২০২৫-এর ৭ জুন তথা ঈদুল আযহার এই দিনটিতে ভরপুর বিনোদন নিয়ে একসাথে মুক্তি পেয়েছে দারুণ সব ব্লকবাস্টার। এই কাতারে থেকে চমকপ্রদ ভাবে প্রেক্ষাগৃহে দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে রম্য চলচ্চিত্র ‘উৎসব’। শিরোনামের মতই সিনেমাটি দর্শকদের এক নতুন উৎসবমুখর অভিজ্ঞতার উপহার দিচ্ছে। এর মাঝে রয়েছে পুরনো সব দেশ সেরা নাটক ও সিনেমার নস্টালজিয়া; সাথে গভীর অর্থবহ হাস্যরস। চলুন, সব ধরণের চলচ্চিত্রপ্রেমিদের মন জয় করে নেওয়া এই সিনেমাটির ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
দেশ সেরা অভিনয়শিল্পীদের সমন্বয়ে অভূতপূর্ব আয়োজন
‘উৎসব’-এর শ্রেষ্ঠাংশে ছিলেন জাহিদ হাসান, আফসানা মিমি, অপি করিম, জয়া আহসান, চঞ্চল চৌধুরী, ইন্তেখাব দিনার, আজাদ আবুল কালাম, তারিক আনাম খান, ও নরেশ ভুঁইয়া। এই কুশীলবদের অধিকাংশই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া।
এ প্রজন্মের তারকাদের মধ্যে অভিনয় করেছেন সাদিয়া আয়মান, সুনেরাহ বিনতে কামাল, ও সৌম্য জ্যোতি।
‘উৎসবের’ চিত্রনাট্য ও সংলাপ করেছেন আয়মান আসিব স্বাধীন ও সামিউল ভূঁইয়া। প্রযোজনা করেছে ডোপ প্রোডাকশন্স, সহ-প্রযোজনায় আছে চরকি। সিনেমার সহযোগী প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান হিসেবে আছে লাফিং এলিফ্যান্ট। দেশের পাশাপাশি বিদেশেও মুক্তি পাবে সিনেমাটি। 'উৎসব' এর আন্তর্জাতিক ডিসট্রিবিউশনে আছে 'স্বপ্ন স্কোয়ারক্রো' ও 'পথ প্রোডাকশনস'।
আরো পড়ুন: শাকিব-সাবিলার ‘লিচুর বাগানে’কে ছাড়িয়ে জোভানের ‘আশিকি’
পর্দার পেছনের চলচ্চিত্রশিল্পীরা
ছবির পরিচালনায় ছিলেন জনপ্রিয় ওয়েব সিরিজ ‘কাইজার’-খ্যাত নির্মাতা তানিম নূর। কিংবদন্তির ঔপন্যাসিক চার্লস ডিকেন্সের বিখ্যাত গল্প ‘এ ক্রিস্টমাস ক্যারল’ অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে ছবিটি। লেখনীতে তানিম নূরের সাথে যৌথভাবে ছিলেন আয়মান আসিব স্বাধীন, সামিউল ভূঁইয়া, এবং সুস্ময় সরকার। এদের মধ্যে চিত্রনাট্য ও সংলাপ বানিয়েছেন সামিউল ভূঁইয়া এবং আয়মান আসিব স্বাধীন। চিত্রগ্রহণের দায়িত্বে ছিলেন রাশেদ জামান।
সিনেমার গল্প
জাহাঙ্গীর একজন স্বার্থপর ও কৃপন ব্যবসায়ী। হঠাৎ এক দৈববাণীর সংস্পর্শে তার বোধোদয় হয়। নিমেষেই তিনি পরিণত হন পুরোদস্তুর এক পরোপকারী মানুষে।
ফ্যামিলি ড্রামা ঘরানার এই মুভিটিতে এক অভূতপূর্ব সন্নিবেশ ঘটেছে পুরোনো কিছু সিনেমা ও নাটকের সংলাপের। বিষয়টি দর্শকদের বিশেষ করে মধ্য বয়স্কদের পুরনো সময়ের স্মৃতিকাতরতায় ভাসিয়েছে।
আরো পড়ুন: ঈদুল আযহা ২০২৫ এ চরকিতে মুক্তি পাচ্ছে যে চলচ্চিত্রগুলো
উল্লেখ্য যে, একদম শুরুতে ছবির ঘোষণা হয়েছিলো মজার একটি স্লোগানের মাধ্যমে আর তা হচ্ছে- সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ- পরিবার ছাড়া দেখা নিষেধ।
মুক্তি পরবর্তী ছবির চমকপ্রদ সাফল্য
ঈদের পঞ্চম দিন স্টার সিনেপ্লেক্সে সিনেমাটির ক্যাপাসিটি ছিলো ৭ লক্ষ ৫১ হাজার ৯৫০। ৯টি শো-এর ১ হাজার ৪৮৯ টা টিকেটের সবগুলোই বিক্রি হয়ে গিয়েছিলো। এমনকি অগ্রিম টিকেট বিক্রি হওয়ায় ষষ্ঠ দিনের জন্যও অবশিষ্ট কিছু ছিলো না। শাকিব খানের ‘তান্ডব’ সিনেমার পরে শুধুমাত্রই এই ‘উৎসব’-এর জন্য হলটিতে এই অবস্থা।
এমন একটি ড্রামা জনরার মুভির জন্য বিষয়টি নিতান্তই অপ্রত্যাশিত ছিলো। বলাই বাহুল্য যে, খুব বেশি শো রাখা ছিলো না এর জন্য। এমনকি ১০০ ভাগ অকুপেন্সীর পরেও সিনেমাটি যথেষ্ট শো পায়নি। ফলে অনেকেই টিকেট না পেয়ে বাধ্য হয়ে অন্য সিনেমা দেখেছে।
এই কারণে বিপুল প্রত্যাশা থাকলেও বক্সঅফিস সংগ্রহ আশানুরূপ মাত্রায় পৌঁছতে পারেনি। চার দিনে সিনেমার মাল্টিপ্লেক্স আয় ছিলো সর্বমোট ২৫ দশমিক ৯১ লাখ টাকা।
আরো পড়ুন: ঈদুল আযহা ২০২৫ এ দর্শক মাতাতে আসছে যে নাটকগুলো
পরিশিষ্ট
তানিম নূর পরিচালিত ‘উৎসব’ সিনেমার এই সাফল্য ঢালীউডের চিরাচরিত গতিপথে পরিবর্তন এনেছে। নাট্যজগতের প্রথিতযশা সব মুখগুলো একসাথে থাকায় মন সম্মত অভিনয় পাওয়া গেছে শতভাগ। সেই সাথে বিশ্ববিখ্যাত গল্পের দক্ষ রূপান্তর স্ক্রিণের পুরো সময়টা জুড়ে ছড়িয়েছে মুগ্ধতা। গভীর হাস্যরসের পরিমিতি এবং নাটকীয়তার নির্দেশনাশৈলী ছুঁয়ে গেছে প্রতিটি দর্শকের হৃদয়। এই সাফল্যের নিরিখে অকপটেই স্বীকার করা যায় যে, শিঘ্রই সুদিন ফিরছে বাংলাদেশি চলচ্চিত্রে।