������������-���������������������
সাইবার নিরাপত্তা বিল-২০২৩ সংসদে পাস
চারটি ধারায় অপরাধকে জামিন অযোগ্য রেখে সংসদে বুধবার পাস করা হয়েছে সাইবার সিকিউরিটি বিল-২০২৩।
এটি বহুল আলোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রতিস্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে। যেখানে ১৪টি ধারার অধীনে অপরাধ জামিন অযোগ্য ছিল।
বিল অনুযায়ী, পুলিশ পরিদর্শক পদমর্যাদার কর্মকর্তারা কোনো পরোয়ানা ছাড়াই কাউকে তল্লাশি ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তবে মিথ্যা মামলা হলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য করে শাস্তিরও বিধান রাখা হয়েছে।
আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বিলটি উত্থাপন করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।
চারটি অ-জামিনযোগ্য অপরাধ হলো- কম্পিউটারের প্রধান তথ্য পরিকাঠামোতে অনুপ্রবেশ, কম্পিউটার সিস্টেমের ক্ষতি, সাইবার সন্ত্রাসী কার্যকলাপ এবং হ্যাকিং সম্পর্কিত অপরাধের সঙ্গে সম্পর্কিত।
আইনে চারটি ধারার অপরাধ জামিন অযোগ্য রাখা হয়েছে।
ধারা-১৭ তে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অবকাঠামো ও অন্যান্য ক্ষেত্রে অনুপ্রবেশ সংক্রান্ত অপরাধের বিধান,ধারা-১৯ -এ রয়েছে কম্পিউটার ও কম্পিউটার সিস্টেমের ক্ষতি সাধনের বিষয়টি, ধারা-২৭ এ রয়েছে সাইবার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও এ ধরনের অপরাধ সংঘটনের বিষয়টি এবং ধারা-৩৩ এ রয়েছে হ্যাকিং সম্পর্কিত অপরাধের বিষয়।
আরও পড়ুন: সংসদে বাণিজ্য সংগঠন (সংশোধন) বিল, ২০২৩ উত্থাপন
ইতোমধ্যে দায়েরকৃত মামলাগুলো বিদ্যমান আইন- ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে চলবে কারণ প্রস্তাবিত আইনে একটি বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩-এর খসড়ায় ১৭ থেকে ৩৩ ধারায় অপরাধ এবং শাস্তির বিধান উল্লেখ করা হয়েছে।
বিলের বিভিন্ন ধারার সমালোচনা করে বিরোধী দলের সদস্যরা বলেন, সংবিধানেই চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং স্বাধীন গণমাধ্যমের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
তবে এই বিলের বিভিন্ন ধারায় সংবিধান স্বীকৃত এসব অধিকার খর্ব করার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।
বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার ও তল্লাশির বিধান সংশোধনের দাবি জানান একাধিক সদস্য।
এসব সমালোচনার জবাবে প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা সংবিধানে স্বীকৃত, তবে তা সীমাহীন নয়।
তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা মানে অন্যের অধিকার লঙ্ঘন করা নয়। আপনার স্বাধীনতা মানে আপনি যা চান তা বলা নয়। এটি অন্যদের অসম্মান করার বিষয়ে নয়।’
তিনি বলেন, বিরোধী দলের সদস্যরা আইনের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে একমত।
‘স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও নিরাপদ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে সাইবার নিরাপত্তা আইনের কোনো বিকল্প নেই।’
মিথ্যা মামলা ও অভিযোগ দায়েরের অপরাধ ও শাস্তি সংক্রান্ত বিলে একটি নতুন ধারা যুক্ত করা হয়েছে।
এই ধারায় বলা হয়েছে যে, যদি কোন ব্যক্তি মামলা বা অভিযোগ দায়েরের ন্যায়সঙ্গত বা বৈধ কারণ না জেনে অন্য ব্যক্তিকে আঘাত করার উদ্দেশ্যে এই আইনের কোন ধারার অধীন মামলা দায়ের করেন বা মামলা করেন বা অভিযোগ করেন তবে তা অপরাধ বলে গণ্য হবে।
এই অপরাধে মামলা বা অভিযোগ দায়েরকারী ব্যক্তি এবং অভিযোগ দায়েরকারী ব্যক্তি মূল অপরাধের জন্য নির্ধারিত দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
এই আইনের একাধিক ধারায় কোনো মামলা বা অভিযোগ দায়ের করা হলে, সংশ্লিষ্ট ধারায় উল্লিখিত অপরাধের মধ্যে প্রধান অপরাধের শাস্তির পরিমাণ, জরিমানার পরিমাণ হিসেবে নির্ধারণ করা যেতে পারে।
বিলে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তির লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ গ্রহণ করে মিথ্যা মামলা ও অভিযোগ দায়েরের অপরাধে মামলার বিচার করতে পারে।
বিলের ৪২ নং ধারায় পুলিশকে পরোয়ানা ছাড়াই তল্লাশি ও গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এই ধারায় সাব-ইন্সপেক্টর পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পরিবর্তে পরিদর্শক পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। পরোয়ানা ছাড়াই তল্লাশি ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা রয়েছে তাদের। এই ধারাটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেও ছিল।
বিলের ধারা-৮ ডিজিটাল মিডিয়া থেকে ডেটা অপসারণ এবং ব্লক করার ক্ষমতা প্রদান করে।
এই ধারায় বলা হয়েছে, ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে প্রকাশিত বা প্রচারিত কোনো তথ্য দেশের বা দেশের যেকোনো অংশের সংহতি, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, ধর্মীয় বা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে প্রভাবিত করতে পারে বলে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর যদি 'তথ্য বিশ্লেষণ সাপেক্ষে' বিশ্বাস করার কারণ থাকে। তাহলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো মহাপরিচালকের মাধ্যমে বিটিআরসিকে এই ধরনের ডেটা অপসারণ বা ব্লক করার জন্য অনুরোধ করতে পারে। যদি এটি মূল্যবোধ বা জনশৃঙ্খলাকে আঘাত করে, বা জাতিগত ঘৃণা ও ঘৃণার প্রচার করে।
গণফোরামের সংসদ সদস্য মুকাব্বির খান বলেন, এই আইন ভিন্নমত ও মুক্তচিন্তাকে দমনের অন্যতম কার্যকর হাতিয়ার।
গত সাড়ে চার বছরে সরকার বা ক্ষমতাসীন দলের সমালোচনা চাপা দিতেই এটি ব্যবহার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আইন ব্যবহার করে সাংবাদিকদের সবচেয়ে বেশি নির্যাতন করা হয়েছে।আরও পড়ুন: ভূমি উন্নয়ন কর বিল ২০২৩ সংসদে পাস
