মঙ্গল শোভাযাত্রা
‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নয়, এবার হবে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) এতদিন ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নামে আয়োজিত শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’।
শুক্রবার (১১ এপ্রিল) ঢাবির চারুকলা অনুষদে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আজহারুল ইসলাম শেখ।
এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘নববর্ষে ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’। গত ২৪ মার্চ সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে উপাচার্যের সভাপতিত্বে এটি চূড়ান্ত হয়।
আয়োজকরা জানান, সংস্কৃতির মুক্তির বার্তা নিয়ে চারুকলা অনুষদের এই আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশের সব ভাষা ও জাতিগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়েছে।
তারা বলেন, এবারের বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা দেশীয় বহুমাত্রিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও উদার সংস্কৃতির প্রতিফলন ঘটাবে। নববর্ষ উদযাপন বাক-স্বাধীনতা, সাংস্কৃতিক চর্চা ও মানবিক রাষ্ট্র গঠনের উদ্দেশ্যে অগ্রসর একটি পদক্ষেপ।
তারা আরও বলেন, সংস্কৃতির মূল লক্ষ্যই হচ্ছে মানবিক ও উদার একটি সমাজ বা রাষ্ট্র কাঠামো গড়ে তোলা। এবারের বৈশাখ হবে সকলের। পাহাড় থেকে সমতল—সকল জাতিগোষ্ঠী এতে অংশগ্রহণ করবে। একপেশে সংস্কৃতির সংকীর্ণতা থেকে বের হয়ে আমরা শুদ্ধ ও উদার চর্চার দিকে এগিয়ে যাব—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
এবারের বৈশাখ ফ্যাসিবাদ ও নিপীড়নের কালপর্ব শেষে নতুন এক সাংস্কৃতিক মুক্তির সূচনা আনবে বলে আশাপ্রকাশ করেন তারা।
শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন প্রসঙ্গে চারুকলা অনুষদের ডিন বলেন, “আপনারা জানেন, ১৯৮৯ সালে আমরা এই বর্ষবরণ প্রথা শুরু করেছিলাম ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’ নামে। পরে তা ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নাম নেয়। এবার আমরা মূল নামকে পুনরুদ্ধার করেছি।”
আগামী ১৪ এপ্রিল সকাল ৯টায় শোভাযাত্রা শুরু হবে। এটি চারুকলা থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ, রাজু ভাস্কর্য, শহিদ মিনার, দোয়েল চত্বর ও বাংলা একাডেমি ঘুরে আবার চারুকলায় এসে শেষ হবে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম বদলের ইঙ্গিত ফারুকীর
শোভাযাত্রাকালে বাংলামোটর, বারডেম, পলাশী ও মৎস ভবন থেকে শাহবাগের দিকে আসার রাস্তা বন্ধ থাকবে। সাধারণ মানুষের জন্য প্রবেশ উন্মুক্ত থাকবে নীলক্ষেত ও পলাশীর দিক থেকে।
র্যালির সময় রমনা উদ্যানের তিনটি গেট—ছবির হাট, রাজু ভাস্কর্যের পেছনের গেট ও কালীমন্দির গেট বন্ধ থাকবে।
শোভাযাত্রার সামনে থাকবে ২০টি সজ্জিত ঘোড়া এবং পেছনে থাকবে রিকশার বহর। সাধারণ মানুষ পেছনের দিক থেকে শোভাযাত্রায় অংশ নেবেন।
নিরাপত্তার স্বার্থে সকাল ৮টা থেকে দুপুর পর্যন্ত শাহবাগ ও টিএসসি মেট্রোরেল স্টেশন বন্ধ থাকবে। এ সময় এই স্টেশনগুলোতে যাত্রী ওঠা-নামা বন্ধ থাকবে এবং শোভাযাত্রা শেষে স্টেশনগুলো চালু হবে।
ক্যাম্পাসে অন্যান্য কর্মসূচিতে অংশ নিতে পলাশী ও নীলক্ষেত সড়ক দিয়ে প্রবেশ করতে বলা হয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ আইডি কার্ড ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।
