শব্দদূষণ
উচ্চশব্দের হর্ন আমদানি-বাজারজাতকরণে নিষেধাজ্ঞা আসছে
রাজধানীতে শব্দদূষণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ঢাকার রাস্তায় এখন সহনীয় মাত্রার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি শব্দদূষণ হচ্ছে। এ কারণে নতুন কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে শব্দদূষণ বিধিমালা নতুন করে করা হচ্ছে।
শব্দদূষণের শাস্তি বাড়ানোসহ বেশ কয়েকটি বিষয় সংযুক্ত করে ২০০৬ সালের বিধিমালা সংশোধন করে ‘শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০২৫’-এর খসড়া করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।
‘শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬’ অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল এক মাসের জেল বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ড। খসড়া বিধিমালা অনুযায়ী এ শাস্তি সর্বোচ্চ দুই বছরের জেল বা ২ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ড।
খসড়া বিধিমালায় যানবাহনের হর্ন আমদানি, বাজারজাতকরণ ও বাজানোর উপর নিষেধাজ্ঞার বিধিও যুক্ত হচ্ছে নতুন বিধিমালায়। বিভিন্ন যানবাহনের হর্ন কত জোরে বাজাতে পারবে, সেই গ্রহণযোগ্য মাত্রা (মানমাত্রা) নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি শব্দ উৎপাদনকারী আতশবাজি-পটকা ফোটানোর ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে। কেউ আতশবাজি ফোটাতে পারবে না। বিশেষ প্রয়োজনে ফোটাতে হলে অনুমতি নিতে হবে। একই সঙ্গে মাইক, লাউড স্পিকার, মিউজিক সিস্টেম ব্যবহারের ওপর বিধি-নিষেধ অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে বিধিমালায়। রাত ৯টার পর উচ্চ শব্দে গান বাজানো কিংবা কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা যাবে না।
নতুন শব্দদূষণ বিধিমালার বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ ইউএনবিকে বলেন, ২০০৬ সালের বিধিমালায় কিছু বিষয় স্পষ্ট করা নেই। নতুন বিধিমালায় সেগুলো স্পষ্ট করা হয়েছে। এছাড়া আতশবাজি, হর্নসহ কিছু বিষয় বিধিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন ক্ষেত্রে শাস্তিও বাড়ছে।
সচিব বলেন, নতুন শব্দদূষণ বিধিমালা খুব শিগগিরই চূড়ান্ত করা হবে। খসড়াটি চূড়ান্ত করার জন্য আমরা ইতোমধ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করেছি। খসড়ার ওপর মতামত নেওয়ার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে ২১টি মন্ত্রণালয় থেকে খসড়ার বিষয়ে মতামত পেয়েছি। খসড়াটি আমাদের ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে। সবার মতামত পেলে আবার একটা মিটিং হবে।
তিনি আরও বলেন, আগস্ট মাসের মধ্যে বিধিমালাটি চূড়ান্ত করা হবে। এরপর এটি আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হবে। সেখান থেকে ফেরত আসলে তা গেজেট আকারে প্রকাশের জন্য পাঠানো হবে।
মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা বা অন্য কোনো ধর্মীয় উপাসনালয়; ঈদের জামাত, ওয়াজ মাহফিল, জানাজা, নাম কীর্তন এবং শবযাত্রাসহ অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠান; অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিস, ইফতার ও সেহরীর সময় প্রচার, সরকারি কয়েকটি কার্যক্রমসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এ বিধিমালা কার্যকর হবে না বলে খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে আলেম-উলামাদের সহায়তা চায় সরকার
উচ্চ শব্দের হর্নে নিষেধাজ্ঞা
প্রস্তাবিত বিধিমালায় বলা হয়েছে, গ্রহণযোগ্য মানের বেশি শব্দের হর্ন আমদানি ও বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান অনুমতি দিতে পারবে না। কোনো ব্যক্তি মোটর, নৌ বা অন্য কোনো যানে গ্রহণযোগ্য মানের বেশি শব্দের হর্ন ব্যবহার করতে পারবেন না।
নীরব এলাকায় চলাচলকালে যানবাহনে কোনো প্রকার হর্ন বাজানো যাবে না জানিয়ে বিধিমালায় বলা হয়েছে, কোনো মোটরযান চালক, মালিক বা পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত শব্দ সৃষ্টিকারী কোনো যন্ত্র, যন্ত্রাংশ বা হর্ন মোটরযানে স্থাপন, পুনঃস্থাপন বা ব্যবহার করতে পারবে না বা করার অনুমতি দিতে পারবে না।
কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত শব্দমাত্রার অতিরিক্ত শব্দমাত্রা সৃষ্টিকারী কোনো যন্ত্র, যন্ত্রাংশ, মাইক বা হর্ন আমদানি, উৎপাদন, বাজারজাতকরণ, বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শন, মজুদ, বিতরণ, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিবহন বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে পারবে না বলে খসড়ায় জানানো হয়েছে।
শব্দ ও হর্নের মানমাত্রা নির্ধারণ
বিধিমালা অনুযায়ী, এলাকাভিত্তিক শব্দের মানমাত্রা নীরব এলাকায় দিনে ৫০ ও রাতে ৪০ ডেসিবেল। এছাড়া আবাসিক এলাকায় দিনে ৫৫ ও রাতে ৪৫, মিশ্র এলাকায় দিনে ৬০ রাতে ৫০, বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ৭০ ও রাতে ৬০ এবং শিল্প এলাকায় দিনে ৭৫ রাতে ৭০ ডেসিবেল। এর বেশি মাত্রায় শব্দ করলে শাস্তির মুখে পড়তে হবে।
ভোর ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দিন এবং রাত ৯টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত রাত্রিকালীন সময় হিসেবে চিহ্নিত বলেও খসড়া বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে। বর্তমান বিধিমালাতেও এটি রয়েছে। মোটর যান ও যান্ত্রিক নৌযানের শব্দের মানমাত্রাও আগের মতো রয়েছে।
আরও পড়ুন: শব্দদূষণ রোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা
তবে নতুন করে মোটর যান ও যান্ত্রিক নৌযানের হর্নের মানমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। খসড়ার অনুযায়ী, মোটরযানের মধ্যে দুই বা তিন চাকার হালকা যান ও অন্যান্য হালকা যানের (কার, মাইক্রোবাস, পিকআপ ভ্যান ইত্যাদি) শব্দের মানমাত্রা ৮৫ ডেসিবেল। মাঝারি যানের (মিনিবাস, মাঝারি ট্রাক, মাঝারি কাভার্ড ভ্যান ইত্যাদি) ৯০ ডেসিবেল। ভারী যানের (বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, লরি ইত্যাদি) ১০০ ডেসিবেল এবং যান্ত্রিক নৌযানের হর্নের মানমাত্রা ১০০ ডেসিবেল। এর বেশি শব্দে হর্ন বাজালে শাস্তির মুখে পড়তে হবে।
খসড়া বিধিমালায় বলা হয়েছে, শব্দের নির্ধারিত মাত্রা অতিক্রম করলে; ওভারপাস, ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বা রেল লাইন পাশে শব্দ নিরোধক ব্যবস্থা স্থাপন না করলে কর্তৃপক্ষ শাস্তির মুখে পড়বে।
এছাড়া অনুমতি নেওয়ার পর নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি শব্দে গান-বাজনা করলে এবং রাত ৯টার পর তা অব্যাহত রাখলে, শব্দ উৎপাদনকারী আতশবাজি ব্যবহার করলে, অনুমতি নিয়েও নির্ধারিত সময়ের পর আতশবাজি ব্যবহার করলে, বনভোজনে শব্দের মানমাত্রার অতিক্রমকারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করলে, নির্মাণ কাজের ক্ষেত্রে যন্ত্রপাতির ব্যবহারের বিধি-নিষেধ অনুসরণ না করলে, কারখানার ভেতরে যন্ত্রপাতির কাছে ব্যক্তির জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা না রাখলে এবং কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পালন না করলে শাস্তি পেতে হবে। এক্ষেত্রে প্রতিবার অপরাধের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ এক মাস কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ড।
