যুদ্ধবিরতি
যুদ্ধবিরতির পর গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ১৭৫
গাজা উপত্যকায় শুক্রবার সপ্তাহব্যাপী যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পরপরই ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ১৭৮ জন নিহত হয়েছেন। সেখানকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিষয়টি জানিয়েছে।
ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা হামাসের ২০০টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে।
গাজায় সশস্ত্র গোষ্ঠী ইসরায়েলের দিকে রকেট নিক্ষেপ শুরু করে এবং লেবাননের সঙ্গে ইসরায়েলের উত্তর সীমান্তে সক্রিয় ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহ সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে লড়াই শুরু হয়।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত ৩ যুবককে গুলি
যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতাকারী কাতার বলেছে, যুদ্ধবিরতি পুনর্নবীকরণের প্রচেষ্টা চলছে। যার ফলে ইসরায়েল গাজায় বেশিরভাগ সামরিক কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে এবং গাজায় আটক ১০০ জনেরও বেশি জিম্মিকে মুক্ত করার বিনিময়ে ৩০০ ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দিয়েছে।
ইসরায়েল বলছে, ১১৫ জন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ, ২০ জন নারী ও ২ শিশু এখনো বন্দী রয়েছে।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কয়েক সপ্তাহ ধরে ইসরায়েলি বোমাবর্ষণ এবং স্থল অভিযানের ফলে গাজার ২ দশমিক ৩ মিলিয়ন বাসিন্দার তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি গৃহহীন হয়ে পড়েছে। এতে খাদ্য, পানি এবং অন্যান্য সরবরাহের ব্যাপক ঘাটতির কারণে সেখানে মানবিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
আরও পড়ুন: গাজায় 'অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধের' আহ্বান ইইউ'র
সম্ভাব্য ব্যাপক অনুপ্রবেশের আগে গাজায় স্থল অভিযান ইসরায়েলি সেনাদের
গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে জি-২০ নেতাদের প্রতি আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য দ্রুত ও নির্বিঘ্নে মানবিক ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার জন্য যৌথভাবে আহ্বান জানানোর জন্য জি-২০ নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার (২২ নভেম্বর) সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি জি-২০ নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চলতি মাসে ভারতের সভাপতিত্ব শেষ করার আগে দিল্লি ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনার জন্য ভার্চুয়ালি জি-২০ নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন।
আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মেক্সিকো, রাশিয়া, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ ১৯টি দেশের সমন্বয়ে গঠিত জি-২০ আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার ফোরাম।
ফোরামে স্পেনকে স্থায়ী অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয় এবং বাংলাদেশ, মিশর, মরিশাস, নেদারল্যান্ডস, নাইজেরিয়া, ওমান, সিঙ্গাপুর এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতকে অতিথি দেশ হিসেবে আমন্ত্রণ করে ভারত।
আরও পড়ুন: নয়াদিল্লিতে জি-২০ সম্মেলন: বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
শেখ হাসিনা বলেন, দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে বিশ্ব ফিলিস্তিনে হাজার হাজার নারী-পুরুষ এবং ১০ হাজারেরও বেশি নিরীহ শিশুকে নির্মমভাবে গণহত্যা প্রত্যক্ষ করছে।
তিনি বলেন, 'এই সব দানবীয় কর্মকাণ্ড বিশ্বকে স্তম্ভিত করে দিয়েছে, বৈশ্বিক দুর্দশাকে তীব্রতর করেছে এবং বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে ধীর করে দিয়েছে।’
তিনি আরও উল্লেখ করেন, নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে ইউরোপের বর্তমান যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী মানবিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতি করেছে এবং এটি অব্যাহত রয়েছে।
তিনি বলেন, 'আজকের বিশ্বায়নের যুগে মানুষের জীবন ও মানবতা রক্ষার জন্য সব যুদ্ধ ও সংঘাতকে দৃঢ়ভাবে 'না' বলা সহজ হবে।’
এ প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন , একটি ভাল শুরু হতে পারে সুপ্রতিবেশী সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং বিশ্বজুড়ে এটির প্রসার ঘটানো।
তিনি বলেন, 'প্রতিবেশী কূটনীতির রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃত বাংলাদেশ ও প্রতিবেশী ভারতের চমৎকার সম্পর্কের প্রতি আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরে আমি আনন্দিত।’
