ভারতের সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের জেলাগুলোর পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। সম্প্রতি এসব এলাকায় বিএসএফের গুলিবর্ষণ ও বাংলাদেশিদের পুশ-ইন করার ঘটনা বেড়েছে। শনিবার মধ্যরাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে দুজন আহত হন। পরে আজ (রবিবার) ভোরে মেহেরপুরের মুজিবনগর সীমান্ত দিয়ে নারী-শিশুসহ ১৯ জনকে বাংলাদেশে পুশ-ইন করা হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গুলিবিদ্ধ ২
শনিবার (২৪ মে) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার খাদলা সীমান্তের শ্যামনগর এলাকার বিপরীত পাশে বিএসএফের গুলিতে দুই বাংলাদেশি আহত হয়েছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ৬০ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিয়াউর রহমান।
গুলিবিদ্ধ দুজন হলেন— কসবার শ্যামপুর এলাকার শের আলীর ছেলে মো. রবিউল ইসলাম (২৮) এবং মো. আজাদ হোসেন (২৬)। তারা বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে তারা শঙ্কামুক্ত বলে জানা গেছে।
স্থানীয় ও বিজিবি সূত্র জানায়, রাত দেড়টার দিকে অন্তত ছয়জন ব্যক্তি সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের ভেতরে প্রায় দেড়শ গজ পর্যন্ত ঢুকে পড়েন। এ সময় বিএসএফ তাদের লক্ষ্য করে ছররা গুলি ছোড়ে। এতে রবিউল ও আজাদ আহত হন। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
আরও পড়ুন: সিলেট সীমান্তে ২২ জনকে পুশ ইন করল বিএসএফ
স্থানীয়রা জানান, ঈদকে সামনে রেখে সীমান্ত দিয়ে গরু, মসলা, প্রসাধনী ও পটকা বাজি পাচারে সক্রিয় হয়ে উঠেছে চোরাকারবারিরা। সীমান্ত চোরাচালান এখন নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিজিবি কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান বলেন, সীমান্তে গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনার বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে।
মেহেরপুরে ১৯ জনকে পুশ-ইন
রবিবার (২৫ মে) ভোরে মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার সোনাপুর মাঝপাড়া সীমান্ত দিয়ে নারী-শিশুসহ ১৯ জনকে বাংলাদেশে পুশ-ইন করে বিএসএফ। সীমান্ত পার হয়ে তারা কেদারগঞ্জ বাজারের বিআরটিসি কাউন্টারের সামনে অবস্থান করছিলেন।
খবর পেয়ে মুজিবনগর থানা পুলিশ তাদের আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরে মুজিবনগর বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা সেখানে যান।
মুজিবনগর থানা পুলিশ জানায়, আটক হওয়া ১৯ জনের মধ্যে ৯ জন শিশু, ৫ জন নারী ও ৫ জন পুরুষ রয়েছেন। তারা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক এবং জীবিকার সন্ধানে অবৈধভাবে ভারতে গিয়েছিলেন।
আটকদের মধ্যে রয়েছেন— কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার কাঠগিরি গ্রামের আব্দুল জলিলের মেয়ে মোমেনা খাতুন ও তার তিন ছেলে মোজাম্মেল হক (২৩), মোস্তাক আহমেদ (১৯) ও কাবিল (১১); কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর জয়মঙ্গল গ্রামের জালালউদ্দিনের ছেলে মইনুল ইসলাম, তার স্ত্রী কাঞ্চন বেগম, ছেলে কারণ (১৪), রবিউল (৭) ও মেয়ে মরিয়ম (৪); লালমনিরহাট সদর উপজেলার চুঙ্গগাড়া গ্রামের মৃত গণেশ চন্দ্র পালের ছেলে নিতাই চন্দ্র পাল, তার স্ত্রী গীতা রানী পাল, মেয়ে পার্বতী পাল (১৫), পূজা রানী পাল (৭) ও আরতী পাল (৩) এবং কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার কুঠিচন্দ্রখানা গ্রামের খলিলের ছেলে আমিনুল ইসলাম, তার স্ত্রী পারুল এবং তাদের দুই মেয়ে আমেনা (৪) ও আরফিনা (১১ মাস)।
আরও পড়ুন: সীমান্তে ভারতের ‘পুশ ইন‘ সুপরিকল্পিত ও ন্যাক্কারজনক: বিজিবি ডিজি
আটকদের বরাতে পুলিশ জানায়, তারা ভারতের হরিয়ানা রাজ্যে কাজ করতেন। সেখান থেকে ৬–৭ দিন আগে ভারতের বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের আটক করে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর জেলে পাঠানো হয়। পরে রবিবার ভোরে বিএসএফ তাদের বাংলাদেশে পুশ-ইন করে।
মুজিবনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, তারা সীমান্ত পার হয়ে কেদারগঞ্জ বাজারে বিআরটিসি কাউন্টারে অবস্থান করেছিলেন। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে তাদের আটক করে থানা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইউএনবির ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও মেহেরপুর প্রতিনিধির পাঠানো তথ্য থেকে প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়েছে।