ইরান-ইসরায়েল সংঘাত
সংঘাতের পর প্রথমবার প্রকাশ্যে খামেনি
ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাত শুরুর পর প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে এসেছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। পবিত্র আশুরার শুভেচ্ছা জানাতে দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত একটি ফুটেজে তাকে দেখা গেছে।
স্থানীয় সময় শনিবার (৫ জুলাই) রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে আশুরার আগের দিন একটি অনুষ্ঠানে মসজিদে উপাসনাকারীদের শুভেচ্ছা জানাতে দেখা যায় খামেনিকে। ব্রিটিশ গণমাধ্যমে বিবিসির খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এর আগে, গত ১৩ জুন ইসরায়েলের হামলায় ইরানের শীর্ষ সামরিক ব্যক্তিত্ব ও পরমাণু বিজ্ঞানীদের নিহতের খবর ঘোষণার একটি রেকর্ড করা ভিডিওতে তাকে সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল।
গত ১২ জুন ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনাগুলোর ওপর আকস্মিক হামলা চালায় ইসরায়েল। এরপর ইসরায়েলে পাল্টা বিমান হামলা চালায় ইরান। শুরু হয়ে যায় মধ্যপ্রাচ্যের এই দুই পরাশক্তির যুদ্ধ।
ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের ওই ১২ দিনের যুদ্ধ চলাকালে খামেনি টেলিভিশনে তিনটি ভিডিও বার্তায় উপস্থিত হয়েছিলেন। এরপর ছড়ায় তার বাঙ্কারে লুকিয়ে থাকার গুঞ্জন।
শনিবার ইরানি গণমাধ্যমে খামেনির এই উপস্থিতি ছিল প্রধান খবর। এমনকি টেলিভিশনে তার সমর্থকদের তাকে দেখে উচ্ছ্বাস প্রকাশের দৃশ্যও প্রচার করা হয়।
ফুটেজে খামেনিকে আরেক ধর্মীয় নেতা মাহমুদ কারিমির দিকে ঘুরে তার সঙ্গে ‘ও ইরান’ নামক দেশপ্রেমমূলক সঙ্গীতটি গাইতে দেখা যায়। এই গানটি ইসরায়েলের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘাতের সময় বিশেষভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানায়, এই ভিডিওটি তেহরানের ইমাম খোমেনি মসজিদে ধারণ করা হয়েছে। মসজিদটি ইসলামি প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম খোমেনির নামে নামকরণ করা।
তার এই প্রকাশ্য উপস্থিতির পর নিজেদের প্রতিক্রিয়ার ভিডিও পাঠাতে ইরানের জনগণকে আহ্বান জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন।
শিয়া মুসলিম-প্রধান দেশটির জন্য শোকের মাস মুহাররম চলাকালে খামেনির এই উপস্থিতি প্রকাশ্যে এলো। এই উৎসবটি সাধারণত সর্বোচ্চ নেতার উপস্থিতিতে পালন করা হয়।
আশুরা মুহাররম মাসের ১০ম দিনে পালিত হয়। এদিন শিয়া মুসলমানরা মহানবী হজরত মুহাম্মদের (সা.) দৌহিত্র ইমাম হুসাইনের শাহাদাত স্মরণ করেন।
এর আগে, গত ২৬ জুন রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত আগের রেকর্ড করা বক্তব্যে খামেনি বলেছিলেন, ইরান ইসরায়েলের কাছে আত্মসমর্পণ করবে না। তার আগে ইরানকে নিঃশর্ত আত্মসমর্পনের আহ্বান জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তার আগে গত ২২ জুন ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর মাধ্যমে ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে সরাসরি যুক্ত হয় যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে যুদ্ধে যুক্ত হয়। এ অভিযানে ১২৫টি মার্কিন সামরিক বিমান অংশ নেয় এবং ইরানের ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানো হয়।
ইরানের বিচার বিভাগ জানিয়েছে, ১২ দিনের এই যুদ্ধকালে নয় শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন।
আরও পড়ুন: আদর্শ নাকি নমনীয়তা, কোন পথে যাবেন খামেনি
১৫২ দিন আগে
এক সপ্তাহের মধ্যেই গাজা যুদ্ধবিরতি হতে পারে: ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তার বিশ্বাস এক সপ্তাহের মধ্যেই ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে গাজা যুদ্ধবিরতি হতে পারে।
শুক্রবার (২৮ জুন) সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এই কথা জানান ট্রাম্প। তার দাবি, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপের পর যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা নিয়ে তিনি আশাবাদী।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা মনে করি, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই যুদ্ধবিরতি হতে পারে।’ তবে তিনি কার সঙ্গে কথা বলেছেন, এ সময় তা প্রকাশ করেননি।
ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের দপ্তর অবশ্য গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে এখনো কোনো নিশ্চিত তথ্য দিতে পারছে না।
