশ যে বক্তব্য দিয়েছে, সেটিকে আমরা মনে রাখবো।’
মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশটি আরও জানিয়েছে, ‘ফিলিস্তিনি জনগণের কাছে ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ; সেটা উপলব্ধি করার সক্ষমতা নেই এসব দখলদার উগ্র মানসিকতার লোকজনের। এই ভূখণ্ডের সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের সম্পর্ক ঐতিহাসিক, আত্মার ও আইনগত—যেটা থেকে তাদের কখনোই বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব না।
গত মঙ্গলবারে( ৪ ফেব্রুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা পুর্নগঠনের নামে উপত্যকাটি দখল করে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরিয়া’ বানাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যেরও সমালোচনা করে আরব দেশগুলো। ইতালীয় রিভেরিয়া বলতে বোঝায় সুদৃশ্য সমুদ্র উপকূলকে। আর ভূমধ্যসাগরের পূর্ব উপকূলে গাজা উপত্যকাটি অবস্থিত।
আরও পড়ুন: গাজা থেকে মিসর-জর্ডানে শরণার্থী বাড়াতে ট্রাম্পের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান হামাসের
২৯৮ দিন আগে
মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের অবস্থান মজবুত করতে বৈঠকে বসছেন ট্রাম্প-নেতানিয়াহু
হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বিজয়, ইরানকে মোকাবিলা ও আরব দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বাড়ানো নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করতে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) ওয়াশিংটনের উদ্দেশে তেল-আবিব ছেড়েছেন নেতানিয়াহু।
নিউ ইয়র্ক সময় মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে তার। এর মধ্য দিয়ে হোয়াইট হাউসে ফেরার পর প্রথম কোনো বিদেশি নেতার সঙ্গে বসতে যাচ্ছেন ট্রাম্প।
এদিকে গাজা যুদ্ধ বন্ধে ও হামাসের হাতে জিম্মি ইসরায়েলিদের মুক্তির বিষয়ে পরবর্তী ধাপের চুক্তি নিয়ে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যস্থতাকারী আরব দেশগুলো।
যুদ্ধবিরতির পরপরই গাজা উপত্যকায় নিজেদের আধিপত্য ও নিয়ন্ত্রণ পুনর্বহাল করেছে হামাস। যুদ্ধ পুরোপুরি বন্ধ ও উপত্যকাটি থেকে ইসরায়েলি সেনাদের প্রত্যাহার করা না হলে দ্বিতীয় ধাপে জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের এই স্বাধীনতাকামী সংগঠন।
অপরদিকে, গাজায় ফের যুদ্ধ শুরু করতে সরকারে থাকা উগ্রপন্থিদের চাপে মুখে পড়েছেন নেতানিয়াহু।
গত মার্চের প্রথম সপ্তাহে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি সই হয়। তবে হামাসের বিরুদ্ধে বিজয় ও জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে ইসরায়েল অঙ্গীকারাবদ্ধ বলেও মন্তব্য করেছেন নেতানিয়াহু।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর আকস্মিক হামলা চালিয়ে বহু ইসরায়েলিকে জিম্মি করে হামাস। এ যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৪৭ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
ইসরায়েলের পাঁড় সমর্থক হিসেবে বিবেচনা করা হয় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের অবসানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি অস্ত্রবিরতি চুক্তির মধ্যস্থতায় ভূমিকা রাখার দাবি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
আরও পড়ুন: দেশগুলো ট্রাম্পের শুল্কারোপের পাল্টা জবাব দেবে কীভাবে?
১৫ মাসের যুদ্ধ শেষে দুই পক্ষের মধ্যে চুক্তি হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ১৭ ইসরায়েলি জিম্মি ও শত শত ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি পেয়েছেন।
এর মধ্যে আজ (রবিবার) আবার মধ্য গাজায় একটি গাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় পাঁচ ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। আল-আওদা হাসপাতাল এ তথ্য জানিয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলছে, গাড়িটি একটি তল্লাশি চৌকি অতিক্রমের চেষ্টা করা হলে ওই হামলা করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার আগে এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহু বলেন, ‘ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে হামাসের বিরুদ্ধে বিজয়, জিম্মিদের মুক্তি ও ইরানি সন্ত্রাসী অক্ষ মোকাবিলা নিয়ে আলোচনা হবে।’
তিনি বলেন, ‘একসঙ্গে কাজ করে দুই দেশের নিরাপত্তা জোরদার, শান্তির পরিসর আরও বিস্তৃত ও শক্তির মাধ্যমে শান্তির এক অসাধারণ যুগে আমরা প্রবেশ করতে পারি।’
৩০৫ দিন আগে