বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যাতে ভারতে বসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিষোদগার করার সুযোগ না দেওয়া হয়, দেশটির কাছে সেই অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রধান উপদেষ্টার উচ্চপ্রতিনিধি খলিলুর রহমান।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন। গেল ৩ থেকে ৪ এপ্রিল থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে বিমসটেকের ষষ্ঠ শীর্ষ সম্মেলনের উল্লেখযোগ্য বৈঠক ও সফলতা নিয়ে কথা বলতে এই সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। এ সময়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপ-প্রেসসচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর উপস্থিত ছিলেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠকের সময় শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়েছেন। জবাবে তারা কী বলেছেন, জানতে চাইলে খলিলুর রহমান বলেন, ‘বালাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যার্পণের বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি। বলেছি যে প্রত্যার্পণ সাপেক্ষে তিনি (হাসিনা) দেশ ও সরকারের বিরুদ্ধে যে বিষোদগার করেছেন, সেটার সুযোগ যাতে ভারত সরকার তাকে না দেয়।’
শেখ হাসিনাকে প্রত্যার্পণের বিষয়ে মোদির জবাব কী ছিল, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা অনুরোধ করেছি। এ বিষয়ে দুপক্ষ কাজ করবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী স্পষ্টভাবে বলেছেন যে বাংলাদেশের সাথে যে সম্পর্ক সেটা কোনো ব্যক্তি বা দলের সঙ্গে না, এটা রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে। আমরাও তা মনে করি। সেই ভিত্তিতে আমরা দুটি রাষ্ট্রের সম্পর্ক এগিয়ে নেব।’
গেল ৪ এপ্রিল ব্যাংককের সাংরিলা হোটেলে ষষ্ঠ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন শেষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক হয়েছে প্রধানমন্ত্রী উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের।
সংখ্যালঘুদের দাবিয়ে রাখা ক্ষতিকর
সংখ্যালঘুদের দাবিয়ে রাখার চেষ্টা একটি দেশের জন্য ক্ষতিকারক বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার এই উচ্চপ্রতিনিধি। তিনি বলেন, একপক্ষকে আরেকটি পক্ষের বিরুদ্ধে লাগিয়ে দেওয়া ব্রিটিশদের কাজ।
যখনই ভারতের সঙ্গে আলাপ হয়, তখন বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসেন তারা। কিন্তু মোদির সঙ্গে বৈঠকে ভারতের সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়টি তুলছেন কিনা; প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সংখ্যালঘুর প্রশ্নটি ব্রিটিশ আমল থেকেই আছে। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, ব্রিটিশরা চলে গেছেন, কিন্তু সমস্যাটা আমাদের দেশে রয়ে গেছে। এক সম্প্রদায়কে আরেক সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে লাগিয়ে দেওয়া ব্রিটিশদের কাজ। আমরা দুপক্ষই ভুক্তভোগী। আমাদের কোনো লাভ নেই, আমাদের বুঝতে হবে।’
‘কোনো দেশের সংখ্যালঘুদের দাবিয়ে রাখার মানে হচ্ছে, একটি জনগোষ্ঠী মূলস্রোতে আসতে পারছেন না। এটা ক্ষতি। যে দেশে এটা ঘটছে, সেটা তাদের ক্ষতি,’ যোগ করেন তিনি।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নানা রকমের ঘটনা ঘটেছে বলে স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমরা স্বীকার করছি, ৫ আগস্টের পর পাঁচ-সাতদিন সরকার ছিল না। সে সময়ে নানা ঘটনা ঘটেছে। যে দলের পতন ঘটেছে, তাদের হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সবার ওপর নানা রকম হামলা হয়েছে। যেটা খুব দুঃখজনক। কারণ আইন হাতে নিয়ে নেওয়া উচিত না।’
তবে এখন সবাই বুঝতে পেরেছেন, সেই আগের অবস্থা নেই। সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ওই স্কেলে তো ঘটেনি। তবুও আমরা বলবো, আমরা কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অভাব দেখতে চাই না। সরকার সবকিছু করতে পারবে না। আমাদের সামাজিক দায়িত্ববোধেরও একটা বিষয় আছে। আমাদের সবাইকে মিলেই কাজটি করতে হবে। আপনি বলছেন, ভারতে হচ্ছে, ভারতে হচ্ছে বলে আমাদের দেশেও হবে নাকি? আমরা তো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটা উদহারণ বলে নিজেদেরকে অভিহিত করি। সেই কাজটা আমাদের চালিয়ে যেতে হবে।
গঙ্গা পানি চুক্তি নবায়নে আলোচনা
গঙ্গার পানি চুক্তি ২০২৬ সালে শেষ হচ্ছে। সেটা নবায়নে কী উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যাতে করে আলোচনাগুলো মসৃণভাবে শুরু হয়, সে জন্য আমরা দুপক্ষই যোগাযোগ রাখছি। আমাদের ধারণা, ভারতের কাছ থেকে আমরা এ বিষয়ে ভালো সহযোগিতা পাবো। তিস্তার বিষয়ে তাদের জানিয়েছি। আমাদের দেশের ১৪ শতাংশ তিস্তা অববাহিকায় বসবাস করেন।’
আরও পড়ুন: আরাকানের যুদ্ধাবস্থা নিরসন করেই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন: খলিলুর রহমান
‘তাদের জীবন-জীবিকা, ভবিষ্যত, ওই অঞ্চলের ইকোলজি সবকিছু নির্ভর করছে পানির সহজলভ্যতার ওপর। পানি নেই, পুরো জায়গাটিই নেই।’
খলিলুর রহমান বলেন, ‘এই তিস্তা অববাহিকায় ন্যূনতম পরিমাণ পানি নিশ্চিত করা বাংলাদেশ সরকারের একটি বিশাল অগ্রাধিকার। ১৪ শতাংশ লোককে একেবারে এ ধরনের পরিস্থিতিতে ঠেলে দিতে পারেন না। সে জন্য আমরা সবার সাথে কথা বলেছি। ভারতকে বলেছি, চুক্তিটি করেন। পাশাপাশি, অন্য বিকল্পগুলোও হাতে রাখতে হবে।’
স্মৃতিকথায় থাকবে অজিত দোভালের সঙ্গে কথোপকথন
৩ এপ্রিল রাতে বিমসটেকের অফিশিয়াল নৈশভোজে ছিলেন আপনারা। সেখানে আপনাকে দেখেছি, ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে মগ্ন হয়ে কথা বলতে। সেখানে আপনাদের মধ্যে কী কথা হয়েছে, প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘অজিত দোভালের সঙ্গে যেদিন কথা বলি, তার দুদিন আগে আমেরিকান ডেপুটি ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার অ্যালেক্স এন ওয়ংয়ের সঙ্গে আমার আলাপ হয়। তিনি ফোন করেছিলেন।’
‘সেখানে বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে কথা হয়েছে। অ্যালেক্স এন কিন্তু চাকরিতে আছেন। কেউ কেউ বলছেন তার চাকরি গেছে। কিন্তু তিনি চাকরিতে আছেন, তিনি ডেপুটি ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার এবং তিনি হোয়াইট হাউসে বসেন।’
প্রধান উপদেষ্টার উচ্চপ্রতিনিধি বলেন, ‘দোভালের সঙ্গে অনেকক্ষণ ধরে আলাপ হয়েছে। ঘড়ি ধরে তো আলাপ করিনি। আমরা আলাপে মগ্নই ছিলাম। আমি সব জানাব, আমার স্মৃতিকথায়।’