বাইডেন সরকারের সময় গাজায় যে যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় চুক্তি হয়েছিল, সেটির অন্যতম মধ্যস্থতাকারী ছিলেন উইটকফ। তবে, মার্চে ইসরায়েল চুক্তি লঙ্ঘন করে আকস্মিক বিমান হামলা শুরু করলে সেই চুক্তি ভেঙে যায়।
এদিকে, কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদক নুর ওদ শুনিয়েছেন ভিন্ন কথা। তিনি জানান, ট্রাম্পের এই মন্তব্য গাজার ক্ষুধার্ত ও নিপীড়িত জনগণের জন্য আশার বাণী হতে পারে। তবে, বাস্তবে এই মুহূর্তে কোথাও কোনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা হচ্ছে না।
তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতির পর এই আলোচনা কিছুটা বেড়েছে। তবে ইসরায়েল এখনই গাজায় যুদ্ধ থামানোর কথা আলোচনা করতে চায় না।’
এই বিশ্লেষকের মতে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এই মুহূর্তে গাজায় যুদ্ধবিরতির কথা বললে উল্টো তিনিই রাজনৈতিকভাবে বড়সড় ঝুঁকিতে পড়তে পারেন।
বিভিন্ন সূত্রের বরাতে ওদ আরও বলেন, ‘আরব দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চাইলে নেতানিয়াহুকে কোনো না কোনোভাবে যুদ্ধবিরতিতে সম্মতি দিতে হতে পারে। এই সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ প্রচেষ্টা মূলত ট্রাম্প প্রশাসনই এগিয়ে নিচ্ছে।’
অন্যদিকে হামাস বলছে, ইসরায়েলকে গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধ করতে হবে এবং তারা মার্চ থেকে যেসব অঞ্চল দখল করেছে, তা ছেড়ে দিতে হবে। এরপরই তারা যুদ্ধবিরতিতে যাবে।
হামাসের দাবি, যুদ্ধবিরতির পরবর্তী আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই নিশ্চয়তা দিতে হবে। পাশাপাশি ইসরায়েল যেন পুনরায় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করতে না পারে, তারও নিশ্চয়তা চেয়েছে এই সংগঠনটি।
ইসরায়েলের কৌশল-বিষয়ক মন্ত্রী রন ডারমার আগামী সপ্তাহে ওয়াশিংটনে যাওয়ার কথা রয়েছে। এই সফরে তিনি ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে গাজা, ইরান ও নেতানিয়াহুর সম্ভাব্য যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে আলোচনা করবেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
১৬০ দিন আগে
গাজায় আগ্রাসন: যুদ্ধবিরতির ‘খুব কাছাকাছি’ হামাস-ইসরায়েল
ইরান-ইসরায়েলের ‘১২ দিনের যুদ্ধ’ থেমেছে, কিন্তু ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার মানুষের ভাগ্য এখনো পরিবর্তন হয়নি। তবে সেই সম্ভাবনা নিয়ে আবারও আলোচনা শুরু হয়েছে। গাজায় নতুন যুদ্ধবিরতির জন্য মধ্যস্থতাকারীরা জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের এক কর্মকর্তা। এদিকে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের দাবি, চুক্তির ‘খুব কাছাকাছি’ রয়েছে হামাস ও ইসরায়েল।
এদিকে, বুধবার (২৫ জুন) সকালে ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৪৫ ফিলিস্তিনি নাগরিক নিহতের খবর পাওয়া গেছে। তাদের অনেকেই ত্রাণ সংগ্রহের অপেক্ষায় ছিলেন বলে হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
অন্যদিকে, মঙ্গলবার হামাসের দাবি করা বোমা হামলায় সাত ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা চলছে
হামাস জানিয়েছে, গাজায় নতুন যুদ্ধবিরতি ও বন্দী ফেরতের বিষয়ে আলোচনা করতে তোড়জোড় করছেন মধ্যস্থতাকারীরা। তবে, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের পক্ষ থেকে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
ইসরায়েল ও ইরানের ১২ দিনের যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘গাজা নিয়ে বড় অগ্রগতি হয়েছে’।
ব্রাসেলসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের এই (ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায়) আক্রমণের কারণেই গাজায় বড় অগ্রগতি হচ্ছে। আমি মনে করি আমরা শিগগিরই ভালো কিছু শুনতে পাব।’
তিনি জানান, তার বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে কথা হয়েছে এবং তিনি বলেছেন, ‘গাজায় সমঝোতা খুবই কাছাকাছি।’
এর কিছুক্ষণ পরই হামাসের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বিবিসিকে জানান, মধ্যস্থতাকারীরা যুদ্ধবিরতি নিয়ে জোরালো প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে এখনও নতুন কোনো প্রস্তাব আসেনি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ইসরায়েলের এক কর্মকর্তা দেশটির সংবাদমাধ্যম হারেৎজকে জানিয়েছেন, আলোচনায় এখনো কোনো অগ্রগতি নেই এবং বড় ধরনের মতপার্থক্য রয়ে গেছে।
আরও পড়ুন: সংঘাত থেকে কী পেল ইরান-ইসরায়েল?