‘এই আইনের মাধ্যমে তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা মারাত্মকভাবে খর্ব করা হয়েছে। এই আইনটি পুলিশকে বাড়িঘরে প্রবেশ ও তল্লাশির ক্ষমতা দেয়। এটি সার্ভার সহ যেকোনো কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সবকিছু জব্দ করার সীমাহীন ক্ষমতা দিয়েছে। অন্য কোনো আইন পুলিশকে এত ক্ষমতা দেয়নি।’
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, আইনে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। কিন্তু সাংবাদিকরা বলেছেন, তারা সন্তুষ্ট নন।
‘সংবিধানে বাক স্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। সংবিধান হলো মৌলিক আইন। বাক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে যে কোনো আইন অসাংবিধানিক হবে।’
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সবার জন্য বিতর্কিত বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান। সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট এর একটি সংশোধনী ছাড়া আর কিছুই নয়।
‘এটি মুক্ত সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের ক্ষেত্রেও বাধা হয়ে দাঁড়াবে। ধারা -৪২ পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেয়। এই আইনে সাংবাদিকদের জন্য বিশেষ সুরক্ষা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, প্রেস কাউন্সিলের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের সুযোগ রয়েছে।
‘মতামত প্রকাশ একটি সাংবিধানিক অধিকার। এই আইন মত প্রকাশ ও চিন্তার স্বাধীনতায় বাধা সৃষ্টি করছে।’
তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ২৭ শতাংশ মামলা হয়েছে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে। বেশির ভাগ এলাকায় বাদী হচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা।
জাতীয় পার্টির আরেক সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, কিছু কারিগরি বিষয়ে এ আইন জরুরি। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন খুব কম ব্যবহার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: আন্তর্জাতিক সংকটের মধ্যেও খাদ্য নিরাপত্তা সুরক্ষিত: প্রধানমন্ত্রী
চেতনা ও অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে প্রধান মামলাগুলো করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, সংবিধান চিন্তা, সংবাদপত্র ও বাক স্বাধীনতা দিয়েছে।
‘তারা যেভাবে দাঁড়িয়েছে, এই আইনগুলো অসাংবিধানিক। এই আইনে অপরাধের সংজ্ঞা একই রাখা হয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে শাস্তি কমানো হয়েছে। এই আইন গণমাধ্যমের সেলফ সেন্সরশিপ বাড়াবে।’
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেছেন, তিনি ধারা-৪২ নিয়ে আপত্তি তুলেছেন এবং এর সঙ্গে সব অবৈধ ধারা অপসারণের প্রস্তাব করেছেন।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক বলেছেন, সাংবাদিকরা দেশের স্বার্থে লেখেন।
‘প্রেস কাউন্সিলকে তাদের বিষয়ে সম্পৃক্ত করার সুযোগ ছিল। অনুচ্ছেদ ৪২ ওয়ারেন্ট ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা দেয়। এই আইনের অপব্যবহারের আশঙ্কা রয়েছে।’
আরও পড়ুন: সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনের জামানত দ্বিগুণ করে সংসদে বিল পাস
সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনের জামানত দ্বিগুণ করে সংসদে বিল পাস
সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনে প্রার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় জামানত দ্বিগুণ করে জাতীয় সংসদ (সংরক্ষিত নারী আসন) নির্বাচন (সংশোধন) বিল -২০২৩ পাস হয়েছে।
বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জাতীয় সংসদে বিলটি উত্থাপন করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।
প্রস্তাবিত বিল অনুযায়ী সংরক্ষিত আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ইচ্ছুক প্রার্থীদের আগের ১০ হাজার টাকার পরিবর্তে ২০ হাজার টাকা জামানত রাখতে হবে।
খসড়া আইনে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনের সংখ্যা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০ করারও প্রস্তাব করা হয়েছে।
সংবিধানের ১৫তম সংশোধনী ইতোমধ্যে সংরক্ষিত আসন সংখ্যা ৫০ -এ উন্নীত করেছে। এখন এটি আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এ ছাড়াও, সংশোধনীতে একটি বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যদি কোনো কারণে জাতীয় সংসদে একটি সংরক্ষিত আসন খালি হয়ে যায় তবে ৯০ দিনের মধ্যে একটি উপনির্বাচন করতে হবে।
বর্তমানে সংরক্ষিত নারী আসনে উপনির্বাচন হয় আসন শূন্য হওয়ার ৪৫ দিনের মধ্যে।
বিলের ওপর আলোচনার সময় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক অভিযোগ করেন, সুশীল সমাজের সদস্য বলে দাবি করা কিছু লোক নিজেদের জনগণের অভিভাবক মনে করেন। তবে জনগণের সঙ্গে তাদের কতটা সম্পৃক্ততা রয়েছে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘তারা বিভিন্ন নির্দেশনা দেয়। তারা দেশের উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব বা পশ্চিম দিকে তাকায় না। তারা শুধু সুদূর পশ্চিম দিকে তাকায়। ওখান থেকে আসা কথাগুলো তারা এখানে প্রকাশ করার চেষ্টা করে।’
এর আগে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য রুস্তম আলা ফরাজী দেশের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন মতামত দেওয়ায় সুশীল সমাজের কঠোর সমালোচনা করেন।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক রুস্তম আলী ফরাজীর বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেছেন, বাংলাদেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম। কারা সংসদে প্রতিনিধিত্ব করবে তা নির্বাচনের মাধ্যমে এদেশের জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে।
আইনমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হলে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
আইনমন্ত্রী বলেন, গত সপ্তাহে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে দায়ের করা রিভিউ পিটিশনের ওপর শুনানি হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘হাইকোর্টের ছুটির পর আবার শুনানি হবে। এখন বিচারকদের পদত্যাগের কোনো বিধান নেই।’
