ইসরায়েল-ইরান সংঘাত
ইসরায়েলের সঙ্গে এখন পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়নি: ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ইসরায়েলের সঙ্গে এখন পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি বা সামরিক অভিযান বন্ধের বিষয়ে কোনো চুক্তি হয়নি বলে জানিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২৪ জুন) ভোরে এসব জানান তিনি।
তবে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ইসরায়েল যদি তেহরানের স্থানীয় সময় অনুযায়ী ভোর ৪টার মধ্যে ইরানের জনগণের বিরুদ্ধে তাদের অবৈধ আগ্রাসন বন্ধ করে, তাহলে আমরা আর পাল্টা হামলা চালিয়ে যাওয়ার কোনো ইচ্ছা রাখি না।’
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামরিক অভিযান বন্ধের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পরে নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
আরাগচি আরও জানান, ইসরায়েলের আগ্রাসনের জবাবে ইরানের সশস্ত্র বাহিনী শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত, অর্থাৎ রাত ৪টা পর্যন্ত, তাদের সামরিক অভিযান চালিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ইসরায়েলকে শাস্তি দেওয়ার জন্য সামরিক অভিযান চালিয়েছে। আমি ইরানের সব জনগণের সঙ্গে আমাদের সাহসী সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই, যারা তাদের শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত দেশকে রক্ষা করতে প্রস্তুত এবং শত্রুর প্রতিটি হামলার জবাব দিয়েছেন শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত।’
আরও পড়ুন: ইরান-ইসরায়েল সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতিতে রাজি: ট্রাম্প
এর আগে, সামাজিকমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, ইরান ও ইসরায়েল সম্পূর্ণ ও পুরোপুরি যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এবং সাবেক পেন্টাগন কর্মকর্তা ডেভিড ডেস রোচেস আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য সত্ত্বেও দুই দেশ যুদ্ধবিরতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।’
ইরানের আপাত আপত্তি প্রকৃতপক্ষে কোনো মৌলিক বিরোধ নয় বরং শর্ত নিয়ে বলে মনে করেন তিনি।
ডেভিড ডেস বলেন, ‘এটা মূলত তাদের নিজেদের শ্রোতাদের উদ্দেশে বলা, যেন তারা দেখাতে পারে যে—এই প্রক্রিয়ার নেতৃত্ব আমাদের হাতে। আমাদের ওপর কেউ যুদ্ধবিরতি চাপিয়ে দিচ্ছে না, আমরা নিজেরাই এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছি।’
তবে বাস্তবতা ভিন্ন বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
সাবেক এই পেন্টাগন কর্মকর্তা বলেন, ‘যুদ্ধবিরতির কার্যকারিতা ঠিক কখন থেকে শুরু হবে, এই সূক্ষ্ম বিষয়গুলো নিয়ে আপত্তি জানিয়ে তারা এমন বক্তব্য দিতে পারছে। আমি মনে করি, ইরানের পক্ষে এই মাত্রায় সামরিক অভিযান চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।’
তার ভাষ্যে, কাতারে অবস্থিত আল-উদেইদ ঘাঁটিতে ইরানের হামলা ছিল সুপরিকল্পিত, যাতে আরও বড় ধরনের সামরিক প্রতিক্রিয়া না আসে।
আরও পড়ুন: ইরানে ফের ইসরায়েলের বিমান হামলা, ইরানের পাল্টা
তিনি বলেন, ‘আমরা এখনই হয়তো নিশ্চিতভাবে জানতে পারবো না, তবে কয়েক মাস পর হয়তো বুঝতে পারব—তারা ইচ্ছাকৃতভাবে এমন এক ধরনের অকার্যকর আঘাত হেনেছে, নাকি তাদের অস্ত্রাগারের সীমাবদ্ধতার কারণে এটাই তাদের সর্বোচ্চ সামর্থ্য ছিল।’
ডেভিড ডেস আরও বলেন, ‘তবে এটা স্পষ্ট যে, অভ্যন্তরীণ বৈধতা রক্ষার জন্য; সেটি নিজেদের মধ্যেই হোক বা শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে, তাদের কিছু না কিছু প্রতিক্রিয়া দেখাতেই হতো।’
১৬৪ দিন আগে
ইরান-ইসরায়েল সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতিতে রাজি: ট্রাম্প
ইরান ও ইসরায়েল সম্পূর্ণ ও পুরোপুরি যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পর্যায়ক্রমে কার্যকর হবে।
স্থানীয় সময় সোমবার (২৩ জুন) সামাজিকমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এমন দাবি করেন। এটি কার্যকর হলে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান ১২ দিনের সংঘাতের অবসান ঘটবে।
সবাইকে অভিনন্দন জানিয়ে ট্রাম্প লেখেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ যুদ্ধ বিরতি কার্যকর হবে। আনুষ্ঠানিকভাবে ইরান ১২তম ঘণ্টায় এবং ইসরায়েল ২৪তম ঘণ্টায় এ যুদ্ধ শেষ করবে। সবকিছু ঠিকভাবে চললে ১২ দিনের এ যুদ্ধ শেষ হবে, যাকে স্বাগত জানাবে বিশ্ব। যুদ্ধবিরতির সময় উভয় পক্ষ শান্তি বজায় রাখবে ও শ্রদ্ধাশীল থাকবে।
