পশ্চিমতীর
প্রস্তাবিত মানবিক শহর হবে ফিলিস্তিনিদের জন্য বন্দিশিবির: ইহুদ ওলমার্ট
গাজা উপত্যকার রাফাহ অঞ্চলকে ‘মানবিক শহর’ হিসেবে গড়ে তুলতে ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কার্টস যে প্রস্তাব দিয়েছেন, ফিলিস্তিনিদের জন্য সেটি মূলত একটি ‘বন্দিশিবির’ (কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প) হবে বলে জানিয়েছেন অবৈধ রাষ্ট্রটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইহুদ ওলমার্ট।
সেখানে ফিলিস্তিনিদের বাধ্যতামূলকভাবে ঠেলে দেওয়া হলে তা ‘জাতিগত নির্মূলের’ শামিল হবে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইহুদ ওলমার্ট বলেন, ইসরায়েল এরইমধ্যে গাজা ও পশ্চিমতীরে যুদ্ধাপরাধ করছে। আর এ শিবির নির্মাণ হলে তা হবে আরও ভয়াবহ মাত্রার অপরাধ।
২০০৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ইসরায়েলির প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর মানবিক শহরের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে ইহুদ ওলমার্ট বলেন, ‘আমি দুঃখিত, তবে এটা হবে একটি বন্দিশিবির। যেখানে বন্দিদের নির্যাতন করা হবে।
‘সম্প্রতি সেনাবাহিনীকে দক্ষিণ গাজার ধ্বংসস্তূপে এই মানবিক শহর নির্মাণের জন্য পরিকল্পনা তৈরির নির্দেশ দেন কার্টজ। যেখানে প্রাথমিকভাবে ছয় লাখ এবং পরবর্তীতে গাজার পুরো জনগোষ্ঠীকে রাখা হবে। এই শিবিরে একবার ঢোকানো হলে ফিলিস্তিনিরা কেবল অন্য দেশে যাওয়ার জন্যই বের হতে পারবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
রাজনৈতিক বন্দিদের ও সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর সদস্যদের শাস্তি দিতে এই কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প কিংবা বন্দিশিবির স্থাপন করা হয়। হাজার হাজার রাজনৈতিক বন্দির জন্য ১৯৩৩ সালে নাৎসি জার্মানিতে প্রথম কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। তখন এই ক্যাম্পে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।
ইহুদ ওলমার্ট বলেন, যদি ফিলিস্তিনিদের নতুন মানবিক শহরে জোরপূর্বক পাঠানো হয়, তাহলে সেটিকে জাতিগত নির্মূল বলাই যায়। যদিও এখনও এমন কিছু ঘটেনি, তবে এমন একটি শিবির গঠনের চেষ্টা হলে এটিই হবে ওই ঘটনার অবধারিত ব্যাখ্যা।
তবে বর্তমানে গাজায় চলমান ইসরায়েলের অভিযানকে তিনি জাতিগত নির্মূল হিসেবে দেখছেন না। তার ভাষ্যে, যুদ্ধ থেকে বাঁচাতে বেসামরিকদের সরিয়ে নেওয়া আন্তর্জাতিক আইনে বৈধ এবং তারা কিছু এলাকায় পুনরায় ফিরে এসেছেন।
এদিকে, কার্টজের মানবিক শহরের পরিকল্পনাকে সমর্থন করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তবে যে এলাকায় মানবিক শহর তৈরির পরিকল্পনা করা হচ্ছে, সেখান থেকে সেনা না সরাতে চাওয়ার শর্তে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি আলোচনায় বড় বাধা তৈরি হয়েছে। দেশটির গণমাধ্যমের খবরে এমন বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে ওলমার্ট বলেন, ‘গাজার অর্ধেক মানুষকে সরিয়ে এনে একটি শিবির বানাতে চাইছে তারা। অথচ তাদের দাবি, ফিলিস্তিনিদের বাঁচানোর উদ্দেশ্যে নাকি তারা এটি নির্মাণ করছে— যা বিশ্বাসযোগ্য নয়। এটি আসলে তাদের বিতাড়নের, ঠেলে ফেলে দেওয়ার কৌশল। এর অন্য কোনো ব্যাখ্যা অন্তত আমার নেই।’
ইসরায়েলের মানবাধিকার আইনজীবী ও বিশেষজ্ঞরা এই পরিকল্পনাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের নীলনকশা হিসেবে বর্ণনা করেছেন। কেউ কেউ সতর্ক করে বলছেন, নির্দিষ্ট কিছু পরিস্থিতিতে এটি গণহত্যার অপরাধেও পরিণত হতে পারে।
