উমামা ফাতেমা
হলে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ: উমামার বক্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কবি সুফিয়া কামাল হলে বাম, ডান ও ইসলামীসহ সব দলের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা। তবে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে তার বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
গত শুক্রবার (৮ আগস্ট) কবি সুফিয়া কামাল হলের প্রাধ্যক্ষকে দেওয়া একটি চিঠিতে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, আমরা গত বছরের ১৭ জুলাই সম্মিলিত আন্দোলনের মাধ্যমে প্রশাসন থেকে এই মর্মে প্রতিশ্রুতি নিতে সক্ষম হয়েছি যে, হলে সব ধরনের ছাত্ররাজনীতি (ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, শিবির, বাগছাস, বামপন্থি ইত্যাদি) নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
উমামা ফাতেমার নেতৃত্বে দেওয়া ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘গত এক বছরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রশাসনের এই চুক্তি বলবৎ ছিল। কিন্তু এরই মধ্যে কিছু সংগঠন গুপ্তভাবে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যার কারণে ৮ আগস্ট ছাত্রদল হলে কমিটি ঘোষণা করেছে। আমরা শিক্ষার্থীরা মনে করি, তাদের এইসব কার্যকলাপ জুলাই আন্দোলনের মাধ্যমে সৃষ্টি হওয়া উল্লেখিত চুক্তিকে ভঙ্গ করেছে, যা স্পষ্টত সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণার শামিল।’
পরবর্তীতে দৈনিক জনকণ্ঠসহ বিভিন্ন মাধ্যমে উমামার উদ্ধৃতিতে বলা হয়, ‘হলে বাম দল ছাড়া সব দলের রাজনীতি নিষিদ্ধ চান উমামা ফাতেমা।’
পড়ুন: হল রাজনীতি নিষিদ্ধের আগের সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে: ঢাবি উপাচার্য
শনিবার (৯ আগস্ট) দুপুরে ইউএনবিকে উমামা ফাতেমা বলেন, দৈনিক জনকণ্ঠসহ অন্যান্য মিডিয়ায় শিরোনাম ও ফটোকার্ডে আমার বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে। এসব সাংবাদিক নিজের মতো একটা অর্থ বানিয়েছে। কবি সুফিয়া কামাল হলে বামরা কোনো ফ্যাক্টর নয়, আমাদের হলে বাম রাজনীতি করেন এমন কেউ নেই।
বিবৃতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রভোস্ট স্যারের কাছে জমা দেওয়া বিবৃতিতে আমরা সুফিয়া কামাল হলে সব ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকবে লিখে দিয়েছি। ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, শিবির, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদসহ (বাগছাস) ইত্যাদি, মানে যাবতীয় বাম, ডান, ইসলামিক সব দলের রাজনীতি হলে বন্ধ থাকবে।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘অথচ ছাত্রীসংস্থার লোকজন এর আগেই খসড়া বিবৃতি ছড়িয়ে দিয়েছে। ছাত্রীসংস্থার লোকজন এর আগেও হলে পানির ফিল্টার ও ঝাড়বাতি লাগিয়েছে। ঝাড়বাতি বিষয়ে নাকি প্রক্টর অফিস থেকে ফোন দিয়ে হলে অফিসকে অনুমতি দেওয়ার জন্য বলা হয়েছিল।
‘হল রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মাধ্যমে সব ধরনের রাজনীতি এনডোর্স করা হচ্ছে,’ বলেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সাবেক এই মুখপাত্র।
তবে উমামার এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী সংস্থার সভানেত্রী সাকিবুন্নাহার তামান্না। তিনি বলেন, ‘ঢাবি ছাত্রী সংস্থা এমন কোনো কাজে জড়িত ছিলো না। হলে তো অনেক শিক্ষার্থী আছেন, এখানে ছাত্রী সংস্থার নাম কেন জড়ানো হলো বুঝতে পারছি না।’
একই দিন রাতে মিরর নিউজ নামের একটি অনলাইন পোর্টালের ফটোকার্ডে উমামার বক্তব্যের উদ্ধৃতি দেওয়া হয়, ‘শিবিরকে সব হল কমিটি প্রকাশ করতে হবে এবং ছাত্রদল যে কমিটি প্রকাশ করেছে তা বাতিল করতে হবে।’
পড়ুন: ঢাবির ১৮ হলে আহ্বায়ক কমিটি দিল ছাত্রদল
এই ফটোকার্ডের বিষয়ে উমামা বলেন, আমি বলিনি যে শিবিরকে প্রকাশ করতে হবে। যারা ‘গুপ্ত’ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, তারা তো নিজ থেকে এসে পরিচয় প্রকাশ করবে না। এটি প্রশাসনের দায়িত্ব, প্রশাসনের উচিত এসব শিক্ষার্থীকে আইডেন্টিফাই করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতিকে একটি পুনর্মিলনের মধ্য দিয়ে যেতে হবে।
তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে সবারই অভিযোগ — শিবিরের সমস্যা আমি কেন গুপ্ত রাজনীতির কথা তুললাম, ছাত্রদলের সমস্যা আমি কেন কমিটির কথা বলেছি, আর বামদের সমস্যা আমি কেন হলে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ চাইলাম।
উমামা বলেন, আমি ঠিক করেছি এসবের বিরুদ্ধে মামলা করব। আমি এসব কার্যক্রম ডাকসুর জন্য করছি না, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের স্বার্থে এসব করছি।
১১৭ দিন আগে