জাপানের উত্তরাঞ্চলে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। এতে অন্তত ২৩ জন আহত হয়েছেন। পাশাপাশি প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলীয় এলাকায় সুনামির সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় সময় সোমবার (৮ ডিসেম্বর) রাত সোয়া ১১টার দিকে এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ভূমিকম্পটি হাচিনোহের উত্তর-পূর্বে প্রায় ৮০ কিলোমিটার (৫০ মাইল) দূরে এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩০ মাইল) গভীরে আঘাত হানে।
এরপর সম্ভাব্য আফটারশক ও বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকির বিষয়ে সতর্কতা জারি করে স্থানীয় আবহাওয়া অফিস।
ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল জাপানের প্রধান দ্বীপ হোনশুর উত্তরে আওমোরির উপকূল থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে প্রশান্ত মহাসাগরে। তবে, জাপান সরকার এখনো সুনামি ও ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করছে বিধায় চূড়ান্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো জানা যায়নি।
জাপানের আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, ভূমিকম্পের পর আওমোরির ঠিক দক্ষিণে ইওয়ার কুজি বন্দরে ৭০ সেন্টিমিটার (২ ফুট ৪ ইঞ্চি) পর্যন্ত উচ্চতার সুনামি রেকর্ড করা হয়েছে। এ ছাড়া এই অঞ্চলের অন্যান্য উপকূলীয় এলাকায় ৫০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত উচ্চতার সুনামি আঘাত হেনেছে।
ফায়ার অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি জানিয়েছে, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৩ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে, যার মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর।
এনএইচকে’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আহতদের বেশিরভাগই ধসে পড়া বস্তুর আঘাতে আহত হয়েছেন। হাচিনোহের একটি হোটেলে বেশ কয়েকজন আহত হন এবং তোহকুতে গাড়ি খাদে পড়ে এক ব্যক্তি আঘাত পেয়েছেন।
জাপানের চিফ ক্যাবিনেট সেক্রেটারি মিনোরু কিহারা ওই অঞ্চলের বাসিন্দাদের সতর্কতা না ওঠা পর্যন্ত উঁচু স্থান বা নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি জানান, ভূমিকম্পের ফলে প্রায় ৮০০ বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং এই অঞ্চলের কিছু অংশে শিনকানসেন বুলেট ট্রেন ও লোকাল রেললাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
আওমোরি হাচিনোহে শহরের দোকান মালিক নোবুও ইয়ামাদা সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম এনএইচকে’কে বলেন, ‘আমি এত বড় কম্পন আগে কখনো অনুভব করিনি। সৌভাগ্য যে আমাদের এলাকায় এখনো বিদ্যুৎ সংযোগ সচল রয়েছে।’
ওই অঞ্চলের পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা পরীক্ষা চালানো হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন কিহারা।
পারমাণবিক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আওমোরির রোক্কাশো জ্বালানি পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ প্ল্যান্টের জ্বালানি শীতলীকরণ এলাকা থেকে প্রায় ৪৫০ লিটার পানি উপচে পড়েছে। তবে পানির স্তর স্বাভাবিক সীমার মধ্যেই রয়েছে এবং কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী শিনজিরো কোইজুমি জানান, হাচিনোহে বিমান ঘাঁটিতে প্রায় ৪৮০ জন বাসিন্দা আশ্রয় নিয়েছেন এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের জন্য ১৮টি প্রতিরক্ষা হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয়েছে।
এনএইচকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ভূমিকম্পের কারণে হোক্কাইডোর নিউ চিটোস বিমানবন্দরে প্রায় ২০০ যাত্রী সারা রাত আটকা পড়েছিলেন।
এদিকে, আগামী কয়েকদিনে সম্ভাব্য আফটারশকের ব্যাপারে সতর্কতা জারি করেছে দেশটির আবহাওয়া সংস্থা। তারা জানিয়েছে, টোকিওর পূর্বে চিবা থেকে হোক্কাইডো পর্যন্ত জাপানের উত্তর-পূর্ব উপকূলজুড়ে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প এবং সম্ভাব্য সুনামির ঝুঁকি কিছুটা বেড়েছে।
সংস্থাটি এই এলাকার ১৮২টি পৌরসভার বাসিন্দাদের আগামী সপ্তাহে তাদের জরুরি প্রস্তুতি পর্যবেক্ষণের আহ্বান জানিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি সাংবাদিকদের জানান, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দ্রুত নিরূপণের জন্য সরকার একটি জরুরি টাস্ক ফোর্স গঠন করেছে। তিনি বলেন, আমরা মানুষের জীবনকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি এবং আমাদের পক্ষে যা সম্ভব সবই করছি।
তিনি ওই অঞ্চলের বাসিন্দাদের স্থানীয় পৌরসভাগুলোর সর্বশেষ তথ্যের দিকে নজর রাখার আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, ‘দয়া করে প্রস্তুত থাকুন যাতে কম্পন অনুভব করার সাথে সাথেই আপনারা নিরাপদ স্থানে সরে যেতে পারেন।’
আবহাওয়া অফিসের ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরি বিভাগের কর্মকর্তা সাতোশি হারাদা বলেন, ‘আপনাদের এমন একটি দুর্যোগ আবারও ঘটতে পারে ধরে নিয়েই প্রস্তুতি নিতে হবে।’
তবে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকাল ৬টা ২০ মিনিটে কর্তৃপক্ষ উত্তর জাপানের প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলের জন্য জারি করা সব সুনামি সতর্কতা তুলে নেয় বলে খবরে বলা হয়েছে।