এবারের শোভাযাত্রায় অংশ নেবে ২৮টি আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী, বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, কিশোর ব্যান্ড, পার্বত্য চট্টগ্রামের শিল্পীগোষ্ঠী, বামবা ব্যান্ড শিল্পীগোষ্ঠী, বাউল-সাধুশিল্পী দল, কৃষকদল, মূলধারার শিল্পীগোষ্ঠী, সাধনা নৃত্যসংগঠন, রংধনু পোশাকশ্রমিক শিল্পী দল, নারী ফুটবল দল, অ্যাক্রোব্যাটিক শিল্পীগোষ্ঠী, রিকশার বহর এবং ঘোড়ার গাড়ির বহর।
এবার বড় মোটিফ থাকবে ৭টি—ফ্যাসিবাদের মুখ, কাঠের বাঘ, ইলিশ মাছ, তরমুজের ফালি (যা ফিলিস্তিনের নিপীড়িত জনগণের প্রতি সহমর্মিতার প্রতীক এবং তাদের পতাকার মোটিফ), শান্তির পায়রা, পালকি, ও ‘মুগ্ধ’ পানির বোতল।
মাঝারি মোটিফগুলোতে থাকবে ১০টি সুলতানি ও মুঘল আমলের মুখোশ, ২০টি রঙিন চরকি, ৮টি তালপাতার সেপাই, ৫টি পাখি, ৪টি পাখা, ২০টি ঘোড়া এবং ১০০টি লোকজ চিত্রাবলি।
ছোট মোটিফগুলোর মধ্যে থাকবে ৮০টি ফ্যাসিবাদের মুখ, ২০০টি বাঘের মুখ, ১০টি পলো, ৬টি মাছ ধরার চাই, ২০টি মাথাল, ৫টি লাঙল ও ৫টি মাছের ডোলা।
নববর্ষ ১৪৩২-কে সফল করতে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষক, বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সম্মিলিতভাবে দায়িত্বশীলতা ও আবেগ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানানো হয়।
২৩৮ দিন আগে
মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম বদলের ইঙ্গিত ফারুকীর
নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম বদলানো হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। নতুন নাম নির্ধারণের বিষয়ে আগামীকাল (সোমবার) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) বৈঠক হবে বলে নিশ্চিত করেছেন তিনি।
রবিবার (২৩ মার্চ) সচিবালয়ে জাতীয়ভাবে বাংলা নববর্ষ এবং চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো ও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর নববর্ষ উদযাপন নিয়ে সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা জানান।
উপদেষ্টা বলেন, ‘সব জাতিসত্তার অংশগ্রহণে এবারের নববর্ষের শোভাযাত্রায় নতুন রঙ, গন্ধ ও সুর পাওয়া যাবে। এবার চারুকলা থেকে যে শোভাযাত্রা বের হবে সেখানে আপনারা সত্যিকার অর্থেই নতুন জিনিস দেখবেন। নিজেদের চোখেই অনেক পরিবর্তন দেখতে পাবেন।’
তবে কী ধরনের পরিবর্তন দেখা যাবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে অস্বীকৃতি জানান তিনি। বলেন, ‘এটি সারপ্রাইজ হিসেবেই থাকল। ইটস এ টিজার। যারা অংশগ্রহণ করবেন তারা নিজেরাই নিজেদের চোখে দেখতে পারবেন—পরিবর্তনগুলো কীভাবে ঘটছে।’
আরও পড়ুন: বাংলা একাডেমির পুরস্কার নির্বাচন প্রক্রিয়ায় গোলমাল ছিল: সংস্কৃতি উপদেষ্টা
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আসলেই (শোভাযাত্রায়) নতুন কিছু দেখতে পাবেন। নতুন রঙ দেখবেন, নতুন গন্ধ পাবেন, নতুন সুর পাবেন।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ‘নতুন কী নামে শোভাযাত্রা হবে, সেটি আগামীকাল ঢাবিতে আয়োজিত একটি সভায় নির্ধারণ করা হবে।’
এই শোভাযাত্রাটি প্রথমে ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’ নামে শুরু হয়েছিল উল্লেখ করে উপদেষ্টা আরও জানান, পরবর্তীতে নামটি পরিবর্তিত হয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা হিসেবে প্রচলিত হয়েছে। যে নাম একবার পরিবর্তিত হয়েছে, সবাই যদি সম্মত হন তবে আবার পরিবর্তন হতে পারে বলে মত দেন তিনি।
