পারমাণবিক কর্মসূচি
সংঘাত থেকে কী পেল ইরান-ইসরায়েল?
গত ১২ দিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের দামামা বাজার পর অবশেষে পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছে। ইরান-ইসরায়েল এগিয়েছে একটি ভঙ্গুর অস্ত্রবিরতির দিকে।
ইরানের পারমাণু কর্মসূচি বন্ধের নামে গত ১৩ জুন ইরানে হামলা চালায় ইসরায়েল। ইরানও শুরু করে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা। এরপর তেল আবিবের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। এর প্রতিশোধ নিতে কাতারের মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা চালায় তেহরান।
এরপর পরিস্থিতি যেন আরও খারাপ না হয়, এজন্য এরই মধ্যে শুরু হয়ে যায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা। অবশেষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিহিত ‘১২ দিনের যুদ্ধ’ আপাতত বন্ধ হয় যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে।
যুদ্ধবিরতির কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় থাকলেও আপাতদৃষ্টিতে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সেই সংঘাত আপাতত শেষ হয়েছে।
এদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও ইরানের নেতারা সবাই এ যুদ্ধে নিজেদের জয়ী দেখাতে উঠে পড়ে লেগেছেন। তাছাড়া ট্রাম্পসহ সবার দাবি, যুদ্ধবিরতির এই মুহূর্তটি ঘটেছে তাদের নিজ নিজ শর্তে।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রের হামলার প্রতিবাদে আইএইএ’র সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবে ইরান
এখন প্রশ্ন হলো— বাস্তবতা আসলে কী? ইসরায়েল কী অর্জন করল? ইরান কি তাদের কৌশলগত সম্পদ রক্ষা করতে পারল? আর এই যুদ্ধবিরতি কি সত্যিই শান্তির পথে নিয়ে যেতে পারে?
ঘটনাগুলো কীভাবে ঘটল?
রবিবার (২২ জুন) ভোরে ইসরায়েলের অনুরোধে ইরানের ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র।
ট্রাম্পের ভাষ্যে, তাদের হামলায় এসব স্থাপনা ‘সম্পূর্ণভাবে’ ধ্বংস করা হয়েছে।
এর জবাবে, সোমবার (২৩ জুন) কাতারের আল-উদেইদ মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইরান। এটি মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় মার্কিন সামরিক ঘাঁটি।
মধ্যপ্রাচ্যে একটি বড় ও দীর্ঘ যুদ্ধের আশঙ্কা তখন আরও তীব্র হয়ে ওঠে। তবে এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন, ‘ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সম্পূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে।’
তিনি এটিকে ১২ দিনের যুদ্ধ বলে অভিহিত করেন। এই যুদ্ধ বছরের পর বছর চলতে পারত এবং পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে ধ্বংস করে দিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তবে যুদ্ধবিরতির ঘোষণার চার ঘণ্টা পরই ইরান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর দাবি করে ইসরায়েল। পাল্টা হামলায় তেহরানের কাছে একটি রাডার স্টেশন ধ্বংস করে তেলর আবিব।
এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘ইসরায়েল যে আজ সকালেই বেরিয়ে পড়েছে, তাতে আমি খুবই অসন্তুষ্ট। দুটি দেশ যারা এতদিন ধরে লড়াই করেছে, তারা জানে না কী করছে!’
ইরান অবশ্য ওই ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের অভিযোগ অস্বীকার করে। এরপর স্থানীয় সময় বেলা সাড়ে ১১টায় যুদ্ধবিরতি পুনরায় কার্যকর হয় এবং ট্রাম্প নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলেন।
পরে ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লেখেন, “ইসরায়েল আর ইরানে হামলা করবে না। সব বিমান ফিরে আসবে এবং ইরানকে একটি ‘বন্ধুত্বপূর্ণ উড়ন্ত অভিবাদন’ জানাবে। কেউ আহত হবে না, যুদ্ধবিরতি কার্যকর রয়েছে!”
ইসরায়েল কী অর্জন করল?
