একে অন্যকে দোষারোপ করার সংস্কৃতি বাদ ও তিক্ততা এড়াতে রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক বোঝাপড়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) জাতীয় প্রেস ক্লাবের মিলনায়তনে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া থাকা উচিত। এখন আমরা আমরা কেবল একে অন্যকে দোষারোপ করার সংস্কৃতি দেখতে পাচ্ছি। গণতন্ত্রে কিছু দোষারোপ চলতেই পারে, কিছু কঠোর কথাবার্তাও হয়—কিন্তু এরও একটা সীমা থাকা দরকার। সীমা না মানলে তিক্ততা তৈরি হয়—যার ফলে ধীরে ধীরে রাজনীতির পরিবেশ আরও কলুষিত হয়ে উঠবে।
তিনি বলেন, দেশ এখন একটি সংকটময় সময় পার করছে। এ সময়ে সবাই মিলে দেশকে এগিয়ে নিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বোঝাপড়া তৈরি হওয়া জরুরি। যদি আমরা সবাই মিলে, বোঝাপড়ার ভিত্তিতে এগিয়ে যেতে পারি, তাহলে তার উপকার পাবে দেশের মানুষ। তারা তাদের প্রতিনিধি ও একটি সঠিক সরকার পাবে। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে সব সমস্যা মিটে যাবে, তা না। কিন্তু একটা রাস্তা তৈরি হবে, যে রাস্তার মধ্যদিয়ে আমাদের এবং জনগণের কথাগুলো সেই সরকারের কাছে পৌঁছাতে পারবে।
এরমধ্যেই রাজনৈতিক দলগুলো ১২টি মৌলিক বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাকি বিষয়গুলোতে ঐক্য তৈরির কাজ চলছে। প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা করে বৈঠক হচ্ছে। অনেকগুলো বিষয় আছে, যেগুলো আমরাও ঠিক বুঝি না, তারা করতে চান।
পড়ুন: নির্বাচন নির্ধারিত সময়েই হবে, একদিনও দেরি হবে না: শফিকুল আলম
বিএনপি মহাসচিব জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে জটিল বিষয়গুলো বাদ দিয়ে মূল অমীমাংসিত বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্ব দিতে বলেন। এগুলোকে বাদ দিয়ে যে মৌলিক বিষয়গুলো আছে, সেই বিষয়গুলো সমাধান করে আমার মনে হয়, অতিদ্রুত লন্ডনের বৈঠক অনুযায়ী ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্য নির্বাচনটা হওয়া দরকার।
তিনি বলেন, ‘যদি এটা সম্ভব হয়, তাহলে আমি বিশ্বাস করি, আমাদের অনেক সংশয় ও বিভ্রান্তি দূর হবে এবং আমরা একটি সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে এগোতে পারব।’
ফখরুল হতাশা প্রকাশ করে বলেন, অর্ন্তবর্তী সরকার এখন পর্যন্ত গণঅভ্যুত্থানের সময় নিহত ও আহতদের পরিবারকে সহায়তা কিংবা পুনর্বাসনের জন্য কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
তিনি বলেন, ‘আজ যখন এক বোনের কথা শুনছিলাম, (যিনি তার স্বামীকে হারিয়েছেন) তখন মনে হলো—রাষ্ট্র বলতে আমরা কী বুঝি? রাষ্ট্র কার জন্য? যারা রাষ্ট্র চালাচ্ছেন, তারা কি একটি বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও এই মানুষগুলোকে খুঁজে পাননি? একটা সঠিক তালিকা তৈরি করে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে পারেননি?’
আলোচনার এক পর্যায়ে গণঅভ্যুত্থানে আহত এক শিশুর প্রসঙ্গ টেনে আবেগপ্রবণ হন তিনি, ‘গতকাল (বুধবার) এক ছোট ছেলে—হয়তো ছয়-সাত বছরের—আমার কাছে এসে হঠাৎ জড়িয়ে ধরল। বলল, ‘আমার মাথা নাই।’ মানে, তার মাথায় গুলি লেগেছিল, পরে ডাক্তাররা অপারেশন করে একটা প্লাস্টিকের কৃত্রিম খুলি বসিয়েছেন। এর চেয়ে বড় ত্যাগ আর কী হতে পারে?’
তিনি বলেন, ‘যদি আমরা এই ত্যাগকে যথাযথভাবে সম্মান না জানাতে পারি—যদি এই শিশুদের, এই বোনদের, এই মায়েদের প্রতি সুবিচার না করি—তাহলে নিঃসন্দেহে আমরা জাতির সঙ্গে এক ভয়াবহ বিশ্বাসঘাতকতা করব।’
তবে বিএনপি নেতা আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আমরা এখনো একটি সুন্দর ও উন্নত বাংলাদেশের দিকে এগোতে পারব।’