এর আগে, মে মাসের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসরের সমর্থনে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, তাতে হামাস গ্রহণযোগ্য নয়—এমন কিছু সংশোধনী দাবি করলে আলোচনা স্থবির হয়ে যায়।
ইসরায়েল ১৮ মার্চ গাজায় আবারও সামরিক অভিযান শুরু করে। বর্তমানে সেখানে অন্তত ৫০ জন ইসরায়েলি জিম্মি রয়েছে, যাদের মধ্যে কমপক্ষে ২০ জন জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সেই সঙ্গে মার্চের শুরু থেকে ইসরায়েল গাজায় সব ধরনের মানবিক সহায়তা প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়। তবে, আন্তর্জাতিক চাপের মুখে তিন মাস পর এটি আংশিক শিথিল করা হয়। এরপর ইসরায়েলের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচটি) নামে নতুন ত্রাণ বিতরণ কাঠামো চালু হয়েছে।
জিএইচটি দাবি করেছে, ২৬ মে থেকে এখন পর্যন্ত তারা ৪ কোটি ৪০ লাখের বেশি খাবারের প্যাকেজ বিতরণ করেছে। এমনকি, বুধবার ৩টি কেন্দ্রে ২৪ লাখের বেশি খাবারের প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে।
নতুন এই ত্রাণ ব্যবস্থার সঙ্গে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে জাতিসংঘসহ বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থা। হামাসকে সহায়তা না দিয়ে ত্রাণ কার্যক্রম চালানোর এই বিষয়টিকে তারা মানবিক নীতিমালার পরিপন্থী বলে অভিহিত করেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জিএইচটি কার্যক্রম শুরুর পর থেকে ত্রাণ সংগ্রহের সময় ৫৪৯ জন নিহত এবং ৪ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন।
বুধবারও কেন্দ্রীয় গাজায় জিএইচটির একটি ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে ইসরায়েলি গুলিতে ছয়জন এবং দক্ষিণের রাফায় আরও তিনজন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে হামাসের সিভিল ডিফেন্স।
তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, এসব ঘটনায় তারা কোনো হতাহতের খবর পায়নি।
ইউনিসেফের মুখপাত্র জেমস এল্ডার গাজা সফর শেষে বলেন, ‘যতদিন মানুষকে খাবার থেকে বঞ্চিত করা হবে, তারা এই মৃত্যুফাঁদে যেতে বাধ্য হবে।’
৭ ইসরায়েলি সেনা নিহত
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, মঙ্গলবার দক্ষিণ গাজায় খানের ইউনিসে বিস্ফোরণে তাদের সাত সেনা নিহত হয়েছে। এটি যুদ্ধবিরতি ভেঙে পড়ার পর সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘ইসরায়েলের জন্য এটি কঠিন দিন।’
ঘটনার পর নেতানিয়াহুর ওপর যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ বাড়ছে। ইসরায়েলি পার্লামেন্টে তার জোটের শরিক দল ইউনাইটেড টোরাহ জুডাইয়াজমের নেতা মোশে গাফনি বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছি না, আমরা কী নিয়ে লড়াই করছি যখন আমাদের সেনারা প্রতিনিয়ত মারা যাচ্ছে!’
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে ১২০০ জন নিহত এবং ২৫১ জন জিম্মি হয়। এরপরই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েল।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত সেখানে অন্তত ৫৬ হাজার ১৫৭ জন নিহত হয়েছেন।
১৬১ দিন আগে
সংঘাত থেকে কী পেল ইরান-ইসরায়েল?