ইসরায়েল বহুদিন ধরে দাবি করে আসছে, ইরান তাদের অস্তিত্বের জন্য প্রধান হুমকি। তবে এর আগে কখনো ইরানের মূল পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালায়নি তেল আবিব।
১৩ জুন ইসরায়েল সেই সীমারেখা অতিক্রম করে নাতাঞ্জের ফুয়েল এনরিচমেন্ট প্ল্যান্ট ও ইসফাহান পারমাণবিক প্রযুক্তি কমপ্লেক্সে হামলা চালায়। জবাবে ইরানও ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইসরায়েলের দিকে।
এর ফলে সিরিয়া ও ইরাকে পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালালেও এবার আরও দূরবর্তী ও জটিল অভিযানে সফল হয়েছে ইসরায়েল।
আন্তর্জাতিক আইনি বৈধতা নিয়ে সমালোচনার মুখেও নিজেদের সিদ্ধান্তে অটল থেকেছে তারা। ইসরায়েল দাবি ছিল, এই হামলা একটি আত্মরক্ষামূলক পদক্ষেপ।
যদিও ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বানাচ্ছে বা সেটি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে যাচ্ছিল বলে অভিযোগ করেছে তেল আবিব, তবে অনেকেই তা বিশ্বাস করেন না।
এখানে আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়, তা হলো— এই অভিযানে এটি প্রমাণিত হয়েছে যে, ইসরায়েল চাইলে যুক্তরাষ্ট্রকে এমন অভিযানেও জড়াতে পারে যেখানে তারাই প্রথম আঘাত হেনেছে।
১৯৬৭ ও ১৯৭৩ সালের যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র শুধু উপকরণ সরবরাহ করেছিল; সরাসরি অংশ নেয়নি।
ট্রাম্পের এই ভূমিকার জন্য অবশ্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেও কার্পণ্য করেনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী। তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন নেতানিয়াহু।
আরও পড়ুন: ইরানে শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন করতে চান না ট্রাম্প
ইসরায়েল ইরানে পরিচালিত ওই হামলার নাম দিয়েছে ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’। এমন এক সময় এই অপারেশেন চালানো হয়, যখন ইসরায়েল ইতোমধ্যে ইরানের আঞ্চলিক মিত্র—হুথি, হামাস ও হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে।
ইরান কি পারমাণবিক কর্মসূচি রক্ষা করতে পেরেছে?
ইসরায়েল দৃশ্যত ইরানের ভূ-উপরিভাগের স্থাপনাগুলোতে বড় ক্ষতি করেছে, আর যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে তারা ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস করেছে।
উপগ্রহ চিত্রে ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার চিহ্ন দেখা গেলেও, সত্যিকারের ক্ষয়ক্ষতি কতটা হয়েছে তা নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা যায়নি। এর জন্য ওইসব স্থাপনা পরিদর্শনের প্রয়োজন হবে।
সোমবার আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রধান রাফায়েল গ্রোসি বলেন, ‘এই মুহূর্তে কেউ, এমনকি আইএইএ-ও ফোরদোয় ভূগর্ভস্থ ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণ মূল্যায়ন করতে পারেনি। তবে বিস্ফোরণের মাত্রা ও সেন্ট্রিফিউজের স্পর্শকাতরতা বিবেচনায় যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।’
এই ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে আরও একটি প্রশ্ন রয়ে গেল— ইরানের ৪০০ কেজি উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম কোথায় আছে?
আইএইএ বলেছে, এই মজুদের অবস্থান তারা জানে না।
ইরানের পরমাণু শক্তি সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ ইসলামি দাবি করেছেন, তাদের কর্মসূচিতে কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না এবং কারণ হামলার আগেই তাদের প্রস্তুতি নেওয়া ছিল।
এদিকে, যুদ্ধবিরতির সাড়ে তিন ঘণ্টা পর ইসরায়েল যে দুটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের কথা বলেছে, সেগুলোর উৎস নিয়েও ধোঁয়াশা রয়ে গেছে। কারণ ইরান আনুষ্ঠানিকভাবে এর দায় অস্বীকার করেছে।
তাহলে প্রশ্ন থেকে যায়— কে ছুঁড়ল সেগুলো? সেগুলো কি ভুলবশত ছোড়া হয়েছিল?
এখানে একটু মনে করিয়ে দেওয়া যায়, ২০২১ সালের একটি ঘটনা। ইরানের একটি ভুল ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইউক্রেনের একটি যাত্রীবাহী বিমান ভেঙে পড়ে এবং ১৭৬ জন নিহত হন।
ইরানে আবার হামলার সম্ভাবনা কতটুকু?