এর আগে তিনজন শীর্ষ কর্মকর্তার বরাতে আলজাজিরার খবরে বলা হয়েছে, ইসরায়েল তার ইরানবিরোধী সামরিক অভিযান শিগগিরই শেষ করতে চায় এবং সে বার্তা যুক্তরাষ্ট্রকে জানানো হয়েছে।
তবে সবকিছু নির্ভর করছে তাদের প্রতিপক্ষ ইরানের পরবর্তী পদক্ষেপের ওপর।
আরও পড়ুন: ইরানে ফের ইসরায়েলের বিমান হামলা, ইরানের পাল্টা
আরও দুই কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি নেতারা এখন এমন একটি নির্ভরযোগ্য ‘এগজিট স্ট্র্যাটেজি’ নিয়ে কাজ করছেন, যার মাধ্যমে অভিযান শেষ করা যাবে এবং ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলাও থেমে যাবে—ফলে পাল্টা-পাল্টি হামলার চক্রে পঙ্গু হয়ে পড়ার ঝুঁকি কমবে।
বিষয়টি সম্পর্কে অবগত একটি সূত্র জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী মনে করছে, তারা তাদের কৌশলগত লক্ষ্য পূরণ করার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।
ইসরায়েল ইরানে হামলার সময় নিজে বেছে নিয়েছিল, কিন্তু সংঘাত কখন শেষ হবে তা তাদের ইচ্ছার ওপর হয়ত নির্ভর করবে না। তেহরান যদি লড়াই দীর্ঘায়িত করার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে ইসরায়েল একটি ব্যয়বহুল যুদ্ধের ফাঁদে পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
১৬৪ দিন আগে
ইরানে ফের ইসরায়েলের বিমান হামলা, ইরানের পাল্টা
যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর এবার ইরানের পশ্চিমাঞ্চলীয় কেরমানশাহ শহরের সামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে নতুন করে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। জবাবে ইরানও পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।
স্থানীয় সময় সোমবার (২৩ জুন) সকালে ইরানে বিমান হামলার চালানোর কথা জানায় ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।
এর আগে, ইরানের রাষ্ট্র সমর্থিত সংবাদমাধ্যম নুর নিউজ জানায়, আজ ভোরে তেহরানের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত বৃহৎ সামরিক কমপ্লেক্স পারচিনে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
জবাবে, ইরানও ইসরায়েলের দিকে একটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। তবে সেটি ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা মাঝপথেই প্রতিহত করা হয় বলে দাবি করেছে আইডিএফ।
আরও পড়ুন: ইসরায়েলে বড় পরিসরে হামলা ইরানের, জাতিসংঘে চিঠি
গত ১৩ জুন প্রথম ইরানের শতাধিক লক্ষ্যবস্তুতে নজিরবিহীন হামলা চালায় ইসরায়েল। এরপর থেকেই দুই দেশ নিজেদের প্রতিশোধের নেশায় মত্ত। শক্তির প্রদর্শন করে লক্ষ্য অর্জনে মরিয়া দুপক্ষই।
এর সঙ্গে গতকাল রবিবার (২২ জুন) যোগ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে তারা।
হামলার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প লেখেন, ‘আমরা ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় অত্যন্ত সফলভাবে হামলা পরিচালনা করেছি, যার মধ্যে রয়েছে ফোরদো, নাতানজ ও ইসফাহান।’
এই হামলারও প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইরান। বিশ্লেষকদের ধারণা, হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দিতে পারে ইরান। তবে এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা আসেনি এখনও।
হরমুজ প্রণালী বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায় ইরানের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টির সমাধান করতে চীনকে অনুরোধ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।
১৬৫ দিন আগে
দুই সপ্তাহের কথা বলে দুদিনের মাথায় হামলা চালানো ছিল ট্রাম্পের ‘রণকৌশল’
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর আবার নিজের অস্থিতিশীল আচরণের জন্য আলোচনায় এসেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইরানে হামলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে দুই সপ্তাহ সময় নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু দুদিন না যেতেই তেহরানে হামলা চালিয়ে বসেন ট্রাম্প। মূলত হামলার পরিকল্পনা গোপন রাখতেই ওই তিনি ওই ঘোষণা দিয়েছিলেন বলে স্বীকার করেছেন।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানে সামরিক অভিযানের ব্যাপারে কয়েকদিন ধরেই দৃঢ়ভাবে আগ্রহী ছিলেন ট্রাম্প। হামলার বিষয়ে তার প্রকৃত চিন্তাভাবনা গোপন রাখতেই তিনি তার জ্যেষ্ঠ সহকারীদের একটি নির্দেশ দেন— প্রেসকে জানিয়ে দেওয়া হোক, দুই সপ্তাহের মধ্যে অভিযান চালানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন ট্রাম্প!