এদিকে, যারা এই মানবিক শহরের পরিকল্পনাকে নাৎসি জার্মানির বন্দিশিবিরের সঙ্গে তুলনা করছেন, তাদের উপর চড়াও হয়েছে দেশটির সরকার। তাদের দাবি, ফিলিস্তিদের বাঁচাতেই তারা এমনটা করতে চাইছেন।
এমন তুলনার জন্য ইয়াদ ভাশেম নামের এক সাংবাদিককে ‘গুরুতর ও অনুপযুক্ত বিকৃতির’ অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে ইসরায়েলের হলোকাস্ট স্মৃতিসংগ্রহ কেন্দ্র।
২০০৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী ওলমার্ট এই সাক্ষাৎকার দেন ঠিক যেদিন পশ্চিম তীরে দুই ফিলিস্তিনির দাফন সম্পন্ন হয়। ওই দুজনের মধ্যে একজন ছিলেন আমেরিকান নাগরিক, যাদের ইসরায়েলি বসতির বাসিন্দারা হত্যা করেছে।
এই হত্যাকাণ্ডকে যুদ্ধাপরাধ আখ্যা দিয়ে ওলমার্ট বলেন, ‘এটা ক্ষমার অযোগ্য, অগ্রহণযোগ্য। একদল মানুষের দ্বারা অব্যাহত, সংগঠিত, নিষ্ঠুর ও অপরাধমূলক পদ্ধতিতে এসব হামলা পরিচালিত হচ্ছে।’
এই হামলাকারীদের সাধারণত ‘হিলটপ যুবক’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, যাদের একপ্রান্তিক চরমপন্থী হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু ওলমার্ট বলেন, আমি তাদের ‘হিলটপ নৃশংসতা’ বলে আখ্যায়িত করতে চাই।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ যে সংগঠিত সহায়তা ও সুরক্ষা কাঠামো দিচ্ছে, সেটি ছাড়া ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে এমন অব্যাহত ও বিস্তৃত সহিংসতা চালানো সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
যেসব চরমপন্থী মন্ত্রীরা গাজা ও পশ্চিমতীরে সহিংসতাকে উসকে দিচ্ছেন, ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণকে অনুমোদন দিচ্ছেন এবং আইনপ্রয়োগ ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করছেন—তাদেরকে দেশের দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তার জন্য বাইরের শত্রুর চেয়ে বড় হুমকি বলে মনে করেন ওলমার্ট।
তিনি বলেন, ‘এই লোকগুলো আমাদের ভিতরের শত্রু।’
তার মতে, গাজায় চরম মানবিক দুর্দশা ও পশ্চিম তীরে বসতিদের বর্বরতা—এই দুটি বিষয়ে ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক ক্ষোভকে শুধু ‘ইহুদিবিদ্বেষ’ বলে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না।
ওলমার্ট বলেন, ‘আমেরিকায় ইসরায়েলবিরোধী মনোভাব ক্রমেই বাড়ছে। তারা ইহুদিবিদ্বেষী— এই বলে হয়তো আমরা নিজেদের সান্ত্বনা দিচ্ছি। তবে আমি মনে করি, তারা ইহুদীবিদ্বেষী বরং টেলিভিশন বা সামাজিকমাধ্যমে যা দেখছেন তাতে অনেকেই ইসরায়েলবিরোধী হয়ে উঠছে।’
তিনি বলেন, ‘বিষয়টি যন্ত্রণাদায়ক, কিন্তু এটিই স্বাভাবিক মানবিক প্রতিক্রিয়া। তোমার সব সীমা অতিক্রম করে ফেলেছো।’
আন্তর্জাতিক চাপের ভার অনুভব করলে ইসরায়েলের জনগণের মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আসবে বলে মনে করেন ওলমার্ট। এ সময় দেশে কার্যকর রাজনৈতিক বিরোধীশক্তির অভাবে তিনি আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের দাবি জানান। পাশাপাশি, ফিলিস্তিনিদের ওপর সহিংসতা নিয়ে ইসরায়েলি গণমাধ্যমের নীরবতা নিয়েও সমালোচনা করেন তিনি।
দ্য গার্ডিয়ানকে ওলমার্ট জানান, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণের পর ইসরায়েলের প্রাথমিক সামরিক অভিযানে তিনি সমর্থন দিলেও, চলতি বছরের বসন্তে সরকার ‘জনসমক্ষে ও নির্লজ্জভাবে’ শান্তি আলোচনার পথ ছেড়ে দিলে তিনি বুঝতে পারেন ইসরায়েল যুদ্ধাপরাধ করছে।
তিনি বলেন, ‘আত্মরক্ষার যুদ্ধ যে অন্যকিছুতে রূপ নিয়েছে, তা দেখে আমি লজ্জিত ও মর্মাহত। আমি এখন যেটা করতে পারি তা হলো, এই অন্যায়গুলো স্বীকার করা এবং সমালোচনা করা—যাতে আন্তর্জাতিক জনমত জানতে পারে, ইসরায়েলের ভেতরেও অনেক ভিন্ন কণ্ঠস্বর আছে।’