ইসরায়েল ও ইরান অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হয়েছে, শান্তিচুক্তিতে নয়।
পরমাণু কর্মসূচির প্রশ্নে তাদের কাছে দুটি পথ খোলা বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির মতো জাতিসংঘের নতুন পর্যবেক্ষণ ও একটি নতুন চুক্তি, অথবা আরেক দফা সংঘাত।
যুক্তরাষ্ট্র যদিও ওই চুক্তি থেকে বেরিয়ে এসেছিল ২০১৮ সালে, তবে ইরান এখনও ওই চুক্তিতে রয়েছে। এই অবস্থায় ইউরোপের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
গত শুক্রবার (২০ জুন) যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কাজা কাল্লাস ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচির সঙ্গে বৈঠক করেন। যুক্তরাষ্ট্রকে হামলা থেকে বিরত রাখার শেষ প্রচেষ্টা হিসেবে ওই বৈঠক করেছিলেন তারা।
এ বিষয়ে গ্রিসের এথেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূরাজনীতি বিষয়ক শিক্ষক ইয়োয়ানিস কোটুলাস আল জাজিরাকে বলেন, ‘পর্যবেক্ষণ বাড়ানো ও নির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি দেওয়ার মাধ্যমে ইউরোপকে জড়াতে চায় ইরান।
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচিতে রাজি হতে পারে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ইতোমধ্যেই এমনটি বলেছেন। তাছাড়া ইরানে শাসন পরিবর্তনের চেষ্টাও যুক্তরাষ্ট্র করবে না বলেই মনে হচ্ছে।’
তবে ইসরায়েল এর আগেও পশ্চিমা দেশ ও ইরানের মধ্যে পারমাণবিক চুক্তি বানচাল করতে চেয়েছে এবং নতুন কোনো চুক্তিকেও স্বাগত জানাবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে।
এখানে আরেকটি প্রশ্ন আসে— ইরান কতটা আপস করতে চাইবে?
যুক্তরাষ্ট্র আগেই চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেছে, আবার নতুন আলোচনার সময় ইরানকে বোমা হামলার শিকার হতে হয়েছে।
সেন্ট অ্যান্ড্রুস বিশ্ববিদ্যালয়ের ইরানি ইতিহাসবিদ অধ্যাপক আলি আনসারি বলেন, ‘সবকিছু নির্ভর করছে দেশের অভ্যন্তরীণ গতিশীলতা ও কীভাবে আপসকে ব্যাখ্যা করা হয়; তার ওপর। তবে ইতোমধ্যে দেশজুড়ে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধের দাবিও উঠেছে।’
আরও পড়ুন: যুদ্ধবিরতির পর কূটনীতির পথে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র
কিন্তু এখন পর্যন্ত ইরান কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
সোমবার (২৩ জুন) ইরানের সংসদের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি একটি বিল অনুমোদন করেছে, যেখানে আইএইএয়ের সঙ্গে তেহরানের সহযোগিতা সম্পূর্ণভাবে স্থগিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিলটি এখন প্লেনারি অধিবেশনে অনুমোদনের অপেক্ষায়।
তবে মঙ্গলবার ট্রাম্প ফের ঘোষণা দিয়েছেন, ‘ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি পুনরায় শুরু করতে দেওয়া হবে না।’
এ পরিস্থিতিতে বলা চলে, মূল উত্তেজনা যদি বজায় থাকে, তবে নতুন করে পাল্টা-পাল্টি হামলা কেবল সময়ের ব্যাপার মাত্র।
১৬২ দিন আগে
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে ঢাকা
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোয় সাম্প্রতিক হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে বাংলাদেশ।
রবিবার (২২ জুন) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শাহ আসিফ রহমান বলেন, ‘এই ধরনের ঘটনা ইতোমধ্যে অস্থির একটি অঞ্চলকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি বাড়াচ্ছে।’
বাংলাদেশ তার দীর্ঘদিনের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বলেছে, সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানে সংলাপ ও কূটনীতির কোনো বিকল্প নেই।
