হোসেইন সালামি
নিহত আইআরজিসি প্রধান হোসেইন সালামি কে ছিলেন?
শুক্রবার তেহরানের পরমাণু স্থাপনায় ইসরায়েলি হামলায় ইরানের অভিজাত বাহিনী ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) প্রধান হোসেইন সালামি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম। এই হামলায় সালামিসহ আরও কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা নিহত হয়েছেন বলেও খবরে উল্লেখ করা হয়েছে।
আজ (শুক্রবার) ভোরে ইরানের রাজধানী তেহরানসহ একাধিক স্থানে হামলা চালায় ইসরায়েল। দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে বলা হয়, তেহরানে আইআরজিসির সদর দপ্তরেও হামলা হয়েছে।
গত ২০ মাসে মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত ও অস্থিরতার মাঝে একাধিক সংকটে পড়ে গেছে তেহরান। এরই মধ্যে দেশটির অন্যতম ক্ষমতাধর বাহিনীর নেতৃত্বে থাকা সালামির এই মৃত্যু ইরানের নেতৃত্বে বড় ধাক্কা হিসেবে দেখছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।
হোসেইন সালামিকে ইরানের অন্যতম শীর্ষ নেতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তার জন্ম ১৯৬০ সালে, ইরানের গোলপায়েগান শহরে।
কলেজে পড়াকালীন ১৯৮০ সালে ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় তিনি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীতে (আইআরজিসি) যোগ দেন। পরে বাহিনীর বিমান শাখার নেতৃত্ব দেন তিনি।
সামরিক বাহিনীতে থাকাকালেই ধাপে ধাপে পদোন্নতি পেয়ে একপর্যায়ে আইআরজিসির উপপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। এই সময় যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের বিরুদ্ধে তার কঠোর অবস্থানের জন্য তিনি দেশে-বিদেশে পরিচিতি লাভ করেন।
আরও পড়ুন: ট্রাম্পের আশঙ্কা ও সতর্কতার পরই ইরানে হামলা ইসরায়েলের
২০১৬ সালে এক ভাষণে সালামি বলেছিলেন, ‘ইহুদিবাদী শাসন নিষ্ক্রিয়, পতন এবং ধ্বংস করতে উর্বর ক্ষেত্র প্রস্তুত।’ সে সময় যুক্তরাষ্ট্রকেও হুমকি দিয়েছিলেন তিনি।
এরপর ২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জাফারিকে সরিয়ে সালামির কাঁধে আইআরজিসির ভার দেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি।
এমন এক সময়ে তিনি আইআরজিসির নেতৃত্বে আসেন, যখন প্রথম মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় থাকাকালে ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি প্রত্যাহার করে দেশটির ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। একই সঙ্গে আইআরজিসিকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবেও তালিকাভুক্ত করে ট্রাম্প প্রশাসন।
২০২০ সালে বাগদাদের বিমানবন্দরের বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় আইআরজিসির কুদস ফোর্সের প্রধান কাসেম সোলাইমানি নিহত হওয়ার পর সালামি হুঁশিয়ারি দেন, ‘মার্কিন ও ইসরায়েলি কমান্ডারদের পাল্টা হামলার লক্ষ্য বানানো হবে। আমাদের কমান্ডারদের হুমকি দিলে, শত্রুদের কোনো কমান্ডারই নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পাবে না।’
সে সময় দুটি ইরাকি ঘাঁটিতে মার্কিন সেনাদের লক্ষ্য করে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও ছোড়ে ইরান, যাতে কেউ নিহত না হলেও আহত হন অনেকেই।
১৭৫ দিন আগে
ইসরায়েলি হামলায় আইআরজিসি প্রধান হোসেইন সালামি নিহত
শুক্রবার তেহরানের পরমাণু স্থাপনায় ইসরায়েলি হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী—আইআরজিসির প্রধান হোসেইন সালামি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম। এই হামলায় সালামিসহ আরও কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা নিহত হয়েছেন বলে খবরে বলা হয়েছে।
দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে, দেশটির অভিজাত বিপ্লবী গার্ড বাহিনী—আইআরজিসির প্রধান হোসেইন সালামি ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন। তেহরানে আইআরজিসির সদরদপ্তরেও আঘাত হেনেছে।
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, রাজধানীর একটি আবাসিক এলাকায় হামলায় বেসামরিক নাগরিকের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি শিশুও নিহত হয়েছে।
শুক্রবার (১৩ জুন) ইরানের সংবাদমাধ্যম ও প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্য অনুসারে, দেশটির প্রধান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনা নাতানজসহ বিভিন্ন স্থানে বিস্ফোরণ ঘটেছে।
আইআরজিসির সদরদপ্তরও হামলার শিকার হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো। খবরে বলা হয়েছে, ওই স্থাপনা থেকে আগুন ও ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে।
ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর একটি শাখা এবং দেশটির অন্যতম প্রভাবশালী সংগঠন হিসেবে বিবেচিত।
দুই বিজ্ঞানী নিহতের তথ্য প্রকাশ
অপারেশন রাইজিং লায়ন নামের এই হামলায় ইরানের দুই জ্যেষ্ঠ পরমাণু বিজ্ঞানীও নিহত হয়েছেন।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে, ইরানের পরমাণু শক্তি সংস্থার সাবেক প্রধান ফিরেদুন আব্বাসি এবং তেহরানের ইসলামি আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি মোহাম্মদ মেহদি তেরাঞ্চি এই হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন।
আরও পড়ুন: নিহত আইআরজিসি প্রধান হোসেইন সালামি কে ছিলেন?
দেশটির পরমাণু স্থাপনাগুলোর দেখভাল করে থাকে পরমাণু শক্তি সংস্থা (এইওআই)। আব্বাসিকে এর আগেও একবার হত্যার চেষ্টা করা হয়। ২০১০ সালের ওই হামলা থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন তিনি। তবে ১৫ বছর পর এসে আরেক হামলায় প্রাণ হারাতে হলো এই বিজ্ঞানীকে।
এদিকে, ইসরায়েলের এই হামলার চূড়ান্ত জবাব দেওয়া হবে বলে ইরানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। অন্তত ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনার খবরে এমন দাবি করা হয়েছে।
বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, নাতানজ পরমাণু স্থাপনার একটি অংশ ভূ-উপরিভাগে এবং বাকিটা ভূগর্ভে অবস্থিত। পারমাণবিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে সেখানে ইউরেনিয়াম গ্যাস ঘূর্ণায়নের জন্য একাধিক সেন্ট্রিফিউজ হলঘর রয়েছে।
ইরানীয় কমান্ডার ও ক্ষেপণাস্ত্র কারখানাকে হামলার নিশানা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল। এ ছাড়া পরমাণু বোমা, দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ও নাতানজ পরমাণু সমৃদ্ধকরণ স্থাপনায় কাজ করা বিজ্ঞানীদেরও হামলার নিশানা বানানো হয়েছে।
এই হামলার নাম দেওয়া হয়েছে অপারেশন রাইজিং লায়ন।
ইরানের হুঁশিয়ারি ও পাল্টা ব্যবস্থা
এদিকে পাল্টা হামলার আশঙ্কা থেকে ইসরায়েলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে।
একটি ধারণকৃত ভিডিওবার্তায় ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা ইসরায়েলের ইতিহাসের এক চূড়ান্ত মুহূর্তে রয়েছি।’
আরও পড়ুন: ইরানের পরমাণু স্থাপনাসহ বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলের হামলা
নাতানজ থেকে একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলে জানিয়েছেন এক প্রত্যক্ষদর্শী। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে, তেহরানে বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণ হয়েছে। দেশের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি সতর্ক।
ইরানের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘দেশটির শীর্ষ নেতারা একটি নিরাপত্তা বৈঠকে মিলিত হয়েছেন।’
১৭৫ দিন আগে