তবে সবাই সম্মত না হলে পরিবর্তন নাও হতে পারে বলেও উল্লেখ করেন উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, ‘এবারের শোভাযাত্রাটি শুধু বাঙালিদের নয়, বরং চাকমা, মারমা, গারোসহ প্রত্যেকেরই হবে। তাই এমন একটা নাম দিতে হবে যেন সেটি সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। বাঙালি বাদে অন্যরা যেন ব্র্যাকেটে না পড়ে যায় সেটি নিশ্চিত করা হবে।
২৫৬ দিন আগে
মঙ্গল শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে পহেলা বৈশাখের সূচনা
বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ শুক্রবার ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও সার্বজনীন উৎসবমুখর পরিবেশে পালিত হচ্ছে।
সকাল ৯টায় ঢাবি উপাচার্য মোহাম্মদ আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে মঙ্গল শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে এ উদযাপন শুরু হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে র্যালিটি বের হয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। শোভাযাত্রায় অংশ নেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
ভিসি বলেন, ‘বাংলা নববর্ষ-১৪৩০ আশা ও সাফল্যের বার্তা নিয়ে হাজির হয়েছে। মঙ্গল শোভাযাত্রা আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। এটি ইউনেস্কোর ঐতিহ্যের তালিকায়ও রয়েছে। সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম শুরু হয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘শোভাযাত্রা বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। এখন এটি বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত। তাই এই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও।’
তিনি বলেন, ‘এটি বিশ্বের প্রতিটি মানুষের জন্য একটি মহান সম্পদ। এটি বজায় রাখা, সংরক্ষণ করা এবং সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া আমাদের সকলের সম্মিলিত দায়িত্ব। এবং এটি অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গি এবং দর্শনকে প্রতিফলিত করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটি সব ধরনের চরমপন্থার বিরুদ্ধে মানবিক ও অসাম্প্রদায়িক আহ্বান।’
আরও পড়ুন: আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য মঙ্গল শোভাযাত্রায় হুমকির চিঠি দিয়েছে: র্যাবের মহাপরিচালক
এবারের র্যা লির প্রধান দুটি মোটিফ হচ্ছে মায়ের কোলে শিশু এবং নীল ষাঁড় (নীলগাই)। মায়ের কোলে শিশু যেমন নিরাপদ, সেখানে প্রতীকীভাবে বিশ্ব শান্তির বার্তা রয়েছে। এ ছাড়া বিপন্ন ও হারিয়ে যাওয়া প্রাণীর প্রতীক হিসেবে রাখা হয়েছে নীলগাইকে। এ ছাড়া শোভাযাত্রায় আরও চারটি মোটিফ প্রদর্শিত হয়েছে। তারা হল বাঘ, ময়ূর, ভেড়া ও হরিণ।
বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মীরা মঙ্গল শোভাযাত্রার নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সমাবেশে পুরো সময় প্রটোকল প্রদান করে।
প্রতিমন্ত্রী খালিদ বলেন, ‘আপনি জানেন হুমকি দেওয়া হয়েছে, একজন আইনজীবী এমনকি মঙ্গল শোভাযাত্রা বন্ধ করার জন্য হাইকোর্টে মামলা করেছেন। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে, আমরা নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা নিয়েছি।’