জাতীয় পার্টির রুস্তম আলী ফরাজী বলেছেন, দেশে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দরকার।
‘তাই আমাদের প্রতিষ্ঠান আছে। আমরা টিএন সেশনের (ভারতের প্রাক্তন সিইসি) মতো একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন আশা করি।’
‘নির্বাচনের সময় সরকার নিয়মিত দায়িত্ব পালন করে। আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজ বারবার সংসদের অক্ষমতা ও সংসদের অকার্যকারিতা নিয়ে কথা বলছেন।’
আরও পড়ুন: ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জুন পর্যন্ত ১০ লাখ ৭৪ হাজার কর্মী বিদেশ গেছে: মন্ত্রী
তিনি বলেন, এমন হলে নির্বাচনের কোনো প্রয়োজন নেই।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভারতের নির্বাচন নিয়ে কেউ কখনো প্রশ্ন তোলেনি। ‘তাহলে আজকের বাংলাদেশ নিয়ে প্রশ্ন আসবে কেন? বাংলাদেশে নির্বাচন সঠিক পথেই চলছে। এটা ভালোভাবে হবে।’
তিনি বলেন, মানুষ ভোট কেন্দ্রে যাবে, নিরাপত্তা পাবে।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এটা চান। দেশের মানুষ এটা চায়। বিশ্বও তাই চায়। এর বাইরে কিছুই হবে না। সবারই এটা মেনে নেওয়া উচিত। কেউ নির্বাচনে না জিতলে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা যাবে না।’
গণফোরামের মোকাব্বির খান বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে মানুষের মধ্যে একটা অস্পষ্টতা, ভয় ও হতাশা রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অনেকেই গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। নির্বাচন কখন ও কীভাবে হবে সে বিষয়ে সরকার তাদের অবস্থান স্পষ্ট করছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচনে জনগণের মতামত সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয়নি। ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগের রাতে বেশিরভাগ জায়গায় ভোটগ্রহণ হয়েছিল। জনমত এখানেও প্রতিফলিত হয়নি।’
আরও পড়ুন: সরকার তার তিন মেয়াদে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া বাবদ ১.০৪ লাখ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে
বিলের আলোচনায় জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, সংরক্ষিত আসনে নির্বাচন নিয়ে মানসিক সমস্যা রয়েছে।
‘যারা নির্বাচিত হবেন তাদের কি কোনো নির্বাচনী এলাকা আছে? তারা এটা বোঝে না। তারা নিজেরাই এতে বিব্রত বোধ করেন।’
নির্বাচনে নারীদের বেশি মনোনয়ন দেওয়ার প্রস্তাব করেন তিনি।
মুজিবুল হক বলেন, দুর্নীতির অভিযোগে হাইকোর্টের তিন বিচারপতিকে অনেক দিন ধরে দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়া হয়েছে।
‘কিন্তু তারা বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। এই সমস্যাটি সমাধান করা দরকার।’
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য রওশন আরা মান্নান নারীদের আসন বাড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: ভূমি উন্নয়ন কর বিল ২০২৩ সংসদে পাস
আন্তর্জাতিক সংকটের মধ্যেও খাদ্য নিরাপত্তা সুরক্ষিত: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, চলমান আন্তর্জাতিক সংকটের মধ্যেও দেশের খাদ্য নিরাপত্তা বজায় রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সফলভাবে কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলা করেছে। বর্তমান আন্তর্জাতিক সংকটের মধ্যেও দেশে খাদ্য নিরাপত্তা বজায় রয়েছে।’
বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) জাতয়ি সংসদে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকারের (নওগাঁ-২) এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
এর আগে দিনের কার্যক্রমের শুরুতে প্রশ্নোত্তর পর্ব উপস্থাপন করেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এরই মধ্যে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। ‘সরকার আমাদের (খাদ্য) স্বয়ংসম্পূর্ণতা বজায় রাখার জন্য নিবিড়ভাবে কাজ করছে।’
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনে সংকট তৈরি হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, এই পরিস্থিতিতে সরকার এই সংকট মোকাবিলা করে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়মিত বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।
তিনি বলেন, কৃষি গবেষণা, সম্প্রসারণ, ক্রমাগত উপকরণ সহায়তা ও কৃষি খাতে নীতি সহায়তার জন্য বাংলাদেশ সফলভাবে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে।
আরও পড়ুন: দেশকে দুর্ভিক্ষমুক্ত রাখতে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
তিনি বলেন, খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন বিশ্ব মঞ্চে রোল মডেলে পরিণত হয়েছে।
তিনি বলেন, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে দেশের খাদ্যশস্য উৎপাদন ছিল ৩২৮.৯৬ লাখ টন, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরে বেড়ে ৪৭৭.৬৮ লাখ টন হয়েছে।
১৯৭১ সালের গণহত্যার স্বীকৃতির প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে: প্রধানমন্ত্রী
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন খানের (লক্ষ্মীপুর-১) অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক দেশ তাদের নিজ নিজ দেশে সংঘটিত গণহত্যাকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। পরে ২০১৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে আলোচনার মাধ্যমে ৯ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব গৃহীত হয়।
তিনি বলেন, যেহেতু ৯ ডিসেম্বরকে গণহত্যা প্রতিরোধের আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে, তাই একই ইস্যুতে আরেকটি আন্তর্জাতিক দিবস পালনের প্রস্তাব যৌক্তিক হবে না।