আরও পড়ুন: পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমেই মানুষ ও পৃথিবীর অস্তিত্ব টিকে থাকতে পারে: জি-২০ সম্মেলনে শেখ হাসিনা
তিনি বলেন, প্রতিবেশীদেশগুলো অবশ্যই বন্ধুত্বপূর্ণ সংলাপের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে পারে। বাংলাদেশ ও ভারত তাদের সমুদ্র ও স্থল সীমান্ত দিয়ে সেটি প্রমাণ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ একটি শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ বিশ্বের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তিনি বলেন, 'আমাদের বৈশ্বিক পরিবারের সবার কল্যাণ নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই চেতনায় বাংলাদেশ থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের ১০ লাখেরও বেশি নাগরিককে (রোহিঙ্গা) মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে আমি আপনাদের আন্তরিক সমর্থন কামনা করছি।’
তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে দেশগুলো যে সব অঙ্গীকার করেছে তা ফলপ্রসূ হবে এবং তা বাস্তবায়িত হবে এবং সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপে রূপান্তরিত হবে।
তিনি বলেন, 'আমি বিশ্বাস করি, শীর্ষ সম্মেলনের প্রতিপাদ্য 'এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যত' আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত স্থান,পৃথিবী গ্রহের যত্ন নিতে, সুরক্ষিত করতে এবং গড়ে তুলতে অনুপ্রাণিত করবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর উন্নয়ন চাহিদা, বিশেষ করে জলবায়ু পদক্ষেপ, প্রযুক্তিগত রূপান্তর, ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার এবং নারী নেতৃত্বাধীন উন্নয়ন সম্পর্কিত দেশগুলোর উন্নয়ন চাহিদা পূরণে বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংকগুলোকে শক্তিশালী করতে নয়া দিল্লীতে নেতারা একমত হওয়ায় তিনি আনন্দিত।
আরও পড়ুন: জি-২০ সম্মেলনে শেখ হাসিনার সঙ্গে বাইডেনের সেলফি
গত সেপ্টেম্বরে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত ১৮তম জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে সব সদস্যদের সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত দিল্লি ঘোষণা বাস্তবায়নে উৎসাহিত করাই এই বৈঠকের লক্ষ্য।
গত ১০ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লি শীর্ষ সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে মোদী ঘোষণা করেছিলেন যে ভারত একটি ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করবে।
আফ্রিকান ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ জি-২০ দেশগুলোর নেতারা, ৯টি অতিথি দেশ এবং ১১টি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানদের এই বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
১ ডিসেম্বর ভারত জি-২০-এর সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করে।
ভারত ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত জি-২০ সভাপতির দায়িত্ব পালন করবে। ২০২৪ সালে ব্রাজিলের জি-২০ সম্মেলনে ভারত, ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে জি-২০ ত্রয়ীকা গঠিত হবে।
আগামী মাসে ব্রাজিল যখন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করবে, তখন নতুন ত্রয়িকা গঠন করা হবে, যেখানে ভারতের সভাপতির মেয়াদ শেষ হবে দায়িত্ব নেবে ব্রাজিল এবং এর পরের মেয়াদে সভাপতি হবে দক্ষিণ আফ্রিকা।
জি-২০ সদস্যরা বৈশ্বিক জিডিপির প্রায় ৮৫ শতাংশ, বৈশ্বিক বাণিজ্যের ৭৫ শতাংশ এবং বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের প্রতিনিধিত্ব করে।
আরও পড়ুন: বিএনপি-জামায়াত মানুষ পুড়িয়ে ক্ষমতায় যেতে চায়: প্রধানমন্ত্রী
জাতিসংঘের বৈঠকে গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে হামাসকে ধ্বংস করার অঙ্গীকার ইসরাইলের
মঙ্গলবার জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে জাতিসংঘ প্রধান, ফিলিস্তিনি এবং অনেক দেশের যুদ্ধবিরতির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে ইসরায়েল হামাসকে ধ্বংস করার শপথ নিয়েছে এবং ঘোষণা করেছে- গাজায় যুদ্ধ কেবল তাদের যুদ্ধ নয়, বরং ‘মুক্ত বিশ্বের যুদ্ধ’।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলি কোহেনও একই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
উল্লেখ্য, ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের আকস্মিক হামলায় ১ হাজার ৪০০ জন নিহত হয় এবং তারপর থেকে গাজায় ৫ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
কোহেন প্রশ্ন করেন, ‘আমাকে বলুন, শিশু হত্যা, নারীদের ধর্ষণ ও পুড়িয়ে মারা, শিশুর শিরশ্ছেদ করার জন্য ‘সমানুপাতিক’ প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে? আপনারা কীভাবে এমন একজনের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে পারেন যিনি আপনাদের নিজের অস্তিত্বকে শেষ করার শপথ নিয়েছেন?’