তার মানে দাঁড়ায়, দুই সপ্তাহের ঘোষণা দিয়ে দুদিনের মাথায় হামলা চালানো কোনো অস্থিতিশীল আচরণ নয়, বরং এটি ট্রাম্পের সুপরিকল্পিত রণকৌশল।
সূত্রের বরাত দিয়ে সিএনএন বলছে, ইতোমধ্যেই ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন— কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে এমন খবর প্রকাশ হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছিলেন ট্রাম্প। এ কারণে দুই সপ্তাহের সময়সীমার ঘোষণা দেন তিনি।
আরও পড়ুন: শান্তি স্থাপন করুন, নইলে আরও হামলা আসছে: ইরানকে ট্রাম্প
ইরানিদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি এবং তার পরিকল্পনা গোপন রাখার অভিপ্রায়েই এই কৌশল অবলম্বন করেন ট্রাম্প।
গত বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) ইসরায়েল ও ইরানের সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের জড়ানোর ব্যাপারে দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছিলেন ট্রাম্প।
ট্রাম্পের ভাষ্যে, ওই দিন তিনি তার সাবেক উপদেষ্টা স্টিভ ব্যাননের সঙ্গে দুপুরের খাবারের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন। ব্যানন প্রকাশ্যে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত থাকার বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন।
এরপরই তার প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট হোয়াইট হাউস ব্রিফিং রুমে গিয়ে প্রেসিডেন্টের নির্দেশ অনুসারে ওই দুই সপ্তাহের সময়সীমার ঘোষণা দেন।
যদিও হামলার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এসেছিল শনিবার (২১ জুন), তবে ট্রাম্পের আশপাশের মানুষের বিশ্বাস, ইরানে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে প্রেসিডেন্টের মন অনেক আগেই স্থির হয়ে গিয়েছিল।
আরও পড়ুন: ইরানের আকাশসীমার উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের দাবি ট্রাম্পের
সূত্র আরও জানায়, ট্রাম্পকে আগেই হামলার পরিকল্পনা সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছিল এবং তিনি প্রতিদিনই জ্যেষ্ঠ জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করছিলেন। এর পাশাপাশি দিনে একাধিকবার ফোনালাপও চলছিল বলে বিশ্বাস তার আশেপাশের লোকেদের।
এরপর, রবিবার (২২ জুন) ভোরে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, ‘আমরা ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় অত্যন্ত সফলভাবে হামলা পরিচালনা করেছি, যার মধ্যে রয়েছে ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান।’
১৬৫ দিন আগে
ইসরায়েলকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার আহ্বান পররাষ্ট্র উপদেষ্টার
ইসরায়েলকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
তুরস্কের ইস্তানবুলে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা—ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের ৫১তম সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে এ আহ্বান জানান তিনি।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তার বক্তব্যে ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের বেআইনি ও আগ্রাসী সামরিক হামলার তীব্র নিন্দা জানান। এ আগ্রাসনকে আন্তর্জাতিক আইন, জাতিসংঘ সনদ এবং ইরানের সার্বভৌমত্বের মারাত্মক লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলের এ ধরনের বেপরোয়া কর্মকাণ্ড এ অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করার এবং বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করার হুমকি সৃষ্টি করেছে।’
তিনি অবিলম্বে এ ধরনের উস্কানি বন্ধের আহ্বান জানান এবং কূটনীতি ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধার মাধ্যমে শান্তি নিশ্চিত করতে সম্মিলিতভাবে কাজ করার সময় ইসরায়েলকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: আঞ্চলিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করবে যুক্তরাষ্ট্র: টামি ব্রুস
অবিলম্বে ফিলিস্তিনে চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনে বন্ধেরও আহ্বান জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত (আইসিজে) ও আইসিসির মাধ্যমে ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতার দাবিতে ওআইসিকে অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ ও সোচ্চার থাকতে হবে। আমাদের সংহতিকে অবশ্যই কৌশলগত এবং টেকসই পদক্ষেপে রূপান্তরিত করতে হবে।’
এ সময় রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টিও তার বক্তব্যে উঠে আসে। আইসিজেতে ওআইসির আইনি উদ্যোগ এবং ওআইসি টেন ইয়ার প্রোগ্রাম অব অ্যাকশনে রোহিঙ্গা ইস্যুকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত লক্ষ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্তির জন্য ওআইসির প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের জন্য মিয়ানমারের ওপর কূটনৈতিক চাপ বাড়ানোর পাশাপাশি আইসিজেতে চলমান আইনি কার্যক্রমে অর্থায়নে সহায়তা করতে তিনি আহ্বান জানান।
মুসলিম বিশ্বের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও ইসলামভীতি মোকাবিলায় আরও বিস্তৃত ও কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্য ওআইসিকে আহ্বান জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা সংকট আঞ্চলিক নিরাপত্তায় হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের উচিত ওআইসির প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, জবাবদিহিতা এবং বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে আরও শক্তিশালী করা।’
সম্মেলনের সাইডলাইনে মালয়েশিয়ায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাতো সেরি উটামা হাজি মোহাম্মদ বিন হাজি হাসান, ইরাকের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ফুয়াদ হোসেন, উজবেকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদভ বাখতিয়র ওদিলোভিচ এবং পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রী ইসহাক দারের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন মো. তৌহিদ হোসেন।