তিনি বলেন, তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও শহীদ পরিবারের কয়েকজন সদস্য ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সংসদ নেতা বলেন, গণহত্যা নিয়ে কাজ করা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানও গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়ে কাজ করছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে সংঘটিত ১৯৭১ সালের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বিশ্বের অন্যান্য গণহত্যার মতোই জটিল ও সময়সাপেক্ষ।
আরও পড়ুন: যেকোনো সংকট এড়াতে খাদ্য উৎপাদন বাড়ান: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
তবে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যাকে স্বীকৃতি দেওয়ার পক্ষে বিশ্ব জনমত তৈরি করে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া সহজ হবে। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
৮৫৪ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনের, ২০০৯ সাল থেকে ১১৩১টি সেতু নির্মিত: প্রধানমন্ত্রী
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদের (ঠাকুরগাঁও-৩) এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বর্তমান সরকার তিন মেয়াদে সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে ৪৩১টি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৮৫৪ কিলোমিটার মহাসড়ক চার-লেনে উন্নীত করা হয়েছে। এ ছাড়া একই সময় ১১ হাজার ৪৩৪ কিলোমিটার মহাসড়ক তৈরি করা হয়েছে এবং ১ হাজার ১৩১টি সেতু (১২৩,২৫৪ মিটার) নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি বলেন, চলতি অর্থ বছরে প্রায় ৫৭৪ কিলোমিটার মহাসড়ককে ৪-লেনে উন্নীতকরণ, ৪৬৩৪ কিলোমিটার মহাসড়ক উন্নয়ন এবং ১৩১টি প্রকল্পের অধীনে ৭৫০টি সেতু (৬৪,৮৪৪ মিটার) নির্মাণের কাজ চলছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত টানা তিন মেয়াদে সম্পন্ন হওয়া মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়ককে ৪-লেনে উন্নীতকরণ (দাউদকান্দি-চট্টগ্রাম সেকশন) প্রকল্প, জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, জয়দেবপুর-চন্দ্রা। টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা মহাসড়ক প্রকল্পের উভয় পাশে সার্ভিস লেন; ঢাকা-খুলনা (এন-৮) মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা-মাওয়া অংশ (ইকুরিয়া-বাবুবাজার সংযোগ সড়ক সহ)।
তিনি বলেন, সরকারের তিন মেয়াদে নির্মিত সেতুগুলোর মধ্যে রয়েছে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের পায়রা নদীর ওপর নির্মিত দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতু, মেঘনা সেতু, গোমতী সেতু, পায়রা সেতু (লেবুখালী সেতু) এবং আন্তঃসীমান্ত সড়ক নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্পের (বাংলাদেশ) আওতায় মধুমতি নদীর ওপর নির্মিত মধুমতি সেতু।
অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রস্তাবিত বিনিয়োগ বেড়েছে ২৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার:
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মো. মামুনুর রশীদ কিরনের (নোয়াখালী-৩) এক প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ এখন ২৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।
আরও পড়ুন: খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে ডিসিদের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
এ ছাড়াও, ৪১টি কোম্পানি বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করেছে এবং ৫০টি শিল্প বিভিন্ন অঞ্চলে নির্মাণাধীন রয়েছে বলে তিনি জানান। পাশাপাশি এই শিল্পগুলো ১৪ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য উৎপাদন করেছে এবং ২৯১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। একই সঙ্গে এই শিল্পগুলো ৫০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে।
ভূমি উন্নয়ন কর বিল ২০২৩ সংসদে পাস
জাতীয় সংসদে ভূমি-সম্পর্কিত করগুলোকে সহজ করার লক্ষ্যে ভূমি উন্নয়ন কর বিল ২০২৩ পাস করা হয়েছে।
রবিবার (১০ সেপ্টেম্বর) ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বিলটি উত্থাপন করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।
প্রস্তাবিত বিল অনুযায়ী- মোট কৃষি জমির পরিমাণ ৮ দশমিক ২৫ একর বা ২৫ বিঘা পর্যন্ত হলে কৃষি কাজের উপর নির্ভরশীল ব্যক্তি বা পরিবারের ভূমি উন্নয়ন কর প্রদানের প্রয়োজন হয় না।
আরও পড়ুন: সংসদে বাণিজ্য সংগঠন (সংশোধন) বিল, ২০২৩ উত্থাপন
তবে জমির পরিমাণ ২৫ বিঘার বেশি হলে সমগ্র কৃষি জমির ভূমি উন্নয়ন কর দিতে হবে। এটি ১৯৭৬ সালের ভূমি উন্নয়ন কর অধ্যাদেশ বাতিল করে।
তবে তিন পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানে এ আইন প্রযোজ্য হবে না।
এতে বলা হয়েছে, আখ ও লবণ চাষের জমি এবং কৃষকদের পুকুরও (বাণিজ্যিক মৎস্য চাষ বাদে) ছাড়ের আওতায় থাকবে।
এতে বলা হয়েছে, কৃষি জমির ক্ষেত্রে গ্রামীণ এলাকা বা পৌর এলাকা নির্বিশেষে সব ক্ষেত্রে অভিন্ন ভূমি উন্নয়ন করের হার ও শর্ত প্রযোজ্য হবে।
অকৃষি জমির উপর ভূমি উন্নয়ন করের হার নির্ধারণের জন্য দেশের সব জমিকে ভূমির গুণাগুণ ও ব্যবহার অনুযায়ী একাধিক শ্রেণিতে ভাগ করা যেতে পারে।
সরকার যেকোনো ব্যক্তি বা কোনো শ্রেণির ব্যক্তি বা সংস্থার উন্নয়ন কর মওকুফ করতে পারে। বিল অনুযায়ী ভূমি উন্নয়ন কর ইলেকট্রনিকভাবে আদায় করা যাবে।
সারাদেশে ইলেকট্রনিক ব্যবস্থা পুরোপুরি চালু না হওয়া পর্যন্ত এই ব্যবস্থা ছাড়াও যেকোনো ব্যাংকের মাধ্যমে ভূমি উন্নয়ন কর আদায় করা যাবে।
কোনো ব্যক্তি শহরে তিন বছর ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ না করলে প্রথম থেকে তৃতীয় বছর পর্যন্ত বার্ষিক ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ জরিমানা হবে।
সার্টিফিকেট ইস্যু করে তৃতীয় বছর শেষে বকেয়া ভূমি উন্নয়ন কর আদায় করা হবে।
বিলে বলা হয়েছে- ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা প্রতি বছর জুলাই মাসের মধ্যে এলাকা পরিদর্শন করবেন এবং ভূমি ব্যবহারের শর্ত বিবেচনা করে নির্ধারিত ফরমে সব মৌজার ভূমি উন্নয়ন কর নির্ধারণ করে সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর কাছে পাঠাবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) তা পরীক্ষা করে অনুমোদন করবেন।