গত ১২ দিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের দামামা বাজার পর অবশেষে পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছে। ইরান-ইসরায়েল এগিয়েছে একটি ভঙ্গুর অস্ত্রবিরতির দিকে।
ইরানের পারমাণু কর্মসূচি বন্ধের নামে গত ১৩ জুন ইরানে হামলা চালায় ইসরায়েল। ইরানও শুরু করে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা। এরপর তেল আবিবের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। এর প্রতিশোধ নিতে কাতারের মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা চালায় তেহরান।
এরপর পরিস্থিতি যেন আরও খারাপ না হয়, এজন্য এরই মধ্যে শুরু হয়ে যায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা। অবশেষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিহিত ‘১২ দিনের যুদ্ধ’ আপাতত বন্ধ হয় যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে।
যুদ্ধবিরতির কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় থাকলেও আপাতদৃষ্টিতে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সেই সংঘাত আপাতত শেষ হয়েছে।
এদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও ইরানের নেতারা সবাই এ যুদ্ধে নিজেদের জয়ী দেখাতে উঠে পড়ে লেগেছেন। তাছাড়া ট্রাম্পসহ সবার দাবি, যুদ্ধবিরতির এই মুহূর্তটি ঘটেছে তাদের নিজ নিজ শর্তে।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রের হামলার প্রতিবাদে আইএইএ’র সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবে ইরান
এখন প্রশ্ন হলো— বাস্তবতা আসলে কী? ইসরায়েল কী অর্জন করল? ইরান কি তাদের কৌশলগত সম্পদ রক্ষা করতে পারল? আর এই যুদ্ধবিরতি কি সত্যিই শান্তির পথে নিয়ে যেতে পারে?
ঘটনাগুলো কীভাবে ঘটল?
রবিবার (২২ জুন) ভোরে ইসরায়েলের অনুরোধে ইরানের ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র।
ট্রাম্পের ভাষ্যে, তাদের হামলায় এসব স্থাপনা ‘সম্পূর্ণভাবে’ ধ্বংস করা হয়েছে।
এর জবাবে, সোমবার (২৩ জুন) কাতারের আল-উদেইদ মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইরান। এটি মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় মার্কিন সামরিক ঘাঁটি।
মধ্যপ্রাচ্যে একটি বড় ও দীর্ঘ যুদ্ধের আশঙ্কা তখন আরও তীব্র হয়ে ওঠে। তবে এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন, ‘ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সম্পূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে।’
তিনি এটিকে ১২ দিনের যুদ্ধ বলে অভিহিত করেন। এই যুদ্ধ বছরের পর বছর চলতে পারত এবং পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে ধ্বংস করে দিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তবে যুদ্ধবিরতির ঘোষণার চার ঘণ্টা পরই ইরান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর দাবি করে ইসরায়েল। পাল্টা হামলায় তেহরানের কাছে একটি রাডার স্টেশন ধ্বংস করে তেলর আবিব।
এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘ইসরায়েল যে আজ সকালেই বেরিয়ে পড়েছে, তাতে আমি খুবই অসন্তুষ্ট। দুটি দেশ যারা এতদিন ধরে লড়াই করেছে, তারা জানে না কী করছে!’
ইরান অবশ্য ওই ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের অভিযোগ অস্বীকার করে। এরপর স্থানীয় সময় বেলা সাড়ে ১১টায় যুদ্ধবিরতি পুনরায় কার্যকর হয় এবং ট্রাম্প নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলেন।
পরে ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লেখেন, “ইসরায়েল আর ইরানে হামলা করবে না। সব বিমান ফিরে আসবে এবং ইরানকে একটি ‘বন্ধুত্বপূর্ণ উড়ন্ত অভিবাদন’ জানাবে। কেউ আহত হবে না, যুদ্ধবিরতি কার্যকর রয়েছে!”
ইসরায়েল কী অর্জন করল?
ইসরায়েল বহুদিন ধরে দাবি করে আসছে, ইরান তাদের অস্তিত্বের জন্য প্রধান হুমকি। তবে এর আগে কখনো ইরানের মূল পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালায়নি তেল আবিব।
১৩ জুন ইসরায়েল সেই সীমারেখা অতিক্রম করে নাতাঞ্জের ফুয়েল এনরিচমেন্ট প্ল্যান্ট ও ইসফাহান পারমাণবিক প্রযুক্তি কমপ্লেক্সে হামলা চালায়। জবাবে ইরানও ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইসরায়েলের দিকে।
এর ফলে সিরিয়া ও ইরাকে পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালালেও এবার আরও দূরবর্তী ও জটিল অভিযানে সফল হয়েছে ইসরায়েল।
আন্তর্জাতিক আইনি বৈধতা নিয়ে সমালোচনার মুখেও নিজেদের সিদ্ধান্তে অটল থেকেছে তারা। ইসরায়েল দাবি ছিল, এই হামলা একটি আত্মরক্ষামূলক পদক্ষেপ।
যদিও ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বানাচ্ছে বা সেটি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে যাচ্ছিল বলে অভিযোগ করেছে তেল আবিব, তবে অনেকেই তা বিশ্বাস করেন না।
এখানে আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়, তা হলো— এই অভিযানে এটি প্রমাণিত হয়েছে যে, ইসরায়েল চাইলে যুক্তরাষ্ট্রকে এমন অভিযানেও জড়াতে পারে যেখানে তারাই প্রথম আঘাত হেনেছে।
১৯৬৭ ও ১৯৭৩ সালের যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র শুধু উপকরণ সরবরাহ করেছিল; সরাসরি অংশ নেয়নি।
ট্রাম্পের এই ভূমিকার জন্য অবশ্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেও কার্পণ্য করেনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী। তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন নেতানিয়াহু।
আরও পড়ুন: ইরানে শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন করতে চান না ট্রাম্প
ইসরায়েল ইরানে পরিচালিত ওই হামলার নাম দিয়েছে ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’। এমন এক সময় এই অপারেশেন চালানো হয়, যখন ইসরায়েল ইতোমধ্যে ইরানের আঞ্চলিক মিত্র—হুথি, হামাস ও হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে।
ইরান কি পারমাণবিক কর্মসূচি রক্ষা করতে পেরেছে?
