দুই দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের অধিকৃত পশ্চিমতীরে ট্যাংক পাঠিয়েছে ইসরায়েল। এতে পশ্চিমতীরে অস্থিরতা বাড়বে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ফিলিস্তিনি কতৃপক্ষ।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নেতানিয়াহুর সঙ্গে পরামর্শ করে তিনি সেনাবাহিনীকে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন। পশ্চিমতীরের শরণার্থী শিবিরে সন্ত্রাসবাদ দমনে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
এ ছাড়াও তিনি জানান, ‘অঞ্চলটিতে ইসরায়েলের সেনারা এক বছর অবস্থান করবেন। এ সময় কোনো ফিলিস্তিনিকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।’
১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার দুদিন পর থেকে পশ্চিমতীরে অভিযানের তীব্রতা বৃদ্ধি করেছে ইসরায়েল। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর হতে পশ্চিমতীরে এ পর্যন্ত ৮০০ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন, যার মধ্যে আট মাসের গর্ভবতী এক নারীর মৃত্যু বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
আরও পড়ুন: ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি স্থগিত করল ইসরায়েল: প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়
পশ্চিমতীরে নিজেদের আধিপত্য দীর্ঘস্থায়ী করতে এসব অভিযান চালানো হচ্ছে বলে মনে করছেন ফিলিস্তিনিরা। অঞ্চলটিতে প্রায় ৩০ লাখ ফিলিস্তিনি সামরিক শাসনের অধীনে বাস করেন। এই অভিযানে গাজা উপত্যকার মতো পরিস্থিতি হতে পারে আশঙ্কা করছেন পশ্চিমতীরের ফিলিস্তিনি বাসিন্দারা।
এর আগে, পশ্চিমতীরের কিছু শরণার্থী শিবির এলাকায় সেনাবাহিনীকে দীর্ঘদিন অবস্থানের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেছিলেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। ওই এলাকাগুলো থেকে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ প্রাণভয়ে পালিয়ে গেছেন।
কয়েক দশক আগে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধের পর পালিয়ে আসা ফিলিস্তিনিরা এই শিবিরগুলোতে বাস করতেন। চলমান অভিযান কবে শেষ হবে, কবে নাগাদ তাদের ফিরতে দেওয়া হবে; সে বিষয়ে সুস্পষ্ট করে কিছু জানায়নি ইসরায়েল প্রশাসন।
আরও পড়ুন: পশ্চিমতীরে এক হাজার অবৈধ বসতি নির্মাণ করবে ইসরায়েল
প্রতিরক্ষামন্ত্রী কাটজ বলেছেন, ‘সেনাবাহিনী চলতি বছর পুরোটাই অবস্থান করতে পারে।’ নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘যতদিন প্রয়োজন, সেনাবাহিনী ততদিন অবস্থান করবে।’
২০০২ সালে শেষবার পশ্চিম তীরে সাঁজোয়া যান পাঠিয়েছিল ইসরায়েল। সে সময় শক্তহাতে ফিলিস্তিনি আন্দোলন দমন করেছিল তেলআবিব।
ইসরায়েলের সাম্প্রতিক অভিযানকে অবৈধ আগ্রাসন হিসেবে নিন্দা জানিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ আহ্বান করেছে ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ইসরায়েলি সেনাদের অভিযানে পশ্চিমতীরের অস্থিরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে তারা।
জেনিন থেকে পালিয়ে আসা এক ফিলিস্তিনি মোহাম্মদ আল-সাদি বলেছেন, ‘পশ্চিম তীরের ভূমি আমাদের অধিকার। আমাদের যাওয়ার আর কোনো জায়গা নেই।’
এর আগে বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) ইসরায়েলের বাত ইয়াম ও হোলোন শহরের পার্কিং লটে তিনটি বাসে বিস্ফোরণ ঘটে।
ওই ঘটনার পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গভীর রাতে নিরাপত্তা পর্যালোচনা শেষে পশ্চিম তীরে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেন।
এছাড়াও রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে এক ঘোষনার মাধ্যমে জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার সময় ‘অপমানজনক অনুষ্ঠান’ করার অভিযোগ এনে ৬২০ ফিলিস্তিনি বন্দির মুক্তি আটকে দেয় ইসরায়েল প্রশাসন।
এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েল-হামাস দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। চুক্তির মধ্যস্ততাকারী দেশ মিসর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্র তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে বন্দিদের মুক্তি না দিলে কোনো চুক্তি হবেনা বলে জানিয়েছে হামাস। চুক্তির আলোচনা নিয়ে অগ্রগতি নিয়ে ইসরায়েল প্রশাসন থেকেও দেখা যায়নি কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ।