বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) এতদিন ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নামে আয়োজিত শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’।
শুক্রবার (১১ এপ্রিল) ঢাবির চারুকলা অনুষদে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আজহারুল ইসলাম শেখ।
এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘নববর্ষে ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’। গত ২৪ মার্চ সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে উপাচার্যের সভাপতিত্বে এটি চূড়ান্ত হয়।
আয়োজকরা জানান, সংস্কৃতির মুক্তির বার্তা নিয়ে চারুকলা অনুষদের এই আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশের সব ভাষা ও জাতিগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়েছে।
তারা বলেন, এবারের বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা দেশীয় বহুমাত্রিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও উদার সংস্কৃতির প্রতিফলন ঘটাবে। নববর্ষ উদযাপন বাক-স্বাধীনতা, সাংস্কৃতিক চর্চা ও মানবিক রাষ্ট্র গঠনের উদ্দেশ্যে অগ্রসর একটি পদক্ষেপ।
তারা আরও বলেন, সংস্কৃতির মূল লক্ষ্যই হচ্ছে মানবিক ও উদার একটি সমাজ বা রাষ্ট্র কাঠামো গড়ে তোলা। এবারের বৈশাখ হবে সকলের। পাহাড় থেকে সমতল—সকল জাতিগোষ্ঠী এতে অংশগ্রহণ করবে। একপেশে সংস্কৃতির সংকীর্ণতা থেকে বের হয়ে আমরা শুদ্ধ ও উদার চর্চার দিকে এগিয়ে যাব—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
এবারের বৈশাখ ফ্যাসিবাদ ও নিপীড়নের কালপর্ব শেষে নতুন এক সাংস্কৃতিক মুক্তির সূচনা আনবে বলে আশাপ্রকাশ করেন তারা।
শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন প্রসঙ্গে চারুকলা অনুষদের ডিন বলেন, “আপনারা জানেন, ১৯৮৯ সালে আমরা এই বর্ষবরণ প্রথা শুরু করেছিলাম ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’ নামে। পরে তা ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নাম নেয়। এবার আমরা মূল নামকে পুনরুদ্ধার করেছি।”
আগামী ১৪ এপ্রিল সকাল ৯টায় শোভাযাত্রা শুরু হবে। এটি চারুকলা থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ, রাজু ভাস্কর্য, শহিদ মিনার, দোয়েল চত্বর ও বাংলা একাডেমি ঘুরে আবার চারুকলায় এসে শেষ হবে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম বদলের ইঙ্গিত ফারুকীর
শোভাযাত্রাকালে বাংলামোটর, বারডেম, পলাশী ও মৎস ভবন থেকে শাহবাগের দিকে আসার রাস্তা বন্ধ থাকবে। সাধারণ মানুষের জন্য প্রবেশ উন্মুক্ত থাকবে নীলক্ষেত ও পলাশীর দিক থেকে।
র্যালির সময় রমনা উদ্যানের তিনটি গেট—ছবির হাট, রাজু ভাস্কর্যের পেছনের গেট ও কালীমন্দির গেট বন্ধ থাকবে।
শোভাযাত্রার সামনে থাকবে ২০টি সজ্জিত ঘোড়া এবং পেছনে থাকবে রিকশার বহর। সাধারণ মানুষ পেছনের দিক থেকে শোভাযাত্রায় অংশ নেবেন।
নিরাপত্তার স্বার্থে সকাল ৮টা থেকে দুপুর পর্যন্ত শাহবাগ ও টিএসসি মেট্রোরেল স্টেশন বন্ধ থাকবে। এ সময় এই স্টেশনগুলোতে যাত্রী ওঠা-নামা বন্ধ থাকবে এবং শোভাযাত্রা শেষে স্টেশনগুলো চালু হবে।
ক্যাম্পাসে অন্যান্য কর্মসূচিতে অংশ নিতে পলাশী ও নীলক্ষেত সড়ক দিয়ে প্রবেশ করতে বলা হয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ আইডি কার্ড ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।
এবারের শোভাযাত্রায় অংশ নেবে ২৮টি আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী, বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, কিশোর ব্যান্ড, পার্বত্য চট্টগ্রামের শিল্পীগোষ্ঠী, বামবা ব্যান্ড শিল্পীগোষ্ঠী, বাউল-সাধুশিল্পী দল, কৃষকদল, মূলধারার শিল্পীগোষ্ঠী, সাধনা নৃত্যসংগঠন, রংধনু পোশাকশ্রমিক শিল্পী দল, নারী ফুটবল দল, অ্যাক্রোব্যাটিক শিল্পীগোষ্ঠী, রিকশার বহর এবং ঘোড়ার গাড়ির বহর।
এবার বড় মোটিফ থাকবে ৭টি—ফ্যাসিবাদের মুখ, কাঠের বাঘ, ইলিশ মাছ, তরমুজের ফালি (যা ফিলিস্তিনের নিপীড়িত জনগণের প্রতি সহমর্মিতার প্রতীক এবং তাদের পতাকার মোটিফ), শান্তির পায়রা, পালকি, ও ‘মুগ্ধ’ পানির বোতল।
মাঝারি মোটিফগুলোতে থাকবে ১০টি সুলতানি ও মুঘল আমলের মুখোশ, ২০টি রঙিন চরকি, ৮টি তালপাতার সেপাই, ৫টি পাখি, ৪টি পাখা, ২০টি ঘোড়া এবং ১০০টি লোকজ চিত্রাবলি।
ছোট মোটিফগুলোর মধ্যে থাকবে ৮০টি ফ্যাসিবাদের মুখ, ২০০টি বাঘের মুখ, ১০টি পলো, ৬টি মাছ ধরার চাই, ২০টি মাথাল, ৫টি লাঙল ও ৫টি মাছের ডোলা।
নববর্ষ ১৪৩২-কে সফল করতে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষক, বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সম্মিলিতভাবে দায়িত্বশীলতা ও আবেগ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানানো হয়।