ফিলিস্তিন রাষ্ট্র
আমরা ধীরে ধীরে মরে যাচ্ছি: ক্ষুধার্ত গাজাবাসীর আর্তনাদ
একটা সময় পর্যন্ত বিশ্ব মানবাধিকার, আন্তর্জাতিক সহায়তার ওপর মানুষের চরম বিশ্বাস ছিল। কিন্তু ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে গাজার আজকের বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে সেসব যেন ধুলোয় ঢাকা কোনো গল্প।
এখন সেখানে প্রতিদিনকার দৃশ্য— শুকিয়ে যাওয়া শিশুদের কঙ্কালসার দেহ, খাবারের আশায় হাত বাড়িয়ে থাকা মানুষের সারি এবং বাবা-মায়ের অসহায় কান্না—যাদের চোখের সামনেই অনাহারে ধুঁকে ধুঁকে মরছে সন্তানরা।
‘আমার ৫ বছরের মেয়ের ওজন এখনও মাত্র ১১ কেজি,’ বলছিলেন গাজার ৩৮ বছর বয়সী জামিল মুঘারি। তিনি বলেন, আমার ছেলের শরীরে চামড়া আর হাড় ছাড়া কিছু নেই। যুদ্ধ শুরুর পর আমি নিজেও ৩০ কেজি ওজন হারিয়েছি।
এটিই এখন গাজার প্রত্যাহিক চিত্র— শুধু যুদ্ধ নয়, এখন ক্ষুধাই হয়ে উঠেছে এখানকার নতুন মারণাস্ত্র।
দুর্ভিক্ষ: এখন আর আশঙ্কা নয়, বাস্তবতা
গত সপ্তাহে জাতিসংঘ-সমর্থিত ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেইজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) জানিয়েছে, গাজা এখন চরম মাত্রার দুর্ভিক্ষে পতিত হয়েছে।
আইপিসি জানায়, গাজায় ২২ লাখ মানুষকে যেন একটি বন্দি চেম্বারে আটকে রাখা হয়েছে। সেখানে বাইরে থেকে ত্রাণ সহায়তা প্রবেশ করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে, আর ভেতরে কোনো খাদ্য নেই, কর্মসংস্থান নেই, আশ্রয় নেই— আছে শুধু ধ্বংসস্তূপ আর কান্না।
পড়ুন: গাজায় আগ্রাসনের প্রতিবাদে ইসরায়েলের সঙ্গে অস্ত্র বাণিজ্য বন্ধ করল স্লোভেনিয়া
মুঘারি বললেন, ‘আমি ও আমার পরিবার এমনও দিন কাটাই যেদিন খাবারের জন্য একেবারেই কিছু খুঁজে পাই না। সেসব দিন শুধু পানি খেয়ে পেট ভরাতে হয়। খাবার না পেয়ে এমন হয়েছে, মাঝেমধ্যে হাঁটতে গিয়েও দুর্বলতার কারণে পড়ে যেতে যেতে নিজেকে সামলাই। কারণ, সন্তানরা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।’
১২৪ দিন আগে
ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে ফ্রান্স: মাখোঁ
আগামী সেপ্টেম্বরে ফ্রান্স ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ। খাবারের অভাবে গাজায় একের পর এক মৃত্যুর মধ্যে এই সাহসী কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিলেন তিনি। তবে তার এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ইসরায়েল।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দেন মাখোঁ। আগামী সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে এই সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করার কথাও জানান তিনি।
পোস্টে মাখোঁ লেখেন, ‘এ মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি হলো গাজায় যুদ্ধের অবসান ও সাধারণ মানুষের জীবন রক্ষা করা।’
২০২৩ সালে হামাস ইসরায়েলে হামলা করার পর প্রথম দিকে তেল আবিবকে সমর্থন করেছিলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট। তবে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের অব্যাহত অভিযানের কারণে ক্রমাগত উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছিলেন তিনি। অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধেরও আহ্বান জানিয়ে আসছেন মাখোঁ।
এক্স পোস্টে তিনি আরও লেখেন, ‘শান্তি সম্ভব, মধ্যপ্রাচ্যে ন্যায়সঙ্গত ও স্থায়ী শান্তির জন্য ঐতিহাসিক প্রতিশ্রুতির প্রতি সততার দিক থেকে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে ফ্রান্স ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে।’
আরও পড়ুন: ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে ব্রিটেনের প্রতি লন্ডনের মেয়রের আহ্বান
সম্প্রতি হামাস সদিচ্ছা দেখাচ্ছে না— এই অজুহাতে কাতারে চলমান গাজা যুদ্ধবিরতির আলোচনা সংক্ষিপ্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর পরপরই এই ঘোষণা দেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট।
এদিকে, মাখোঁর এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়ে এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহ বলেন, ফ্রান্সের এই পদক্ষেপ সন্ত্রাসকে পুরস্কৃত করবে। তাছাড়া গাজা যেমন একটি ইরানি দোসরে পরিণত হয়েছিল, তেমনি আরেকটি দোসর তৈরির ঝুঁকি তৈরি করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র হবে ইসরায়েলকে ধ্বংস করার জন্য একটি লঞ্চ প্যাড। এর পাশে শান্তিতে বসবাস করার সুযোগ থাকবে না।’
তবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ মাখোঁর এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছে। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
মাখোঁর ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় মাহমুদ আব্বাসের ডেপুটি হুসেইন আল-শেখ বলেছেন, ‘(মাখোঁর) এই অবস্থান আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি ফ্রান্সের প্রতিশ্রুতি এবং ফিলিস্তিনি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার এবং স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতি সমর্থনকে প্রতিফলিত করে।’
অন্যদিকে, এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মাখোঁর সিদ্ধান্তকে জোরালোভাবে প্রত্যাখান করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও।