যানবাহনের হর্ন সংক্রান্ত কোনো নিয়ম লঙ্ঘন করলে প্রতিবার অপরাধের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ এক মাস কারাদণ্ড বা ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড।
খসড়া বিধিমালায় বলা হয়েছে, নিয়ম ভেঙে হর্ন উৎপাদন, আমদানি ও বাজারজাতকরণ করলে সর্বোচ্চ ২ বছরের জেল বা ২ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড। অতিরিক্ত শব্দের হর্ন বিক্রি, বিক্রির জন্য প্রদর্শন, মজুদ, বিতরণ, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিবহন করলে সর্বোচ্চ এক মাস কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ড পেতে হবে।
পেশাদার বা অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান ও নবায়নের ক্ষেত্রে শব্দদূষণ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ ও পরীক্ষা গ্রহণ অন্তর্ভুক্ত হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ পরিবেশ অধিদপ্তরের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রশিক্ষণের বিষয়বস্তু ও ব্যাপ্তি নির্ধারণ করবে।
নতুন বিধিমালায়ও পিকনিক বা বনভোজনের উদ্দেশ্যে শব্দের মানমাত্রা অতিক্রমকারী যন্ত্রপাতির ব্যবহার, নির্মাণ কাজের ক্ষেত্রে যন্ত্রপাতির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, নির্বাচন উপলক্ষে শব্দের মানমাত্রা অতিক্রমকারী যন্ত্রপাতির ব্যবহার ও আবদ্ধ স্থানে শব্দের মানমাত্রা অতিক্রমকারী যন্ত্রপাতির ব্যবহার, কারখানার ভেতরে বা যন্ত্রপাতির কাছে কর্মরত ব্যক্তিদের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিষয়গুলো রয়েছে।
আতশবাজি ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞা
খসড়া বিধিমালায় বলা হয়েছে, শব্দ উৎপাদনকারী আতশবাজি ও সমজাতীয় অন্যান্য যন্ত্র বা কৌশল ব্যবহার করা যাবে না। কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় শর্ত সাপেক্ষে উৎসব, অনুষ্ঠান ও সমাবেশ ইত্যাদির প্রয়োজনে আতশবাজি ব্যবহারের অনুমতি দিতে পারবেন। এ অনুমতি কোনোভাবেই রাত ৯টা পার হবে না। দৈনিক সর্বোচ্চ ৫ ঘণ্টার বেশি ও বিশেষ ব্যতিক্রম ছাড়া ক্রমাগত সর্বমোট ২ দিনের বেশি দেওয়া যাবে না এবং শব্দের মানমাত্রা ৯০ ডেসিবেলের বেশি পার হতে পারবে না।
আরও পড়ুন: শব্দদূষণ রোধে জনসচেতনতার কোনো বিকল্প নেই: ডিএনসিসি প্রশাসক
বিধিমালায় বলা হয়েছে, শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে প্রত্যেক ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন এবং নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষগুলো নিজ নিজ এলাকার মধ্যে আবাসিক, বাণিজ্যিক, মিশ্র, শিল্প ও নিরব এলাকা চিহ্নিত করে স্ট্যান্ডার্ড সংকেত বা সাইনবোর্ড স্থাপন ও সংরক্ষণ করবে।
খসড়ায় বলা হয়েছে, অনুমতি না নিয়ে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোনো এলাকায় শব্দের সর্বোচ্চ মানমাত্রা অতিক্রম করতে পারবে না। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ ও শব্দযন্ত্র ব্যবহারের অনুমোদিত মানমাত্রা পার হলে দায়িত্বরত কর্মকর্তা নিজ এখতিয়ারভুক্ত এলাকায় প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
ঘোষিত নীরব এলাকার ভেতর কোনো প্রতিষ্ঠান ওভারপাস, ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বা রেললাইন স্থাপন করলে যানবাহন ও রেলগাড়ি চলাচলের সময় অনুমোদিত শব্দের মানমাত্রার বেশি শব্দ উৎপন্নের সম্ভাবনা থাকলে রেল বা সড়ক অ্যালাইনমেন্ট বরাবর উভয় পাশে শব্দ নিরোধক ব্যবস্থা স্থাপন করতে হবে।
এতে বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষ নীরব এলাকা ছাড়া শর্ত সাপেক্ষে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সমাবেশে রাত্রিকালীন সময়ে পাবলিক অ্যাড্রেসিং সিস্টেম, মাইক, লাউড স্পিকার, এমপ্লিফায়ার ব্যবহারের অনুমতি দিতে পারবেন। এ অনুমতি কোনোক্রমেই রাত ৯টার বেশি সময়ের জন্য দেওয়া যাবে না। একই সঙ্গে শব্দের মানমাত্রা ৯০ ডেসিবেল এর বেশি পার করা যাবে না।
১১৬ দিন আগে
শব্দদূষণ রোধে জনসচেতনতার কোনো বিকল্প নেই: ডিএনসিসি প্রশাসক
শব্দদূষণ রোধে জনসচেতনতার কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। তিনি বলেন, জনগণের সচেনতাই পারে ঢাকা শহরকে শব্দদূষণের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করতে।
বুধবার (৭ মে) রাজধানীর গুলশান ২ নম্বর সিগন্যালে শব্দদূষণ রোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে ঘোষিত নীরব এলাকায় হর্ন বাজাতে নিরুৎসাহিতকরণ কর্মসূচির উদ্বোধনকালে ডিএনসিসি প্রশাসক এসব কথা বলেন।
তিনি এসময় আরও বলেন, জনসচেতনতার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলার সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে শহরের শব্দদূষণ প্রতিরোধে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
আরও পড়ুন: শব্দদূষণ রোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা
ঢাকা উত্তরের গুরুত্বপূর্ণ করিডোরের সিগন্যালগুলোতে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সহায়তা অযথা হর্ন বাজানো গাড়ির চালককে শনাক্ত করা হবে এবং প্রচলিত আইন অনুসারে শাস্তির আওতায় আনা হবে বলেও জানিয়েছেন ডিএনসিসি প্রশাসক।
তিনি বলেন, বিভিন্ন সামাজিক ও সাস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মাইক ব্যবহারে সৃষ্ট শব্দদূষণ কমানোর জন্য সময়সীমা ও নির্দিষ্ট পরিধির সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। বৃদ্ধ, অসুস্থ সর্বোপরি সকল মানুষের জন্য শব্দ দূষণ অত্যন্ত ক্ষতিকর। শব্দ দূষণ কমানোর জন্য যত্রতত্র অপ্রয়োজনীয় মাইক ব্যবহার বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোকে নির্দশনা দেওয়া হয়েছে।
এ সময়ে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সেন্টার অফ এটমোস্ফেরিক পলুশন স্ট্যাডি’র চেয়ারম্যান ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার এবং গ্রিন ভয়েসের শতাধিক সেচ্ছাসেবক।
২১২ দিন আগে
ধরাছোঁয়ার বাইরে শহরের এক নীরব ঘাতক শব্দদূষণ
সকাল বেলা ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে রাতে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত একজন ব্যক্তি কোনো অস্বাস্থ্যকর খাবার খেলেন না, ধূমপান করলেন না। তা সত্ত্বেও তিনি রোগাক্রান্ত হলেন! কারণ আমাদের চারপাশে প্রতিনিয়ত ঘুরে বেড়াচ্ছে এক নীরব ঘাতক।
ধরাছোঁয়ার বাইরে, কিন্ত আমাদের শরীর ও মন কোনোকিছুই রেহাই পাচ্ছে না এর নেতিবাচক প্রভাব থেকে। হৃদরোগ, টাইপ ২ ডায়াবেটিস, এমনকি মস্তিস্ক থেকে স্মৃতি হারিয়ে যাওয়ার মতো শারীরিক ক্ষতি করতে পারে এই ঘাতক।
এই নীরব ঘাতক কোনো অস্ত্র কিংবা বিষ নয় বরং এটি শব্দ দূষণ। এটি শুধু যে শ্রবণশক্তি কমিয়ে দেয় তা নয়, এটি মানবদেহে নানা ক্ষতি করে থাকে।
অবাক করার মতো বিষয় হলো আমাদের রাজধানী ঢাকা বিশ্বে শব্দ দূষণের শীর্ষে অবস্থান করছে। ঢাকা শহরে রাস্তায় নামলে মাঝে মাঝে মনে হয়, গাড়ি চালকেরা যেন হর্ন বাজানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। কোনো কিছু সামনে পড়ে গেলেই কানফাটা শব্দে বেজে উঠছে হর্ন।-খবর বিবিসির
আরও পড়ুন: শ্রবণক্ষমতা হারানোর ঝুঁকি কমাতে শব্দদূষণ রোধ জরুরি: পরিবেশ উপদেষ্টা
এছাড়া নানা উৎসব আয়োজনে উচ্চশব্দে গান বাজানো, নির্মাণ কাজ, গ্রিল-টাইলস কাটা, মেশিনে ইট ভাঙা, নানা প্রচারণায় মাইক বাজানো, জেনারেটরের শব্দে কানের অবস্থা নাজেহাল হয়ে যায়। এই শহরের মানুষ বাধ্য হয়েই এই শব্দের তাণ্ডবের সঙ্গে মানিয়ে নেয়। কিন্তু এই শব্দদূষণ কীভাবে আমাদের ক্ষতি করছে, তা আমরা সবাই জানি তো?
