জেলার মতলব দক্ষিণ উপজেলায় ধনাগোদা নদীর ওপর নির্মিত মতলব দক্ষিণ ও মতলব উত্তর উপজেলার সংযোগ সেতু হিসেবে পরিচিত বিশাল ‘মতলব সেতু’র মাঝখানের জয়েন্টে ভয়াবহ ফাটল দেখা দিয়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দা এবং সেতুটি নিয়মিত ব্যবহারকারী যানবাহনের চালকদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
গত ২১ নভেম্বর সারা দেশে ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পের প্রচণ্ড ঝাঁকুনিতে ক্ষতি এড়াতে পারেনি স্থানীয় যোগাযোগব্যবস্থায় অতি গুরুত্বপূর্ণ মতলব সেতু। ভূমিকম্পের পর সেতুটির মাঝখানের জয়েন্টে ফাটল লক্ষ করে স্থানীয়রা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সেতুর মাঝখানে জয়েন্টে বড় ফাঁকা। সেতুর কোথাও উঠে গেছে কংক্রিট, বেরিয়ে পড়েছে রড। প্রতি দিন ছোটবড় হাজার হাজার যানবাহন চলছে এই ভগ্নদশাগ্রস্ত সেতুর ওপর দিয়ে। ভারী যানবাহন চলাচলের সময় সেতুটি কাঁপতে থাকে। সেতু পারাপারের সময় যানবাহনের চালকসহ যাত্রীদের চোখেমুখেও আতঙ্ক লক্ষ্য করা যায়। তাদের সঙ্গে কথা হলেও উৎকণ্ঠার বিষয়টি নিশ্চিত করেন তারা।
এ ছাড়া দুই পাশের সড়ক দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে সেতুর নিচের মাটি-বালু সরে গিয়ে বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। গর্ত তো নয়, যেন মরণফাঁদ। অতি দ্রুত সংস্কারের ব্যবস্থা না নিলে যেকোনো সময় যে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
স্থানীয় বাসিন্দা মজিবুর রহমান বলেন, ২১ নভেম্বরের ভূমিকম্পে সেতুর মাঝ দিয়ে ফাটল দেখা যাচ্ছে। ভূমিকম্পের আগে এরকম ছিল না। সেতু পরিদর্শন করে শিগগিরই যথাযথ ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষের নিকট আহ্বান জানান তিনি।
কামরুল হাসান ও গোলাম নবী বলেন, প্রতি দিন ঝুঁকি নিয়েই জরুরি পরিষেবার গাড়ি, শিক্ষার্থী, রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সসহ শত-সহস্র সাধারণ মানুষ দিনরাত সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করছে। তাই সেতুর দুপাশের অ্যাপ্রোচ সড়কে সৃষ্ট গর্ত এবং মাঝখানে সৃষ্ট ফাটল সংস্কার করতে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
সেতুর অবস্থা ‘অত্যন্ত ভয়ঙ্কর’ আখ্যা দেন কলেজ শিক্ষক মো. জয়নাল আবেদিন। স্কুলশিক্ষার্থী নুসরাত জাহান বলেন, ‘প্রতি দিন আমি এই সেতু দিয়ে আসা-যাওয়া করি। কোনো ভারী গাড়ি পারাপার করার সময় এটি কাঁপতে থাকে। তখন মনে হয়, এই বুঝি ভেঙে পড়ল।’
শুধু স্থানীয় নয়, আন্তঃজেলা ও ঢাকাকেন্দ্রিক যোগাযোগের জন্যও মতলব সেতুটি গুরুত্বপূর্ণ। চাঁদপুরসহ আশপাশের জেলা—নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুরের বিপুলসংখ্যক মানুষ ঢাকায় যাতায়াতের জন্য ২৪ ঘণ্টা এই সেতুটি ব্যবহার করে থাকে। প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন এই সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করে।
চাঁদপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগের সুত্র জানায়, মতলব উত্তর ও দক্ষিণের সরাসরি যোগাযোগ, চাঁদপুর থেকে ঢাকার দূরত্ব কমানো এবং যানজট নিরসনের লক্ষ্যে ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে প্রায় ৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ধনাগোদা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। চাঁদপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগকে এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেতুটি নির্মাণে ৮৪ কোটি টাকার মধ্যে মূল সেতু নির্মাণে ৫৬ কোটি টাকা এবং জমি অধিগ্রহণ বাবদ ব্যয় হয় ২৮ কোটি টাকা। পরবর্তীতে আরও ৮ কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়ে মোট ৯২ কোটি টাকায় ধনাগোদা নদীর ওপর মতলব দক্ষিণ উপজেলা সদরের উত্তর-পূর্ব পাশে বিশাল এ সেতুটি নির্মাণ করে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ।
সেতুটিতে ১০ দশমিক ২৫ মিটার প্রস্থের ৭টি স্প্যান রয়েছে এবং দু-পাশের অ্যাপ্রোচ সড়ক ১.৮৬ কিলোমিটার দীর্ঘ। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে কাজ শুরু হয়ে নির্মাণ ও অ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ ২০১৮ সালের জুন মাসে সম্পন্ন হয় এবং সেতুটি জনসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
‘নিরাপদ সড়ক চাই’ মতলব দক্ষিণ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম বাবু বলেন, ‘মতলব সেতুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চাঁদপুরসহ আশপাশের কয়েকটি জেলার মানুষ এই সেতুটি ব্যবহার করছে। সেতুর দুপাশের রাস্তারও বর্তমানে বেহাল দশা। সেতুর মাঝখানের জয়েন্টে ফাটল দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগকে দ্রুত সংস্কার করার জন্য জোরালো দাবি জানাচ্ছি।’
সেতুর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মতলব দক্ষিণ উপজেলা প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন ইউএনবিকে বলেন, ‘অতি দ্রুত সেতুটির সংস্কার করা হবে।’
এ বিষয়ে চাঁদপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহম্মদ আলিউল হোসেন বলেন, ‘সেতুটির বর্তমান অবস্থা পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণে প্রকৌশলী পাঠানো হবে।’