আরও পড়ুন: রাফাহ সীমান্ত দিয়ে ঢুকল সহায়তা বহনকারী তৃতীয় চালান, ২ ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি হামাসের
কোহেন ৭ অক্টোবরের হামলাকে ‘চরমপন্থার’ বিরুদ্ধে সমগ্র মুক্ত বিশ্বের জন্য জেগে ওঠার আহ্বান জানান এবং হামাসকে পরাজিত করতে সভ্য বিশ্বকে ইসরায়েলের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
এবং তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, আজ ইসরায়েল এবং আগামীকাল হামাস ও হামলাকারীরা পশ্চিমা থেকে শুরু করে সবার দোরগোড়ায় থাকবে।
কোহেন কাতারের বিরুদ্ধে হামাসকে অর্থায়নের অভিযোগ এনে বলেন, ইসরায়েল থেকে নেওয়া ২০০ জনেরও বেশি জিম্মিদের ভাগ্য, যাদের কয়েকজন পরিবার জাতিসংঘের বৈঠকে এসেছিল, তাদের ভাগ্য তার আমিরের হাতে ছিল।
ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ আল মালিকি ইসরায়েলি হামলা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: সিরিয়া-অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের হামলা, গাজায় পৌঁছেছে ত্রাণের দ্বিতীয় বহর
তিনি বলেন, ‘আমরা আজ এখানে এসেছি হত্যা বন্ধ করতে, থামাতে… ফিলিস্তিনি বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে দখলদার শক্তি ইসরাইল কর্তৃক পরিকল্পিতভাবে এবং নৃশংসভাবে চলমান গণহত্যা চালানো হচ্ছে।’
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এগুলো বন্ধ করা আমাদের সম্মিলিত মানবিক দায়িত্ব।
আল-মালিকি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, আরও হামলা, হত্যা, অস্ত্র ও জোট ইসরাইলকে নিরাপদ করবে না, ‘কেবলমাত্র শান্তিই করবে।’
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস কয়েক দশকের পুরনো ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত নিয়ে মাসিক বৈঠকের উদ্বোধন করেন, যা একটি বড় ইভেন্টে পরিণত হয়েছে এবং যুদ্ধের মূল পক্ষের মন্ত্রী এবং আরও এক ডজন দেশের মন্ত্রীরা নিউ ইয়র্কে গেছেন এবং সতর্ক করেছেন যে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি দিন দিন আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে।
আরও পড়ুন: ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধে মার্কিনিরা হামলার শিকার হলে জবাব দিতে প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র: ব্লিঙ্কেন-অস্টিনের হুঁশিয়ারি
অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও মানবিক সহায়তার আহ্বান জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞের
স্বাস্থ্যের অধিকার সম্পর্কিত জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক তলালেং মোফোকেং মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) বলেছেন, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ক্রমাগত সহিংস বাস্তুচ্যুতি ও হামলার হুমকি একটি বড় জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি এবং জরুরি অবস্থা সৃষ্টি করেছে।
এই অঞ্চলে সহিংসতা বৃদ্ধির পর থেকে কমপক্ষে ১২জন স্বাস্থ্যকর্মী নিহত এবং ২৪ স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার জেরে তিনি এসব কথা বলেন।
মোফোকেং বলেন, ‘সংঘাতে জড়িত সব পক্ষ এবং তাদের আন্তর্জাতিক অংশীদারদের অবশ্যই দ্রুত ও নিরবচ্ছিন্নভাবে খাদ্য, পানীয়, ওষুধ, জ্বালানি ও বিদ্যুৎসহ প্রয়োজনীয় মানবিক পরিষেবাগুলোর সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘গাজার চিকিৎসা অবকাঠামোগুলোর অপূরণীয়ভাবে ক্ষতি হয়েছে এবং স্বাস্থ্য সেবাকারীরা চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবসহ একটি ভয়ানক পরিস্থিতিতে কাজ করছে।’
এই বিশেষজ্ঞ বলেছেন, ‘মানবতাবাদী কর্মী, চিকিৎসক, সুশীল সমাজ, মানবাধিকার সংস্থা ও সাংবাদিকরা এই অঞ্চলে বোমাবর্ষণের মধ্যেও কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।’
অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবাগুলোতে ১১১ টিরও বেশি হামলার নথিভুক্ত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। যার মধ্যে গাজা উপত্যকায় ৪৮টি হামলা করা হয়েছে, এর ফলে কমপক্ষে ১২ জন স্বাস্থ্যকর্মীর মৃত্যু হয়েছে।
মোফোকেং বলেছেন, গাজায় খাদ্য, পানীয়, জ্বালানি, ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জামসহ প্রয়োজনীয় সরবরাহের প্রবেশে বাধা দিচ্ছে ইসরায়েল।
তিনি বলেন, ‘গাজা উপত্যকা ক্রমাগত বোমাবর্ষণ ও ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের সম্মুখীন হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশটির স্বাস্থ্যখাত সহনসীমার চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।’
আরও পড়ুন: গাজার দক্ষিণাঞ্চলে শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ৪০ ফিলিস্তিনি
মোফোকেং মানবিক করিডোরের মাধ্যমে সরবরাহ এবং স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামো ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষার দাবি করে সংঘাতের বৃদ্ধি রোধ করতে এবং সকলের স্বাস্থ্যের অধিকার রক্ষা ও সম্মান করার জন্য অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোর জন্য খাদ্য, পানীয়, আশ্রয়, জ্বালানি, জরুরি স্বাস্থ্যসেবা, মনোসামাজিক সহায়তা এবং প্রাথমিক চিকিৎসার জরুরি সরবরাহ প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ইসরায়েল ও অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে সাম্প্রতিক আগ্রাসন বৃদ্ধিকে অবশ্যই উপক্ষো করা উচিত নয়। দখলদারিত্বের পর থেকে প্রতিদিন ফিলিস্তিনিদের উপর চলমান স্থূল কাঠামোগত, পদ্ধতিগত ও দীর্ঘমেয়াদি সহিংসতার একটি নিষ্পেষণ মুহূর্তকে প্রতিনিধিত্ব করে এটি।’
মোফোকেং বলেন, ‘আমি অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং সদস্য দেশগুলোকে যুদ্ধের দামামা বাজানো বন্ধ করার আহ্বান জানাই।’
তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনি জনগণ ৭৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডটি ৫৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে সামরিক দখলে রয়েছে। এই দখলদারিত্বের ফলে জবাবদিহিতার অভাব, চলমান স্থানচ্যুতি ও ধ্বংস, চলাচলে নিয়ন্ত্রণ এবং পদ্ধতিগত জাতিগত বৈষম্য প্রভৃতি ঘটেছে।’
এই বিশেষজ্ঞ স্মরণ করেন, জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো ২০০৯ থেকে ২০২৮ সালকে ‘শান্তির দশক’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সব দেশের সার্বভৌম সমতা এবং তাদের আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতার প্রতি সম্মান বজায় রাখার জন্য তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।
তিনি বলেন, ঘোষণাটি সংঘাত প্রতিরোধ করে এবং এর মূল কারণগুলোকে সমাধান করে শান্তি বজায় রাখার জন্য একটি বিস্তৃত পরিকল্পনা গ্রহণ করাকে সমর্থন করে।
মোফোকেং বলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার আদায়ের পদক্ষেপ তাদের মর্যাদা ও সার্বভৌমত্বের সঙ্গে জড়িত। আপনারা মানুষের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে নিভিয়ে দিতে পারবেন না।’
আরও পড়ুন: ইসরায়েল-হামাস দ্বন্দ্ব বিশ্ব অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা বাড়াচ্ছে: আইএমএফ প্রধান
সিরিয়ার আলেপ্পো বিমানবন্দরে ফের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি ও শান্তি আলোচনার আহ্বান চীনের
এবার রাশিয়ার পরিক্ষিত মিত্র চীন; ইউক্রেন ও মস্কোর মধ্যে যুদ্ধবিরতি এবং সংঘাতের অবসানের জন্য ১২-দফা প্রস্তাবের ভিত্তিতে শান্তি আলোচনা শুরু করার আহ্বান জানিয়েছে।