১৬৫ দিন আগে
মার্কিন হামলার শিকার ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো সম্পর্কে যা জানা প্রয়োজন
ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্য দিয়ে ইসরায়েল-ইরানের চলমান সংঘাতে জড়িয়ে পড়লেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
স্থানীয় সময় রবিবার (২২ জুন) ভোরে ফোরদো, ইসফাহান ও নাতাঞ্জের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প লেখেন, ‘আমরা ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় অত্যন্ত সফলভাবে হামলা পরিচালনা করেছি, যার মধ্যে রয়েছে ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান।’
হামলার বিষয়টি ইরানের পারমাণবিক সংস্থা থেকেও নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে হামলা সত্ত্বেও ওই স্থাপনাগুলোর কার্যক্রম বন্ধ না করে বরং চালিয়ে যাওয়া হবে বলে দাবি করেছে তেহরান।
নিচে ট্রাম্প ঘোষিত ইরানের তিনটি স্থাপনার বিবরণ ও এগুলোর পারমাণবিক কর্মসূচিতে গুরুত্ব তুলে ধরা হলো—
নাতাঞ্জ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনা
ইরানের মূল ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র নাতাঞ্জ। এটি রাজধানী তেহরান থেকে প্রায় ২২০ কিলোমিটার (১৩৫ মাইল) দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত। এটি ইতোমধ্যে ইসরায়েলি বিমান হামলার শিকার হয়।
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানায়, নাতাঞ্জে ইউরেনিয়াম ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বিশুদ্ধ সমৃদ্ধ করা হয়েছিল। পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির আর মাত্র এক ধাপ পেছেনে ছিল এটি।
আরও পড়ুন: ইরানের তিন পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার মাধ্যমে যুদ্ধে যোগ দিল যুক্তরাষ্ট্র
এই স্থাপনাটির একটি অংশ ইরানের সেন্ট্রাল প্লেটোর নিচে অবস্থিত, যা বিমান হামলা থেকে রক্ষার জন্য ভূগর্ভে নির্মিত। এখানে একাধিক সেন্ট্রিফিউজ ক্যাসকেড চালু রয়েছে, যা দ্রুত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে ব্যবহৃত হয়।
মূলত, একটি সেন্ট্রিফিউজ একা খুব অল্প পরিমাণ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারে। তাই ইউরেনিয়ামকে পর্যায়ক্রমে বেশি মাত্রায় সমৃদ্ধ করতে হলে অনেকগুলো সেন্ট্রিফিউজকে একটি ক্যাসকেড বা ধাপক্রমিক পদ্ধতিতে সাজাতে হয়।
আইএইএ জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ফলে এসব সেন্ট্রিফিউজের বেশিরভাগই ধ্বংস হয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ ছাড়া, ওই হামলাগুলোর ফলে তেজস্ক্রিয়তা কেবল সংশ্লিষ্ট স্থানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, আশপাশের এলাকায় ছড়ায়নি বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।
ইরান এখন নাতাঞ্জের দক্ষিণ সীমানার ঠিক বাইরে অবস্থিত কুহ-ই কোলাং গাজ লা বা ‘পিকঅ্যাক্স পর্বতের’ নিচে সুড়ঙ্গ খনন করছে।
আরও পড়ুন: ইসরায়েলি হামলার প্রথম দিন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র জড়িত: ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
এর আগেও স্টাক্সনেট ভাইরাসের লক্ষ্যবস্তু হয়েছিল নাতাঞ্জ। স্টাক্সনেট ভাইরাসটি ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি বলে ধারণা করা হয় এবং এটি ইরানি সেন্ট্রিফিউজ ধ্বংস করতে ব্যবহার করা হয়েছিল। এ ছাড়াও, ইসরায়েলের পরিচালিত দুটি পৃথক হামলার লক্ষ্যও ছিল এই স্থাপনাটি।
ফোরদো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনা
তেহরান থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার (৬০ মাইল) দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত ফোরদো স্থাপনাটিতেও সেন্ট্রিফিউজ ক্যাসকেড রয়েছে, তবে এটি নাতাঞ্জের তুলনায় ছোট।
আইএইএ জানায়, ২০০৭ সালে এর নির্মাণকাজ শুরু হলেও যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এর অস্তিত্ব সম্পর্কে জানত। তবে ইরান এ বিষয়ে জাতিসংঘকে জানায় ২০০৯ সালে।
ফোরদো স্থাপনাটি একটি পাহাড়ের নিচে অবস্থিত এবং শক্তিশালী বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা সুরক্ষিত।
সামরিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এ ধরনের স্থাপনাকে কেবল ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমার মাধ্যমেই ধ্বংস করা সম্ভব, যেমন: যুক্তরাষ্ট্রের জিবিইউ-৫৭ এ/বি ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর বোমা। এই বোমাটি প্রায় ৩০ হাজার পাউন্ড (১৩ হাজার ৬০০ কেজি) ওজনের এবং এটি মাটির গভীরে প্রবেশ করে বিস্ফোরিত হয়, বিশেষ করে ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার ও সুড়ঙ্গ ধ্বংসের জন্য তৈরি।
আরও পড়ুন: ইরানের আরাক হেভি ওয়াটার রিঅ্যাক্টর এলাকা খালি করতে ইসরায়েলের সতর্কবার্তা
এই বোমাটি শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের বি-২ স্পিরিট স্টেলথ বোমারু বিমান থেকে নিক্ষেপযোগ্য, যা কেবল মার্কিন বিমান বাহিনী পরিচালনা করে এবং নর্থরপ গ্রুম্যান এটি উৎপাদন করে থাকে।
এর মানে, যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি সম্পৃক্ততা ছাড়া এমন অভিযান পরিচালনা সম্ভব নয়।
ইসফাহান পারমাণবিক প্রযুক্তি কেন্দ্র
তেহরান থেকে প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার (২১৫ মাইল) দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত ইসফাহান স্থাপনাটিতে হাজার হাজার পরমাণু বিজ্ঞানী কাজ করেন। এখানে একই সঙ্গে তিনটি চীনা গবেষণা চুল্লি এবং ইরানের পরমাণু কর্মসূচি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গবেষণাগারও রয়েছে।
ইসফাহানে অবস্থিত পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপরও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল, যার মধ্যে রয়েছে ইউরেনিয়াম রূপান্তর কেন্দ্র।