ইসরায়েল দৃশ্যত ইরানের ভূ-উপরিভাগের স্থাপনাগুলোতে বড় ক্ষতি করেছে, আর যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে তারা ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস করেছে।
উপগ্রহ চিত্রে ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার চিহ্ন দেখা গেলেও, সত্যিকারের ক্ষয়ক্ষতি কতটা হয়েছে তা নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা যায়নি। এর জন্য ওইসব স্থাপনা পরিদর্শনের প্রয়োজন হবে।
সোমবার আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রধান রাফায়েল গ্রোসি বলেন, ‘এই মুহূর্তে কেউ, এমনকি আইএইএ-ও ফোরদোয় ভূগর্ভস্থ ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণ মূল্যায়ন করতে পারেনি। তবে বিস্ফোরণের মাত্রা ও সেন্ট্রিফিউজের স্পর্শকাতরতা বিবেচনায় যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।’
এই ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে আরও একটি প্রশ্ন রয়ে গেল— ইরানের ৪০০ কেজি উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম কোথায় আছে?
আইএইএ বলেছে, এই মজুদের অবস্থান তারা জানে না।
ইরানের পরমাণু শক্তি সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ ইসলামি দাবি করেছেন, তাদের কর্মসূচিতে কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না এবং কারণ হামলার আগেই তাদের প্রস্তুতি নেওয়া ছিল।
এদিকে, যুদ্ধবিরতির সাড়ে তিন ঘণ্টা পর ইসরায়েল যে দুটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের কথা বলেছে, সেগুলোর উৎস নিয়েও ধোঁয়াশা রয়ে গেছে। কারণ ইরান আনুষ্ঠানিকভাবে এর দায় অস্বীকার করেছে।
তাহলে প্রশ্ন থেকে যায়— কে ছুঁড়ল সেগুলো? সেগুলো কি ভুলবশত ছোড়া হয়েছিল?
এখানে একটু মনে করিয়ে দেওয়া যায়, ২০২১ সালের একটি ঘটনা। ইরানের একটি ভুল ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইউক্রেনের একটি যাত্রীবাহী বিমান ভেঙে পড়ে এবং ১৭৬ জন নিহত হন।
ইরানে আবার হামলার সম্ভাবনা কতটুকু?
ইসরায়েল ও ইরান অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হয়েছে, শান্তিচুক্তিতে নয়।
পরমাণু কর্মসূচির প্রশ্নে তাদের কাছে দুটি পথ খোলা বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির মতো জাতিসংঘের নতুন পর্যবেক্ষণ ও একটি নতুন চুক্তি, অথবা আরেক দফা সংঘাত।
যুক্তরাষ্ট্র যদিও ওই চুক্তি থেকে বেরিয়ে এসেছিল ২০১৮ সালে, তবে ইরান এখনও ওই চুক্তিতে রয়েছে। এই অবস্থায় ইউরোপের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
গত শুক্রবার (২০ জুন) যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কাজা কাল্লাস ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচির সঙ্গে বৈঠক করেন। যুক্তরাষ্ট্রকে হামলা থেকে বিরত রাখার শেষ প্রচেষ্টা হিসেবে ওই বৈঠক করেছিলেন তারা।
এ বিষয়ে গ্রিসের এথেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূরাজনীতি বিষয়ক শিক্ষক ইয়োয়ানিস কোটুলাস আল জাজিরাকে বলেন, ‘পর্যবেক্ষণ বাড়ানো ও নির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি দেওয়ার মাধ্যমে ইউরোপকে জড়াতে চায় ইরান।
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচিতে রাজি হতে পারে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ইতোমধ্যেই এমনটি বলেছেন। তাছাড়া ইরানে শাসন পরিবর্তনের চেষ্টাও যুক্তরাষ্ট্র করবে না বলেই মনে হচ্ছে।’
তবে ইসরায়েল এর আগেও পশ্চিমা দেশ ও ইরানের মধ্যে পারমাণবিক চুক্তি বানচাল করতে চেয়েছে এবং নতুন কোনো চুক্তিকেও স্বাগত জানাবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে।
এখানে আরেকটি প্রশ্ন আসে— ইরান কতটা আপস করতে চাইবে?