তিনি বলেন, ‘অবিবেচনাপ্রসূত নেওয়া এই সিদ্ধান্ত কেবল হামাসের প্রচারকে শক্তিশালী করবে। পাশাপাশি শান্তি প্রক্রিয়াকে পিছিয়ে দেবে। শুধু তাই নয়, এটি ৭ অক্টোবরের নিহতদের প্রতি চরম অবমাননা।’
বর্তমানে, জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ১৪০টিরও বেশি দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়েছে, যার মধ্যে ইউরোপের কয়েকটি দেশও রয়েছে। কিন্তু ইসরায়েলের প্রধান সমর্থক, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ তার মিত্ররা ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়নি।
এরই মধ্যে, আগামী সপ্তাহে ফ্রান্স ও সৌদি আরব জাতিসংঘে যৌথভাবে দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান নিয়ে একটি সম্মেলনের আয়োজন করতে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: মার্কিন উপদেষ্টাকে গাজার ক্ষুধার্ত শিশুদের ছবি দেখালেন তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট
এর আগে, গত মাসে দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পক্ষে একটি বৃহত্তর উদ্যোগের পক্ষে জোর দিয়েছিলেন মাখোঁ, তবে ইসরায়েলকেও স্বীকৃতি ও আত্মরক্ষার অধিকার সমানভাবে গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে মন্তব্য করেছিলেন তিনি।
এ ছাড়াও গাজার চলমান পরিস্থিতিতে কীভাবে ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে খাদ্য পৌঁছানো যায় এবং যুদ্ধ থামানো যায়, তা নিয়ে আলোচনা করতে শুক্রবার (২৫ জুলাই) ব্রিটেন ও জার্মানির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে মাখোঁর।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার তাকে সমর্থন করে বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ফিলিস্তিনি জনগণের অবিচ্ছেদ্য অধিকার। একটি যুদ্ধবিরতি ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এটি ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিদের জন্য শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গাজায় যে দুর্ভোগ ও অনাহার চলছে, তা বর্ণনাতীত এবং কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।’
১৩২ দিন আগে
ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে ব্রিটেনের প্রতি লন্ডনের মেয়রের আহ্বান
ফিলিস্তিনকে অবিলম্বে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে ব্রিটেনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন লন্ডনের মেয়র সাদিক খান। যা ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ক্রমবর্ধমান মানবিক সংকটের মধ্যে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের ওপর চাপ আরও বাড়িয়েছে।
বুধবার (২৩ জুলাই) সামাজিক মাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে সাদিক খান গাজা পরিস্থিতিকে অত্যন্ত মর্মান্তিক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, ‘গাজায় বর্তমানে ক্ষুধার্ত শিশুরা ধ্বংসস্তূপের মধ্যে খাবার খুঁজছে। এদিকে, খাবারের সন্ধানে বের হওয়া মানুষদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করছে ইসরায়েলি সেনারা।’
পোস্টে তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়—যার মধ্যে আমাদের সরকারও রয়েছে—ইসরায়েলি সরকারকে এই নৃশংস ও অযৌক্তিক হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে এবং জরুরি মানবিক সহায়তা ঢুকতে দেওয়ার বিষয়ে আরও কঠোর চাপ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এমন ন্যাক্কারজনক হত্যাযজ্ঞ কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত করার সুযোগ নেই।’
লন্ডনের মেয়র বলেন, ‘যুক্তরাজ্যকে অবিলম্বে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে হবে। যদি ফিলিস্তিন নামে কোনও রাষ্ট্রই না থাকে, তাহলে দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের কোনো ভিত্তি নেই।’
পড়ুন: ‘গাজায় বোমার চেয়ে বিধ্বংসী হয়ে উঠেছে ক্ষুধা’
সাদিক খানের এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এলো, যখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্টারমারের নেতৃত্বে নিজ দল লেবার পার্টির ভেতর থেকেই চাপ বাড়ছে। দলটির একাধিক সিনিয়র মন্ত্রী ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়াতে এবং বেসামরিক প্রাণহানি ঠেকাতে আন্তর্জাতিক উদ্যোগে নেতৃত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টে দেওয়া এক ভাষণে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওয়েস স্ট্রিটিংও একই সুরে বলেন, ‘আমাদের ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। ইসরায়েল যে আত্মরক্ষার কথা বলে, সে বৈধ আত্মরক্ষার সীমা বহু আগেই ছাড়িয়ে গেছে।’
এদিকে, ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস, সেভ দ্য চিলড্রেন, অক্সফামসহ ১১১টি মানবিক সংস্থা এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘ক্ষুধাস্ত্র’ ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছে, যা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।’
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেন, ‘ক্ষুধার্ত বেসামরিক মানুষদের গুলি করে হত্যা করার দৃশ্য দেখে আমি হতভম্ব, বেদনায় ভারাক্রান্ত।’ সম্প্রতি তিনি জানান, যুক্তরাজ্য দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান নিশ্চিত করতে ভূমিকা পালন করবে।
১৩৩ দিন আগে