এসব যুদ্ধাপরাধ কোনো সংগঠিত নৃশংস অভিযানের অংশ নয় বরং এটি অবহেলা, মৃত্যু ও ধ্বংসের অগ্রহণযোগ্য মাত্রা মেনে নেওয়ার ফল বলে মত দেন তিনি। ওলমার্ট বলেন, কম্যান্ডাররা কি এসব কাজের আদেশ দিয়েছেন? কখনোই না।
তিনি বিশ্বাস করেন, যখন এমন কিছু করা হয়েছে যার পরিণতিতে বহু নিরপরাধ মানুষের প্রাণহানি হয়েছে, তখন সেনাবাহিনী চুপচাপ থেকেছে। এ কারণেই এই সরকারের ওপর যুদ্ধাপরাধের দায় চাপানো থেকে আমি নিজেকে আটকাতে পারি না।
তবে চলমান সব পরিস্থিতি সত্ত্বেও ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে আলোচনাভিত্তিক সমাধান খুঁজে পাওয়ার শেষ বাস্তব প্রচেষ্টা চালানো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ওলমার্ট এখনো বিশ্বাস করেন— দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান সম্ভব।
তিনি সাবেক ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী নাসের আল-কিদওয়ার সঙ্গে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই সমাধানের পক্ষে কাজ করছেন। এমনকি যদি নেতানিয়াহু চায়, তাহলে গাজা যুদ্ধের সমাপ্তির বিনিময়ে সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের সুযোগও এখন পর্যন্ত রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
তবে সেই নেতানিয়াহুকেই সম্প্রতি অবাক হয়ে দেখেছেন ওলমার্ট। কারণ যে ব্যক্তি আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের যুদ্ধাপরাধের গ্রেপ্তারি পরোয়ানার মুখোমুখি, তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দিচ্ছেন!
আরও পড়ুন: গাজায় গণহত্যা: প্রতিবাদকারীদের ওপর যেভাবে নীরবতা ছড়িয়ে চলেছে হলিউড
১৪৪ দিন আগে
এবার অধিকৃত পশ্চিমতীরে ট্যাংক পাঠাল ইসরায়েল
দুই দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের অধিকৃত পশ্চিমতীরে ট্যাংক পাঠিয়েছে ইসরায়েল। এতে পশ্চিমতীরে অস্থিরতা বাড়বে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ফিলিস্তিনি কতৃপক্ষ।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নেতানিয়াহুর সঙ্গে পরামর্শ করে তিনি সেনাবাহিনীকে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন। পশ্চিমতীরের শরণার্থী শিবিরে সন্ত্রাসবাদ দমনে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
এ ছাড়াও তিনি জানান, ‘অঞ্চলটিতে ইসরায়েলের সেনারা এক বছর অবস্থান করবেন। এ সময় কোনো ফিলিস্তিনিকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।’
১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার দুদিন পর থেকে পশ্চিমতীরে অভিযানের তীব্রতা বৃদ্ধি করেছে ইসরায়েল। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর হতে পশ্চিমতীরে এ পর্যন্ত ৮০০ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন, যার মধ্যে আট মাসের গর্ভবতী এক নারীর মৃত্যু বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
আরও পড়ুন: ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি স্থগিত করল ইসরায়েল: প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়
পশ্চিমতীরে নিজেদের আধিপত্য দীর্ঘস্থায়ী করতে এসব অভিযান চালানো হচ্ছে বলে মনে করছেন ফিলিস্তিনিরা। অঞ্চলটিতে প্রায় ৩০ লাখ ফিলিস্তিনি সামরিক শাসনের অধীনে বাস করেন। এই অভিযানে গাজা উপত্যকার মতো পরিস্থিতি হতে পারে আশঙ্কা করছেন পশ্চিমতীরের ফিলিস্তিনি বাসিন্দারা।
এর আগে, পশ্চিমতীরের কিছু শরণার্থী শিবির এলাকায় সেনাবাহিনীকে দীর্ঘদিন অবস্থানের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেছিলেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। ওই এলাকাগুলো থেকে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ প্রাণভয়ে পালিয়ে গেছেন।