শুক্রবার সকালে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা পরিকল্পনায় রাশিয়ার ওপর আরোপিত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার অবসান, পারমাণবিক স্থাপনার সুরক্ষা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা, বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নেয়ার জন্য মানবিক করিডোর স্থাপন এবং বিশ্বব্যাপী খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির মোকাবিলায় শস্য রপ্তানি নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নেয়ারও আহ্বান জানিয়েছে।
চীন এই সংঘাতে নিরপেক্ষ থাকার দাবি করেছে, তবে রাশিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্কের ‘হ্রাস’ করতে এবং ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের সমালোচনা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
এমনকি চীন পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে সংঘাতে উসকানি দেয়ার অভিযোগ এনেছে এবং বলেছে তারা মূলত ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ করে এই সংঘাতকে টিকিয়ে রেখেছে।
মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের বিরোধীতা করতে গিয়ে ক্রমেই চীন ও রাশিয়ার বৈদেশিক সম্পর্ক বৃদ্ধি পেয়েছে।
চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এই সপ্তাহে মস্কো সফরের সময় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাতের সময়ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কগুলো শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
আরও পড়ুন: ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে জাতিসংঘে প্রস্তাব পাশ: বাংলাদেশসহ ৩২টি দেশ ভোট দেয়নি
অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে যে তারা সম্ভবত রাশিয়াকে সামরিক সহায়তা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে এ বিষয়ে তারা কোনও প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
চীনের এই অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে তার দেয়া ১২-দফা প্রস্তাব নিয়ে শান্তি আলোচনা এগিয়ে নেয়ার কোনও আশা আছে কিনা- বা চীনকে নিরপেক্ষ ভাবা হচ্ছে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে।
প্রস্তাবটি প্রকাশের আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছেন।
তিনি স্পেনের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শুক্রবার একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘চীন যে ইউক্রেনের শান্তির পক্ষে কথা বলা শুরু করেছে, আমি এটিকে খারাপ মনে করি না। আমাদের জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ যে সমস্ত দেশ আমাদের অর্থাৎ ন্যায়বিচারের পক্ষে আসছে।’
মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র নেড প্রাইস বৃহস্পতিবার বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই বিষয়ে আলোচনা করবে, তবে রাশিয়ার সঙ্গে চীনের সম্পর্কের ধরনই বলে দেয় যে চীন এ ক্ষেত্রে কোনওভাবেই একটি নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একটি ন্যায্য এবং টেকসই শান্তি ছাড়া আর কিছুই চাই না ... তবে এই প্রস্তাবগুলো নিরপেক্ষ ও গঠনমূলক হবে কিনা এ বিষয়ে আমরা সন্দিহান।’
শান্তি প্রস্তাবে প্রধানত সব দেশের ‘সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা কার্যকরভাবে নিশ্চিত করার’- প্রয়োজনীয়তার উল্লেখসহ দীর্ঘকাল ধরে থাকা চীনা অবস্থানের বিষয়ে বিস্তারিত বলা হয়েছে।
এটিকে ‘স্নায়ু যুদ্ধের মানসিকতার’- অবসানও বলা হয়েছে। যেটি মার্কিন আধিপত্য এবং অন্যান্য দেশে হস্তক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করার জন্য এটি একটি আদর্শ শব্দ।
আরও পড়ুন: জাতিসংঘের খসড়া রেজ্যুলেশন: ইউক্রেনের শান্তি নিশ্চিত করতে হবে
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘একটি দেশের নিরাপত্তার বিনিময়ে অন্য একটি দেশ নিরাপত্তা পেতে পারে না এবং সামরিক ব্লকগুলোকে শক্তিশালী করে বা সম্প্রসারণের মাধ্যমে আঞ্চলিক নিরাপত্তা রক্ষা করা যায় না।’
