সুস্পষ্ট রোডম্যাপ
সংস্কার-নির্বাচনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ না থাকায় সংশয় তৈরি হয়েছে: জামায়াত আমির
সংস্কার ও আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কোনো সুস্পষ্ট রোডম্যাপ না থাকায় জনগণের মধ্যে সংশয় তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারের কাছে সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ দাবি করেছিলাম। সুস্পষ্ট রোডম্যাপ না থাকায় জনগণের মধ্যে সংশয় তৈরি হয়েছে। জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা সরকারের প্রতি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ দাবি করছি।’
জামায়াত আমির বলেন, ‘আমরা ফ্যাসিবাদের সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছিলাম। এ বিচার প্রক্রিয়া অনেক দীর্ঘ। তবে জাতির কাছে বিশ্বাসযোগ্য বিচারকার্য অনতিবিলম্বে দৃশ্যমান হতে হবে।’
শনিবার (২৪ মে) সকালে রাজধানীর মগবাজারের আল-ফালাহ মিলনায়তনে দলের কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরার ষান্মাসিক অধিবেশনের উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া টাইম ফ্রেমেই নির্বাচন হতে হবে: সেলিম উদ্দিন
জামায়াত আমির বলেন, প্রধান উপদেষ্টা একাধিকবার বলেছেন জাতীয় নির্বাচন তিনি এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে সম্পন্ন করতে চান। এতে আমাদের আস্থা রয়েছে। এব্যাপারে আমরা সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা করতে চাই।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, স্বাধীনতার মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের এই দীর্ঘ পরিক্রমায় জাতির মূল প্রত্যাশার অনেকগুলো আজও অপূর্ণ থেকে গেছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়নি। নাগরিক অধিকার নিশ্চিত হয়নি। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলগুলো দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের মর্যাদাপূর্ণ হেফাযত সংরক্ষণ করতে পারেননি।
তিনি বলেন, গত ১৫ বছরের শাসকগোষ্ঠী দেশকে দুঃশাসন উপহার দিয়েছে। তাদের পুরোটা সময় মানুষ দুঃস্বপ্নে বসবাস করেছে। জেল-জুলুমের স্টিমরোলার জাতির ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের কাউকে বিচারের নামে প্রহসন করে আবার কাউকে বিনা বিচারে হত্যা করা হয়েছে। আয়নাঘর বানিয়ে গুমের সংস্কৃতি চালু করা হয়েছে। একটি স্বাধীন দেশে ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে দেশে যা ঘটেছে—তার সাক্ষী দেশের আপামর জনগণসহ গোটা বিশ্ববাসী।
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যেই জাতিসংঘের ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি ও মানবাধিকার সংগঠন ঐ সময়ের সরকারকে স্পষ্টভাবে দায়ী করে জুলাই-আগস্টের ঘটনার একটি রিপোর্ট পেশ করেছে।
জামায়াতপ্রধান বলেন, বর্তমানে আমরা জাতির একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁকে অবস্থান করছি। এই বাঁক সফলভাবে উত্তরণ করতে হবে। বিশেষ করে গত কয়েক দিনের ঘটনা প্রবাসীসহ দেশবাসীকে বিচলিত করেছে। এ ব্যাপারে জামায়াতে ইসলামী একটি দায়িত্বশীল সংগঠন হিসেবে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে। আমরা বলেছি সংঘাত-সংঘর্ষ এবং কাদা ছোড়াছুড়ি করে জাতিকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দেওয়া একেবারেই সমীচীন হবে না।
তিনি বলেন, জামায়াতের রাজনীতি দেশ ও জনগণের কল্যাণে। জামায়াত সবসময় জনগণের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে দলীয় পরিকল্পনা-কর্মসূচি রচনা ও পরিচালনা করে। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে কতিপয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। এই অনিশ্চয়তা উত্তরণে আমরা অন্তর্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে সর্বদলীয় বৈঠক করার আহ্বান জানিয়েছি। আমরা বিশ্বাস করি সকলের সন্তোষজনক আলোচনার মাধ্যমে জাতির আতঙ্ক ও আশঙ্কা দূর হবে এবং এ সংকটের উত্তরণ ঘটবে ইনশাআল্লাহ।
অতীতের নির্বাচনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ২০১৪ তে ১৫৪ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়, ২০১৮ সালের নিশি রাতের ভোট এবং ২০২৪ এ ডামি আর আমি’র প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে জাতির সঙ্গে চরম তামাশা করা হয়েছে। এ অবস্থায় জাতিকে একটি সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে হবে। যার মাধ্যমে সত্যিকার অর্থে জনগণের মতের প্রতিফলন ঘটবে ও জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে।
আরও পড়ুন: প্রধান উপদেষ্টাকে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার আহ্বান জামায়াত আমিরের
তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি দুটি স্পর্শকাতর বিষয় জাতির সামনে এসেছে। মানবিক করিডোর ও চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর ব্যবস্থাপনা। এ ব্যাপারে সিকিউরিটি এক্সপার্ট এবং দেশের সকল পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে যথাযথ সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। অথবা নির্বাচিত পার্লামেন্টের জন্য রেখে দেওয়া যেতে পারে।
সেনাবাহিনী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সেনাবাহিনী আমাদের গর্বের বিষয়। ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ বাঁকে তাদের মর্যাদাপূর্ণ অবদান রয়েছে। সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করা উচিত নয়। জাতির প্রত্যাশা সেনাবাহিনী স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার মাধ্যমে দেশ ও জাতির সেবা করবে এবং দেশের রাজনৈতিক দলগুলো ও সেনাবাহিনী যার যার অবস্থান থেকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের দিকে নজর দিবে।
ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে শান্তিকামী বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে জামায়াত আমির বলেন, ফিলিস্তিনের জনগণ দশকের পর দশক ধরে নির্যাতিত এবং নিষ্পেষিত হচ্ছে। গাজা ও ফিলিস্তিনে মানবতাবিরোধী যুদ্ধ চলছে। আমরা জাতিসংঘসহ শান্তিকামী ও মানবতাবাদী বিশ্বসম্প্রাদয়কে যুদ্ধ বিরতি নয়, স্থায়ীভাবে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছি। সিরিয়াকে সে দেশের জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী চলতে দেওয়া উচিত বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
আরাকান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আরাকানের রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিয়ে সম্মান ও নিরাপত্তার সঙ্গে পুনর্বাসিত করতে হবে। এব্যাপারে জাতিসংঘকেই প্রধান ভূমিকা পালন করতে হবে।
আরও পড়ুন: জামায়াত নির্বাচনমুখী দল, আর্ত-মানবতার মুক্তি চায়: ডা. শফিকুর রহমান
আমীরে জামায়াত নিজ দলের দায়িত্বশীলদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, সকল ক্ষেত্রে আমাদের দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। সকল ব্যাপারে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মীকে সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার ব্যাপারে দিক নির্দেশনা দিতে হবে।
ইতিবাচক ভূমিকায় সমাজকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে এগিয়ে নিতে এবং কালোকে কালো ও সাদাকে সাদা বলতে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান জামায়াত আমির। একটি শান্তিপূর্ণ, দুর্নীতিমুক্ত মানবিক কল্যাণ রাষ্ট্র গড়ার প্রত্যয়ে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এসময় জামায়াতের নায়েবে আমির, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলসহ কেন্দ্রীয় নেতা ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার (পুরুষ ও মহিলা) সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
১৯৪ দিন আগে