ঢাকার শান্তিনগর এলাকার একটি কনডোমিনিয়াম অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দা আফজাল হোসেন। বিস্তৃত এই বহুতল ভবনে মেলে দৈনন্দিন সব সেবা; ব্যবসায়ী আফজালের ইচ্ছা ছেলে-মেয়েদের জন্য আগামীতে এমনই আরেকটি কনডোমিনিয়ামে কিনবেন আরেকটি ফ্ল্যাট।
এক বা একাধিক ফ্ল্যাট মালিক হওয়ার স্বপ্ন আফজালের একার নয়; ঢাকার বেশিরভাগ উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের প্রধান স্বপ্ন রাজধানীতে নিজের একটি ফ্ল্যাট। মধ্যবিত্তের এ স্বপ্ন পূরণে নব্বইয়ের দশক থেকে এখন পর্যন্ত রাজধানীতে গড়ে উঠেছে শত শত আবাসন কোম্পানি, যাদের মূল লক্ষ্য বেশি বেশি সুউচ্চ ভবন তুলে ফ্ল্যাট তৈরি করে সামর্থ্যবান মধ্যবিত্তদের ফ্ল্যাট মালিক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করা এবং নিজেদের সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জন করা।
আবাসন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন জমির মালিকেরা; নিজেদের ভবন তোলার সামর্থ্য না থাকলেও ভবনের অর্ধেক মালিকানা পাওয়ার স্বপ্ন তাদের।
জাতীয় তথ্য বাতায়নের হিসাব অনুযায়ী, ঢাকা মহানগরের আয়তন ৩৬০ বর্গকিলোমিটার এবং ২০১৬ সালে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দুই সিটি করপোরেশন মিলিয়ে ঢাকার আয়তন ২৭০ বর্গকিলোমিটার। বাংলাদেশের মোট আয়তনের তুলনায় ঢাকার আয়তন ১ শতাংশের নিচে। অথচ এই আয়তনে মোট মানুষের বাস প্রায় ২ কোটি। এতে করে ঢাকায় প্রতি বর্গকিলোমিটারে বসবাসরত মানুষের সংখ্যা ৫০ হাজারের বেশি।
এই বিশাল সংখ্যক মানুষের আবাসনের চাহিদা পূরণ করতে গত তিন দশক ধরে ঢাকায় গড়ে উঠছে একের পর এক সুউচ্চ অট্টালিকা। রাজউকের হিসাব অনুযায়ী, ঢাকা শহরে ভবন সংখ্যা ২ লাখের মতো। কিন্তু পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, দুই সিটি করপোরেশনে মোট ভবন ৬ লাখের বেশি এবং প্রতি বছরই বাড়ছে এ সংখ্যা।
যদিও পরিকল্পনা থেকে অনেক দূরে ঢাকা, তবু একেবারে বসবাস অযোগ্য অবস্থা থেকে ঢাকাকে বাঁচাতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে রাজউকের পক্ষ থেকে নেওয়া হয় বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ)। তিন বছর পেরিয়ে গেলেও আলোর মুখ দেখেনি নতুন এ পরিকল্পনা — চলছে বাকবিতণ্ডা ও নানা ধরনের সংশোধনী খসড়া প্রস্তাব।
ড্যাপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ রাস্তার আকার ও জমির আয়তনের ওপর ভিত্তি করে ভবনের উচ্চতা নির্ধারণ, সে অনুযায়ী যে-সব এলাকায় রাস্তা ছোট সেখানে ভবনের আকারও ছোট হবে।
তবে ড্যাপের এই ফ্লোর এরিয়া রেশিও (এফএআর) মানেনি আবাসন প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা। সর্বশেষ ড্যাপ সংশোধন করে এরিয়া রেশিও বাড়ানোর দাবিতে মে মাসে রাজউক ঘেরাও করেছেন তারা। অনেকটাই তাদের চাপেই ড্যাপ সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজউক — এমনটাই দাবি পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনকারী ও পরিকল্পনাবিদদের।
পড়ুন: মূল ভূখণ্ডের ২০ শতাংশে উন্নীত করা হবে বনভূমি: পরিবেশ উপদেষ্টা