আইএইএ জানায়, সেখানেও কোনো ধরনের তেজস্ক্রিয়তা বৃদ্ধির লক্ষণ দেখা যায়নি।
আরও কিছু পারমাণবিক স্থাপনা
ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে, যেগুলোর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের হামলা চালানোর খবর পাওয়া যায়নি।
এর মধ্যে রয়েছে বুশেহরে অবস্থিত ইরানের একমাত্র বাণিজ্যিক পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। পারস্য উপসাগরের তীরে তেহরান থেকে ৭৫০ কিলোমিটার (৪৬৫ মাইল) দক্ষিণে অবস্থিত এটি। সেখানে আরও দুটি চুল্লি নির্মাণাধীন।
আরও পড়ুন: গার্ডিয়ানের বিশ্লেষণ: দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ
এই চুল্লিগুলো রাশিয়ায় উৎপাদিত ইউরেনিয়াম দিয়ে পরিচালিত হয় এবং আইএইএয়ের নজরদারির আওতায় রয়েছে।
এ ছাড়া, তেহরান থেকে ২৫০ কিলোমিটার (১৫৫ মাইল) দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত আরাক হেভি ওয়াটার রিয়্যাক্টর। এই চুল্লিটি পারমাণবিক রিয়্যাক্টর ঠান্ডা করতে হেভি ওয়াটার ব্যবহার করে।
হেভি ওয়াটারের (Heavy Water) রাসায়নিক নাম ডিউটেরিয়াম অক্সাইড (D₂O)। সাধারণ পানিতে (H₂O) হাইড্রোজেনের দুটি পরমাণু থাকে, যেগুলো সাধারণত প্রোটিয়াম নামে পরিচিত, যা হাইড্রোজেনের সবচেয়ে হালকা আইসোটোপ। অন্যদিকে, ভারী পানিতে এই হাইড্রোজেন পরমাণুগুলোর বদলে থাকে ডিউটেরিয়াম, যা হাইড্রোজেনের একটি ভারী আইসোটোপ। ডিউটেরিয়ামের পরমাণু ভর সাধারণ হাইড্রোজেনের চেয়ে দ্বিগুণ। এজন্য D₂O দেখতে পানির মতো হলেও এর ঘনত্ব, গলনাঙ্ক ইত্যাদি আলাদা। ভারী পানি পরমাণু চুল্লিতে নিউট্রন মডারেটর হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
তাছাড়া রয়েছে তেহরান গবেষণা চুল্লি। এটি ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থার সদর দপ্তরে অবস্থিত। এটি প্রাথমিকভাবে উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের ওপর নির্ভরশীল ছিল, তবে প্রসারণ-সংক্রান্ত উদ্বেগ মোকাবিলায় পরবর্তীতে কম সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামে রূপান্তর করা হয়।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলা ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে গুরুত্বপূর্ণ ধাক্কা হলেও, এটি মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ বিস্তারের আশঙ্কাও বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
১৬৬ দিন আগে
ইসরায়েলি হামলার মাঝেই ৩ ইউরোপীয় পরাশক্তির সঙ্গে বৈঠকে বসছে ইরান
ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই সমাধানের পথ খুঁজতে ইউরোপের তিন পরাশক্তি—যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির সঙ্গে বৈঠকে বসছে ইরান। এই তিন ইউরোপীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ‘ই৩’ নামেও ডাকা হয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান কায়া কাল্লাসের উপস্থিতিতে শনিবার (২১ জুন) সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় এ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে আল জাজিরা।
বৈঠকের বিষয়ে ইরানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমরা শনিবার জেনেভাতে ইউরোপীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসব।’
দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আইআরএনএর পাশাপাশি ইউরোপীয় কূটনীতিকরাও বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ইইউ প্রতিনিধি ছাড়াও ই৩, অর্থাৎ ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-নোয়েল বারো, জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োহান ভাডেফুল এবং যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে তারা আরাগচির সঙ্গে কথা বলেন এবং পরমাণু আলোচনায় ফেরার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেন। ইরানের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়ার পর উভয়পক্ষই সরাসরি বৈঠকে সম্মত হয়েছে বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন: ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র জড়াবে কি না, সিদ্ধান্ত দুই সপ্তাহের মধ্যে
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে বলেছেন, ‘ইউরোপীয় দেশগুলো একটি আলোচনাভিত্তিক সমাধানের প্রস্তাব নিয়ে আসবে।’ পরের দিন তিনি দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ‘ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের’ সঙ্গে মিলে যুদ্ধ শেষ করার উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশ দেন।
এদিকে, বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বারো বলেন, ‘এই বিষয়ে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে আমরা তিন দেশই প্রস্তুত। আমরা চাই, ইরানের পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি স্থায়ীভাবে কমিয়ে আনার লক্ষ্যে আলোচনা হোক।’
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র সফরে রয়েছেন। সেখানে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং মধ্যপ্রাচ্যে হোয়াইট হাউসের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে সরাসরি সুইজারল্যান্ডে পৌঁছানোর কথা রয়েছে তার।
ইরানের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে ল্যামি বলেছেন, ‘আমরা নিশ্চিত করতে চাই, ইরান যেন কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র না পায়।… কূটনৈতিকভাবে বিষয়টির মীমাংসা করতে অন্তত দুই সপ্তাহ সময় আছে।’
কায়া কাল্লাসও বলেছেন একই কথা। তার ভাষ্যে, ‘ইরান যাতে পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে না পারে, তা নিশ্চিত করার সবচেয়ে কার্যকর পথ হলো কূটনীতি।’
অন্যদিকে ইসরায়েল দাবি করেছে, তেহরান যাতে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করতে না পারে, তাই তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ হিসেবে ধারাবাহিক হামলা চালানো হচ্ছে।