এতে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী অফিসার, উত্তরাধিকারী, কালেক্টর ইত্যাদির সংজ্ঞা আধুনিকীকরণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: সংসদে ওষুধ ও কসমেটিকস বিল-২০২৩ কণ্ঠভোটে পাস
বিএসএমএমইউ ভিসি, প্রো-ভিসি ও কোষাধ্যক্ষের মেয়াদ ৪ বছর বাড়াতে সংসদে বিল উত্থাপন
সংসদে ওষুধ ও কসমেটিকস বিল-২০২৩ কণ্ঠভোটে পাস
বিভিন্ন অপরাধের জন্য ২০ হাজার টাকা থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রেখে সংসদে ‘ওষুধ ও কসমেটিকস বিল, ২০২৩’- পাস হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বিলটি উত্থাপন করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।
প্রস্তাবিত আইনে প্রসাধনী সামগ্রীকে এর এখতিয়ারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটি প্রাথমিকভাবে ওষুধের আমদানি, রপ্তানি, উৎপাদন ও বিক্রয় নিয়ন্ত্রণের জন্য তৈরি করা হয়েছে, যেখানে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে।
বিলে রেজিস্ট্রেশন ছাড়া ওষুধ তৈরি বা নকল ওষুধ তৈরির জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানার প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত আইনে অ্যান্টিবায়োটিক অপব্যবহারের বিরুদ্ধে একটি মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করার এবং এই জাতীয় ওষুধের অপব্যবহার রোধে নিবন্ধিত ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রির জন্য ২০ হাজার টাকা জরিমানা করার বিধানও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
বিদ্যমান আইনে এ ধরনের অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি তিন বছরের জেল এবং দুই লাখ টাকা জরিমানা।
নকল ও ভেজাল প্রসাধনী দেশের বাজারে সয়লাব হয়ে পড়ে জনস্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রসাধনী উৎপাদন, আমদানি, বিপণন ও বিক্রয়কে ওষুধ আইনের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
কসমেটিক পণ্য উৎপাদন, আমদানি, সংরক্ষণ এবং বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত সংস্থাগুলোকে সরকারের কাছ থেকে নতুন লাইসেন্স নিতে হবে।
আরও পড়ুন: বিএসএমএমইউ ভিসি, প্রো-ভিসি ও কোষাধ্যক্ষের মেয়াদ ৪ বছর বাড়াতে সংসদে বিল উত্থাপন
স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তর এবং ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর যে কোনো ওষুধের ক্ষেত্রে প্রসাধনী উৎপাদন, বিপণন, আমদানি ও বিক্রয় নিয়ন্ত্রণ করবে।
লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ আইনের অধীনে প্রণীত বিধিতে মনোনীত হবে।
বিলে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নকল ও ভেজাল ওষুধ ও প্রসাধনী উৎপাদন, বিক্রয় ও বিপণনসহ অন্তত ৩০টি অপরাধ সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।
প্রসাধনী আমদানি, উৎপাদন এবং বিপণন — ব্যক্তিগত যত্ন এবং ত্বকের যত্নের জন্য ব্যবহৃত রাসায়নিক যৌগের মিশ্রণ- এখন বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী, মাদক আইনে মামলা নিষ্পত্তির জন্য প্রতিটি জেলা শহরে আলাদা আদালত থাকবে।
বিলের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির সদস্য ফখরুল ইমাম ও শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, প্রসাধনী এবং একই ধরনের আইটেম ভিন্ন ভিন্ন পণ্য। কিন্তু ওষুধ প্রশাসনের অধীনে কেন দেওয়া হচ্ছে।
জাপা সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছে না।
তিনি বলেন, ‘২৩৬টি ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এসব বিষয়ে কিছুই করছে না। এরপরও কেন তাদের এই দায়িত্ব দেওয়া হবে তা পরিষ্কার নয়।’
গণফোরাম সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, এই বিলের সঙ্গে স্বার্থান্বেষী মহল জড়িত।
তিনি আরও বলেন, ‘এর মধ্যে কয়েকটি ধারা জনস্বার্থের পরিপন্থী হতে পারে। তাই কোনো পীর-দরবেশের স্বার্থে তাড়াহুড়ো করে বিল পাস করা ঠিক হবে না।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, প্রসাধনী ব্যবসায়ীদের ক্ষতি সরকারের উদ্দেশ্য নয়।
তিনি বলেন, ‘সরকারের উদ্দেশ্য হল জনগণের স্বাস্থ্য রক্ষা করা এবং ভেজাল ওষুধ ও প্রসাধনী প্রতিরোধ করা।’
আরও পড়ুন: সংসদে বাণিজ্য সংগঠন (সংশোধন) বিল, ২০২৩ উত্থাপন
মামলাজট কমাতে সংসদে অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব (সংশোধন) বিল পাস
সরকার তার তিন মেয়াদে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া বাবদ ১.০৪ লাখ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে
বর্তমান সরকারের তিন মেয়াদে ৮২টি ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার বা আইপিপি এবং ৩২টি রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ বা ভাড়া বাবদ মোট ১ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।
মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) সংসদে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এ তথ্য জানান।
আরও পড়ুন: সংসদে বাণিজ্য সংগঠন (সংশোধন) বিল, ২০২৩ উত্থাপন
বিরোধীদল গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খানের এক প্রশ্নের জবাবে নসরুল হামিদ বলেন, এরমধ্যে ৮২টি আইপিপি’র মধ্যে বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডকে সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা এবং ৩২টি রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে অ্যাগ্রেকো ইন্টারন্যাশনাল প্রজেক্টসকে সর্বোচ্চ ২৩৪১ কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী ৮২টি আইপিপি পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং ৩২টি রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টের নামের তালিকা এবং তাদের দেওয়া অর্থের একটি তালিকা দেন।
আরও পড়ুন: মামলাজট কমাতে সংসদে অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব (সংশোধন) বিল পাস