যুক্তরাষ্ট্র আগেই চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেছে, আবার নতুন আলোচনার সময় ইরানকে বোমা হামলার শিকার হতে হয়েছে।
সেন্ট অ্যান্ড্রুস বিশ্ববিদ্যালয়ের ইরানি ইতিহাসবিদ অধ্যাপক আলি আনসারি বলেন, ‘সবকিছু নির্ভর করছে দেশের অভ্যন্তরীণ গতিশীলতা ও কীভাবে আপসকে ব্যাখ্যা করা হয়; তার ওপর। তবে ইতোমধ্যে দেশজুড়ে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধের দাবিও উঠেছে।’
আরও পড়ুন: যুদ্ধবিরতির পর কূটনীতির পথে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র
কিন্তু এখন পর্যন্ত ইরান কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
সোমবার (২৩ জুন) ইরানের সংসদের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি একটি বিল অনুমোদন করেছে, যেখানে আইএইএয়ের সঙ্গে তেহরানের সহযোগিতা সম্পূর্ণভাবে স্থগিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিলটি এখন প্লেনারি অধিবেশনে অনুমোদনের অপেক্ষায়।
তবে মঙ্গলবার ট্রাম্প ফের ঘোষণা দিয়েছেন, ‘ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি পুনরায় শুরু করতে দেওয়া হবে না।’
এ পরিস্থিতিতে বলা চলে, মূল উত্তেজনা যদি বজায় থাকে, তবে নতুন করে পাল্টা-পাল্টি হামলা কেবল সময়ের ব্যাপার মাত্র।
১৬২ দিন আগে
ইসরায়েলের ওপর আমি সন্তুষ্ট নই: ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইসরায়েলের ওপর আমি সন্তুষ্ট নই।
নির্ধারিত সময়সীমার পরও দুই দেশের হামলা বন্ধ না হওয়া নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে মঙ্গলবার (২৪ জুন) ভোরে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
ট্রাম্প বলেন, ‘ইসরায়েল ও ইরান উভয় দেশই যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘন করেছে।’
ন্যাটো সম্মেলনে যোগ দিতে নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে রওনা হওয়ার আগে হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, ‘তারা (ইরান) লঙ্ঘন করেছে, একইভাবে ইসরায়েলও লঙ্ঘন করেছে।’
এর আগে, সোমবার (২৩ জুন) সামাজিকমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দুইদেশের সংঘাতকে ‘১২ দিনের যুদ্ধ’ দাবি করে বলেন, ‘ইরান ও ইসরায়েল সম্পূর্ণ ও পুরোপুরি যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে।’
যুদ্ধবিরতির প্রাথমিক ঘোষণায় তিনি বলেছিলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া ঘোষণার প্রায় ছয় ঘণ্টা পর যুদ্ধবিরতি শুরু হবে, সে অনুযায়ী যুদ্ধবিরতির সময় আনুমানিক রাত ১২টা (ইস্টার্ন টাইম)।
আরও পড়ুন: যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ইরানে ইসরায়েলের হামলা, দুই জেনারেলসহ নিহত ৭
তবে, ইরান-ইসরায়েল দুইদেশই একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে।
এ দিন, ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সংবাদ সংস্থা ইরনার তথ্য মতে, রাজধানী তেহরানের নিকটবর্তী কারাজ শহরে ইসরায়েলের ক্ষেপনাস্ত্র হামলায় ইরানের অভিজাত বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) দুই জেনারেলসহ বাহিনীটির মোট ৭ জন নিহত হয়েছেন।
এদিকে, ইরানের উত্তরাঞ্চলীয় কাস্পিয়ান সাগরতীরবর্তী গিলান প্রদেশে ইসরায়েলি হামলায় ৯ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। প্রদেশের এক উপ-গভর্নরের বরাতে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম এ তথ্য জানিয়েছে।
১৬৩ দিন আগে
যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ইরানে ইসরায়েলের হামলা, দুই জেনারেলসহ নিহত ৭
যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ইরানে হামলায় চালিয়েছে ইসরায়েল। মঙ্গলবার (২৪ জুন) রাজধানী তেহরানের নিকটবর্তী কারাজ শহরে এ হামলায় চালানো হয়।
ইরানের রাষ্ট্রাত্ত্ব সংবাদ সংস্থা ইরনার তথ্য মতে, এ দিন ইসরায়েলের ক্ষেপনাস্ত্র হামলায় ইরানের অভিজাত বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) দুই জেনারেলসহ বাহিনীটির মোট ৭ জন নিহত হয়েছেন।
