শুল্কহার
যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি পণ্যে শুল্ক কমানো ‘সন্তোষজনক’: আমীর খসরু
বাংলাদেশি রপ্তানি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কহার ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করাকে দেশের রপ্তানি খাতের জন্য একটি ‘সন্তোষজনক অগ্রগতি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
শুক্রবার (১ আগস্ট) সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শুল্কহার ২০ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। প্রতিযোগী দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তানের হার ১৯ শতাংশ, ভিয়েতনামের ২০ শতাংশ এবং ভারতের ২৫ শতাংশ—এই প্রেক্ষাপটে ২০ শতাংশ শুল্ক হার সার্বিকভাবে সন্তোষজনক বলেই মনে করি।’
তবে তিনি বলেন, পুরো বিষয়টি মূল্যায়ন করতে হলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হওয়া আলোচনার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ জানা দরকার। এই মুহূর্তে শুধু শুল্কহার জানানো হয়েছে, কিন্তু এই হার নির্ধারণের পেছনে কী শর্ত ছিল বা আমরা বিনিময়ে কী দিয়েছি—তা এখনও স্পষ্ট নয়।
আলোচনায় আরও কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা শুধু শুল্ক কমানো নিয়ে নয়, বরং পুরো প্যাকেজ আলোচনার অংশ ছিল। যুক্তরাষ্ট্র কী পণ্য রপ্তানির সুযোগ চাইছে, কী শর্ত দিয়েছে—এসব তথ্য প্রকাশ পেলে পুরো পরিস্থিতি বোঝা সহজ হবে।’
সম্প্রতি বাণিজ্য সচিবের যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৫টি বোয়িং বিমান কেনার বিষয়ে দেওয়া মন্তব্য এই শুল্ক কমানোর সঙ্গে সম্পৃক্ত কিনা—এমন প্রশ্নে খসরু বলেন, ‘না, তবে কিছু একটা তো করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের উদ্দেশ্যই ছিল তাদের রপ্তানিকে সুরক্ষা দেওয়া।’
পড়ুন: প্রতিযোগী দেশগুলোর সমান ২০ শতাংশ শুল্কহার অর্জন করেছে বাংলাদেশ
তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসায়ীদের কতটুকু চাপ সহ্য করার ক্ষমতা আছে, সেটাও চিন্তা করতে হবে। এই সিদ্ধান্তে আপাতত কিছুটা স্বস্তি আসতে পারে, তবে আমাদের সামগ্রিক বাণিজ্য ও অর্থনীতির ভারসাম্য বিবেচনায় রাখা জরুরি।
খসরু আরও বলেন, ‘এখন সময় এসেছে আমাদের রপ্তানি বাজার ও পণ্যের বৈচিত্র্য বাড়ানোর। কেবল যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করে থাকলে চলবে না। নতুন নতুন বাজারে প্রবেশ ও পণ্য উদ্ভাবনে কাজ করতে হবে—এটাই আগামী দিনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।’
এর আগে, শুক্রবার (১ আগস্ট) বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শুল্কহার ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় দফার শুল্ক আলোচনা শেষ হওয়ার পর হোয়াইট হাউস থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
১২৬ দিন আগে
বাংলাদেশি পণ্যে শুল্ক কমাতে পারে যুক্তরাষ্ট্র: অর্থ উপদেষ্টা
যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা বাংলাদেশি পণ্যে দেশটি শুল্কহার কমাতে পারে বলে আশাবাদ প্রকাশ করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
এ বিষয়ে আলোচনা করতে বাণিজ্য উপদেষ্টাসহ একটি প্রতিনিধিদল আগামী ১ আগস্টের আগেই যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন।
বুধবার (২৩ জুলাই) সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের কমিটির বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, ‘শুল্কহার কমানোর বিষয়ে আমরা আশাবাদী। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি খুব কম, প্রায় সাড়ে ৬০০ থেকে ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার।’
যুক্তরাষ্ট্র থেকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পণ্য আমদানির পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা কিছু জরুরি পণ্য আমদানি করব, তবে এখনই সেগুলোর নাম বলতে চাচ্ছি না।’
যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানির সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমরা গম আমদানিকে ডাইভার্সিফাই (বৈচিত্র্যময়) করতে চাচ্ছি। কৃষ্ণসাগর ঘিরে সমস্যা তৈরি হওয়ায় রাশিয়া-ইউক্রেন অঞ্চল থেকে আমদানিতে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।’
গমের দাম সম্পর্কে মন্তব্য অস্বীকৃতি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দাম কিছুটা বেশি হলেও যুক্তরাষ্ট্রের গমে প্রোটিনের মাত্রা সামান্য বেশি এবং পরিষ্কার।’
যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশি দামে গম আমদানির বিষয়টি স্বীকার করে উপদেষ্টা বলেন, ‘এতে আমরা কিছু সুবিধা পাবো এবং আলোচনা এগিয়ে নিতে কিছু আমদানি করতেই হবে।’
পড়ুন: ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন অধ্যাপক ড. এম জুবায়দুর
এই আমদানি বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতেও সহায়তা করবে বলে জানান তিনি।
অর্থ উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশি পণ্যে শুল্কহার বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত আগামী ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার আগে এবিষয়ে আলোচনা করতে বাণিজ্য উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাবেন এবং ইউএসটিআরের (যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি) সঙ্গে বৈঠক করবেন।
তিনি বলেন, ‘আমি নিজেও আমার চ্যানেলের মাধ্যমে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছি।’
এ পর্যায়ে লবিস্ট নিয়োগ কোনো ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘লম্বা সময় নিয়ে কোনো আলোচনার ক্ষেত্রে এ ধরনের লবিস্ট নিয়োগ করা হয়। এখানে যা করতে হবে দ্রুত (কুইক) করতে হবে।’
ব্যবসায়ীদের আলোচনায় যুক্ত করার প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ও এডিবিতে নেগোশিয়েট করে এসেছি। ব্যবসায়ীরা তো আলোচনা দূরে থাক, গেট পর্যন্তও ঢুকতে পারবে না, পরে বাইরে হইচই করবে। ওই হইচইয়ে কাজ হবে না।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি খাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্বীকার করে ইতোমধ্যে ইউএস চেম্বারের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন বলে জানান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের ভালো ইমেজ আছে। সম্প্রতি আমরা যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন, এক্সিলারেট এনার্জি, মেটলাইফের কতগুলো বকেয়া পরিশোধ করে দিয়েছি। বাংলাদেশের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে ইউএস চেম্বার আমাকে চিঠি লিখেছে।
গত ৭ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে পাঠানো এক চিঠিতে বাংলাদেশের পণ্যে ৩৫ শতাংশ শুল্কারোপের ঘোষণা দেন।
চিঠিতে ট্রাম্প বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী ও স্থায়ী বাণিজ্য ঘাটতির কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও লেখেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে বাংলাদেশের একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও ন্যায্য অংশগ্রহণ চাই।’
তিন মাস আগে ঘোষিত শুল্ক হার থেকে ২ শতাংশ কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করা হলেও এই হার বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনামের চেয়ে অনেক বেশি।
ভিয়েতনাম সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি করেছে যার আওতায়, তারা ২০ শতাংশ শুল্কে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করতে পারবে।
১৩৫ দিন আগে