একতরফাভাবে আগামী নির্বাচন করতে আরপিও সংশোধন করেছে সরকার: গণতন্ত্র মঞ্চ
সংসদে বাণিজ্য সংগঠন (সংশোধন) বিল, ২০২৩ উত্থাপন
২০২২ সালের বিদ্যমান আইনে কিছু পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদে বাণিজ্য সংগঠন (সংশোধনী) বিল, ২০২৩ উত্থাপন করা হয়েছে।
শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির অনুপস্থিতিতে বিলটি জাতীয় সংসদে উত্থাপন করলে তা পরবর্তী পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট স্ক্রুটিনি কমিটিতে পাঠানো হয়।
আরও পড়ুন: মামলাজট কমাতে সংসদে অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব (সংশোধন) বিল পাস
কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী, নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হলে যে কোনো ব্যবসায়ী সংগঠনের বিদ্যমান কমিটি তার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর খসড়া আইন অনুযায়ী এক বছর কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবে।
তবে এখন বিদ্যমান আইন অনুযায়ী কমিটি মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ছয় মাস কার্যক্রম চালাতে পারবে।
আরও পড়ুন: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আনা সংশোধনে সাংবাদিকরা খুশি হবেন: আইনমন্ত্রী
একতরফাভাবে আগামী নির্বাচন করতে আরপিও সংশোধন করেছে সরকার: গণতন্ত্র মঞ্চ
স্পিকারের সঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূতের সৌজন্য সাক্ষাৎ
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে সোমবার (২৬ জুন) তার কার্যালয়েসৌজন্য সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি।
সাক্ষাৎকালে তারা স্পিকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশের সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সাম্প্রতিক জাপান সফর, বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার, বাংলাদেশে জাপানের বিনিয়োগ বৃদ্ধি, সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নয়ন ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
আরও পড়ুন: বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ
স্পিকার বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই জাপান বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু। ১৯৭৩ সালে জাপান সরকারের আমন্ত্রণে রাষ্ট্রীয় সফরে যান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের প্রতিনিধিদলের সাম্প্রতিক জাপান সফরটি ছিল খুবই ফলপ্রসূ।
জাপানের হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভসের স্পিকার ও হাউজ অব কাউন্সিলরসের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের মাধ্যমে পারস্পরিক সহযোগিতা, ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নের পাশাপাশি বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হয়েছে।
জাপানে সংসদের অধিবেশন পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বাংলাদেশ সংসদীয় প্রতিনিধিদলের অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ হয়েছে।
জাপানের ন্যাশনাল মিউজিয়াম ফর ইমার্জিং সাইন্স এন্ড ইনোভেশন এবং ওসাকাস্থ একুরিয়াম পরিদর্শন স্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে উল্লেখ করেন স্পিকার।
বাংলাদেশের সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সাম্প্রতিক জাপান সফর জাপানের জন্য অত্যন্ত গৌরবের উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি বলেন, বাংলাদেশ জাপানের অনেক পুরনো বন্ধু।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পর বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকারের নেতৃত্বে সংসদীয় প্রতিনিধিদলের জাপান সফর জাপান-বাংলাদেশ সম্পর্কের মাইলফলক।
জাপান বাংলাদেশের বিনিয়োগ সহযোগী। ভবিষ্যতে জাপান-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সফর বিনিময় দুদেশের সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করবে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে জাপানের বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং তথ্য-প্রযুক্তি, অবকাঠামো উন্নয়ন ইত্যাদি খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধিতে কাজ করার জন্য রাষ্ট্রদূতকে আহ্বান জানান স্পিকার।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের প্রশংসা জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের
স্পিকারের সঙ্গে সফররত জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলের সাক্ষাৎ
২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জুন পর্যন্ত ১০ লাখ ৭৪ হাজার কর্মী বিদেশ গেছে: মন্ত্রী
চলতি অর্থবছরের (২০২২-২০২৩) জুন পর্যন্ত মোট ১০ লাখ ৭৪ হাজার শ্রমিক কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশে গেছেন। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি।
সোমাবার প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ সংসদে ভোলা থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আলী আজমের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করতে আ.লীগকে ক্ষমতায় থাকতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
মন্ত্রী বলেন, গত অর্থবছরের একই সময়ে (২০২১-২২) মোট ৯ লাখ ৭ হাজার কর্মী বিদেশে গেছেন।
বগুড়া থেকে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাবিবর রহমানের এক প্রশ্নের জবাবে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী বলেন, জনশক্তি রপ্তানির জন্য নতুন দেশের সঙ্গে চুক্তি করার পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি বলেন, এ বিষয়ে লিবিয়া, মাল্টা, আলবেনিয়া, রোমানিয়া ও সার্বিয়ার সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের প্রক্রিয়া চলছে।
ভোলা-৪ আসনের আওয়ামী লীগের আরেক সংসদ সদস্য নুরন্নবী চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর থেকে অভিবাসনের কাজে ঋণ হিসেবে প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার প্রবাসী শ্রমিকের মাঝে ২ হাজার ৮১ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