কয়েক দশক আগে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধের পর পালিয়ে আসা ফিলিস্তিনিরা এই শিবিরগুলোতে বাস করতেন। চলমান অভিযান কবে শেষ হবে, কবে নাগাদ তাদের ফিরতে দেওয়া হবে; সে বিষয়ে সুস্পষ্ট করে কিছু জানায়নি ইসরায়েল প্রশাসন।
আরও পড়ুন: পশ্চিমতীরে এক হাজার অবৈধ বসতি নির্মাণ করবে ইসরায়েল
প্রতিরক্ষামন্ত্রী কাটজ বলেছেন, ‘সেনাবাহিনী চলতি বছর পুরোটাই অবস্থান করতে পারে।’ নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘যতদিন প্রয়োজন, সেনাবাহিনী ততদিন অবস্থান করবে।’
২০০২ সালে শেষবার পশ্চিম তীরে সাঁজোয়া যান পাঠিয়েছিল ইসরায়েল। সে সময় শক্তহাতে ফিলিস্তিনি আন্দোলন দমন করেছিল তেলআবিব।
ইসরায়েলের সাম্প্রতিক অভিযানকে অবৈধ আগ্রাসন হিসেবে নিন্দা জানিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ আহ্বান করেছে ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ইসরায়েলি সেনাদের অভিযানে পশ্চিমতীরের অস্থিরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে তারা।
জেনিন থেকে পালিয়ে আসা এক ফিলিস্তিনি মোহাম্মদ আল-সাদি বলেছেন, ‘পশ্চিম তীরের ভূমি আমাদের অধিকার। আমাদের যাওয়ার আর কোনো জায়গা নেই।’
এর আগে বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) ইসরায়েলের বাত ইয়াম ও হোলোন শহরের পার্কিং লটে তিনটি বাসে বিস্ফোরণ ঘটে।
ওই ঘটনার পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গভীর রাতে নিরাপত্তা পর্যালোচনা শেষে পশ্চিম তীরে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেন।
এছাড়াও রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে এক ঘোষনার মাধ্যমে জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার সময় ‘অপমানজনক অনুষ্ঠান’ করার অভিযোগ এনে ৬২০ ফিলিস্তিনি বন্দির মুক্তি আটকে দেয় ইসরায়েল প্রশাসন।
এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েল-হামাস দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। চুক্তির মধ্যস্ততাকারী দেশ মিসর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্র তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে বন্দিদের মুক্তি না দিলে কোনো চুক্তি হবেনা বলে জানিয়েছে হামাস। চুক্তির আলোচনা নিয়ে অগ্রগতি নিয়ে ইসরায়েল প্রশাসন থেকেও দেখা যায়নি কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ।
২৮৩ দিন আগে
পশ্চিমতীরে এক হাজার অবৈধ বসতি নির্মাণ করবে ইসরায়েল
ফিলিস্তিন ভুখন্ডের অধিকৃত পশ্চিমতীরে প্রায় এক হাজার অতিরিক্ত ইহুদি বসতি নির্মাণ করতে যাচ্ছে ইসরায়েল। এরইমধ্যে তারা দরপত্রও ডেকেছে সেখানে। হামাসের সাথে চলমান যুদ্ধবিরতি চুক্তির মাঝেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সময় সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) এক বিবৃতিতে এমন তথ্য জানিয়েছে পিস নাউ নামের অবৈধ বসতিস্থাপনবিরোধী একটি সংস্থা।
শান্তিবাদী এই সংগঠনটির তথ্যমতে, ইসরায়েলের এই পরিকল্পনাতে অঞ্চলটিতে তাদের অবৈধ বসতি ৪০ শতাংশ বাড়বে। নতুন করে ৯৭৪টি আবাসন ইউনিট স্থাপনের ফলে ফিলিস্তিনি শহর বেথেলহামের উন্নয়নে আরও বাধা সৃষ্টি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই বসতিস্থাপন পরিকল্পনার পর্যবেক্ষণ শাখার প্রধান হাগিত ওফরান বলেন, ‘নির্মাণ সংক্রান্ত চুক্তিটি অনুমোদন শেষে কাজ শুরু হবে। এতে অন্তত আরও এক বছর সময় লাগতে পারে।’