এর আগে, ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে আবারও হামলা শুরুর নির্দেশ দেন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ। আজ (মঙ্গলবার) সকালে তিনি বলেন, ‘তেহরানের কেন্দ্রবিন্দুতে বিভিন্ন নিশানায় তীব্র হামলা চালাতে সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
এদিকে, ইরানের উত্তরাঞ্চলীয় কাস্পিয়ান সাগরতীরবর্তী গিলান প্রদেশে ইসরায়েলি হামলায় ৯ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। প্রদেশের এক উপ-গভর্নরের বরাতে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম এ তথ্য জানিয়েছে।
তবে হামলার নির্দিষ্ট সময় ও স্থান সম্পর্কে বিস্তারিত জানায়নি দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম। ইসরায়েলি সশস্ত্র বাহিনী (আইডিএফ) অভিযোগ করে, ‘যুদ্ধবিরতির মারাত্মক লঙ্ঘন করেছে ইরানি সরকার। আমরা তার জোরালো জবাব দেব।’
আরও পড়ুন: ইসরায়েল ও ইরানকে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন না করার আহ্বান ট্রাম্পের
তবে, যুদ্ধবিরতির পর ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের কথা অস্বীকার করেছে ইরান। তবে ফের ইসরায়েল আগ্রাসন চালালে, চূড়ান্ত, দৃঢ় ও যথাযথ জবাব দেওয়া হবে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে ইরানের সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল।
এর আগে, সোমবার (২৩ জুন) সামাজিকমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দুইদেশের সংঘাতকে ‘১২ দিনের যুদ্ধ’ দাবি করে বলেন, ‘ইরান ও ইসরায়েল সম্পূর্ণ ও পুরোপুরি যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে।’
যুদ্ধবিরতির আলোচনা চলার মধ্যেই ইসরায়েলে ফের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল ইরান। দক্ষিণ ইসরায়েলের বেয়ার শেভা শহরের একটি আবাসিক ভবনে তেহরানের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে চারজন নিহত হয়েছেন।
এ বিষয়ে, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানায়, ইরান থেকে ইসরায়েলের দিকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে তারা এবং বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
১৬৩ দিন আগে
মধ্যপ্রাচ্যের আকাশসীমায় বিমান চলাচল স্বাভাবিক
কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত ও বাহরাইন আকাশসীমা পুনরায় খুলে দেওয়া হয়েছে। এতে এই অঞ্চলের বিমান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।
সোমবার (২৩ জুন) দিবাগত রাত ৩ টার পর থেকে বিমান চলাচল শুরু হয়েছে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ থেকে এমন তথ্য দেওয়া হয়েছে।
এর আগে, গতকাল (২৩ জুন) বাহরাইন চলমান বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে সাময়িকভাবে তাদের আকাশসীমা বাণিজ্যিক ফ্লাইট চলাচলের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত ও বাহরাইন।
এরপর সোমবার বাংলাদেশ সময় রাত ৩টার পর থেকে আকাশসীমা পুনরায় উন্মুক্ত করার কথা জানায় ওই দেশগুলো।
বর্তমানে দোহা, দুবাই, আবুধাবি, কুয়েত ও বাহরাইন রুটে সব বাণিজ্যিক ফ্লাইট স্বাভাবিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে নিজ নিজ এয়ারলাইন্স অফিস বা ট্রাভেল এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফ্লাইটের হালনাগাদ সময়সূচি ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য সম্পর্কে জানতে এবং ভ্রমণ কার্যক্রম যথাযথভাবে সম্পন্ন করার জন্য যাত্রীদেরকে অনুরোধ করা হয়।
এ ছাড়া, ধৈর্য, সহানুভূতি ও সহযোগিতার জন্য যাত্রীদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়।
আরও পড়ুন: ইরান-ইসরায়েল সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতিতে রাজি: ট্রাম্প
১৬৪ দিন আগে
ইসরায়েল ও ইরানকে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন না করার আহ্বান ট্রাম্পের
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পাশাপাশি তিনি উভয় পক্ষকে যুদ্ধবিরতির শর্তাবলী মেনে চলারও আহ্বান জানিয়েছেন।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২৪ জুন) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে এসব বলেন তিনি।
ট্রাম্প বলেন, ‘যুদ্ধবিরতি এখন কার্যকর। দয়া করে এটি লঙ্ঘন করবেন না!’