ঢাকা থেকে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য একেএম রহমতুল্লাহর এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, আগে দেশে চায়ের অভ্যন্তরীণ চাহিদা উৎপাদনের তুলনায় কম ছিল এবং সে কারণেই বেশি চা রপ্তানি হতো।
আরও পড়ুন: নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ে সংসদে সমালোচনার মুখে বাণিজ্যমন্ত্রী
বর্তমানে দেশে চায়ের চাহিদা প্রায় ১০০ মিলিয়ন কেজি উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে উৎপাদিত সব চা অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে ব্যবহৃত হয় এবং রপ্তানির জন্য সামান্য উদ্বৃত্ত থাকে।
তিনি আরও বলেন, চা রপ্তানি বাড়াতে সরকারের পাশাপাশি চা বোর্ড মানসম্পন্ন চায়ের উৎপাদন বাড়াতে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে।
ফেনীর আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের ২১টি দেশের ২৩টি শহরে বাংলাদেশের বাণিজ্য মিশন রয়েছে।
সেগুলো হলো-
ক্যানবেরা, ব্রাসেলস, বেইজিং, কুনমিং, প্যারিস, বার্লিন, নয়াদিল্লি, কলকাতা, তেহরান, টোকিও, ইয়াঙ্গুন, কুয়ালালামপুর, মস্কো, সিউল, সিঙ্গাপুর, মাদ্রিদ, জেনেভা, দুবাই, লন্ডন, ওয়াশিংটন ডিসি ও লস অ্যাঞ্জেলেস।
তিনি আরও বলেন, অদূর ভবিষ্যতে ব্রাসিলিয়া, তুরস্ক, আঙ্কারা, মেক্সিকো, মেক্সিকো সিটি ও আফ্রিকায় বাণিজ্যিক শাখা স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডেও মিশন স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
আরও পড়ুন: সিলেটের উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ড. মোমেনের কৃতজ্ঞতা
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ে সংসদে সমালোচনার মুখে বাণিজ্যমন্ত্রী
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার অভিযোগে সংসদে বিরোধীদের তীব্র সমালোচনার মুখে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলের একজনকে মন্ত্রণালয় পরিচালনার দায়িত্ব দিলে পদত্যাগ করতে তার কোনো সমস্যা নেই।
সোমবার গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবিত কাট মোশন নিয়ে আলোচনা চলাকালে টিপু মুন্সীর বিরুদ্ধে প্রথম তোপ দাগেন।
নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় বাণিজ্যমন্ত্রীর সমালোচনাও করেছেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরাও।
এছাড়া বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বাজার সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত কি না, এমন প্রশ্নও তোলেন তারা।
আরও পড়ুন: ব্যবসা-বাণিজ্যে এশিয়া অঞ্চলে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের আহ্বান বাণিজ্যমন্ত্রীর
ছাটাই প্রস্তাবের আলোচনায় জাতীয় পার্টির রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেল কী করে?
তিনি বলেন, এত বড় মন্ত্রণালয়। মন্ত্রীর গতিশীলতা না থাকলে দাম বাড়বে। একজন মানুষ কাজ করলে আর সবাই ঘুমালে দেশ চলবে না। বাজারের সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ইচ্ছা করলে অবশ্যই সম্ভব। কিন্তু আপনি যদি মনে করেন ব্যবসাটা আমারই, তাহলে এটা দেশ ও জনগণের জন্য দুঃখজনক।
জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, গত কয়েক মাসে বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমলেও দেশে এর প্রভাব পড়ছে না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ শতাংশ, এখন মনে হয় ১০ শতাংশ এবং এটা ক্রমবর্ধমান। মূল্যস্ফীতি মানুষের আয় শুষে নিচ্ছে। মূল্যস্ফীতির কারণে সাবান, রুটি সবকিছুরই আকার ছোট হয়ে যাচ্ছে।
তিনি উল্লেখ করেন, সরকারি বাজেট আর গৃহস্থালির বাজেট করা এক জিনিস নয়।
তিনি বলেন, সরকারের বাজেট কমছে এবং এ কারণে চাল, ডাল, তেল, মুরগির মাংসের পিছও ছোট হচ্ছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি মুদ্রাস্ফীতির দুষ্ট চক্রে আটকা পড়েছে। এটি কাটিয়ে উঠতে সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, সিন্ডিকেট আছে। এই ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। সেই সিন্ডিকেট শক্তিশালীও। কিন্তু তারা কি সরকারের চেয়ে শক্তিশালী?
তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি না তারা সরকারের চেয়ে শক্তিশালী হতে পারে। সরকারের মধ্যে কোনো সিন্ডিকেট থাকলে তা চিহ্নিত করতে হবে।
তিনি বলেন, মন্ত্রীর বিশাল ব্যবসা রয়েছে।
তিনি বলেন, তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী। আমি বিশ্বাস করি যে যদি তাকে পদক্ষেপ নেওয়ার স্বাধীনতা দেওয়া হয়, তবে তিনি অবশ্যই এটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেছেন, বর্তমান সরকারের সবচেয়ে ব্যর্থ মন্ত্রণালয় হচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
তিনি বলেন বাজারে গেলে, আপনারা মানুষের মুখে শুনতে পাবেন যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এতটাই ব্যর্থ, মানুষ এটিকে সিন্ডিকেটবান্ধব মন্ত্রণালয় বলে অভিহিত করে।
পণ্যের দাম বাড়ানোর পেছনে ব্যবসায়ীদের একটি সিন্ডিকেট জড়িত থাকার অভিযোগ করে মোকাব্বির বলেন, অনেকেই বলেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী এতে জড়িত।
এসময় মোকাব্বির বাণিজ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন যে এত কিছুর পরেও আপনি পদত্যাগ করছেন না কেন?
মোকাব্বির বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রী যখন বলেন কোনো পণ্যের দাম কমবে, পরের দিন সেই পণ্যের দাম বাড়ে।
তিনি আরও বলেন, তিনি জানেন যে মন্ত্রীেএসব প্রশ্নের কোনো উত্তর দেবেন না।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য রওশন আরা মান্নান বলেন, বাজারে গেলে মানুষ বিরক্ত হয়।
তিনি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বাজার মনিটরিং করছে না। বাণিজ্যমন্ত্রী একজন মুক্তিযোদ্ধা। কেন তিনি বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না?
