ওয়ানডে ক্রিকেট
ওয়ানডে ক্রিকেটকেও বিদায় বলে দিলেন মুশফিক
আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ব্যর্থতার পর দলে জায়গা পাওয়া নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনার প্রেক্ষাপটে এবার এক দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিলেন মুশফিকুর রহিম।
বুধবার (৫ মার্চ) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্ট করে নিজের অবসর গ্রহণের সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন ৩৭ বছর বয়সী এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটার।
ইংরেজিতে দেওয়া ওই পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘আজ থেকে ওয়ানডে সংস্করণ থেকে অবসরের ঘোষণা দিচ্ছি আমি।’
‘সবকিছুর জন্য আলহামদুলিল্লাহ। বৈশ্বিক পর্যায়ে আমাদের অর্জন হয়তো সীমিত, তবে একটি জিনিস নিশ্চিত যখনই আমি আমার দেশের জন্য মাঠে নেমেছি, নিবেদন ও সততার সঙ্গে নিজের শতভাগের বেশি দিয়েছি।’
এভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েই ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে বিদায় নিয়েছিলেন মুশফিক। এবার ওয়ানডে ক্রিকেট থেকেও সরে দাাঁড়ানোর ঘোষণা দিলেন তিনি।
২০০৬ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারারেতে ওয়ানডে অভিষেক হয়েছিল মুশফিকের। তারপর কেটে গেছে ১৯টি বছর। এর মাঝে লাল-সবুজ জার্সি গায়ে জড়িয়ে ২৭৪ ম্যাচ খেলে অবশেষে থামালেন নিজের পথচলা।
ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক মুশফিক। ৩৬ দশমিক ৪২ গড় ও ৭৯ দশমিক ৭০ স্ট্রাইক রেটে মোট ৭ হাজার ৭৯৫ রান করেছেন এই তারকা ব্যাটার। এই সময়ে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৯টি শতক ও ৪৯টি অর্ধশতক।
তার বিদায়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটের এমন একটি অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হলো যেখানে গৌরব, অর্জন, প্রাপ্তি যেমন আছে, তেমনই আছে কিছু ব্যর্থতা আর হতাশার ছোঁয়াও।
এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অনেক ভরসা করা হয়েছিল মুশফিকের ওপর। কিন্তু ভারতের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচের প্রথম বলেই আউট হন তিনি। এরপর দ্বিতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বিদায় নেন মাত্র ২ রান করে। ওই ম্যাচে বাজে শটে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি।
প্রথম দুই ম্যাচ হেরে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যায় বাংলাদেশ। দলের ব্যর্থতায় আঙুল ওঠে অভিজ্ঞতম ব্যাটসম্যান মুশফিকের দিকে। আর এতে তার ওয়ানডে ক্যারিয়ার পড়ে যায় প্রশ্নের মুখে। নতুন বছরে বিসিবি তাকে ওয়ানডের চুক্তিতে রাখবে কিনা তা নিয়েও তৈরি হয় সংশয়।
শুধু এই টুর্নামেন্টে নয়, বেশ কিছুদিন ধরেই প্রত্যাশার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছিল না তার পারফরম্যান্সে। সবশেষ ১৪ ইনিংসে তার ব্যাট থেকে ফিফটি এসেছে মাত্র একটি। এর সাত ইনিংসেই আউট হয়েছেন দুই অঙ্ক ছোঁয়ার আগে।
২০২৭ সালের অক্টোবর-নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় পরবর্তী বিশ্বকাপের সময় তার বয়স হবে ৪০। বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তিতে তাকে রাখা হবে কি না, দল গোছানোর জন্য (মুশফিক-মাহমুদউল্লাহদের পেছনে রেখে) সামনে তাকানো উচিত কি না—গত কিছুদিন ধরেই দেশের ক্রিকেটে চলছে এসব নিয়ে আলোচনা।
গত সোমবার বিসিবির সভা শেষে ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান নাজমুল আবেদীন এসব প্রশ্নের জবাবেই বলেন, ‘আগামী বিশ্বকাপ পর্যন্ত মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহর খেলা কঠিন।’ বোর্ডের মনোভাবের আভাস মিলে যায় সেখানেই। তারই ধারাবাহিকতায় এলো মুশফিকের এই সিদ্ধান্ত।
সময়ের ডাক যে মুশফিক নিজেও শুনতে পারছিলেন, বিদায়ী বার্তায় ফুটে উঠেছে তা-ও।
‘গত কয়েক সপ্তাহ আমার জন্য ছিল ভীষণ চ্যালেঞ্জিং এবং উপলব্ধি করতে পেরেছি যে, এটিই আমার নিয়তি।’
‘সবশেষে আমি গভীরভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই আমার পরিবার, বন্ধু-বান্ধব ও ভক্তদের, যাদের জন্য গত ১৯ বছর ধরে ক্রিকেট খেলেছি।’
টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে থেকে বিদায়ের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মুশফিকের সামনে এখন শুধুই টেস্ট ক্রিকেট। এখানে বড় এক মাইলফলকের সামনে রয়েছেন তিনি। দেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ১০০ টেস্ট খেলার কীর্তি গড়তে আর ছয়টি টেস্টে মাঠে নামতে হবে তাকে। সব ঠিকঠাক থাকলে তা হয়ে যেতে পারে এ বছরই।
২৭৪ দিন আগে