যুদ্ধবিরতির প্রাথমিক ঘোষণায় তিনি বলেছিলেন, তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া ঘোষণার প্রায় ছয় ঘণ্টা পর যুদ্ধবিরতি শুরু হবে, সে অনুযায়ী যুদ্ধবিরতির সময় আনুমানিক রাত ১২টা (ইস্টার্ন টাইম)।
এর আগে, শান্তি আলোচনা নিয়ে ইরান ও ইসরায়েল উভয়েই প্রায় একই সময়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বলে দাবি করেন ট্রাম্প। স্থানীয় সময় সোমবার (২৩ জুন) রাতে নিজস্ব সামাজিকমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে এই দাবি করেন ট্রাম্প।
ট্রাম্প পোস্টে লেখেন, ‘ইসরায়েল ও ইরান প্রায় একই সঙ্গে আমার কাছে এসেছিল এবং বলেছিল, শান্তি! এই মুহূর্তে, আমি জানতাম এখন সময়।’
যুদ্ধবিরতি ঘোষণার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিশ্ব ও মধ্যপ্রাচ্যই আসল জয়ী। উভয় জাতিই ভবিষ্যতে অসাধারণ ভালোবাসা, শান্তি এবং সমৃদ্ধি দেখতে পাবে।’
আরও পড়ুন: ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর
১৬৪ দিন আগে
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে, তবে সুনির্দিষ্ট সময় ও বিস্তারিত তথ্য নিয়ে এখনও বিভ্রান্তি রয়েছে।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২৪ জুন) ইরান ও ইসরায়েলের গণমাধ্যমে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
সিএনএন জানায়, প্রাথমিক ঘোষণায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া ঘোষণার প্রায় ছয় ঘণ্টা পর যুদ্ধবিরতি শুরু হবে, সে অনুযায়ী যুদ্ধবিরতির সময় আনুমানিক রাত ১২টা (ইস্টার্ন টাইম)।
ইস্টার্ন টাইম রাত ১২টার ঠিক পরপরই যুদ্ধবিরতি শুরু হয়ে গেছে— এই শিরোনামে ইরানি ও ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো সংবাদ প্রচার শুরু করে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন পরিচালিত প্রেস টিভির বরাত দিয়ে সিএনএনে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েল অধিকৃত অঞ্চলে ইরানের চার দফা হামলার পর যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে।’
আরও পড়ুন: ইসরায়েল-ইরান প্রায় একই সঙ্গে এসে বলেছিল, শান্তি: দাবি ট্রাম্পের
অন্যদিকে ইরানের আধা-সরকারি সংবাদ সংস্থা তাসনিম নিউজ এজেন্সি তাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে জানায়, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর্যায়ে প্রবেশ করেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম চ্যানেল ১২ এবং ওয়াইনেটেও যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
এর আগে, মঙ্গলবার ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনের জবাবে সামরিক প্রতিক্রিয়া জানানো শেষে ‘শত্রুর ওপর যুদ্ধবিরতি চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে’। তবে যুদ্ধবিরতির সুনির্দিষ্ট সময় জানানো হয়নি।
ইসরায়েল সরকার এখনও এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি।
১৬৪ দিন আগে
যুদ্ধবিরতির আলোচনার মধ্যে ইসরায়েলে ইরানের হামলা, নিহত ৪
যুদ্ধবিরতের আলোচনা চলার মধ্যেই ইসরায়েলে ফের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। দক্ষিণ ইসরায়েলের বেয়ার শেভা শহরের একটি আবাসিক ভবনে তেহরানের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে চারজন নিহত হয়েছেন।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২৪ জুন) এ তথ্য জানিয়েছে ইসরায়েলের জরুরি সেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম (এমডিএ)।
এর আগে প্রায় ৪০ বছর বয়সী একজন পুরুষ, প্রায় ৩০ বছর বয়সী একজন নারী ও প্রায় ২০ বছর বয়সী এক তরুণ মারাত্মকভাবে আহত হন বলে জানায় এমডিএ।
সংস্থাটির এক মুখপাত্র জানান, আরও ছয়জনকে হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার আঘাত নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানায়, ইরান থেকে ইসরায়েলের দিকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে তারা এবং বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
আরও পড়ুন: ইসরায়েলের সঙ্গে এখন পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়নি: ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
এদিকে, সোমবার (২৩ জুন) সামাজিকমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, ইরান ও ইসরায়েল সম্পূর্ণ ও পুরোপুরি যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে।
তবে মঙ্গলবার (২৪ জুন) ভোরে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি জানান, ইসরায়েলের সঙ্গে এখন পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি বা সামরিক অভিযান বন্ধের বিষয়ে কোনো চুক্তি হয়নি।
তিনি আরও বলেন, ‘ইসরায়েল যদি তেহরানের স্থানীয় সময় অনুযায়ী ভোর ৪টার মধ্যে ইরানের জনগণের বিরুদ্ধে তাদের অবৈধ আগ্রাসন বন্ধ করে, তাহলে আমরা আর পাল্টা হামলা চালিয়ে যাওয়ার কোনো ইচ্ছা রাখি না।’
সূত্র: সিএনএন
১৬৪ দিন আগে