আসিফ রহমান বলেন, ‘আমরা সব পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাচ্ছি এবং এমন কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার অনুরোধ করছি, যা এই অঞ্চলে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।’
আরও পড়ুন: আদর্শ নাকি নমনীয়তা, কোন পথে যাবেন খামেনি
তিনি একটি লিখিত বিবৃতি পড়ে শোনান, যেখানে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে—তারা যেন সক্রিয়ভাবে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা প্রশমনে ভূমিকা রাখে এবং শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে কার্যকর উদ্যোগ নেয়।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই মুখপাত্র বলেন, ‘বাংলাদেশ বিশ্বাস করে, গঠনমূলক সংলাপ, পারস্পরিক সম্মান এবং আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি মেনে চলাই দীর্ঘস্থায়ী শান্তির একমাত্র পথ।’
আরও পড়ুন: মার্কিন হামলার শিকার ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো সম্পর্কে যা জানা প্রয়োজন
এদিকে, ইরান থেকে প্রথম ধাপে বাংলাদেশিদের একটি দল আগামী সপ্তাহে দেশে ফিরতে পারে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
১৬৫ দিন আগে
আদর্শ নাকি নমনীয়তা, কোন পথে যাবেন খামেনি
৮৬ বছর বয়সী ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির সামনে এবার তার জীবনের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা—সংঘাত, নাকি শান্তির পথ বেছে নেবেন তিনি? তার এই সিদ্ধান্ত কেবল ইরান নয়, গোটা মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে ৩৫ বছরের শাসনামলে বহুবার দেশটির অভ্যন্তরীণ হুমকি উৎরেছেন খামেনি। তবে এবারই তিনি সবচেয়ে বড় সংকটের মুখোমুখি।
চিরশত্রু ইসরায়েল এখন ইরানের আকাশপথে মুক্তভাবে অভিযান পরিচালনা করে দেশটির সামরিক নেতাদের হত্যা এবং পরমাণু কর্মসূচিকে লক্ষ্য করে নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ ‘খামেনির আর বেঁচে থাকার অধিকার নেই’ বলেও হুমকি দিয়েছেন।
সামনে রয়েছে দুটি পথ
খামেনির সামনে এখন দুটি পথ খোলা। তিনি চাইলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামলার মাত্রা বাড়াতে পারেন, যা আরও ভয়াবহ ক্ষতি বয়ে আনতে পারে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের। অথবা কূটনৈতিক সমাধানের পথে যেতে পারেন তিনি, যাতে যুক্তরাষ্ট্র এই সংঘাতে না জড়ায়। তবে এ পথে গেলে তাকে সারা জীবনের সাধনা—পরমাণু কর্মসূচি বিসর্জন দিতে হবে।
আরও পড়ুন: ইসরায়েলি হামলার মাঝেই ৩ ইউরোপীয় পরাশক্তির সঙ্গে বৈঠকে বসছে ইরান
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) এক ভিডিও বার্তায় খামেনি বলেন, ‘ইরান কখনো আত্মসমর্পণ করে না।’ একই সঙ্গে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে বলেন, ‘হস্তক্ষেপ করলে এর জন্য চরম মূল্য দিতে হবে।’
ইরানকে বদলে দিয়েছেন খামেনি
১৯৮৯ সালে ইরানের ক্ষমতার শীর্ষে আসেন আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। এ সময়অনেকেই তার নেতৃত্ব নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। কারণ, তিনি ছিলেন অপেক্ষাকৃত নিচু স্তরের ধর্মীয় নেতা। ঘন ফ্রেমের চশমা আর ধীরস্থির স্বভাবের মধ্যে পূর্বসূরি আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির মতো জ্বালাময়ী নেতৃত্বগুণও ছিল না তার।
তবে, সেসব পাশ কাটিয়ে পূর্বসূরির চেয়ে তিনগুণ বেশি সময় ধরে শাসনভার নিজের কাঁধে রেখে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের এই দেশটিকে আরও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন খামেনি।
তিনি শিয়াপন্থী মোল্লা শাসনব্যবস্থাকে আরও দৃঢ় করেছেন। একই সঙ্গে দেশটির বিপ্লবী গার্ড বাহিনীকে সামরিক ও রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে একটি অভিজাত বাহিনীতে রূপান্তর করেছেন এই ধর্মীয় নেতা।