আরও পড়ুন: গাজায় ‘জাহান্নামের সব দরজা’ খুলে দেওয়ার হুমকি ইসরায়েলের১৯৬৭ সালে তৃতীয় আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে পশ্চিমতীর, গাজা উপত্যকা ও পূর্ব জেরুসালেম দখল করে নেয় ইসরায়েল। ফিলিস্তিনিরা তাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের জন্য এই তিন অঞ্চলের অধিকার ফিরে পেতে চায়। এই বসতিগুলোকে তারা শান্তির পথে বড় বাধা হিসেবে গণ্য করে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় থাকাকালীন এই অবৈধ বসতি স্থাপনে নিরঙ্কুশ সমর্থন দিয়েছেন। বাইডেন প্রশাসনের সময়েও বসতিস্থাপন অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। দ্বিতীয় মেয়াদে শুধু ইসরায়েলকে সমর্থনই নয় বরং কয়েক ধাপ এগিয়ে নিজেই গাজা দখল করতে চেয়েছেন ট্রাম্প।
প্রসঙ্গত, ইসরায়েল এরইমধ্যে পশ্চিমতীরে শতাধিক নতুন বসতি স্থাপন করেছে। পাহারের চূড়ার সামরিক ঘাঁটি থেকে শুরু করে অত্যাধুনিক বসতি স্থাপনে কিছুই বাদ রাখেনি তারা।
আরও পড়ুন: চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ: জিম্মিদের ফেরত দিচ্ছে না হামাস
পশ্চিমতীরে প্রায় ৩০ লাখ ফিলিস্তিনির বসতি রয়েছে। তৃতীয় আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর এখানে ইহুদিরা বাস করতে শুর করে। বর্তমানে ৫ লাখের বেশি অবৈধ ইহুদি বাস করছে অঞ্চলটিতে। এই অবৈধ অধিবাসীরা ইসরায়েলের নাগরিক সুবিধা ভোগ করে। অন্যদিকে, ফিলিস্তিনিরা পশ্চিমাদের সমর্থিত ইসরায়েলের সামরিক শাসনের অধীনে রয়েছে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো ইসরায়েলের এই আচরণকে বৈষম্যমূলক দাবি করলেও তা মানছে না ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
এই পরিকল্পনা সফল হলে দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক যে সমাধানের কথা বলা হচ্ছে; তা কখনোই বাস্তবায়ন হবে না বলে মনে করছে পিস নাউ। এমনকি চলমান যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাতিল হওয়ার আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে। এজন্য বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে দায়ী করে সংস্থাটি।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর আকস্মিকভাবে হামলা চালিয়ে এক হাজার ২০০ ইসরাইলিকে হত্যা করে হামাস। এ সময়ে বহু বিদেশি শ্রমিকসহ ২৫০ ইসরাইলি নাগরিক ও সেনাসদস্যকে তারা অপহরণ করে নিয়ে যায়।
এর জবাবে গেল পনেরো মাস ধরে গাজায় নির্বিচারে সামরিক হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে ৪৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হন, যাদের বেশিরভাগ নারী ও শিশু। মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যস্থতায় ও যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি সই হয়, যা কার্যকর হয় গত ১৯ জানুয়ারি।
তবে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে স্থানীয় সময় সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) এক বিবৃতিতে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত আর কোনো ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে না বলে জানায় হামাসের সামরিক শাখা কাশেম ব্রিগেডের এক মুখপাত্র। পরবর্তীতে কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় বন্দিবিনিময় কার্যকর হয়।
হামাসের এই কার্যক্রমে ক্ষিপ্ত হয়ে সব ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি না দিলে গাজায় ‘নরকের দরজা খুলে দেওয়া হবে’ এমন হুমকি দেয় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে দেওয়া এক যৌথ বিবৃতিতে এ হুমকি দেন তিনি।
২৯০ দিন আগে