পহেলা বৈশাখ উদযাপনের জন্য চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা উল্লুকের মুখোশ তৈরি করলেও নিরাপত্তার কারণে মুখোশ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ক্যাম্পাস এলাকায় ঢাবির স্টিকার লাগানো যানবাহন ছাড়া সব ধরনের যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
টিএসসির পাশের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেটেও বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত তালা দেওয়া থাকবে তবে রমনা কালী মন্দির, বাংলা একাডেমি, ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ছবির হাট গেটের পাশের গেট দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকবে।
আজ বিকাল ৫টা পর্যন্ত দর্শনার্থীরা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবেন তখন এলাকাটি তালাবদ্ধ থাকবে এবং নির্দিষ্ট সময়ের পর কেউ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে না তবে বের হতে পারবে।
আরও পড়ুন: দুই বছর পর মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্য প্রস্তুত ঢাবি
৯৬৬ দিন আগে
আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য মঙ্গল শোভাযাত্রায় হুমকির চিঠি দিয়েছে: র্যাবের মহাপরিচালক
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন বৃহস্পতিবার বলেছেন, আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য মঙ্গল শোভাযাত্রায় হামলার হুমকি দিয়ে চারুকলা ইনস্টিটিউটের এক শিক্ষার্থীর কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে এবং এটি কোনো জঙ্গিদের হুমকি নয়।
তিনি বলেন, ‘চিঠিটি আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য পাঠানো হয়েছিল। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই।’
আগামীকাল বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠানস্থলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) রাজধানীর রমনা বটমূলে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই তথ্য জানান।
পহেলা বৈশাখ উদযাপনের নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় র্যাবের কমান্ডো টিম প্রস্তুত রয়েছে, পাশাপাশি র্যাবের প্রতিটি ব্যাটালিয়ন সারাদেশে বিশেষ গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করেছে।
তিনি বলেন, টিএসসি, শাহবাগ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা বটমূলসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পর্যাপ্ত চেকপোস্ট ও পর্যবেক্ষণ পোস্ট স্থাপন করে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: পহেলা বৈশাখে কোনো নিরাপত্তা হুমকি নেই: আইজিপি
র্যাবের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও ডগ স্কোয়াড যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে জানিয়ে খুরশীদ বলেন, অনুষ্ঠানস্থল র্যাবের সিসিটিভি কভারেজের আওতায় থাকবে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেছেন, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে পুলিশ ও বিভিন্ন ইউনিটের পাশাপাশি তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে।
তিনি বলেন, ‘যারা নববর্ষ উপভোগ করতে চান তারা নিরাপদে এটি উদযাপন করতে পারবেন।’
তিনি বলেন, পালিয়ে যাওয়া দুজনকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। শিগগিরই তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সন্ত্রাসীদের দিক থেকে আপাতত কোনো হুমকি নেই।