তবে ইসরায়েলের এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে ইরান। তাদের পরমাণু কর্মসূচি ‘সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ’ দাবি করেছে দেশটি।
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থাও জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কোনো প্রমাণ তারা পায়নি।
কূটনৈতিক পথ বন্ধ নয়
গতকাল (বৃহস্পতিবার) যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, তেহরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে খুব শিগগির নতুন করে আলোচনা শুরুর উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা রয়েছে।
সম্প্রতি তেহরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে পাঁচ দফা আলোচনা করেছে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র। তবে গত সপ্তাহে ইসরায়েলের হামলার পর ষষ্ঠ দফার আলোচনা বাতিল করা হয়।
এর আগে, ইরানের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে আল জাজিরার খবরে বলা হয়, ইসরায়েলের হামলা চলাকালে ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু কর্মসূচি বিষয়ক আলোচনা পুনরায় শুরু করবে না। তবে কূটনৈতিক পথ যে পুরোপুরি বন্ধ হয়নি, সে কথাও উল্লেখ করেছে তেহরান।
এ ছাড়া জেনেভা থেকে সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদক মিলেনা ভেসেলিনোভিচ জানান, ইরান-যুক্তরাষ্ট্র দ্বন্দ্বকে যুদ্ধের দিকে গড়াতে না দিয়ে সমাধানের চেষ্টা করছে ইউরোপীয় দেশগুলো।
ট্রাম্পের অবস্থান
এদিকে ইরানের সঙ্গে সংঘাতে জড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে নেবেন বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) এ সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি।
ট্রাম্প বলেন, ‘তেহরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরুর উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা রয়েছে।’
তাই এ সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সংঘাতের একটি নিষ্পত্তি খোঁজার সুযোগ রাখতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস।
চলমান পরিস্থিতিতে ইরানের সুসংরক্ষিত ফোরদো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনায় হামলা চালানো হবে কি না, তা-ই এখন বিবেচনা করছেন ট্রাম্প।
আরও পড়ুন: গার্ডিয়ানের বিশ্লেষণ: দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ
এই স্থাপনাটি একটি পর্বতের নিচে অবস্থিত এবং কেবল যুক্তরাষ্ট্রের ‘বাঙ্কার-বাস্টার’ বোমা দিয়েই এটিকে লক্ষ্যবস্তু করা সম্ভব বলে ধারণা করা হয়।
১৬৭ দিন আগে
ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র জড়াবে কি না, সিদ্ধান্ত দুই সপ্তাহের মধ্যে
গত এক সপ্তাহ ধরে চলছে ইসরায়েল ও ইরানের সংঘাত। আর এই সংঘাতকে কেন্দ্র করে বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করেছেন খোদ দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবার সংঘাতে জড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে নেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) এ সিদ্ধান্তের কথা জানান ট্রাম্প। তিনি বলেন, “তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরুর ‘উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা’ রয়েছে।
তাই এ সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এই সময়ের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সংঘাতের একটি নিষ্পত্তি খোঁজার সুযোগ রাখতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে।
চলমান পরিস্থিতিতে ট্রাম্প এখন বিবেচনা করছেন, ইরানের সুসংরক্ষিত ফোর্ডো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনায় হামলা চালানো হবে কি না। এই স্থাপনাটি একটি পর্বতের নিচে অবস্থিত এবং কেবল যুক্তরাষ্ট্রের ‘বাংকার-বাস্টার’ বোমা দিয়েই এটিকে লক্ষ্যবস্তু করা সম্ভব বলে ধারণা করা হয়।
আরও পড়ুন: ইরানের আরাক হেভি ওয়াটার রিঅ্যাক্টর এলাকা খালি করতে ইসরায়েলের সতর্কবার্তা
এর আগে, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত একটি হাসপাতাল পরিদর্শনের সময় ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেন, “ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে ‘বেঁচে থাকতে দেওয়া যাবে না’। এ ছাড়া, ইরান সরকারকে দুর্বল করার উদ্দেশ্যে হামলা জোরদারের নির্দেশ তিনি।
ইরান যে সময় ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছে, একই সময়ে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচীতে হামলা চালায় তেল আবিব।
এদিকে, প্রথমদিকে এই সংঘাত থেকে নিজেকে দূরে রাখলেও পরে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি ওই অঞ্চলে বাড়িয়েছেন ট্রাম্প এবং ইরানের ওপর হামলায় মার্কিন বাহিনীকে যুক্ত করার বিষয়টিও বিবেচনা করছেন।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন আমেরিকার সর্বোত্তম স্বার্থেই কাজ করবেন ট্রাম্প।
বৃহস্পতিবার বিয়েরশেবা শহরের সোরোকা মেডিকেল সেন্টারের ধ্বংসস্তূপ ও ভাঙা কাচের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমি বলতে পারি, তারা ইতোমধ্যেই আমাদের অনেক সাহায্য করছে।’
এদিকে, শুক্রবার (২০ জুন) ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ কূটনীতিক ও যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের জন্য জেনেভায় যাচ্ছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। এতে নতুন এক কূটনৈতিক উদ্যোগ শুরু হতে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ইরানের আকাশসীমার উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের দাবি ট্রাম্পের
ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি জানান, তিনি হোয়াইট হাউসে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ও মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেখানে চলমান উত্তেজনা প্রশমনে একটি চুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে তথ্য দেন তিনি।
