জাকসু ভিপি প্রার্থী উজ্জল
শিক্ষার্থীদের অধিকার, আমাদের অঙ্গীকার: জাকসুর ভিপি প্রার্থী উজ্জল
দীর্ঘ ৩৩ বছরের অচলায়তন ভেঙে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১১ সেপ্টেম্বর। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা।
প্রতিশ্রুতি, প্যানেল গঠন ও নির্বাচনের সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ (বাগছাস) সমর্থিত ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’ প্যানেল থেকে মনোনীত ভিপি পদপ্রার্থী আরিফুজ্জামান উজ্জল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইউএনবির বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক যোবায়ের হোসেন জাকির।
আরিফুজ্জামান উজ্জল খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার মদিনাবাদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মো. আফজাল হোসেন এবং মাতা নাজমা খাতুন। তিনি কয়রা মদিনাবাদ মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং সরকারি মজিদ মেমোরিয়াল সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি সম্পন্ন করে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্কেটিং বিভাগে ভর্তি হন এবং তিনি বর্তমানে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত।
পড়ুন: জাকসু নির্বাচন: বাগছাসের জিএস প্রার্থী সিয়ামের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ
বিগত জুলাই আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তৎকালীন সময়ে উজ্জল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। সেইসঙ্গে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সমন্বয়ক ও আন্দোলনকারীদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেন। কখনো সামনে থেকে এবং কখনো পিছন থেকে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে তাকে।
এ ছাড়াও, উজ্জল ৫ আগষ্ট পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যৌক্তিক আন্দোলনগুলোতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে তিনি সর্বদা সোচ্চার ছিলেন। এর পাশাপাশি তিনি গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন।
উজ্জল ভিপি পদে নির্বাচিত হলে শিক্ষার্থীদের কথাগুলোই তার মুখ দিয়ে বলার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন।
প্যানেল গঠনের ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়নি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বস্তরের সচেতন শিক্ষার্থীদের নিয়ে ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’ নামে একটি ইনক্লুসিভ প্যানেল গঠন করেছি। এখানে এমন শিক্ষার্থীদেরই রাখা হয়েছে যারা দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে কাজ করে আসছেন এবং বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গণে নেতৃত্ব দিয়েছেন’।
নির্বাচনে নারীদের অনাগ্রহের বিষয়ে বলেন, দীর্ঘ ৩৩ বছর পর জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মূলত এত লম্বা সময় ক্যাম্পাসে নির্বাচনের কোনো পরিবেশ না থাকায় নারীদের অনাগ্রহের মূল কারণ বলে মনে হচ্ছে। এছাড়া, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে অনলাইনে নারীদের নিয়ে যে সমস্ত সাইবার বুলিং, ট্যাগিং, ফ্রেমিং করা হয়েছে, সেই জায়গা থেকেও এ নির্বাচনে নারীরা কিছুটা অনাগ্রহী।
পড়ুন: প্রতিশ্রুতি নয়, পরিবর্তনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ: জাকসুর ভিপি প্রার্থী শেখ সাদী
তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকে নারীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণে আগ্রহী করার জন্য জোড়ালো কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। এসব কারণেই হয়তো নির্বাচনে নারীদের অংশগ্রহণ তুলনামূলক কম। তবে আমরা চেষ্টা করেছি, আমাদের প্যানেলে নারীদের সর্বোচ্চ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে। এজন্য আমরা নারীদের জন্য সংরক্ষিত ৬টি আসনের পাশাপাশি অন্য যে সকল সম্পাদকীয় পদে নারী-পুরুষ উভয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে সেই পদগুলোতেও নারী প্রার্থী দিয়েছি।’
নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে এখন পর্যন্ত আমরা নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে দেখেছি। সেই জায়গা থেকে মনে হচ্ছে তারা বেশ স্বচ্ছতার সাথে কাজ করছে। ফলে তাদের বিষয়ে আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। আমরা আশা করছি এই নির্বাচন কমিশন একটি স্বচ্ছ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন উপহার দেবে।’
নির্বাচনের সামগ্রিক পরিবেশ নিয়ে বলেন, ‘নির্বাচনী পরিবেশ এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক রয়েছে। যেহেতু কোনো দলীয় সরকার ক্ষমতায় নেই, সেই জায়গা থেকে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার মতো কোনো পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত আমরা দেখছি না।’
শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর পর থেকেই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি। কেননা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর থেকেই আমরা সব সময় শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে তাদের পাশে থেকেছি, আন্দোলন করেছি। এ ছাড়া আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলে আকাঙ্খার কথাগুলো শুনছি, আমাদের অঙ্গীকারগুলো উপস্থাপন করছি। এতে তারা আমাদের আরও উৎসাহ প্রদান করছে।’
আপনি ভিপি নির্বাচিত হলে শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কি কি কাজ করবেন এর জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রথম কথা হচ্ছে ‘শিক্ষার্থীদের অধিকার, আমার অঙ্গীকার’। এছাড়া, শিক্ষা ও অবকাঠামো উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ, প্রশাসনিক স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, গবেষণা সহায়তা ও শিক্ষাবৃত্তি বৃদ্ধি, একাডেমিক অধিকার নিশ্চিতকরণ, মানসম্মত খাদ্য নিশ্চিত করা, শিক্ষার্থীবান্ধব রাজনীতি ও জাকসুর ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে চাই।’
পরিশেষে তিনি বলেন, ‘আমি যদি নির্বাচিত হতে পারি—তাহলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক পরিবেশ ফিরিয়ে এনে গবেষণাকর্মে অগ্রগামী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাতারে জায়গা করে নিতে আমরা প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণে সচেষ্ট হব।’
আগামী ১১ সেপ্টেম্বর রাজনৈতিক এবং স্বতন্ত্র মিলে মোট ৮ প্যানেলের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মনোনয়ন ফরম ৮১৩ জন সংগ্রহ করে জমা দেন ৭৪০ জন। এর মধ্যে বাতিল হয় ২১ জনের। চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে জাকসু নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ১৭৮ জন। আর হল সংসদসহ মোট প্রার্থী ৪৭৫ জন। বাকী প্রার্থীরা তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। তবে প্রার্থিতা ফিরে পেতে রিট করেছেন এক ভিপি প্রার্থী। রিটটি হাইকোর্টে এখন চলমান।
৮৭ দিন আগে