তবে কেউ যাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে সাহস না পায়, সে জন্য আমরা সজাগ ও প্রস্তুত থাকব।
আরও পড়ুন: উৎসাহের মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে পহেলা বৈশাখ
কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ঢাবিতে পহেলা বৈশাখ উদযাপিত
৯৬৭ দিন আগে
পহেলা বৈশাখ: বাংলা নববর্ষের উৎপত্তি এবং ইতিহাস
নতুন বছরে উষ্ণ এপ্রিলের অন্দরমহলে হালকা ঝড়ো হাওয়ায় আয়োজন চলছে চৈত্র সংক্রান্তির; রূপরেখায় বাংলা নববর্ষ ১৪২৯। ১৪ এপ্রিল তারিখটি বাঙালিদের বিশেষ করে বাংলাদেশের উৎসব প্রিয় বাঙালিদের জন্য একটি আবেগের বিষয়। প্রকৃতির দেখাদেখি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নতুন করে বছর শুরুর উন্মাদনার আরেক নাম পহেলা বৈশাখ। শুধু ঝড় এলো বলে জীবনের বিপণীগুলো গুটিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে পৌছা নয়, বাঙালির জীবন ও জীবিকার হিসেব-নিকেষ জড়িয়ে আছে গ্রীষ্মের এই প্রথম দিনটির নেপথ্যে। বেশ কয়েক শতাব্দি লেগেছে এই প্রথার ইতিহাস সমৃদ্ধ হতে। চলুন, নতুন করে আবারো হয়ে যাক বাংলা নববর্ষ কড়চা।
বাংলা নববর্ষের সূচনালগ্ন
বাংলা নববর্ষের গোড়াপত্তনের খোঁজে ফিরে যেতে হবে অনেক অনেক আগে অবাংলা অধ্যূষিত এলাকায়। খ্রিস্টপূর্ব ৫৭ অব্দে প্রাচীন ভারতের রাজা বিক্রমাদিত্যের নামানুসারে হিন্দু বিক্রমী পঞ্জিকা প্রণয়ন করা হয়েছিলো। এই পঞ্জি অনুসারে ভারতের পূর্বাঞ্চল, উত্তর পূর্বাঞ্চল ও নেপালের বিভিন্ন অংশে বসবাসরত গ্রামীণ বাঙালি সম্প্রদায়ের মধ্যে নিছক একটি ঋতু উৎসব হিসেবে প্রচলিত ছিলো পহেলা বৈশাখ।
তবে তার আমেজ বাংলা অব্দি পৌছতে চলে এসেছিলো ৫৯৩ খ্রিস্টাব্দ। ৭ম শতকে বাংলা বর্ষের প্রমাণ সময়ে বেশ পরিবর্তন এনে বাংলার বুকে বাংলা দিনপঞ্জির উদ্ভব ঘটান বাংলার প্রথম স্বাধীন নৃপতি গৌড়েশ্বর মহারাজাধিরাজ শশাঙ্ক মহাদেব।
পড়ুন: দুই বছর পর মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্য প্রস্তুত ঢাবি
বাংলা পঞ্জিকা ও বাংলা নববর্ষ
ভারতবর্ষে মুঘল শাসনামলে আরবী হিজরী পঞ্জিকা অনুযায়ী কৃষি পণ্যের খাজনা আদায়ের কাজ করা হতো। কিন্তু এই বর্ষপঞ্জি কৃষিকাজের জন্য উপযোগী ছিল না, কারণ চন্দ্র বছরের ৩১ বছর সৌর বছরের ৩০ বছরের সমান। কৃষিকাজ সৌর বছরের হিসাবের ওপর নির্ভর করা সত্ত্বেও চন্দ্র বছরের হিসাবেই কৃষকদের রাজস্ব প্রদানে বাধ্য করা হতো। তাছাড়া চন্দ্র বছরের ৩৫৪ দিন আর সৌর বছর ৩৬৫ বা ৩৬৬ দিনের মধ্যে ১১ বা ১২ দিনের ব্যবধান। ফলে রাজস্ব আদায় সহ অন্যান্য কাজকর্মে প্রশাসনিক জটিলতা তৈরি হতো। এমতাবস্থায় ১৫৮৫ সালের ১০ কিংবা ১১ মার্চ-এ মুঘল সম্রাট আকবর এক ডিক্রি জারির মাধ্যমে প্রবর্তন করেন প্রাথমিক বাংলা সন তারিখ-এ-এলাহী। এই গণনা পদ্ধতির হিসেব কার্যকর হয়েছিলো সম্রাট আকবরের সিংহাসনের অধিষ্ঠিত হওয়া সময় অর্থাৎ ১৫৫৬ সালের ৫ নভেম্বর থেকে। তিনি একটি কর্মপোযোগী, বৈজ্ঞানিক, ও সার্বজনীন বর্ষপঞ্জি প্রণয়নের লক্ষ্যে সে সময়ের বিখ্যাত বিজ্ঞানী ও জ্যোতির্বিদ আমীর ফতুল্লাহ সিরাজিকে নতুন বর্ষপঞ্জি তৈরির নির্দেশ দেন। এভাবে রাজস্ব আদায়ের সংস্কারের পটভূমিতে জন্ম নেয় আধুনিক বাংলা সন। প্রথমে ফসলি সন নামে প্রকাশ পেলেও, পরে তা বহুলভাবে পরিচিতি পায় "বঙ্গাব্দ" বা বাংলা বর্ষ হিসেবে।
১৩৩১ দিন আগে
দুই বছর পর মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্য প্রস্তুত ঢাবি
