মেক্সিকোর পশ্চিমাঞ্চলের জালিস্কো রাজ্যের একটি খামারে মাদকচক্রের সদস্য নিয়োগসহ হত্যা ও গুম করার সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে ১০ ব্যক্তিকে ১৪১ বছর ৩ মাস করে কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির একটি আদালত।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৮ জুলাই) এ রায় ঘোষণা করে আদালত। তার আগের দিন (সোমবার) তিন ব্যক্তিকে গুম ও হত্যার অভিযোগে ওই ১০ জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
আসামিদের প্রত্যেককে ১৪১ বছর ৩ মাস করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারেগুলোকে ১৩ লাখ পেসো (প্রায় ৬৫ হাজার ডলার) ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রসিকিউটরেরর কার্যালয়।
চলতি বছরের শুরুর দিকে ‘ইসাগুইর’ নামক ওই প্রতিষ্ঠানটির খোঁজ মেলে, যেখানে ২০২১ সাল থেকে সদস্য সংগ্রহ ও প্রশিক্ষণ চালিয়ে আসছিল জালিস্কো নিউ জেনারেশন কার্টেল (সিজেএনজি)। এ ঘটনায় পুরো অঞ্চলে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ওই স্থানে প্রথম অভিযান চালিয়ে ওই ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। শুরুতে সেটি যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য সদস্য সংগ্রহ ও তাদের প্রশিক্ষণকেন্দ্র, তা অজানা ছিল। তবে গ্রেপ্তারদের জেরা ও আরও তদন্তের পর বেরিয়ে আসে থলের বেড়াল।
আরও পড়ুন: পোষা সিংহ দেওয়াল টপকে রাস্তায়, পাকিস্তানে আহত ৩
এ ঘটনায় আরও পাঁচ আসামির বিচার এখনও শেষ হয়নি। তাদের মধ্যে রয়েছেন তিন পৌর পুলিশ কর্মকর্তা এবং একজন সিজেএনজি সদস্য যিনি নতুন সদস্য সংগ্রহ করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছেন তেউচিতলান শহরের মেয়র হোসে মুরগিয়া সান্তিয়াগো। তার প্রসাশনিক অঞ্চলেই ওই প্রতিষ্ঠানটি অবস্থিত।
মেক্সিকোর অ্যাটর্নি জেনারেল আলেহান্দ্রো গের্তস মানেরোর এক ঘোষণার কয়েক দিনের মাথায় মুরগিয়া সান্তিয়াগোকে গ্রেপ্তার করা হয়। গের্তস মানেরো জানান, ২০২১ সাল থেকেই তেউচিতলান কর্তৃপক্ষকে খামারটির বিষয়ে সতর্ক করেছিল জালিস্কো রাজ্যের মানবাধিকার কমিশন। তবে সেই সতর্কতা দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষা করা হয়।
এ ঘটনা নিয়ে দেশজুড়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়। এরই মধ্যে চলতি বছরের ৫ মার্চ ওই প্রতিষ্ঠানে প্রচুর মানুষের পোড়া হাড়, পোশাক ও জুতার খোঁজ পাওয়ার তথ্য জানায় গেরেরোস বুসকাদোরেস দে জালিস্কো। এই দলটি নিখোঁজ ব্যক্তিদের খোঁজ করে থাকে। তাদের দেওয়া তথ্য জানাজানি হলে বিতর্ক তুঙ্গে ওঠে।
এ ঘটনা মেক্সিকোর ভয়াবহ সহিংসতা, মাদকচক্রের দাপট এবং দেশটির ১ লাখ ৩০ হাজারের বেশি নিখোঁজ ব্যক্তির অনুসন্ধানে চলমান দুর্দশার চিত্রকে আরও একবার সামনে নিয়ে আসে।
আরও পড়ুন: জাপানি দ্বীপপুঞ্জে দুই সপ্তাহে ৯ শতাধিক ভূমিকম্প
ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর জানা যায়, প্রথম দফার অভিযানের পর খামারের তদন্ত কয়েক মাস স্থগিত রেখেছিলেন রাজ্য প্রসিকিউটররা। পরে জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর হস্তক্ষেপে ওই ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই অভিযানে খামার থেকে একটি লাশ এবং পরবর্তীতে দুজনকে উদ্ধার করা হয়।
এরপর রাজ্য কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ও অবহেলার কারণে মামলার দায়িত্ব নেয় কেন্দ্রীয় অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তর। তবে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া সমালোচনা থামেনি।
চলতি বছরের ওই জায়গাটিতে কোনো সমাধি স্থাপনা নেই বলে দাবি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল গের্তস মানেরো। তার এই বক্তব্যের পর আরও ক্ষোভ ছড়ায়। গেরেরোস বুসকাদোরেস দে জালিস্কো জানায়, তারা ওই খামার থেকে অন্তত ১৭টি মানুষের পোড়া হাড়ের অংশ উদ্ধার করেছে, যেগুলো এখন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের হেফাজতে রয়েছে।