এতে আরও বলা হয়েছে, ‘সব দেশেরই যৌক্তিকভাবে নিরাপত্তা স্বার্থ ও উদ্বেগগুলোকে গুরুত্ব সহকারে নেয়া উচিত এবং সঠিকভাবে তা সমাধান করা উচিত।’
বৃহস্পতিবার চীন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ এবং রাশিয়ার প্রতি ইউক্রেন থেকে সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে পাশ হওয়া প্রস্তাবে ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকে।
চীন সেই ১৬টি দেশের মধ্যে একটি, যারা জাতিসংঘে ইউক্রেনের পক্ষে তোলা আগের পাঁচটি প্রস্তাবের প্রায় সবকটির বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে বা ভোট দেয়ায় বিরত থেকেছে।
ইউক্রেন তার মিত্রদের সঙ্গে পরামর্শ করে এবারের প্রস্তাবটির খসড়া তৈরি করেছে। ১৪১টি দেশ এ প্রস্তাবের পক্ষে এবং ৭টি দেশ এর বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। এসময় ৩২টি দেশ ভোট দেয়ায় বিরত ছিল।
যদিও চীন খোলাখুলি মস্কোর সমালোচনা করেনি, তবে তারা বলেছে যে সংঘাত তাদের ‘কাম্য নয়’ এবং বারবার বলেছে যে কোনওভাবেই পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার গ্রহণযোগ্য হতে পারেনা।
এটি মূলত পুতিনের বক্তব্যের প্রতিউত্তরে বলা হয়েছে।
কেননা এর আগে পুতিন তার বক্তব্যে বলেছে, রাশিয়া তার ভূখণ্ড রক্ষা করার জন্য ‘সব ধরনের উপায়’- ব্যবহার করবে।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘যুদ্ধে কেউই বিজয়ী হয়না।’
এতে আরও বলা হয়েছে, ‘সকল পক্ষের উচিত যুক্তিবোধ এবং সংযম বজায় রাখা... রাশিয়া ও ইউক্রেনের সমঝোতায় সমর্থন করা, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পুনরায় সরাসরি সংলাপ শুরু করা, ধীরে ধীরে সংঘাতের পরিস্থিতি হ্রাসের চেষ্টা করা এবং যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্তে পৌঁছানো।’
আরও পড়ুন: রাশিয়ার নিকট যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ দাবির জাতিসংঘের প্রস্তাবে ভোট দেয়নি বাংলাদেশ
গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত ফিলিস্তিন-ইসরায়েল
তিন দিনের সহিংস সংঘর্ষের পর রবিবার রাতে ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী একটি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।
মিশরের মধ্যস্থতায় রাত সাড়ে ১১টার দিকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে ইসরায়েলি এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীর রকেট হামলা অব্যাহত ছিল।
ইসরায়েল জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করা হলে তারা ‘কঠোরভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে’।
গত শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি বিমান গাজায় লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করছে। অপরদিকে ইরান-সমর্থিত ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী ইসরায়েলে শত শত রকেট নিক্ষেপ করেছে।
ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ জনে। এছাড়া আহত হয়েছেন ২০০ শতাধিক মানুষ।
ইসরায়েল শুক্রবার ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীর একজন নেতার ওপর হামলার মাধ্যমে তাদের অভিযান শুরু করে। শনিবার আরেকজন শীর্ষ নেতার ওপর আরেকটি হামলা চালায়।
সশস্ত্র গোষ্ঠীর দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা কমান্ডার খালেদ মনসুর শনিবার গভীর রাতে দক্ষিণ গাজার রাফাহ শরণার্থী শিবিরের একটি অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ে বিমান হামলায় নিহত হন। এসময় আরও দুই জঙ্গি এবং পাঁচজন বেসামরিক লোক নিহত হয়।
গত বছর গাজায় ইসরায়েল এবং হামাসের ১১ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর সর্বশেষ এ ধরনের হামলার ঘটনা ঘটল।
পড়ুন: ক্রোয়েশিয়ায় বাস দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহত
ভারতে মন্দিরে পদদলিত হয়ে নিহত ৩
ফের যুদ্ধবিরতির ঘোষণা রাশিয়ার
বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে সুযোগ দেয়ার জন্য তৃতীয় বারের মতো মানবিক করিডোর ঘোষণা করেছে রাশিয়া।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মাধ্যমের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি বুধবার এ তথ্য জানিয়েছে।
রাশিয়ার স্থানীয় সময় সকাল ১০টা (বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টা) থেকে এই করিডোর কার্যকর হবে।
কিয়েভ, চেরনিহিভ, সুমি, খারকিভ, মারিউপোল শহরের বাসিন্দারা নিরাপদ করিডোর ব্যবহারের সুযোগ পাবেন।
এই সপ্তাহে তৃতীয়বারের মতো এ ধরনের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে মস্কো।
ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গতকালের যুদ্ধবিরতিতে তারা সুমি শহর থেকে পাঁচ হাজার মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
তবে চেরনিহিভ শহরে রাশিয়ার গোলা হামলার কারণে এ ধরনের উদ্যোগ ভেস্তে গেছে।
পড়ুন: রাশিয়া থেকে তেল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা বাইডেনের
এদিকে, রাশিয়া থেকে তেল আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
তেল আমদানি বন্ধের ফলে মার্কিনিরাও সমস্যায় পড়বে বলে বাইডেন স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা রক্ষার জন্য মূল্য দিতে হচ্ছে আমাদের।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘পুতিন যে যুদ্ধে জড়িয়েছেন আমরা সেই যুদ্ধে ভর্তুকি দেয়ার অংশ হব না।’
পড়ুন: ২০ লাখ শরণার্থী ইউক্রেন থেকে পালিয়েছে: জাতিসংঘ
কিয়েভসহ ইউক্রেনের ৪ শহরে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা রাশিয়ার
সাধারণ নাগরিকদের নিরাপদে শহর ছাড়ার সুযোগ দিতে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভসহ চারটি শহরে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে রাশিয়া।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আরআইএ নভোস্তি এই তথ্য প্রকাশ করেছে।
এতে বলা হয়, যুদ্ধের ১২তম দিন সোমবার সকালে যুদ্ধবিরতি শুরু হবে। রাজধানী কিয়েভ ছাড়াও অন্য তিনটি শহর হচ্ছে দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভ, মারিউপোল এবং সুমি।
বিবৃতি অনুযায়ী, উল্লিখিত অঞ্চলগুলোর বাইরে যুদ্ধ বন্ধ থাকবে কি না বা কখন যুদ্ধবিরতি শেষ হবে তা তাৎক্ষণিকভাবে পরিষ্কার ছিল না।
ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর অনুরোধে যুদ্ধবিরতি এবং করিডোর খোলার ঘোষণা করা হয়েছে বলে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। এর আগে রবিবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে কথা বলেন ম্যাক্রোঁ।
যুদ্ধবিরতির ফলে বেসামরিক লোকেরা রাশিয়া এবং বেলারুশে যেতে পারেবে। এছাড়া মানবিক করিডোর খুলে দেবে রাশিয়ান সামরিক বাহিনী।
পড়ুন: আবাসিক এলাকায় গোলাবর্ষণ জোরদার করেছে রাশিয়া, অভিযোগ ইউক্রেনের
এদিকে, রুশ সামরিক বাহিনী ইউক্রেনের উত্তর ও দক্ষিণের শহরগুলোর আবাসিক এলাকায় গোলাবর্ষণ জোরদার করেছে বলে একজন ইউক্রেনীয় কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা ওলেক্সি আরেস্তোভিচ বলেছেন, রবিবার গভীর রাতে কিয়েভের উপকণ্ঠ উত্তরে চেরনিহিভ, দক্ষিণে মাইকোলাইভ এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে ব্যাপক গোলাবর্ষণ হয়েছে।
স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছে, ভারি কামান খারকিভের আবাসিক এলাকায় আঘাত করেছে এবং গোলাবর্ষণে একটি টেলিভিশন টাওয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তার দেশের জনগণকে লড়াই অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
অপরদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আক্রমণের জন্য ইউক্রেনকে দায়ী করে বলেছেন, মস্কোর আক্রমণ বন্ধ করা যেতে পারে ‘কেবল কিয়েভ যদি শত্রুতা বন্ধ করে।
পড়ুন: দ্বিতীয়বারের মতো যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত ভেস্তে গেছে: ইউক্রেন