করোনা মহামারির কারণে দুই বছর বিরতির পর পূর্ণ উদ্যমে ঐতিহ্যবাহী 'মঙ্গল শোভাযাত্রা' বের করে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ উদযাপনের জন্য প্রস্তুত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। এ উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেছেন, ‘রমজান মাসে বাংলা নববর্ষ উদযাপনে ধর্মীয় মূল্যবোধের পাশাপাশি মানবিক এবং অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধকেও যথাযথভাবে ধারণ করতে হবে। 'ধর্ম যার যার উৎসব সবার' এই বিষয়টিকে মূল প্রতিপাদ্য করে আমাদের বাংলা নববর্ষ উদযাপন করতে হবে।
একইসঙ্গে তিনি মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণের সময় যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মানার আহ্বান জানান।
বুধবার বিকেলে চারুকলা অনুষদে নববর্ষ উদযাপনের সার্বিক প্রস্তুতি পরিদর্শনকালে উপাচার্য এ আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: বাংলা নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রার ইতিহাস: রূপরেখায় অপশক্তির অবসান কামনায় শান্তি মিছিল
এ সময় তিনি আরও বলেন, চারুকলা তার বিশেষ ঐতিহ্যকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন পরে বেশ প্রাণচাঞ্চল্যরূপে নিজ অবয়বে ফিরে আসছে। মহামারির কারণে গত দুই বছর সীমিত পরিসরে নববর্ষ উদযাপন করতে হয়েছে। এ বছর করোনা পরিস্থিতি শিথিল হওয়ায় স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নববর্ষ উদযাপন করা হবে।
রমজান মাসে নববর্ষ উদযাপনের বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ধর্মীয় মূল্যবোধের পাশাপাশি মানবিক এবং অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধকেও সসম্মানে মনে রাখতে হবে এবং হৃদয়ে ধারণ করতে হবে। ধর্মীয় গোঁড়ামি পরিহার করে অসাম্প্রদায়িক চেতনা নির্ভর নববর্ষ উদযাপন করার আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: এবারও মঙ্গল শোভাযাত্রা হবে না
এর আগে উপাচার্য চারুকলা অনুষদের করিডোরে মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্য দু'দিনব্যাপী পোস্টার প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। চারুকলার প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠান 'মঙ্গল শোভাযাত্রা গবেষণা ও প্রসার কেন্দ্র'-এর উদ্যোগে ২৬জন শিল্পীর অংশগ্রহণে এক কর্মশালার মাধ্যমে এই পোস্টার প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।
ভিসির পরিদর্শনকালে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন এবং ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়াসহ অন্যান্য শিক্ষক ও ছাত্ররা উপস্থিত ছিলেন।
১৩৩১ দিন আগে
পহেলা বৈশাখ উদযাপনে গুগলের নতুন ডুডল
সার্চ ইঞ্জিন জায়ান্ট গুগল হোম পেজে নিয়মিত গ্রাফিকের পরিবর্তে বাংলাদেশি ব্যবহারকারীদের জন্য একটি বিশেষ ডুডল বের করে বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ উদযাপন করছে।
গুগলের বিশেষ ডুডলে তুলে ধরা হয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রায় ব্যবহৃত শিল্পীদের তৈরি বিভিন্ন মুখোশ, প্রতীক ও রং তুলি। বিশেষ এই ডুডলে ক্লিক করলেই পহেলা বৈশাখ নিয়ে বিভিন্ন তথ্য প্রদর্শন করছে গুগল।
আরও পড়ুন: এবারও মহামারিতে উত্তাপ ছড়াতে পারল না পহেলা বৈশাখ উদযাপন
দেশে কিংবা বিদেশে, বিশ্বব্যাপী সকল বাঙালি একে অপরের সমৃদ্ধি কামনা করে প্রথাগত উপায়ে 'শুভ নববর্ষ'-র সাথে আন্তরিকভাবে একে অপরকে শুভেচ্ছা জানায়।