সেন্ট জর্জেসের ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের অধ্যাপক শার্লট ক্লার্ক বলেছেন, ‘শব্দদূষণ এমন একটি জনস্বাস্থ্যগত সমস্যা, প্রচুর মানুষ এই সমস্যায় পড়ে থাকেন। কিন্তু এমন একটি সমস্যা নিয়ে আমরা খুব কমই কথা বলি।’
শব্দদূষণ কখন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে, সেটি কিভাবে মানুষের ক্ষতিসাধন করে, তা জানতে অনুসন্ধান চালিয়েছেন বিবিসির এক সাংবাদিক জেমস গ্যালাঘের। এ সময় তিনি কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলেছেন, এই ঘাতকের হাত থেকে বাঁচার কোনো উপায় আছে কিনা সে উত্তরও খুঁজে দেখেছেন।
প্রথমেই জেমস অধ্যাপক ক্লার্কের সঙ্গে একটি সম্পূর্ণ নিঃশব্দ ল্যাবরেটরিতে যান। সেখানে তিনি নানা পরীক্ষার মাধ্যমে দেখান কোন ধরনের শব্দে মানবশরীর কেমন প্রতিক্রিয়া জানায়। এজন্য তাকে মোটা স্মার্টওয়াচের মতো যন্ত্র পড়ানো হয়।
সাধারণত এই কাজে হার্টরেট মনিটর (যা হৃদস্পন্দন পরিমাপ করে), গ্যালভানিক স্কিন রেসপন্স (ত্বকের ঘাম থেকে স্নায়বিক উত্তেজনা পরিমাপ করে), ইলেকট্রোএনসেফালোগ্রাফি (অ্যামিগডালার সক্রিয়তা পরিমাপ করে) ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।
যন্ত্রটি জেমসকে পরানোর পরে তাকে ঢাকার যানজটের সময় রেকর্ড করা ভিন্ন পাঁচটি শব্দ শোনানো হয়। তিনি জানান, ‘তীব্র এক যানজটের মধ্যে রয়েছেন— এমন মনে হচ্ছিল তার। তার পরিহিত যন্ত্রের সেন্সরে এই শব্দের কারণে তার হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়ার রেকর্ড হয়। শুধু তাই নয়, ঘামছিলেনও।’
অধ্যাপক ক্লার্ক বলেন, ‘এই পরীক্ষা প্রমাণ করে শব্দ মানুষের হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করে। কারণ উচ্চশব্দে হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়।’
জেমস জানান, ‘ঢাকার ওই পাঁচটি শব্দের মধ্যে বাচ্চাদের খেলা করার সময়ে আনন্দপূর্ণ কোলাহলের শব্দটি তার শরীরে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, বাকি কুকুরের ঘেউ ঘেউ কিংবা গভীর রাতে অন্য বাসায় উচ্চশব্দে গান বাজানোর শব্দে তার শরীরে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে।
কিন্তু একেক রকম শব্দে কেন শরীর ভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া করে জানতে চাইলে ক্লার্ক বলেন, ‘আমাদের শরীর শব্দ সংবেদনশীল। রাগ, উত্তেজনা, ভয়ের মতো শব্দেও শরীর প্রতিক্রিয়া করে।’
ক্লার্ক জানান, ‘কানই প্রথমে যেকোনো শব্দ গ্রহণ করে। এরপর সেটি ককলিয়ার নার্ভের মাধ্যমে মস্তিষ্কে পাঠায়। এরপর অ্যামিগডালা নামে মস্তিস্কের একটি অংশ এই শব্দ চিহ্নিত করে প্রতিক্রিয়া জানায়।’
যখনই কোনো উচ্চমাত্রার শব্দ মস্তিষ্কে পৌঁছায়, এরপর অ্যামিগডালা সেটি শনাক্ত করলে তা আমাদের নার্ভার্স সিস্টেমকে সক্রিয় করে তোলে। এতে শরীরে কর্টিসল ও অ্যাড্রেনালিন হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়।
প্রথমদিকে এতে ক্ষতি না হলেও কয়েকবছর ধরে একইরকম শব্দ শুনতে থাকলে তা মানুষের রক্তচাপ ও হৃৎস্পন্দনের হার বৃদ্ধি করে। ফলে হার্ট অ্যাটাক, উচ্চরক্তচাপ, লেভেল ২ ডায়াবেটিসের মতো রোগের ঝুঁকি সৃষ্টি করে বলে জানান অধ্যাপক ক্লার্ক। তাছাড়া এটি শ্রবণশক্তিও কমিয়ে দেয় বলে জানান তিনি।
আরও আশঙ্কার কথা হলো, আমরা যখন ঘুমিয়ে থাকি, তখনও শব্দ ঠিক একইভাবে আমাদের ক্ষতি করে। ক্লার্ক বলেন, ‘মানুষের কান সদা জাগ্রত। তাই আমরা ঘুমিয়ে থাকলেও শব্দ শুনতেই থাকি। একারণে আশপাশে উচ্চশব্দ থাকলে তা ঘুমন্ত অবস্থাতেও ক্ষতি করে।’
আসলে শব্দদূষণ একটি অবাঞ্ছিত বিষয়। ধরুন, আপনার পাশের বাড়িতে কারো বিয়ে, তারা আনন্দ করতে গান বাজাচ্ছে। এই আনন্দ তাদের পাশাপাশি অন্যদেরও ক্ষতিসাধন করে চলে। আর এটি আমরা বুঝতেই পারি না, আবার নিজে বুঝলেও অন্যকে বুঝাতে পারি না।
বিবিসির প্রতিবেদনে শব্দদূষণে ক্ষতির শিকার কয়েকজন ভুক্তভোগীর কথা উঠে এসেছে। জেমসের কাছে দেওয়া সাক্ষাতকারে নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন স্পেনের বার্সালোনার ভিলা দে গ্রাসিয়া এলাকারনিবাসী কোকো।
তিনি জানান, ‘ইতোমধ্যেই বুকের ব্যথা নিয়ে দুইবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তার বাসার আশপাশের উচ্চ শব্দের কারণেই এই সমস্যা হচ্ছে বলে কোকোর ধারণা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জন্য শব্দদূষণ সংক্রান্ত তথ্য পর্যালোচনাকারী গবেষক ড. মারিয়া ফোরাস্টারের মতে, শুধু ট্র্যাফিক শব্দের কারণে বার্সেলোনায় প্রতি বছর আনুমানিক ৩০০টি হার্ট অ্যাটাক ও ৩০টি মৃত্যু ঘটে।
ড. মারিয়া জানান, ইউরোপে প্রতিবছর ১২ হাজারের মতো অকাল মৃত্যু, নিদ্রাহীনতা ও নানা ধরনের মানসিক সম্যসার সঙ্গে শব্দদূষণ জড়িত। ৫৩ ডেসিবলের বেশি মাত্রার শব্দই হার্টের জন্য ক্ষতিকর বলে উল্লেখ করেন তিনি।
মারিয়া বার্সোলোনার একটি সড়ক ঘুরিয়ে দেখান জেমসকে, যেখানে শব্দের মাত্রা ৬০ ডেসিবলের চেয়ে কম। তিনি জানান, এই এলাকার যানবাহনগুলো ধীরে চলার কারণে ও অতিরিক্ত হর্ণ না বাজানোর কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে। এ ছাড়াও সড়কের পাশ পথচারীদের হাঁটার জায়গা, ক্যাফে ও ফুলের বাগানের জন্য ফাঁকা জায়গা রয়েছে। কিছু শব্দ যে আমাদের জন্য ভালো তাতো জেমস তিনি ল্যাবরেটরিতে বুঝতে পেরেছিলেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, ৬৫ ডেসিবেল (ডিবি) এর উপরে শব্দের মাত্রা দূষণ হিসাবে বিবেচিত হয়। যার মধ্যে ৭৫ ডিবি ক্ষতিকারক এবং ১২০ ডিবি সরাসরি যন্ত্রণাদায়ক। ২০১৮ সালে ডব্লিউএইচও স্বাস্থ্যগত কারণে ট্র্যাফিক শব্দকে ৫৩ ডিবিতে সীমাবদ্ধ করার সুপারিশ করেছিল।
বাংলাদেশে শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬ অনুযায়ী, নীরব এলাকায় গ্রহণযোগ্য শব্দসীমা দিনের বেলায় ৫০ ডেসিবেল এবং রাতে ৪০ ডেসিবেল। আবাসিক এলাকায় দিনের জন্য ৫৫ ডিবি এবং রাতের জন্য ৪৫ ডিবি। মিশ্র অঞ্চলে দিনের জন্য ৬০ ডিবি এবং রাতের জন্য ৫০ ডিবি। বাণিজ্যিক এলাকায় দিনের জন্য ৭০ ডিবি এবং রাতের জন্য ৬০ ডিবি এবং শিল্পাঞ্চলে দিনের জন্য ৭৫ ডিবি এবং রাতের জন্য ৭০ ডিবি।