দ্বিতীয়বারের মতো যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত ভেস্তে গেছে: ইউক্রেন
ইউক্রেনের মারিউপোল শহরে দ্বিতীয়বারের মতো যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত ব্যর্থ হয়েছে। রবিবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকার কথা ছিল।
একজন রুশ কর্মকর্তা বলেন, রাশিয়ার অব্যাহত গোলাবর্ষণের কারণে এক সপ্তাহ ধরে অবরুদ্ধ শহর মারিউপোল থেকে বেসামরিক লোকদের সরিয়ে নেয়ার দ্বিতীয় প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আন্তন গেরাশচেঙ্কো বলেছেন, চলমান রুশ হামলার কারণে বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নেয়ার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
শনিবারও মারিউপোল এবং প্রতিবেশি ভলনোভাখা শহরের জন্য যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়েছিল। যদিও তা শেষ পর্যন্ত ভেস্তে গিয়েছিল। রুশ বাহিনীর অব্যাহত গোলাবর্ষণ এবং বিমান বোমা হামলার জন্য বাসিন্দারা শেষ পর্যন্ত অন্যত্র যেতে পারেন নি।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে চীন: ইউক্রেন যুদ্ধের আগুনে ঘি দিয়েন না
এদিকে ইউক্রেনের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা বলেছে, রুশ বাহিনী খারকিভ শহরের একটি পদার্থবিদ্যা ইনস্টিটিউটে রকেট নিক্ষেপ করেছে। এটিতে পারমাণবিক উপাদান এবং একটি চুল্লি রয়েছে।
নিরাপত্তা সংস্থা বলেছে, পারমাণবিক স্থাপনায় এ ধরনের হামলা ‘বড় আকারের পরিবেশগত বিপর্যয়’ এর কারণ হতে পারে।
ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির জেলেনস্কি ইউক্রেনের ওপর একটি নো-ফ্লাই জোন কার্যকর করার জন্য তার পশ্চিমা মিত্রদের আবারও অনুরোধ করেছেন। তবে ন্যাটো এখন পর্যন্ত এই প্রস্তাব প্রত্যাখান করে বলেছে, এই ধরনের পদক্ষেপের কারণে রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমারা সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে।
রবিবারও এক ভিডিও বার্তায় জেলেনস্কি বলেছেন, ‘বিশ্ব আমাদের আকাশ অবরুদ্ধ করার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী।’
অন্যদিকে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শনিবার সতর্ক করে বলেছেন, ইউক্রেনের আকাশসীমা বন্ধ করার তৃতীয় পক্ষের নেয়া পদক্ষেপকে, মস্কোর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত বলে বিবেচনা করবে রাশিয়া।
আরও পড়ুন: এবার রাশিয়ার বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুরের নিষেধাজ্ঞা
ইউক্রেনে যুদ্ধ: নো-ফ্লাই জোন প্রত্যাখ্যানের জন্য ন্যাটোর নিন্দা জেলেনস্কির
ইউক্রেনের ২ শহরে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা রাশিয়ার
ইউক্রেনের দুটি শহরে বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নিতে শনিবার থেকে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া। রুশ রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থাগুলোর বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে এপি।
শহর দুটি হলো- ইউক্রেনের দক্ষিণ-পূর্বের কৌশলগত বন্দর মারিউপোল ও পূর্বাঞ্চলের ভলনোভাখার।
আরও পড়ুন: রাশিয়ায় বিবিসিসহ একাধিক বিদেশি গণমাধ্যম নিষিদ্ধ
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতির বরাত দিয়ে দেশটির বার্তা সংস্থা আরআইএ নভোস্তি ও তাস জানিয়েছে, শহর দুটি থেকে বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নিতে অপসারণ রুটের বিষয়ে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্মত হয়েছে রাশিয়া।
তবে তাৎক্ষনিকভাবে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর কাছ থেকে এটি নিশ্চিত করা যায়নি এবং এ অপসারণ রুট কতদিন খোলা থাকবে তাও স্পষ্ট না।
আরও পড়ুন:পুতিনের বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইবুনাল চায় ইউক্রেন