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, শিল্প প্রতিমন্ত্রী বলেছেন যে বাজারে গেলে মানুষ কাঁদে, আর তার একমাত্র কারণ সিন্ডিকেট।
তিনি আরও বলেন, মানুষ এটাও বোঝে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য শুধুমাত্র রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে দায়ী করা উচিত নয়। ডিমের বাজারে হাজার হাজার টাকা লুট করেছে সিন্ডিকেট। মুরগির ডিম ইউক্রেন থেকে আসে না।
আরও পড়ুন: অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য ও ট্রানজিট চুক্তির সুবিধা কাজে লাগাতে হবে: বাণিজ্যমন্ত্রী
তিনি বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন যে কিছু ব্যবসায়ী পণ্যের দাম বাড়ার সুযোগ নিচ্ছেন।
তিনি বলেন, আমাদের বাণিজ্যমন্ত্রী দাম বাড়ায় সিন্ডিকেটের লোকজনকে গ্রেপ্তার করতে পারেন না। কারণ তিনি নিজেও একজন ব্যবসায়ী। তিনি জানেন কোন ব্যবসায়ীরা এটা করছেন। তাহলে এই ব্যবসায়ীরা কি তার ঘনিষ্ঠ, যে কারণে সে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের ধরতে পারছে না?
তিনি কেন তা করতে পারছেন না বাণিজ্যমন্ত্রীকে প্রকাশ্যে বলার দাবি জানান তিনি।
পীর ফজলু বলেন, পেঁয়াজের বাজারে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে।
তিনি বলেন, কিছু কোম্পানি চিনির বাজারে দৈনিক ১৭ কোটি টাকা লুটপাট করছে। দেড় মাসে ব্রয়লার মুরগির বাজারে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী কিছুই করতে পারবেন না।
এসব আলোচনা-সমালোচনার জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, “পণ্যমূল্য বাড়ছে ‘বৈশ্বিক পরিস্থিতির’ প্রভাবে। আর দেশে যে ‘সিন্ডিকেটের’ কথা বলা হয়, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেয়া সম্ভব। তবে তাতে জটিলতাও আছে।”
তিনি বলেন, ‘বাজারে সিন্ডিকেটের কথা বলা হয়। এটা ঠিক যে বড় বড় গ্রুপগুলো একসঙ্গে অনেক বেশি ব্যবসা করে। আমাদের লক্ষ্য রাখা দরকার- আমরা জেলে ভরলাম, জরিমানা করলাম। সেটা হয়ত করা সম্ভব। কিন্তু তাতে হঠাৎ করে ক্রাইসিসটা (সংকট) তৈরি হবে, সেটা সইতে তো আমাদের কষ্ট হবে। এজন্য আমরা আলোচনার মাধ্যমে নিয়মের মধ্যে থেকে চেষ্টা করি।’
তিনি বলেন, আমি জানি না তাদের কত বছরের অভিজ্ঞতা আছে রাজনীতিতে। কিন্তু আমি ৫৬ বছর ধরে রাজনীতি করছি। আমি এখন ৪০ থেকে ৪২ বছর ধরে ব্যবসা করছি।
পদত্যাগের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রী বলেন, ‘এখানে একজন তো আমাকে পদত্যাগ করতে বললেন। খুব ভালো কথা বলছেন। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলব, উনি (মোকাব্বির) দায়িত্ব নিলে আমাকে ছেড়ে দিয়ে ওনারে দায়িত্বটা দিতে পারেন। কোনো সমস্যা নেই আমার।’
দাম বেড়েছে উল্লেখ করে টিপু বলেন, প্রধানমন্ত্রী বারবার বলছেন মানুষ কষ্ট পাচ্ছে।
তিনি উল্লেখ করেন, অভ্যন্তরীণ কারণ নয়, বৈশ্বিক পরিস্থিতি দেশকে প্রভাবিত করেছে। আমাদের এটা মনে রাখতে হবে।
পেঁয়াজের দাম প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, দাম বেড়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। পেঁয়াজের কথা বলা হয়েছে। আমরা কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করেছি এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে কৃষকদের এমন একটি মূল্য দেওয়া উচিত যা তাদের বৃদ্ধিতে উৎসাহিত করে।
তিনি উল্লেখ করেন, দেশে প্রতি বছর ৬ থেকে ৭ লাখ টন পেঁয়াজের ঘাটতি রয়েছে। দাম ভালো হলে কৃষকরা উৎপাদনে মনোযোগ দেবে। এই ধাপে আমাদের ঘাটতি অর্ধেক কমে যায়। কিন্তু এটা ঠিক ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি হওয়া উচিত নয়। সেজন্য আমরা আমদানির ব্যবস্থা করেছি।
তিনি বলেন, স্থানীয় কৃষকদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সরকার পেঁয়াজ আমদানি করতে চায় না।
কিন্তু আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমদানি করেছি। আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ এখন প্রতি কেজি ৪০/৪৫ টাকা। আজ আমাদের দেশি পেঁয়াজের দাম ৬৫ টাকা। আমার মনে হয় আরও কমানো উচিত। আমরা চেষ্টা করছি ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ৫০ টাকা কেজির মধ্যে চলে আসবে।
সব কিছু বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ঠিক করে না মন্তব্য করে টিপু মুনশি বলেন, ‘তারপরও দায় আমি নিয়ে বলছি, আমরা সর্বৈবভাবে চেষ্টা করছি কী করা যায়।’
চিনির দাম বাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, দাম ১০০ টাকার মধ্যে নামিয়ে আনতে শুল্ক কাঠামো কমানোর জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন।
আরও পড়ুন: দেশে প্রথমবারের মতো ৮ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে দেওয়া হবে ‘জাতীয় চা পুরস্কার’: বাণিজ্যমন্ত্রী