গার্ড বাহিনী এখন ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি চালায়। পাশাপাশি কুদস ফোর্সের মাধ্যমে ইয়েমেন থেকে লেবানন পর্যন্ত ইরানের অনুগত অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স গড়ে তুলেছে বাহিনীটি।
আরও পড়ুন: ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র জড়াবে কি না, সিদ্ধান্ত দুই সপ্তাহের মধ্যে
এমনকি ইরানের অর্থনীতির বড় অংশও নিয়ন্ত্রণ করে অভিজাত এই বাহিনী। বিনিময়ে তারা খামেনির একনিষ্ঠ ডান হাতে পরিণত হয়েছে।
দেশীয় সংকট কঠোর হস্তে দমন
৯০-এর দশকে সংস্কারপন্থীদের উত্থানের সময়কালে খামেনিকে প্রথম বড় কোনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। খামেনি সর্বোচ্চ নেতা হওয়ার পরপরই সংস্কারপন্থীরা পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং প্রেসিডেন্ট পদ দখলে নেয়। তারা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে আরও ক্ষমতা দেওয়ার পক্ষে ছিল।
খামেনি ও তার অনুগত গোষ্ঠী এটিকে ইসলামি শাসনব্যবস্থা ভেঙে ফেলার হুমকি হিসেবে দেখছিলেন। তবে তিনি কঠোর হাতে সংস্কারপন্থীদের রুখে দেন।
পরবর্তীতে ২০০৯, ২০১৭, ২০১৯ ও ২০২২ সালের গণআন্দোলন কঠোরভাবে দমন করে বিপ্লবী গার্ড বাহিনী। সর্বশেষ মাহসা আমিনির মৃত্যুর পরের আন্দোলনে বহু মানুষ নিহত ও নির্যাতিত হন।
ইরানকে আঞ্চলিক শক্তিতে পরিণত করেছেন
ইরাকের সঙ্গে দীর্ঘ ৯ বছরের যুদ্ধ শেষে ক্ষতবিক্ষত ইরানকে খামেনি একটি প্রভাবশালী আঞ্চলিক শক্তিতে পরিণত করেন।
২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে সাদ্দাম হোসেনের পতনের ফলে শিয়াপন্থী রাজনীতিবিদ ও মিলিশিয়ারা ইরাকের ক্ষমতায় আসে। এটি ইরানের প্রভাব বিস্তারে অন্যতম বড় নিয়ামক হয়ে ওঠে।
ইরাক হয়ে ওঠে ইরানের ‘অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স’ বা প্রতিরোধ অক্ষের মূল কেন্দ্র। এই অক্ষের বাকি সদস্য হলো সিরিয়ার আসাদ সরকার, লেবাননের হিজবুল্লাহ, ফিলিস্তিনের হামাস ও ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা। ২০১৫ সালের মধ্যে এই জোট তার সর্বোচ্চ শক্তিতে পৌঁছায়, যার মাধ্যমে ইরান ইসরায়েলের দরজায় কড়া নাড়ছিল।
সুদিন আর নেই
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে গাজায় নজিরবিহীন হামলার পাশাপাশি ইরানের এই অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স ধ্বংস করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় ইসরায়েল। তারপর থেকে গাজায় ক্রমাগত হামলায় ব্যাপকভাবে দুর্বল পড়েছে হামাস।
অন্যদিকে লেবাননে হিজবুল্লাহর ওপরও বোমা হামলা করেছে ইসরায়েল। এমনকি গত বছর দেশটিতে একযোগে কয়েক হাজার পেজার বিস্ফোরণও ঘটিয়েছে তারা।
পেজার, ওয়াকিটকিসহ হিজবুল্লাহর ব্যবহৃত যোগাযোগের বিভিন্ন যন্ত্রে বোমা স্থাপন করেছিল ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ।
তবে সবচেয়ে বড় ধাক্কা আসে সিরিয়া থেকে। সম্প্রতি, ইরান সমর্থিত শিয়াপন্থী আসাদ সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিয়েছে সুন্নি বিদ্রোহীরা। এখন দামেস্কে একটি ইরানবিরোধী সরকার ক্ষমতায় বসেছে।
সবকিছু মিলিয়ে এই মুহূর্তে ইরানের গড়া ‘প্রতিরোধ অক্ষরেখা’ সবচেয়ে দুর্বল অবস্থানে রয়েছে। তার মাঝেই এবার সরাসরি সংঘাতে জড়িয়েছে ইসরায়েল ও ইরান।
আরও পড়ুন: ছায়ার আড়ালে মোসাদ: ইরানে রহস্যময় অনুপ্রবেশ
সবশেষ খবর অনুযায়ী, এই সংঘাতে ইসরায়েলের পক্ষ হয়ে যোগ দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্রও। ফলে আদর্শ রক্ষার এই লড়াইয়ের বর্তমান বাস্তবতায় খামেনি শেষ পর্যন্ত ইরানের স্থিতিশীলতায় সায় দেবেন, না কি আদর্শে অটুট থাকবেন—তা-ই হয়ে উঠেছে বড় প্রশ্ন।
১৬৭ দিন আগে
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি কেন এত বিতর্কিত?
