মারাহ পর্বতমালা
সুদানে ভূমিধসে প্রাণহানি হাজার ছাড়াল
আফ্রিকার দেশ সুদানের দক্ষিণাঞ্চলের দারফুর প্রদেশে ভূমিধসে প্রাণহানির সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) রাতে এলাকাটি নিয়ন্ত্রণকারী একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী মন্তব্য করেছে, এটি দেশটির সাম্প্রতিক ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাণঘাতি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনাগুলোর অন্যতম।
এক বিবৃতিতে সুদান লিবারেশন মুভমেন্ট-আর্মি জানায়, কয়েকদিন ধরে তীব্র বৃষ্টিপাতের পর রবিবার (৩১ আগস্ট) মধ্য দারফুরের মারাহ পর্বতমালায় অবস্থিত তারাসিন গ্রামে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
বিবৃতি বলা হয়, প্রাথমিক তথ্যানুযায়ী কেবল একজন ছাড়া ওই গ্রামের সব বাসিন্দার মৃত্যু হয়েছে। তাই এক হাজারেরও বেশি প্রাণহানি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিবৃতি অনুযায়ী, পুরো গ্রামটি মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি লাশ উদ্ধারে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক ত্রাণ বিতরণ সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
মারাহ পর্বতমালা হলো একটি দুর্গম আগ্নেয়গিরির শৃঙ্খল, যা রাজধানী খার্তুম থেকে প্রায় ৯০০ কিলোমিটার (৫৬০ মাইল) পশ্চিমে এবং এল-ফাশের থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে ১৬০ কিলোমিটার (১০০ মাইল) পর্যন্ত বিস্তৃত।
এদিকে দেশটির ক্ষমতাসীন সার্বভৌম পরিষদ মারাহ পর্বতমালার ভূমিধসে ‘শত শত নিরীহ বাসিন্দার মৃত্যুতে’ শোক প্রকাশ করেছে। এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, ওই এলাকায় সহায়তার জন্য ‘সম্ভাব্য সব ধরনের সক্ষমতা’ কাজে লাগানো হচ্ছে।
একটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ফুটেজে দেখা যায়, মারাহ পর্বতমালার মাঝখানে সমতল হয়ে যাওয়া এলাকায় একদল উদ্ধারকারীকে নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
সুদানে ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যেই এই দুর্ঘটনাটি ঘটল। দেশটির সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) সংঘর্ষ ও কঠোর বিধিনিষেধের কারণে দারফুরের সংঘাতপীড়িত অঞ্চলগুলোর বেশিরভাগই বর্তমানে জাতিসংঘ ও মানবিক সহায়তাদানকারী সংগঠনগুলোর জন্য কার্যত অগম্য হয়ে পড়েছে।
মানবিক সংগঠন ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ) সতর্ক করেছে, মারাহ পর্বতমালাসহ দরফুরের বহু এলাকা দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে যুদ্ধ ও বিচ্ছিন্নতার কারণে বাইরের বিশ্ব থেকে সম্পূর্ণ বিছিন্ন হয়ে গেছে।
পড়ুন: আফগানিস্তানে ভূমিকম্প: নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯০০, আহত ৩ হাজারের বেশি
সুদান লিবারেশন মুভমেন্ট-আর্মি, যা মারাহ পর্বতমালা এলাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে সক্রিয়। গোষ্ঠীটি দারফুর ও কোরদোফান অঞ্চলে সক্রিয় একাধিক বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে অন্যতম হলেও চলমান যুদ্ধে কোনো পক্ষ নেয়নি।
এল-ফাশের বর্তমানে সেনাবাহিনী ও আরএসএফ-এর মধ্যকার ভয়াবহ সংঘর্ষের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। আর আশপাশের এলাকা থেকে পালিয়ে আসা বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর জন্য মারাহ পর্বতমালা একটি আশ্রয়কেন্দ্রে রূপ নিয়েছিল।
সুদানে চলমান সংঘাতে এখন পর্যন্ত ৪০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। আর ১ কোটি ৪০ লাখেরও বেশি মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। দুর্ভিক্ষের কারণে অনেক পরিবার বেঁচে থাকার জন্য ঘাস খেতে বাধ্য হচ্ছে।
জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, এই যুদ্ধে জাতিগত হত্যাযজ্ঞ ও ধর্ষণের মতো ভয়াবহ নৃশংসতা ঘটছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) জানিয়েছে, তারা যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ তদন্ত করছে।মারাহ পর্বতমালা ৩ হাজার মিটারেরও বেশি উচ্চতায় অবস্থিত একটি ইউনেস্কো স্বীকৃত বৈশ্বিক ঐতিহ্যবাহী স্থান। এটি আশেপাশের এলাকার তুলনায় শীতল ও বেশি বৃষ্টিপাতের জন্য পরিচিত।
দেশটিতে প্রতি বছর জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত মৌসুমি বর্ষায় শত শত মানুষের মৃত্যু হয়ে থাকে। তবে সাম্প্রতিক ভূমিধসটি ছিল সুদানের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে একটি।
৯৩ দিন আগে