কিন্তু, ঢাকার বাসিন্দারা প্রতিদিন বাসাবাড়িতে, কর্মস্থলে, স্কুল এমনকি হাসপাতালগুলোতে বিপজ্জনক মাত্রার শব্দের সম্মুখীন হচ্ছেন। শব্দদূষণ কেন এত বৃদ্ধি পাচ্ছে— এই প্রশ্নের উত্তরে জেমসের প্রতিবেদনে দেখা যায়, নগরায়নের ফলের শহরগুলোতে এই সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
নিয়মিতই সম্প্রসারণ ঘটছে মেগাসিটি ঢাকার। এটি বিশ্বের অন্যতম বর্ধনশীল নগরী। যার ফলে যানবাহন বৃদ্ধি পাচ্ছে ঢাকায়। আর হর্ন বাজানো সম্ভবত ঢাকার গাড়ি চালকদের একটি বড় বদভ্যাস। ট্রাফিক সিগনাল ও জ্যামে আটকে থাকার সময় সামনে এগনো যাবে না জেনেও হর্ন বাজান তারা।
ঢাকার শহরের এই শব্দদূষণ প্রতিরোধ করতে আন্দোলন করে অনেকের নজর কেড়েছেন শিল্পী মোমিনুর রহমান রয়াল। তিনি ‘একাকী নায়ক’ নামে পরিচিত। তিনি প্রতিদিন ঢাকার কোনো এক ব্যস্ত সড়কে ১০ মিনিট একটি হলুদ প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। প্রচণ্ড শব্দে হর্ণ বাজানো বন্ধ করতে তিনি এই কাজ করে থাকেন।
আরও পড়ুন: শব্দদূষণকারীদের প্রতিহত করতে হবে: পরিবেশ সচিব
শুধু ঢাকাই নয়, তিনি সমগ্র বাংলাদেশ থেকেই এই উচ্চ শব্দে হর্ন বাজানো বন্ধ করতে চান। শব্দ দূষণের জন্য তিনি কেবল মানুষকেই দায়ী করেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, তিনি মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর শব্দদূষণের প্রভাব নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন।
তিনি বলেন, ‘দুয়েক বছরের মধ্যে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়, তবে ঢাকার শব্দদূষণ অব্যশই কমিয়ে আনা সম্ভব। কম শব্দে মানুষ যখন ভালো অনুভব করবেন, তখন নিজেরাই তাদের অভ্যাস পরিবর্তন করবেন।’
তবে শব্দদূষণ দূর করা কঠিন, জটিল ও চ্যালেঞ্জপূর্ন বল মন্তব্য করেছেন পরিবেশ উপদেষ্টা। এদিকে শব্দ দূষণকে ‘এক নীরব ঘাতক ও ধীরে কাজ করা বিষ’ বলে অভিহিত করেছেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালের অধ্যাপক ড. মাসরুর আবদুল কাদের।
২৬১ দিন আগে
শ্রবণক্ষমতা হারানোর ঝুঁকি কমাতে শব্দদূষণ রোধ জরুরি: পরিবেশ উপদেষ্টা
শ্রবণক্ষমতা হারানোর ঝুঁকি কমাতে শব্দদূষণ রোধ ও সচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এজন্য মানসিকতা পরিবর্তন করে অপ্রয়োজনীয় শব্দ সৃষ্টি হতে বিরত থাকার আহ্বান জানান তিনি।
সোমবার (৩ মার্চ) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নাক, কান, গলা ও হেড-নেক ক্যান্সার হাসপাতাল ও ইন্সটিটিউটে বিশ্ব শ্রবণ দিবস ২০২৫ উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
এদিন আলোচনা সভার আগে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় এবারের প্রতিপাদ্য ছিল ‘মানসিকতার পরিবর্তন: নিজেকে শক্তিশালী করে তুলুন।’
সভায় উপদেষ্টা বলেন, শ্রবণস্বাস্থ্য রক্ষা শুধু ব্যক্তিগত বিষয় নয়, এটি পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যেরও গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
আরও পড়ুন: ঢাকার ১৯ খাল উদ্ধারের পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়েছে: রিজওয়ানা
তিনি বলেন, শব্দদূষণ শ্রবণক্ষমতা কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। শহরাঞ্চলে অতিরিক্ত যানবাহনের হর্ন, শিল্পকারখানার শব্দ ও উচ্চস্বরে মাইক ব্যবহারের কারণে শ্রবণজনিত সমস্যার ঝুঁকি বাড়ছে।
সরকার শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে বলে জানান তিনি। তবে এ বিষয়ে নাগরিকদেরও সচেতন হতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, হর্ন বাজানো, সামাজিক অনুষ্ঠানসহ দৈনন্দিন কাজে অপ্রয়োজনীয় শব্দ সৃষ্টি বন্ধ করা জরুরি।
সভায় সভাপতিত্ব করেন ইএনটি অ্যান্ড হেড-নেক ক্যান্সার হাসপাতাল অ্যান্ড ইনস্টিটিউটের সভাপতি ও সাবেক সচিব সিদ্দিকুর রহমান চৌধুরী।
এতে আরও বক্তব্য দেন ফাউন্ডেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. জাহানারা আলাউদ্দিন, সদস্য সচিব কামরুল হাসান তরফদার, বাংলাদেশ ইএনটি হাসপাতালের প্রফেসর মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ, উত্তরা আধুনিক হাসপাতালের অধ্যাপক ড. ফিরোজ আহমেদ খান ও হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ড. আলী ইমাম।
আরও পড়ুন: পাহাড়ে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের বিদ্যুৎ, পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে: রিজওয়ানা হাসান
আলোচনা সভায় চিকিৎসক, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। বিশেষজ্ঞ বক্তাগণ শ্রবণ সমস্যা কমাতে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ ও সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দেন।
২৭৭ দিন আগে
ঢাকায় শব্দদূষণে দুঃস্বপ্নের রাত
পার্শ্ববর্তী নির্মাণস্থলে ইট ভাঙার বিকট শব্দে টানা নির্ঘুম দুই রাত কাটানোর পর ৯৯৯ নম্বরে কল করেন রোমেনা আহমেদ। স্বস্তি পেতে রাতের কাজ বন্ধ রাখতে পুলিশকে হস্তক্ষেপের অনুরোধ জানান তিনি। পুলিশ তাৎক্ষণিক সাড়া দেওয়ায় নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয় ওই ঠিকাদার।
তবে রোমেনা যে সমাধানটি পেয়েছেন, তা সবসময় পাওয়া সহজ নয়। কারণ, অনেকে নিশ্চিত নন যে, একই পরিস্থিতিতে পুলিশের সহায়তা পাওয়া যাবে কিনা।
নগরীতে বাড়ছে শব্দদূষণ
গত বছর তৃতীয়বারের মতো ঢাকা সফর করা কানাডিয়ান বিল ম্যাকলেইন তার অভিজ্ঞতার বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, ‘ঢাকায় কোলাহল অসহনীয় হয়ে উঠেছে। এ বার রাস্তায় চলাচলের সময় শব্দ আটকাতে ইয়ারপ্লাগ ব্যবহার করতে হয়েছে।’
‘ঢাকার রাস্তায় পা রাখলে প্রায়ই মনে হয় যেন গাড়ির হর্নের শব্দের শহরে ঢুকে পড়া। গাড়ির চালকরা সবচেয়ে জোরে শব্দ করার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। মাত্র এক সেকেন্ড দেরি হলে কান ফাটানো হর্ন বাজানো শুরু হতে থাকে।’
বিশৃঙ্খলার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নির্মাণ ক্ষেত্রগুলোর অবিরাম খটখট শব্দ। ধাতব বস্তু কাটার শব্দ, ইট ভাঙার শব্দ এবং জেনারেটরের শব্দ।
এই শহরে উচ্চ শব্দের কোনো লাগাম নেই। এমতাবস্থায় শহরে শান্তি বিরল হয়ে উঠেছে।
মালিবাগের বাসিন্দা নাজমা বেগম বলেন, ‘এখন তো রাস্তার বিক্রেতারাও পণ্য বিক্রি করতে লাউডস্পিকার ব্যবহার করছে। এটা সহনীয় নয়, এসব বন্ধ করতে হবে।‘