বৃহস্পতিবারের বৈঠকের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে কূটনৈতিক সমাধান অর্জনের একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে।’
এর আগে ইরানকে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের আহ্বান জানান ট্রাম্প। তবে এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি।
তিনি বলেন, এই সংঘাতে যেকোনো সামরিক হস্তক্ষেপ আমেরিকানদের জন্য ‘অপূরণীয় ক্ষতির’ কারণ হবে।
১৬৮ দিন আগে
ইরানের আরাক হেভি ওয়াটার রিঅ্যাক্টর এলাকা খালি করতে ইসরায়েলের সতর্কবার্তা
ইসরায়েল-ইরানের চলমান সংঘাতের তীব্রতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এরই ধারাবাহিতকতায় এবার ইরানের আরাকে অবস্থিত ভবিষ্যতে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হতে পারে এমন প্লুটোনিয়াম উৎপাদনে সক্ষম একটি হেভি ওয়াটার রিঅ্যাক্টরের চারপাশের এলাকা খালি করতে জনগণকে সতর্কবার্তা দিয়েছে ইসেরায়েলি সেনাবাহিনী।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এই সতর্কবার্তা দিয়েছে ইসরায়েল।
ওই পোস্টে নির্ধারিত এলাকাকে উপগ্রহের চিত্রে লাল বৃত্ত দিয়ে চিহ্নিত করে দেওয়া দেওয়া হয়েছে। আগের হামলাগুলোর ক্ষেত্রেও এভাবেই সতর্কবার্তা দিয়েছে তেল আবিব।
হেভি ওয়াটারের (Heavy Water) রাসায়নিক নাম ডিউটেরিয়াম অক্সাইড (D₂O)। সাধারণ পানিতে (H₂O) হাইড্রোজেনের দুটি পরমাণু থাকে, যেগুলো সাধারণত প্রোটিয়াম নামে পরিচিত, যা হাইড্রোজেনের সবচেয়ে হালকা আইসোটোপ। অন্যদিকে, ভারী পানিতে এই হাইড্রোজেন পরমাণুগুলোর বদলে থাকে ডিউটেরিয়াম, যা হাইড্রোজেনের একটি ভারী আইসোটোপ। ডিউটেরিয়ামের পরমাণু ভর সাধারণ হাইড্রোজেনের চেয়ে দ্বিগুণ। এজন্য D₂O দেখতে পানির মতো হলেও এর ঘনত্ব, গলনাঙ্ক ইত্যাদি আলাদা। ভারী পানি পরমাণু চুল্লিতে নিউট্রন মডারেটর হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্য দিয়ে সপ্তম দিনে গড়িয়েছে ইসরায়েল ও ইরানের সংঘাত। চলমান এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ইরানকে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি।
তিনি বলেন, এই সংঘাতে যেকোনো সামরিক হস্তক্ষেপ আমেরিকানদের জন্য ‘অপূরণীয় ক্ষতির’ কারণ হবে।
এদিকে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হুমকি কিছুটা হ্রাস পাওয়ার কারণে নিরাপত্তার স্বার্থে নিজেদের জনগণের ওপর দেওয়া কিছু নিষেধাজ্ঞা তুলে দিয়েছে তেল আবিব। এ ছাড়া, বৃহস্পতিবার তেহরানসহ ইরানের অন্যান্য এলাকায় বিমান হামলার কথা জানিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। যদিও এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়নি।
তবে এরই মধ্যে ইসরায়েলের হামলা ইরানের নাতানজে অবস্থিত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র, তেহরান ঘিরে সেন্ট্রিফিউজ কারখানা ও ইসফাহানের একটি পারমাণবিক স্থাপনাকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এসব হামলায় ইরানের বেশ কয়েকজন শীর্ষ জেনারেল ও পারমাণবিক বিজ্ঞানীরা নিহত হয়েছেন।
ওয়াশিংটনভিত্তিক এক ইরানি মানবাধিকার গোষ্ঠীর তথ্যমতে, ইরানে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৩৯ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ২৬৩ জন বেসামরিক নাগরিক। এ ছাড়া আহত হয়েছেন সহস্রাধিক।
জবাবে ইরান প্রায় ৪০০টি ক্ষেপণাস্ত্র ও শত শত ড্রোন নিক্ষেপ করেছে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে। যার ফলে সেখানে অন্তত ২৪ জন নিহত ও শত শত মানুষ আহত হয়েছেন। এর মধ্যে কিছু ক্ষেপণাস্ত্র মধ্য ইসরায়েলের আবাসিক ভবনে আঘাত হেনেছে, যার ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি তেল আবিবের।
ভারী পানির চুল্লিতে হামলার প্রস্তুতি কেন?
আরাক ভারী পানির চুল্লিটি তেহরানের দক্ষিণ-পশ্চিমে ২৫০ কিলোমিটার (১৫৫ মাইল) দূরে অবস্থিত। ভারী পানি পারমাণবিক চুল্লি ঠান্ডা করতে সহায়তা করে, তবে এটি একটি উপজাত হিসেবে প্লুটোনিয়াম উৎপন্ন করে, যা পরবর্তীতে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহারযোগ্য হতে পারে।
এর অর্থ, ইরান যদি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে অগ্রসর হয়, তাহলে এটি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের বাইরে আরেকটি বোমা তৈরির পথ হতে পারে। এর আগে, ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির আওতায় ইরান এই স্থাপনাটির নকশা পরিবর্তনে সম্মত হয়, যাতে এটি পারমাণবিক বিস্তার সংক্রান্ত উদ্বেগ হ্রাস করে।
তবে ২০১৯ সালে সেই চুক্তি লঙ্ঘন নার করেই ইরান এই হেভি ওয়াটার রিঅ্যাক্টরের সেকেন্ডারি সার্কিট চালু করে। এর মধ্যে ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রকে একতরফাভাবে চুক্তি থেকে বের করে নেন ট্রাম্প। ব্রিটেন তখন রিঅ্যাক্টরটির নকশা পরিবর্তনে ইরানকে সহায়তা করে।
এদিকে, জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) ইসরায়েলকে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা না চালানোর আহ্বান জানিয়ে আসছে। সংস্থাটির পরিদর্শকরা সর্বশেষ গত ১৪ মে আরাক পরিদর্শন করেন বলে জানা গেছে।
তবে ইরানের ওপর নানা ধরনের সীমাবদ্ধতা আরোপ করায় ভারী পানি উৎপাদন সংক্রান্ত তথ্য নিশ্চিত করতে পারেনি আইএইএ। ২০১৫ সালের চুক্তির আলোচনার অংশ হিসেবে পশ্চিমাদের কাছে ভারী পানি বিক্রির শর্তে রাজি হয়েছিল ইরান।
এমনকি যুক্তরাষ্ট্রও একপর্যায়ে প্রায় ৮০ লাখ ডলারে ৩২ টন হেভি ওয়াটার কিনেছিল। সে সময় এ বিষয়টি চুক্তির সমালোচকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল।
আরও পড়ুন: ইরানের আকাশসীমার উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের দাবি ট্রাম্পের
১৬৯ দিন আগে