ইরানের রাজধানী তেহরানসহ একাধিক স্থানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে নিহত হয়েছেন দেশটির শীর্ষ দুই সামরিক কর্মকর্তা ও ৬ পরমাণু বিজ্ঞানী। শুক্রবার (১৩ জুন) ভোরে চালানো এই অপারেশনের নাম দেওয়া হয়েছে রাইজিং লায়ন। নজিরবিহীন এই হামলার মূল কারণই ছিল পশ্চিমাদের ভাষায় ইরানের বিতর্কিত পারমাণবিক কর্মসূচি।
দীর্ঘদিন ধরে তেহরান দাবি করে আসছে তারা শান্তিপূর্ণ কাজে পারমাণবিক প্রযুক্তির দক্ষতা অর্জনের উদ্দেশ্যে কাজ করছে। তবে পশ্চিমা দেশগুলোর অভিযোগ, ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে। ইরান সেটি বরাবরই অস্বীকার করেছে। অন্যদিকেজাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি (আএইএ) অনেকদিন ধরেই ইরানকে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তির শর্ত লঙ্ঘনের দায় দিয়ে আসছে।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) প্রায় দুই দশকে প্রথমবারের মতো আএইএ আনুষ্ঠানিকভাবে ইরানকে এই শর্ত ভঙ্গের জন্য অভিযুক্ত করে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ও আএইএ-এর মতে, ইরান ২০০৩ সাল পর্যন্ত একটি গোপন ও সমন্বিত পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি চালিয়েছিল। তবে ইরান বরাবরই এমন অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
পরমাণু চুক্তি-২০১৫ অনুযায়ী, ইরানকে ইউরেনিয়াম সর্বোচ্চ ৩.৬৭ শতাংশ মাত্রায় সমৃদ্ধ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। সে সময় দেশটি ৩০০ কেজি পর্যন্ত ইউরেনিয়াম মজুদ রাখতে পারত এবং শুধুমাত্র প্রাথমিক মানের আইআর-১ সেন্ট্রিফিউজ ব্যবহার করতে পারত— যন্ত্রগুলো দ্রুতগতিতে ইউরেনিয়াম গ্যাস ঘুরিয়ে তা সমৃদ্ধ করতে সহায়তা করে।
আরও পড়ুন: ইসরায়েলের হামলায় যুক্তরাষ্ট্র জড়িত নয়: ট্রাম্প প্রশাসন
কিন্তু ২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে ওই চুক্তি থেকে সরিয়ে নেয়। এরপর থেকেই ইরান ধীরে ধীরে চুক্তি লঙ্ঘন করে নিজেদের পারমাণবিক সক্ষমতা বাড়াতে থাকে। তারা ইউরেনিয়াম ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ করতে শুরু করে। —যা অস্ত্র তৈরির জন্য ৯০ শতাংশ প্রযুক্তিগত পদক্ষেপ থেকে একটু দূরের পর্যায়।
এরপর থেকে যুক্তরাষ্ট্র নিয়মিত ইরানকে বিভিন্ন নিষেধাধাজ্ঞা দিয়ে আসছে। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাগুলো ইরানের অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা দিলেও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ থেকে পুরোপুরি নিবৃত্ত করতে পারেনি।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরানের একজন প্রধান পারমাণবিক বিজ্ঞানীসহ শীর্ষ পর্যায়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাদের হত্যা করেছে ইসরায়েল। কিন্তু, এতেও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম থেমে যায়নি দেশটির।
ইরান স্পষ্ট করে বলেছে, ইউরেনিয়াম মজুদের ব্যাপারে তারা কোনো আলোচনা করবে না।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, মে মাসে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আএইএ) একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরান এমন তিনটি স্থানে গোপনে পারমাণবিক কার্যক্রম চালিয়েছে, যেগুলোর বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরেই তদন্ত চলছে এবং যেখানে ব্যবহৃত উপকরণগুলোর তথ্য আএইএ-কে জানানো হয়নি।
আরও পড়ুন: ইরানের পরমাণু স্থাপনাসহ বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলের হামলা
গত মে মাসের শেষ দিকে আএইএ জানায়, ইরানের কাছে বর্তমানে ৬০ শতাংশ মাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের পরিমাণ বেড়ে ৪০৮ কেজিতে দাঁড়িয়েছে। সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, এটিকে আরও সমৃদ্ধ করলে প্রায় নয়টি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা সম্ভব।
১৭৫ দিন আগে
পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি বাদ দিতে হবে ইরানকে: মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যেকোনো চুক্তি করতে হলে কিংবা সামরিক হামলার ঝুঁকি এড়াতে ইরানকে সব ধরনের পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি পুরোপুরি বাতিল করতে হবে জানিয়েছেন মার্কিন পররারষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও।
স্থানীয় সময় বুধবার (২৩ এপ্রিল) সাংবাদিক বারি ওয়েসিসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি।
রুবিও জানান, ইরান যদি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করে একটি চুক্তি করতে চায়, তাহলে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মতো পারমাণবিক কর্মসূচি প্রত্যাহার করতে হবে। একই সঙ্গে এতে সামরিক হামলার ঝুঁকিও এড়াতে সক্ষম হবে তেহরান।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ইরান যদি শান্তিপূর্ণ পারমানবিক কর্মসূচি চায়, তারা সেটি করতেই পারে। তবে সেক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের মতো সমৃদ্ধ উপাদানগুলো (ইউরেনিয়াম) আমদানি করতে হবে।’
এদিকে, ইরান বরাবরই দাবি করে আসছে তারা শান্তিপূর্ণভাবেই পারমাণবিক কর্মসূচি পরিচালনা করে। সক্ষমতা থাকলেও তারা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কোনো চেষ্টা করেনি। তবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি বাতিলের প্রস্তাব প্রত্যাখান করেছে তেহরান।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করার লক্ষ্যে ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে একতরফাভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি থেকে বের করে নিয়ে আসে। দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফিরেই ইরানকে চাপে ফেলতে আরও কঠিন শর্ত দিয়ে একটি চুক্তির সম্পাদনের উদ্যোগ নেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
আরও পড়ুন: ইরান-যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক চুক্তি কি তবে হতে চলেছে?
ট্রাম্প গত ৫ মার্চ ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনিকে আলোচনায় আসার জন্য একটি চিঠি লেখেন। পরদিন টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে এসে নিজেই বলেন, ‘আমি তাদের একটি চিঠি লিখেছি। চিঠিতে বলেছি, আপনারা আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসুন, নাহলে আমরা সামরিক হামলা চালাতে বাধ্য হব। সেটি কিন্তু খুব খারাপ হবে।’
প্রথমে সরাসরি আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখান করলেও ইতোমধ্যে দুই দফা আলোচনা হয়েছে দেশ দুটির মধ্যে। চলতি সপ্তাহের শেষ নাগাদ কৌশলগত আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়া কথা রয়েছে। নিজেদের অর্থনীতির উন্নতির লক্ষ্যে ইরান এমন একটি চুক্তি চায়, যেখানে দেশটির ওপর চলমান নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।
তবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও বলেন, ‘ইরানের সঙ্গে কোনো চুক্তি হওয়া থেকে এখনো অনেক দূরে রয়েছি আমরা। কোনো চুক্তি আদৌ হবে কিনা, তা-ও বলা যাচ্ছে না। তবে আমরা চাই একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান।’
মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধে জর্জরিত পরিস্থিতি উল্লেখ করে রুবিও বলেন, এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র বা অন্যকোনো শক্তি যদি ইরানের হামলা চালায়, তবে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চাইলেই হামলা চালাতে পারতেন, কিন্তু তিনি তা না করে শান্তিপূর্ণ সমাধানকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।’
এর আগে, গত সপ্তাহে ইরানের সঙ্গে আলোচনা শেষে ইরান চাইলে সীমিত আকারে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ চালু রাখতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিফ উইটকফ। তবে এতে আপত্তি জানায় অনেক রক্ষণশীল আমেরিকানসহ ইসরায়েল। পরে ট্রাম্প প্রশাসন জানায়, চুক্তি করতে হলে ইরানকে পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে।
২২৫ দিন আগে