২০১৭ সালে বাংলাদেশে মোটরযানে হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে উচ্চ আদালত। কারণ এটি ১২০ ডেসিবেলের আকারে পৌঁছতে পারে এবং ৬০ সেকেন্ডেরও বেশি সময় ধরে এই স্তরের সংস্পর্শে থাকলে তাৎক্ষণিক আঘাত এবং শ্রবণশক্তির ক্ষতির কারণ হতে পারে।
বাস্তবে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সরকার হাইকোর্টের নির্দেশনা ভুলে গেছে এবং ঢাকার রাস্তায় চলাচলকারী অধিকাংশ যানবাহন এখনো তা ব্যবহার করছে।
মাসুদ নামে এক চাকরিজীবী বলেন, 'অফিসে পৌঁছানোর জন্য গণপরিবহন পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। কিন্তু, রাস্তায় বিভিন্ন যানবাহনের হর্নের কারণে অপেক্ষার সময় ভয়াবহ হয়ে ওঠে।’
শব্দদূষণে স্বাস্থ্যঝুঁকি
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, ৬৫ ডেসিবেল (ডিবি) এর উপরে শব্দের মাত্রা দূষণ হিসাবে বিবেচিত হয়। যার মধ্যে ৭৫ ডিবি ক্ষতিকারক এবং ১২০ ডিবি সরাসরি যন্ত্রণাদায়ক। ২০১৮ সালে ডব্লিউএইচও স্বাস্থ্যগত কারণে ট্র্যাফিক শব্দকে ৫৩ ডিবিতে সীমাবদ্ধ করার সুপারিশ করেছিল।
বাংলাদেশে শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬ অনুযায়ী, নীরব এলাকায় গ্রহণযোগ্য শব্দসীমা দিনের বেলায় ৫০ ডেসিবেল এবং রাতে ৪০ ডেসিবেল। আবাসিক এলাকায় দিনের জন্য ৫৫ ডিবি এবং রাতের জন্য ৪৫ ডিবি। মিশ্র অঞ্চলে দিনের জন্য ৬০ ডিবি এবং রাতের জন্য ৫০ ডিবি। বাণিজ্যিক এলাকায় দিনের জন্য ৭০ ডিবি এবং রাতের জন্য ৬০ ডিবি এবং শিল্পাঞ্চলে দিনের জন্য ৭৫ ডিবি এবং রাতের জন্য ৭০ ডিবি।
নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় শব্দের সর্বোচ্চ মাত্রা অতিক্রম করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
কিন্তু, ঢাকার বাসিন্দারা প্রতিদিন বাসাবাড়িতে, কর্মস্থলে, স্কুল এমনকি হাসপাতালগুলোতে বিপজ্জনক মাত্রার শব্দের সম্মুখীন হচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞরা অপরিবর্তনীয় শব্দ-প্ররোচিত শ্রবণশক্তি হ্রাস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ঘুমের ব্যাঘাত এবং অতিরিক্ত শব্দ দীর্ঘ সময় উৎপন্নের কারণে সৃষ্ট মানসিক চাপ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন।
জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) ফ্রন্টিয়ার্সের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শব্দ দূষণ শহুরে বন্যজীবনকেও ব্যাহত করে, পাখি, ব্যাঙ এবং পোকামাকড়ের মধ্যে যোগাযোগকে প্রভাবিত করে এবং তাদের বেঁচে থাকার জন্য হুমকিস্বরূপ।
প্রতিবেদনে কোলাহলপূর্ণ পরিবেশের প্রভাব সম্পর্কে উদ্বেগজনক পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে। শুধুমাত্র ইউরোপে, দীর্ঘ সময় ধরে উৎপন্ন শব্দের কারণে বছরে ১২ হাজার অকাল মৃত্যু এবং ৪৮ হাজার নতুন ইসকেমিক হৃদরোগের জন্য দায়ী।
শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ চেষ্টা
শব্দদূষণ রোধে গত বছরের ১ অক্টোবর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আশপাশের ৩ কিলোমিটার এলাকাকে 'নীরব এলাকা' ঘোষণা করা হয়।
এই উদ্যোগের লক্ষ্য হলো হর্ন বাজানো নিষিদ্ধ করা। আইন অমান্যকারীদের ৫০০ টাকা করে জরিমানা করা হতে পারে। এটি গেল ডিসেম্বর থেকে কঠোরভাবে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল।
বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক), ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি), পরিবেশ অধিদপ্তর, সড়ক অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি এই নিয়ন্ত্রণ প্রবিধানটি কার্যকর করার দায়িত্বে রয়েছে।
আরও পড়ুন: শব্দদূষণে নাকাল রাজধানীবাসী, নেই আইনের কার্যকর প্রয়োগ
পরিবেশ উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, প্রাথমিকভাবে এই উদ্যোগটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে গুরুত্ব দেওয়া হবে এবং পরে পুরো ঢাকা শহরে এটি বিস্তৃত করা হবে এবং পর্যায়ক্রমে বিভাগীয় শহরগুলোকেও শব্দদূষণ রোধে এই কর্মসূচির আওতায় আনা হবে।
তিনি আরও বলেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়নে হর্ন ব্যবহার নিষিদ্ধ করার শর্ত অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
নীরব অঞ্চল: এখনও দেখেনি আলোর মুখ
সচিবালয়, আগারগাঁও এবং সংসদের মতো অঞ্চলে নীরব অঞ্চলগুলোর পূর্ববর্তী ঘোষণা সত্ত্বেও কোনো উল্লেখযোগ্য প্রয়োগ পাওয়া যায়নি। সেন্টার ফর অ্যাটমোস্ফেরিক পলিউশন স্টাডিজের (সিএপিএস) একটি গবেষণায় এমন চিত্রই উঠে এসেছে।
স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর অ্যাটমোসফেরিক পলিউশন স্টাডিজ (ক্যাপস) ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত ঢাকার ১০টি স্থানে শব্দের মাত্রা নিয়ে বছরব্যাপী গবেষণা চালিয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, জরিপ করা সমস্ত অঞ্চলে শব্দ গ্রহণযোগ্য সীমা অতিক্রম করেছে। বিশেষত, নীরব এলাকায় ৯৬ দশমিক ৭ শতাংশ, আবাসিক এলাকায় ৯১ দশমিক ২ শতাংশ, মিশ্র-ব্যবহারের এলাকায় ৮৩ দশমিক ২ শতাংশ, বাণিজ্যিক অঞ্চলে ৬১ শতাংশ এবং শিল্প অঞ্চলে ১৮ দশমিক ২ শতাংশ শব্দের মাত্রা মানসীমা ছাড়িয়ে গেছে।
আরও পড়ুন: শব্দদূষণ-উপকূলীয় এলাকায় দূষণ প্রতিরোধে শিক্ষার্থীদের যুক্ত করা হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা
সচিবালয় এলাকায় শব্দের মাত্রা গড়ে ৭৯ দশমিক ৫ ডেসিবেল, যা অনুমোদিত সীমার চেয়ে অনেক বেশি।
স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহমেদ কামরুজ্জামান বলেন, 'হর্ন বাজানো বন্ধ করতে পারলে ঢাকার শব্দদূষণ ৬০ শতাংশ কমাতে পারব।’
তিনি এ সমস্যা কার্যকরভাবে রোধে শক্তিশালী আইনি কাঠামো ও জনগণের সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
আগামীর করণীয়
সরকার ২০২৫ সালের জানুয়ারির মধ্যে ঢাকার আরও ১০টি সড়ককে নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষণার পরিকল্পনা করেছে। তাই বিশ্বের অন্যতম কোলাহলপূর্ণ শহরটিতে শব্দ দূষণ কমার আশা করা হচ্ছে।
পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সম্প্রতি বলেছেন, শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে শিগগিরই নতুন বিধিমালা চূড়ান্ত করা হবে, যা শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে ক্ষমতা দেবে।
তিনি কেবল জরিমানা এবং কারাদণ্ডের চেয়ে আরও বেশি কিছু করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন।
তিনি বলেন, জনসচেতনতা ও দায়িত্বশীল আচরণই মূল বিষয়।
উপদেষ্টা বলেন, মানুষের অভ্যাস পরিবর্তন করতে সময় লাগবে, তবে যথাযথ প্রশিক্ষণ এবং প্রয়োগের মাধ্যমে আমরা হর্ন বাজানো উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারি।
তিনি জরিমানা আরোপের আগে চালক এবং সাধারণ জনগণ উভয়কেই প্রশিক্ষিত করার গুরুত্বের উপর জোর দেন। শব্দ দূষণের বিষয়ে জনসাধারণের আচরণে পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার উপরও জোর দিয়েছেন পরিবেশ উপদেষ্টা।
আরও পড়ুন: শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে দায়িত্বশীল ও সচেতন হতে হবে: উপদেষ্টা রিজওয়ানা
৩৩২ দিন আগে
শব্দদূষণ-উপকূলীয় এলাকায় দূষণ প্রতিরোধে শিক্ষার্থীদের যুক্ত করা হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ ও সেন্টমার্টিনসহ উপকূলীয় এলাকায় দূষণ প্রতিরোধে শিক্ষার্থীদের যুক্ত করা হবে। এ কাজের জন্য বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার তরুণদের সহযোগিতা নেওয়া হবে।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) তার বাসভবন থেকে অপারেটিং ডাইভার্সিফায়েড অপরচুনিটিজ ইন মাস-মিটিগেশন অব অবস্টাকলস অব গার্লস এডুকেশন প্রকল্পের আওতায় সিএমকে সেন্টারে আয়োজিত সভায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সংলাপ শনিবার
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, নারীদের শিক্ষার চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধানে সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। এছাড়া পরিবার, সমাজ ও বেসরকারি খাতের সক্রিয় সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে, যেন নারীরা স্কুলে যেতে পারে এবং পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে।
আলোচনা সভায় নীতিনির্ধারক, শিক্ষাবিদ ও নাগরিক সমাজের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। তারা মেয়েদের শিক্ষার অগ্রাধিকার নিশ্চিত করতে বাস্তবসম্মত সমাধান ও নীতি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেন।
আরও পড়ুন: সুলভ মূল্যে ভোক্তারা পাবেন ১০ কৃষিপণ্য: বাণিজ্য উপদেষ্টা
৪১৬ দিন আগে
শব্দদূষণে নাকাল রাজধানীবাসী, নেই আইনের কার্যকর প্রয়োগ
শব্দদূষণে নাকাল ঢাকাবাসী। দিনকে দিন বেড়েই চলেছে শব্দদূষণের মাত্রা। যানবাহনে অকারণে হর্ন দেওয়া, সাউন্ড বক্স বা মাইকের উচ্চমাত্রার শব্দের কারণে মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব পড়ছে। শব্দদূষণ অসহনীয় হয়ে উঠলেও এটি রোধে নেই আইনের কার্যকর প্রয়োগ।
মাত্রাতিরিক্ত শব্দদূষণে শ্রবণশক্তি হারাচ্ছে নগরীর বাসিন্দারা। বিশেষ করে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থীসহ সব ধরনের মানুষ শব্দদূষণের ভুক্তভোগী। এছাড়াও শিশু, বয়স্ক ও রোগীদের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব প্রকট হয়ে উঠছে। তবুও এই শব্দদূষণ রোধে নেই মানুষের সচেতনতা।
এমনকি শব্দদূষণের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না ট্রাফিক পুলিশও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শব্দদূষণের কারণে ট্রাফিক পুলিশেদের কানে সমস্যা হয়। দীর্ঘদিন সড়কে কাজ করায় অতিরিক্ত শব্দের কারণে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়।
এ বিষয়ে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার ইউএনবিকে বলেন, ‘ক্রমবর্ধমান যানবাহনে অহেতুক হর্ন, যত্রতত্র সাউন্ড বক্স, মাইকের মাধ্যমে উচ্চশব্দ সৃষ্টি হওয়ায় মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শব্দদূষণের অনেক ক্ষতিকর প্রভাব মানুষ জানেই না। বিশেষ করে মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি তো আছেই, শহরে উদ্ভিদের বংশবিস্তারও দিন দিন কমে যাচ্ছে। গাছ-গাছালির পরাগায়ন হচ্ছে না। এতে শস্যের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। রাস্তার পাশে ফেরিওয়ালা থেকে শুরু করে যারাই রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা থাকছে, তারা অনেক বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।’
আরও পড়ুন: শব্দদূষণ রোধ না করলে মানুষের শ্রবণ সমস্যা বৃদ্ধি পাবে: উপমন্ত্রী
অধ্যাপক কামরুজ্জামান বলেন, ‘যেহেতু শব্দদূষণের অন্যতম উৎস হলো হর্ন। এটি বন্ধ করতে পারলেই ঢাকা শহরের ৬০ শতাংশ শব্দদূষণ কমে যাবে। কিন্তু এটি বন্ধ করার জন্য আইনগত যে ভিত্তি রয়েছে সেটি দুর্বল।’
তিনি আরও বলেন, ‘শব্দদূষণ রোধে আমাদের যে দুটি আইন রয়েছে সেটি ভালো ভূমিকা রাখতে পারছে না। এছাড়া আইন অনুযায়ী স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, মসজিদ এলাকায় ১০০ মিটার পর্যন্ত নীরব এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা আছে। আইনের সংজ্ঞা অনুযায়ী পুরো ঢাকা শহরই নীরব এলাকা। কোথাও হর্ন দেওয়া যাবে না। আইন প্রয়োগ করতে গেলে এটা একটা বড় সীমাবদ্ধতা।’
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, শব্দদূষণ রোধে মানুষের সচেতনতা অনেক বেশি জরুরি। প্রয়োজনের বাইরে হর্ন বাজানো যাবে না, পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় মাইক ও উচ্চ আওয়াজ থেকে দূরে থাকতে হবে। এখন দেখা যাচ্ছে তরুণ-তরুণীরা সারাক্ষণ হেডফোন কানে লাগিয়ে রাখেন, এটাও ক্ষতিকর।’
শব্দদূষণ কমাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা দরকার উল্লেখ করে অধ্যাপক কামরুজ্জামান বলেন, ‘পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশে গাড়ির হর্ন দিলে জরিমানার ব্যবস্থা থাকলেও বাংলাদেশের সেই পরিস্থিতি নেই। এখানে আইন আছে, কিন্তু প্রয়োগ নেই। মানুষকে সচেতন হতে হবে এবং যথাযথ আইন তৈরি করে এর জোরালো বাস্তবায়ন করতে হবে।’
অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার জানান, বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) গবেষণায় শব্দদূষণের বিভিন্ন উৎস উঠে এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে- গাড়ির হর্ন, নির্মাণকাজ, মাইকের ব্যবহার, শিল্প-কারখানা ও ইনডোর—বাসাবাড়ির কাজ, টাইলস কাটা ও ড্রিল মেশিনের শব্দ।
তিনি বলেন, শব্দদূষণ বিধিমালা-২০০৬ অনুযায়ী আবাসিক এলাকায় রাত ৯টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত শব্দের মাত্রা ৪৫ ডেসিবেল এবং দিনের অন্য সময় ৫৫ ডেসিবেল অতিক্রম করতে পারবে না। বাণিজ্যিক এলাকায় তা যথাক্রমে ৬০ ও ৭০ ডেসিবেল। হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালতের আশপাশে ১০০ মিটার পর্যন্ত নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা রয়েছে। সেখানে রাতে ৪০ ও দিনে ৫০ ডেসিবেল শব্দমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া আছে।
এই আইনে শাস্তি হিসেবে বলা আছে, আইন অমান্য করলে প্রথমবার অপরাধের জন্য এক মাস কারাদণ্ড বা অনধিক পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড এবং পরবর্তী অপরাধের জন্য ছয় মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে।
কিন্তু বাস্তবে এ আইনের তেমন প্রয়োগ দেখা যায় না বলে জানান অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার।
ক্যাপসের গবেষণায় দেখা গেছে, সব স্থানেই শব্দের তীব্রতা প্রায় একই রকম। আইনের মান্যতায় সাজার বিধান থাকলেও বাস্তবে এর প্রয়োগ দেখা যাচ্ছে না।
শুধু শব্দদূষণ আইন নয়, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫ সালের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে করা সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ তে গাড়ির লাইসেন্স থেকে শুরু করে রেজিস্ট্রেশন কীভাবে হবে- প্রতিটি বিষয় আলাদা আলাদা করে বলা আছে। চালক কখন হর্ন বাজাবেন, কখন বাজাবেন না তাও উল্লেখ করা আছে, যা অনেক জরুরি আইন। কিন্তু রাজধানীসহ দেশের জেলা শহরগুলোতে এ আইনের বাস্তবায়ন নেই বললেই চলে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম ইউএনবিকে বলেন, ঢাকার শব্দদূষণের মাত্রা গ্রহণযোগ্য মাত্রার দ্বিগুণের বেশি হওয়ার কারণে মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলছে। কানে কম শোনা ছাড়া ডায়াবেটিস এবং হার্ট সংক্রান্ত জটিলতা বেড়েছে। শিশু, গর্ভবতী নারী ও বয়স্ক অসুস্থ মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ১২০ ডেসিবেল শব্দ সঙ্গে সঙ্গেই কান নষ্ট করে দিতে পারে। প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে ৮৫ ডেসিবেল শব্দ যদি কোনো ব্যক্তির কানে প্রবেশ করে তাহলে ধীরে ধীরে তার শ্রবণশক্তি নষ্ট হবে।’
শব্দদূষণ নিয়ে ক্যাপসের সর্বশেষ গবেষণায় জানা যায়, ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত এক বছর ঢাকা শহরের ১০টি স্থানের শব্দের তথ্য-উপাত্ত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সংগ্রহ করে ক্যাপস। এই ১০টি স্থানের নীরব এলাকায় ৯৬.৭ শতাংশ সময় আদর্শ মান (৫০ ডেসিবেল) অতিক্রম করেছে, আবাসিক এলাকায় ৯১.২ শতাংশ সময় আদর্শ মান (৫৫ ডেসিবল) অতিক্রম করেছে, মিশ্র এলাকায় ৮৩.২ শতাংশ সময় আদর্শ মান (৬০ ডেসিবেল) অতিক্রম করেছে, বাণিজ্যিক এলাকায় ৬১ শতাংশ সময় আদর্শ মান (৭০ ডেসিবেল) অতিক্রম করেছে এবং শিল্প এলাকায় ১৮.২ শতাংশ সময় আদর্শ মান (৭৫ ডেসিবেল) অতিক্রম করেছে।
ঢাকা শহরের ১০টি স্থানেই ৮২ শতাংশ সময় ৬০ ডেসিবেলের ওপরে শব্দ পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন: দেশকে শব্দদূষণমুক্ত করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
৫২২ দিন আগে
যেখানে সেখানে হর্ন বাজানোর অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
যেখানে সেখানে হর্ন বাজানোর অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘আমরা যখন বিদেশে বা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় যাই তখন শব্দদূষণ করি না। ক্যান্টনমেন্টের বাইরে গেলে আবার হর্ন বাজাই। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।'
শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) মৌলভীবাজার জেলা স্কাউট ভবনের সম্প্রসারণের উদ্বোধন শেষে মতবিনিমিয় ও অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন পরিবেশমন্ত্রী।
এসময় তিনি বলেন, শব্দদূষণ রোধে সচেতনতা বৃদ্ধিতে আগামী ১৫ অক্টোবর সকাল ১০টায় রাজধানীতে এক মিনিট নীরবতা পালন করবো, শব্দদূষণমুক্ত রাখবো। এক মিনিট শব্দদূষণমুক্ত থাকবে ঢাকা।
আরও পড়ুন: পরিবেশবান্ধব ইট উৎপাদনকারীদের প্রণোদনা দেবে সরকার: পরিবেশমন্ত্রী
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশমন্ত্রী আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে সকলে মিলেই দেশটাকে শব্দদূষণমুক্ত করতে হবে। এজন্য সকলকে সচেতন হতে হবে। এক্ষেত্রে স্কাউটস কাজ করতে পারে। স্মার্ট দেশে প্রয়োজনে স্মার্ট সরকার ও স্মার্ট নাগরিক। স্মার্ট নাগরিক তৈরি করতে স্কাউট অগ্রণী ভূমিকা রাখছে।’
জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নেছার আহমদ, প্রধান জাতীয় স্কাউটস কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক, মৌলভীবাজার জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মিছবাহুর রহমান, পুলিশ সুপার মনজুর রহমান এবং মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র ফজলুর রহমান প্রমুখ।
আরও পড়ুন: জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে পরিপূর্ণ ডেটাবেইস প্রস্তুতে কাজ করছে সরকার: পরিবেশ সচিব
৩ বছরে ২৪৩২২ একর দখল করা বনভূমি পুনরুদ্ধার করেছে সরকার: পরিবেশমন্ত্রী
৭৮৪ দিন আগে
শব্দদূষণ রোধ না করলে মানুষের শ্রবণ সমস্যা বৃদ্ধি পাবে: উপমন্ত্রী
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার বলেছেন, শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে প্রায় শতভাগ মানুষের শ্রবণে সমস্যা হবে।
মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) শব্দদূষণ রোধকল্পে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ সচিবালয়ের সামনের রাস্তায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় আয়োজিত বিশেষ কর্মসূচি চলাকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপমন্ত্রী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ড্রাইভারগণ অপ্রয়োজনে অতিরিক্ত শব্দ সৃষ্টির মাধ্যমে নিজেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অন্যদেরও ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এখনো সময় আছে সবাইকে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
আরও পড়ুন: ইরানের উপমন্ত্রী ও শাহরিয়ার আলমের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা
তিনি আরও বলেন, সবাই একযোগে কাজ করতে পারলে আমরা শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ বলেন, শব্দদূষণের কারণে যে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা অনেকে জানে না। ড্রাইভারদের সচেতন করতে পারলে তারা শব্দ সৃষ্টি করা থেকে বিরত থাকবে।
তিনি আরও বলেন, এক গবেষণায় দেখা গেছে, শব্দদূষণের কারণে দুই শতাংশ কর্ম ঘণ্টা নষ্ট হয়, মানুষের স্বাস্থ্যহানি ঘটে, প্রতিবন্ধী সন্তানের জন্ম হয়, নবজাতকদের বিকাশে বাধাগ্রস্ত হওয়াসহ অনেক ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়। নিজেদের টিকে থাকার জন্য, পরিবেশের মান উন্নয়নের জন্য শব্দ দূষণ রোধ করতেই হবে।
কর্মসূচি চলাকালে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ডক্টর ফারহিনা আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন, অতিরিক্ত সচিব (পদূনি) মো. মিজানূর রহমান, অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) ফাহমিদা খানম, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডক্টর আবদুল হামিদ সহ মন্ত্রণালয় ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ প্ল্যাকার্ড নিয়ে সচিবালয়ের গেটে অবস্থান গ্রহণ করেন।
এ সময় তারা ড্রাইভারদের অপ্রয়োজনীয় শব্দ সৃষ্টি না করতে অনুরোধ করেন এবং বিভিন্ন গাড়িতে শব্দদূষণ রোধে সচেতনতা মূলক স্টিকার বিতরণ করেন।
আরও পড়ুন: পার্বত্য চট্টগ্রামে শিক্ষক সংকট নিরসনে উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার: শিক্ষা উপমন্ত্রী
সরকারের পদক্ষেপের কারণেই সারাদেশে নদীভাঙন কমে এসেছে: পানিসম্পদ উপমন্ত্রী
৮০১ দিন আগে
দেশকে শব্দদূষণমুক্ত করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেছেন, শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সমাজের সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। শব্দদূষণের ক্ষতিকর দিক বিবেচনায় এটি নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণে সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞবদ্ধ। এজন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধি, বিধিমালা যুগোপযোগীকরণ ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অহেতুক বেশি ও উচ্চশব্দের শব্দযন্ত্র ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
এছাড়া অযথা হর্ন বাজানো, হাইড্রোলিক হর্ন পরিহার করতে গাড়িচালকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, পরিবহন মালিক ও ব্যবহারকারীরা এটি নিশ্চিত করতে পারেন।
আরও পড়ুন: তামাক চাষ বন্ধে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে মন্ত্রণালয়: পরিবেশমন্ত্রী
বুধবার খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে সমন্বিত ও অংশীদারীত্বমূলক প্রকল্পের অধীনে আয়োজিত সচেতনতামূলক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন মন্ত্রী।
পরিবেশমন্ত্রী এসময় ইমাম ও পুরোহিত সহ সকল ধর্মীয় নেতাকে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে এ বিষয়ে বক্তব্য রাখার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকেরা জনগণকে সচেতন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকবল সংকট আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বিষয়ে সকলের সহযোগিতা চাই। হাইড্রোলিক হর্নের উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিআরটিএ ও পুলিশ বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এছাড়া যানবাহনের ফিটনেস সনদ প্রদানের সময় হাইড্রোলিক হর্ন ও অধিক মাত্রার হর্ন ব্যবহারকারী যানবাহনকে অনুমতি প্রদান না করার জন্য তিনি অনুরোধ করেন।
পরিবেশমন্ত্রী এসময় হাইড্রোলিক হর্ন ও শব্দদূষণের বিরুদ্ধে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার জন্য মাঠ প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, অধিক পরিমাণে সবুজ বৃক্ষ থাকলে শব্দদূষণ কমে আসে তাই আমাদের অধিক পরিমাণে গাছ লাগাতে হবে। প্রতিবেশী দেশগুলোতে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে থাকলে আমরা কেনো পারবো না। আগামী প্রজন্মের জন্য শব্দদূষণ মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সকলের সহযোগিতা চাই। মানুষের সুস্থতার স্বার্থেই আমাদেরকে শব্দদূষণ রোধে সবাইকে কাজ করতে হবে।
খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন পরিবেশ, বন ও পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ।
পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবদুল হামিদ, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার সরদার রকিবুল ইসলাম, খুলনা রেঞ্জ পুলিশের এর অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক মো. ইকবাল, খুলনার জেলার জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন এবং খুলনা মেডিকেল কলেজের নাক, কান ও গলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ডা. মো. কামরুজ্জামান প্রমুখ বক্তব্য দেন।
কর্মশালায় বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি দপ্তরের প্রতিনিধিরা শব্দদূষণ রোধে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
এছাড়াও, কর্মশালায় উপস্থিত সকলকে শব্দদূষণ হতে রক্ষা পেতে ইয়ারপ্লাগ ও এর বিষয়ে সচেতন করতে স্টিকার প্রদান করা হয়।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশকে দূষণমুক্ত করতে সম্ভাব্য সবকিছু করা হবে: পরিবেশমন্ত্রী
পরিবেশ সংরক্ষণে টিলাকাটা ও পুকুর ভরাট বন্ধ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
৯৯৬ দিন আগে