বাগেরহাটের চিতলমারীতে একটি বাণিজ্যিক ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে সুস্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ক্লিনিকের এক নারী কর্মকর্তার মৃত্যু হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন অন্তত আরও ৩০ জন।
স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, নিহত ওই নারীর নাম অনিতা বিশ্বাস (৫০)। তিনি ওই সুস্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ক্লিনিকের কর্মকর্তা ছিলেন। তার বাড়ি বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলার কুড়াল তলা গ্রামে।
সোমবার (৭ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার মেইন রোডে মাইশা প্লাজা নামে পাঁচতলা বিশিষ্ট একটি ভবনে এই ঘটনা ঘটে।
এ সময় মুহূর্তের মধ্যে ভবনের বিভিন্ন তলায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ভবনটিতে কয়েকটি ব্যাংক, বীমা, সুস্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ক্লিনিক, দোকান এবং শোরুম রয়েছে।
আরও পড়ুন: নাজিম উদ্দিন রোডের ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে, আহত ১৮
পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ভবন থেকে মধ্যবয়সী এক নারীর লাশ উদ্ধার করেছে। আহত অবস্থায় ২৫ থেকে ৩০ জনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এবং বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিট, সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং স্থানীয় লোকজন সেখানে ছুটে আসেন। দুপর ১২টার দিকে আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসে।
স্থানীয়রা জানায়, চিতলমারী উপজেলার প্রাণকেন্দ্র মেইনরোডে মাইশা প্লাজা। পাঁচতলা বিশিষ্ট এই প্লাজায় বেশ কয়েকটি ব্যাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, বীমা কোম্পানি, সুস্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ক্লিনিক, দোকান-শোরুম রয়েছে। সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে স্থানীয়রা প্লাজা থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখতে পায় তারা। মুহূর্তের মধ্যে ভবনের বিভিন্ন তলায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এসময় প্লাজায় থাকা নারী-পুরুষসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ওই ভবনের বিভিন্ন তলায় বেশ কিছু মানুষ আটকা পড়েছিল। ধীরে ধীরে তাদের উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ধোঁয়ার কারণে নারী, শিশুসহ বেশ কয়েকজন মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েন। দ্রুত তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
চিতলমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহাদাত হোসেন জানান, মাইশা প্লাজা নামে পাঁচতলা বিশিষ্ট ভবনের নিচতলা থেকে আগুনের সূত্রপাত। মুহূর্তের মধ্যে ভবনের বিভিন্ন তলায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ভবনটিতে কয়েকটি ব্যাংক, বীমা, ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিক সেন্টার এবং দোকান-শোরুম রয়েছে। ভবনের বিভিন্ন তলায় থাকা মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ধোঁয়ার কারণে বেশ কয়েকজন নারী-পুরুষ অসুস্থ হয়ে পড়েন। ভবন থেকে মধ্যে বয়সী এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত ওই নারী সুস্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ক্লিনিকের কর্মকর্তা ছিলেন।
বাগেরহাট ফায়ার ব্রিগেড ও সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা মো. শাহাবুদ্দিন জানান, খবর পেয়ে বাগেরহাট, খুলনা, চিতলমারী, মোল্লাহাট এবং টুঙ্গিপাড়ার আটটি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজে অংশ নেয়। দীর্ঘ সময় চেষ্টা চালিয়ে বেলা ১২টার দিকে তারা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ভবন থেকে মধ্যবয়সী এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়।
তিনি জানান, পাঁচতলা বিশিষ্ট ওই বাণিজ্যিক ভবনটির বিভিন্ন তলায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর তারা ভবনের মধ্যে তল্লাশি চালাচ্ছে। তবে কীভাবে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে তা তাৎক্ষণিকভাবে তিনি জানাতে পারেননি।
আরও পড়ুন: আগুনে পুড়ল ১৭ কৃষকের ২৫ বিঘা পাকা গমের খেত
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক আহমেদ কামরুল হাসান জানান, আগুনে বাণিজ্যিক ওই ভবনে থাকা সুস্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ক্লিনিকে কর্মরত এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। ধোঁয়ার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়া ২১ জনকে উদ্ধার করে চিতলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। পাঁচতলা বিশিষ্ট ভবনের দ্বিতীয় তলায় কয়েকটি ব্যাংকের শাখা রয়েছে। তবে আগুনে ওই সব ব্যাংকের কোনো ক্ষতি হয়নি। ফায়ার ব্রিগেড, সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং স্থানীদের সহযোগীতায় দ্রুত আগুন সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে বলে তিনি জানান।