ঢাকার রমনা পার্কে একটি প্রাচীন বটতলায় ভোর হওয়ার সাথে সাথেই শুরু হয় এক অন্যতম ঐতিহ্যবাহী উৎসব পহেলা বৈশাখ উদযাপন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে শুরু হওয়া মঙ্গল শোভাযাত্রা একটি উজ্জ্বল আনন্দময় শোভাযাত্রা।
বাঙালি সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, ঐতিহ্য এবং মানুষের পরিচয়ের প্রতীক হিসেবে তরুণ থেকে বৃদ্ধ সকলে বর্ণীল মুখোশ পরে ও নানা প্রাণীর বিশাল প্রতিকৃতি নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেয়।
আরও পড়ুন: কোভিড-১৯: পহেলা বৈশাখ উদযাপনে সরকারের নিষেধাজ্ঞা
বাঙালিদের একত্র করে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে গোটা দেশ রাস্তায় শোভাযাত্রা, মেলা এবং বড় বড় কনসার্টের মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপন করে।
কিন্তু মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে এ বছর টানা দ্বিতীয় বারের মতো অনেকটাই বর্ণহীনভাবে পালিত হচ্ছে পহেলা বৈশাখ। এই বছর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে বিশাল জনসমাগম এড়ানোর জন্য নানা কর্মসূচি বাতিল করা হয়।
দিনটি ডিজিটালি উদযাপনের জন্য সকল টেলিভিশন চ্যানেল সকালে একটি বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করে।
আজকের অ্যানিমেটেড ডুডলে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মতো নানা প্রাণীর রঙিন চিত্র উপস্থাপিত হয়েছে।
আরও পড়ুন: নববর্ষ উদযাপন: দারাজের ‘বৈশাখী মেলা’ ক্যাম্পেইন
গুগল ডুডল হলো গুগলের হোমপেজে লোগোর একটি বিশেষ, অস্থায়ী পরিবর্তন যা বিশেষ বিশেষ দিন, উৎসব কিংবা কোন বিশিষ্ট ব্যক্তির জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীকে ঘিরে উদযাপনের জন্য তৈরি। ১৯৯৮ সালে ডুডল প্রথম পরিচিতি লাভ করে।
১৬৯৬ দিন আগে
এবারও মঙ্গল শোভাযাত্রা হবে না
দেশের কোভিড-১৯ পরিস্থিতির অবস্থা বিবেচনা করে পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণসংযোগ বিভাগ থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানায়।
ঢাবির চারুকলার শিক্ষার্থীরা ১৯৮৯ সাল থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করে আসছে। ২০১৬ সালে বাংলাদেশের ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ জাতিসংঘ সংস্থা ইউনেস্কোর মানবতার অধরা বা অস্পর্শনীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান লাভ করে। মঙ্গল শোভাযাত্রা বাংলাদেশের নবতর সর্বজনীন সংস্কৃতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
আরও পড়ুন: করোনার থাবায় দেশে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর নতুন রেকর্ড
প্রতি বছর মঙ্গল শোভাযাত্রার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় দেশের সংস্কৃতি এবং রাজনীতির সাথে প্রাসঙ্গিক একটি থিমকে কেন্দ্র করে তৈরি করা হয়।
আরও পড়ুন: ১৪ এপ্রিল থেকে কঠোর লকডাউন, আজ প্রজ্ঞাপন
মঙ্গল শোভাযাত্রায় বিভিন্ন ধরনের প্রতীকী শিল্পকর্ম, বাংলা সংস্কৃতির পরিচয়বাহী নানা প্রতীকী উপকরণ, বিভিন্ন রঙের বিশাল মুখোশ ও বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি যেমন প্রজাপতি, ঐতিহ্যবাহী পুতুল থাকে যা বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী লোককাহিনী তুলে ধরে।
আরও পড়ুন: মহামারিতে বৈশ্বিক শান্তি আরও চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে: প্রধানমন্ত্রী
১৬৯৭ দিন আগে