ইসরায়েল-ইরান সংঘাত সহজেই শেষ করা সম্ভব: ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের কোনো লক্ষ্যবস্তুতে তেহরান হামলা না চালালে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান সংঘাত সহজেই শেষ করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের ওপর হামলা হলে ইরানের ওপর সেনাবাহিনীর ‘পূর্ণশক্তি’ প্রয়োগ করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
স্থানীয় সময় রবিবার (১৫ জুন) নিজস্ব সামাজিকমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে এসব বলেন ট্রাম্প।তিনি বলেন, ‘ইরান যদি আমাদের (যুক্তরাষ্ট্র) ওপর কোনোভাবে আক্রমণ করে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীর পূর্ণশক্তি ও ক্ষমতা তোমাদের (ইরান) ওপর এমনভাবে নেমে আসবে, যা পৃথিবী আগে কখনও দেখেনি।’
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘তবে আমরা সহজেই ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি চুক্তি সম্পন্ন করতে পারি এবং এই রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান ঘটাতে পারি।’
যদিও চুক্তি নিয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য দেননি তিনি। এর আগে, রবিবার রাতে ইরানের বোমা হামলায় ইসরায়েলে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১০ জনে পৌঁছেছে বলে জনিয়েছে ইসরায়েলি উদ্ধারকারী দল। এছাড়া ১৪০ জনের বেশি আহত হয়েছেন বলে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: মোসাদের দুই গোয়েন্দাকে গ্রেপ্তারের দাবি ইরানের
একাধিক ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ও জরুরি সেবা সংস্থার বরাত দিয়ে বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, রবিবার ভোরে দুই দফায় ইসরায়েলের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান।
অন্যদিকে, ইসরায়েলের অভিযানে ইরানে প্রথম দিন ৭৮ জন নিহত হয়েছেন ও দ্বিতীয় দিনে আরও বহু মানুষ নিহত হয়েছেন বলে জানায় তেহরান। এর মধ্যে একটি ১৪ তলা আবাসিক ভবনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ২৯টি শিশুসহ ৬০ জন মারা যাওয়ার তথ্য দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, ইরানের অস্ত্র স্থাপনার আশপাশে বসবাসকারী নাগরিকদের সেখান থেকে সরে যাওয়ার জন্য সতর্ক করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘ আগামী দিনে ইরান যা দেখবে, ইসরায়েলের এ যাবতকালের হামলা তার কাছে কিছুই না।’
শুক্রবার (১৩ জুন) রাজধানী তেহরানসহ দেশটির শতাধিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায় ইসরায়েল। আজ (রবিবার) ওমানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের নির্ধারিত পারমাণবিক আলোচনাকে বানচাল করতেই ইসরায়েল এই হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি।
তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈঠক বাতিল করা হয়েছে। তাছাড়া ইসরায়েলের এই হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন রয়েছে এবং ইরান কেবল আত্মরক্ষার্থে জবাব দিচ্ছে বলেই মত দেন তিনি।
আরও পড়ুন: ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে ইসরায়েলের হামলা, তেহরানেরও পাল্টা জবাব এর আগে, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলার মধ্যে ওমানের আলোচনা সম্ভব নয়।’
তাছাড়া, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে কেউ সহায়তা করলে, ওই দেশের সামরিক ঘাঁটিগুলোকেও হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হবে বলে সতর্ক করেছে তেহরান।
ইসরায়েলের দাবি, ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত রাখা এবং এর ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে অকার্যকর করার জন্য এই সামরিক অভিযান চালানো হয়েছে।
এই অভিযান ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে পুরোপুরি থামাতে না পারলেও একটি পূর্ণাঙ্গ যুক্তরাষ্ট্র-ইরান চুক্তির পথ খুলে দেবে বলে আশা প্রকাশ করেন ইসরায়েলি কর্মকর্তারা।
এদিকে, ইরান-সমর্থিত ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা রবিবার জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় তারা ইসরায়েলের কেন্দ্রীয় এলাকা জাফায় একাধিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। ইরানের কোনো মিত্রের এটিই ছিল প্রথম সরাসরি হামলা।
তবে গাজায় ২০ মাসের যুদ্ধ এবং গত বছর লেবাননের সংঘর্ষে ইরানের সবচেয়ে শক্তিশালী আঞ্চলিক মিত্র হিজবুল্লাহকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, যার ফলে ইরানের পাল্টা জবাবের ক্ষমতা কমে এসেছে বলে মনে করছেন অনেকে।
এ ছাড়া, ইসরায়েলের হামলার কারণে বিশ্বের বৃহত্তম গ্যাসক্ষেত্র ‘সাউথ পার্সের’ উৎপাদন আংশিকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে ইরান। এতে তেলের দাম বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
সাউথ পার্স ক্ষেত্রটি ইরানের দক্ষিণ বুশেহর প্রদেশে অবস্থিত এবং এটি ইরানে উৎপাদিত গ্যাসের প্রধান উৎস।
আরও পড়ুন: ইরানে আবাসিক ভবনে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৬০
তাছাড়া, ইসরায়েল জানিয়েছে, তাদের অভিযান কয়েক সপ্তাহ চলতে পারে। এমনকি ইরানের জনগণকে তাদের ইসলামি ধর্মীয় শাসকদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন নেতানিয়াহু। এর ফলে এই সংঘাত আঞ্চলিক পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়বে এবং বাইরের শক্তিগুলোকেও জড়িয়ে ফেলবে—এমন আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি মনে করে ইসরায়েল। ইরান যাতে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির শেষ ধাপ পর্যন্ত না পৌঁছাতে পারে, তা নিশ্চিত করতেই এই হামলা চালানোর কথা জানিয়েছে তেল আবিব।
তবে এ অভিযানকে সম্পূর্ণরূপে বেসামরিক বলে আখ্যা দিয়েছে ইরান। এ ছাড়া, তেহরান পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের চেষ্টা করছে না বলে দাবি করেছে তারা। অবশ্য জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থার তথ্যমতে, ইরান বৈশ্বিক পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তির আওতায় থাকা বাধ্যবাধকতাগুলো লঙ্ঘন করেছে।
১৭২ দিন আগে