ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইউক্রেনের প্রতিনিধি দলের বৈঠক ফলপ্রসু হয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তবে যুদ্ধের অবসানে একটি চূড়ান্ত চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য আরও অনেক কাজ বাকি রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
ফ্লোরিডার হ্যাল্যারেন্ড বিচের শেল বে ক্লাবে স্থানীয় সময় রবিবার (৩০ নভেম্বর) ৪ ঘণ্টাব্যাপী চলে ওই আলোচনা।
বৈঠক শেষে রুবিও বলেন, আমরা আজকে যে আলোচনা করেছি, তা শুধু যুদ্ধ বন্ধের জন্য নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদে ইউক্রেনকে কীভাবে সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়া যায় তাও ছিল এই বৈঠকের আলোচ্য।… আমি মনে করি, এর ওপর ভিত্তি করেই আজকে আমরা (আলোচনা) শুরু করেছি, কিন্তু আরও অনেক কাজ বাকি রয়েছে।’
রুবিও ছাড়াও বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার এই বৈঠকে ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেন।
এদিকে, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের মস্কোয় পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা রয়েছে।
অন্যদিকে, সম্প্রতি দুর্নীতির অভিযোগের নিজ দেশে কিছুটা কোণঠাঁসা হয়ে পড়া ইউক্রেন সরকারকে নিয়ে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেছেন, ‘দুর্নীতি কেলেঙ্কারি নিয়ে ইউক্রেন সরকার কিছুটা সমস্যায় রয়েছে। তা সত্ত্বেও, চুক্তিতে পৌঁছানোর ভালো সম্ভাবনা রয়েছে।’
সম্প্রতি জ্বালানি খাতে ঠিকাদারদের কাছ থেকে ঘুষ হিসেবে ১০ কোটি ডলার আত্মসাৎ করার অভিযোগ আনা হয়েছে জেলেনস্কি সরকারের বিরুদ্ধে। এর ফলে নিজ দেশেই চাপের মধ্যে রয়েছে ক্ষমতাসীন নেতারা।
এরই মধ্যে ওয়াশিংটন ও মস্কোর মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে তৈরিকৃত যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত পরিকল্পনার পুনঃনিরীক্ষা করেছেন কিয়েভের কুটনীতিকরা। প্রস্তাবিত প্রাথমিক ওই পরিকল্পনায় রাশিয়ার স্বার্থকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে এর সমালোচনা করেন তারা। তবে, রবিবার বৈঠক শুরুর সময় রুবিও ইউক্রেনকে ওই প্রস্তাব পুনর্মূল্যায়নের ব্যাপারে আশ্বস্ত করেন।
বৈঠকে রুবিও আরও বলেন, আমাদের লক্ষ্য শুধু শান্তি নয়, বরং যুদ্ধের এমন একটি অবসান নিশ্চিত করা যা ইউক্রেনকে ‘সার্বভৌম, স্বাধীন ও প্রকৃত সমৃদ্ধির পথে’ নিয়ে যাবে।
ইউক্রেনের নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান রুস্তেম উমেরভ যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টার জন্য রুবিওর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উদ্দেশেও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। অথচ, এর আগে তিনিই দাবি করেছিলেন যে যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার জন্য ইউক্রেন কৃতজ্ঞ নয়।
বৈঠক শুরুর আগে উমেরভ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আমাদের কথা শুনছে, তারা আমাদের সমর্থন দিচ্ছে এবং আমাদের পাশে থেকে কাজ করছে।’ তবে আলোচনায় কোনো অগ্রগতি হয়েছে কি না, বৈঠকের পর সে ব্যাপারে তিনি কিছু বলেননি।
রুবিও জানান, যুদ্ধ শেষ করার চুক্তি ছাড়াও আলোচনায় আরও অন্যান্য বিষয় উঠে আসে। ট্রাম্প বারবার বলেছেন, ইউক্রেন যদি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরও গভীর বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তোলে, তবে তা ভবিষ্যতে রুশ আগ্রাসন ঠেকাতে সহায়তা করবে। এ লক্ষ্যে এই বসন্তে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যার মাধ্যমে ইউক্রেনের বিশাল খনিজ সম্পদে প্রবেশাধিকার পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ট্রাম্পের খসড়া শান্তি প্রস্তাবে ‘ইউক্রেন উন্নয়ন তহবিল’ তৈরির কথা রয়েছে। এই তহবিল থেকে প্রযুক্তি, ডেটা সেন্টার, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ (এআই) দ্রুত বর্ধনশীল শিল্পে বিনিয়োগ করা হবে। প্রস্তাবে ইউক্রেনের প্রাকৃতিক গ্যাসের পাইপলাইন ও মজুতসহ এর জন্য অবকাঠামো পুনঃনির্মাণ, উন্নয়ন, আধুনিকায়ন ও পরিচালনায় যৌথভাবে কাজ করার কথাও বলা হয়েছে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই ইউক্রেনের জ্বালানি স্থাপনাগুলোতে হামলা চালিয়ে আসছে রাশিয়া।