জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রধান সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর একটি ফেসবুক পোস্টকে ‘যাচাইবিহীন ও মানহানিকর’ বলে অভিহিত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) রাতে দুদকের জনসংযোগ শাখার উপপরিচালক মো. আখতারুল ইসলামের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি করা হয়।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দুদকের নজরে আসা পোস্টটিতে কমিশনের মহাপরিচালকসহ অন্যান্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যাচাইবিহীন ও মানহানিকর বক্তব্য রয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, দুদক কর্মকর্তার পরিচয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন, এমন কিছু ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দায় চাপিয়ে দিচ্ছেন কমিশনের ওপর যা সংস্থার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে বলে দাবি করা হয়।
একটি প্রতারক চক্র দুদক চেয়ারম্যান, মহাপরিচালক কিংবা অন্য কর্মকর্তাদের নাম ব্যবহার করে মানুষকে প্রতারণা করছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করে দুদক।
দুদক জানায়, দুর্নীতির মামলায় ‘ক্লিয়ারেন্স’ করিয়ে দিতে পারে বলে দাবি করেছে প্রতারকরা। তবে দুদকের এসব প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই।
ইতোমধ্যে এই চক্রের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।
এর আগে, এনসিপির নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশে দুদকের চা খাওয়ার বিল ১ লাখ টাকা। আপনার নামে দুর্নীতির কোনো অভিযোগ না থাকলেও সেটার ক্লিয়ারেন্স নিতে আপনাকে ১ লাখ টাকা দিতে হবে। সম্প্রতি মাহমুদা মিতুর কাছে থেকে এই টাকা চাওয়া হয়েছে দুদকের ডিজি আকতার আর তার ডিডি পরিচয়ে। মাহমুদা মিতুকে বলা হয়, আপনি একজন ডাক্তার, আপনার তো টাকাপয়সার অভাব থাকার কথা না। আপনি এক লাখ টাকা দিয়ে ক্লিয়ারেন্স নিয়ে যান।’
আরও পড়ুন: দুদক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়া যায় না: চেয়ারম্যান
হাসনাত পোস্টে আরও লেখেন, ‘দুদকের সর্বনিম্ন রেট নাকি ১ লাখ টাকা। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আকতার আবার ফোন দিয়ে জানতে চান, টাকা দেবে কি না? টাকা না দিলে নাকি খবর করে ছেড়ে দেওয়া হবে। রেড ক্রিসেন্টে মাহমুদা মিতু যোগ দিয়েছেন ৫ আগস্টের পর। দুদক এখন তদন্ত করছে আওয়ামী লীগের সময়ের দুর্নীতি নিয়ে। অথচ হাস্যকরভাবে আওয়ামী আমলের কর্মকর্তাদের নাম না দিয়ে তখনকার দায় চাপানোর চেষ্টা করা হচ্ছে এখনকার লোকজনের ওপর। এখানে বড় অংকের টাকার লেনদেনের সমূহ সম্ভাবনা আছে। কিছু না করা মানুষের কাছ থেকেই যদি ১ লাখ করে নেয়, আওয়ামী লীগ আমলের কর্মকর্তাদের থেকে তাহলে কত করে নিয়েছে?’
এনসিপি নেতা পোস্টে লিখেছেন, ‘দুদকের এসব কাজ-কারবার এই প্রথম না। হাসিনার আমলে খালেদা জিয়াসহ বিরোধী দলের বহু নেতাকে এরা হয়রানি করেছে। অথচ আওয়ামী লীগের হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি নিয়ে এরা কিছুই বলেনি। আমরা আশা করেছিলাম, ৫ আগস্টের পর এদের মধ্যে পরিবর্তন আসবে, কিন্তু আসেনি বরং এরা এখন চা খাওয়ার জন্য ১ লাখ করে টাকা চাওয়া শুরু করেছে। মাহমুদা মিতু সাহস করে ভিডিও করে রেখেছেন, অন্যায় ঘুষ দেন নাই। কিন্তু কত সাধারণ মানুষ এদের এই চায়ের বিল দিতে বাধ্য হয়েছে জানা নেই।’
হাসনাত আবদুল্লাহ পোস্টে আরও লিখেছেন, ‘আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। মাহমুদা মিতু কেন, যদি আমার নামেও এক পয়সা দুর্নীতির অভিযোগ আসে, সেটা মানুষের সামনে প্রকাশ করে দিন। কাউকে ফোন করারও দরকার নেই। দুর্নীতি পেলেই সেগুলো প্রকাশ করে মামলা করে দেন। আইনের হাতে তুলে দিন। তা না করে নিরীহ লোকজনের ওপরে এই চাঁদাবাজি কেন করছেন? কেন চা খাওয়ার বিল চান, কেন টাকা না দিলে হুমকি দেন?’
হাসনাত লেখেন, ‘ফ্যাসিবাদের পতনের পর আমরা একটা নতুন বাংলাদেশ চাই। হাসিনার করে যাওয়া দুর্নীতির পথে যেন আর কেউ না যেতে পারে, সেজন্য দুদককেও আমরা নতুন রূপে দেখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু নতুন বাংলাদেশেও দুদক সেই পুরনো পথেই হাঁটা শুরু করেছে। আমলাতন্ত্র আবারও বিষদাঁত নিয়ে কামড় বসাতে হাজির হয়েছে। এই বিষদাঁত ভাঙতে না পারলে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন হেরে যাবে। আমরাও হেরে যাবো। আমরা দুদকের এই দুর্নীতির বিচার চাই। আমলাদেরকে এক লাখ টাকার চা খাওয়ানোর জন্যই কি জুলাইতে বাংলাদেশের মানুষ জীবন দিয়েছিল?’
এই পোস্টের পর সামাজিক মাধ্যমে এ নিয়ে বিতর্ক শুর হয়। কেউ কেউ পোস্টের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, আবার কেউ দুদকের জবাব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।
ইউএনবি স্বাধীনভাবে হাসনাতের পোস্ট করা অডিও ক্লিপগুলোর সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।
আরও পড়ুন: দুদক চেয়ারম্যানের সাথে সাক্ষাৎ সারজিস-হাসনাতের, ‘অতি গোপনীয়’ অভিযোগ
এদিকে, দুদকের বিজ্ঞপ্তির পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে ডা. মিতু লেখেন, ‘হাস্যকর এবং ইমম্যাচিউর প্রেস রিলিজ দিছে দুদক। আমাকেও বলছিলো টাকা দিলে ভ্যারিফাইড পেইজ থেকে প্রেস রিলিজ দিয়ে জানাবে যে আমি দুর্নীতি করি নাই।’
তিনি দাবি করেন, মান বাঁচাতে এই প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে দুদক। তা নাহলে এক ঘন্টার মধ্যে সব কর্মকর্তার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয় যে, তারা এতে জড়িত নন।
তিনি বলেন, ‘আমি ১০০% শিওর এসব ফোন কলের চাঁদাবাজির সঙ্গে দুদক কর্মকর্তাসহ একটা বড় টিম জড়িত। তারা জড়িত না থাকলে কোনোভাবেই আমার তথ্য তাদের পাওয়ার কথা না। এবং দুদকের পেইজ কন্ট্রোল কে করে দেখা উচিত। আমাকে বার বার বলছে টাকা দিলে পেইজ থেকে প্রেস রিলিজ দিবে।’