নরসিংদীতে কৃষকদের জমির মাটি কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আলোকবালী ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব আব্দুল কাইয়ুম মিয়ার নেতৃত্বাধীন একটি চক্রের বিরুদ্ধে।
আব্দুল কাইয়ুম ১৮ থেকে ২০টি চুম্বক ড্রেজার দিয়ে গত তিন মাস যাবত অবৈধভাবে আলোকবালীর গৌরীপুরা চরের কৃষি জমি থেকে অবাধে বালু উত্তোলন করছেন। যার ফলে ১৩৯ কৃষকের কয়েকশত একর কৃষি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
বুধবার (১৯ মার্চ) ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কাছে থেকে একটি অভিযোগ পত্র পেয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ হোসেন চৌধুরী।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, আলোকবালী ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব আব্দুল কাইয়ুম মিয়া ১৮ থেকে ২০টি চুম্বক ড্রেজার দিয়ে তিনমাস ধরে অবৈধভাবে কৃষি জমি থেকে অবাধে বালু উত্তোলন করছেন। ইতোমধ্যে ১৩৯ জন কৃষকের প্রায় কয়েকশত একর কৃষিজমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বালু উত্তোলন বন্ধে দফায় দফায় প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে অভিযুক্তদের জরিমানা করলেও বন্ধ হয়নি বালু উত্তোলন। উল্টো অবৈধ বালু উত্তোলনের গতি আরও বেড়েছে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, কাইয়ুম মিয়ার বিরুদ্ধে চারটি হত্যা মামলা ও একাধিক অস্ত্র মামলাও রয়েছে। তার অন্যায়ের প্রতিবাদ করলেই কৃষকদের ভয় দেখানো হয়।
এমনকি, গত ৯ মার্চ ফসলি জমি রক্ষার দাবিতে আয়োজিত নরসিংদী প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধনে অংশ নেওয়ার পথে আসা কৃষকদের ওপর দেশীয় অস্ত্র ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে হামলা চালানো হয়। এতে চারজন কৃষক আহত হয়েছেন।
কৃষকদের অভিযোগ, অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে জমি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, জীবিকা হুমকির মুখে পড়ছে ও পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তরা দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
ভুক্তভোগী কৃষক দুদুল মিয়া বলেন, ‘আমার ২৫৪ শতাংশ জমি কেটে নিয়ে গেছে কাইয়ুম। জমিতে ধান চাষ করতাম, আমাদের চরের দুই পাশে নদী হওয়ায় প্রতিবছর জমির পরিমাণ বৃদ্দি পায়। ফলে, প্রতিটি কৃষকের জমিই বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এসব জমি অবৈধ চুম্বক ড্রেজার ব্যবহার করে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে বিএনপি নেতা কাইয়ুম।’
‘এমকি প্রতিবাদ করলেই হামলা ও নির্যাতনের শিকার হতে হয় আমাদের।’
আরও পড়ুন: নারায়ণগঞ্জে মাদক কারবারিদের দুই পক্ষের সংঘর্ষে যুবক নিহত
আরেক ভুক্তভোগী কৃষক ইলিয়াস মিয়া বলেন, ‘কাইয়ুমের প্রভাবে আমরা অসহায়। জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দিয়েছি। তারা কাইয়ুমকে জরিমানাও করেছে, কিন্তু কাইয়ুম আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।’
কাইয়ুমের বক্তব্য জানতে একাধিকবার তাকে ফোন করলেও রিসিভ করেননি।
নরসিংদী জেলা কৃষকদলের সদস্য সচিব দীপক কুমার বর্মণ প্রিন্স বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কঠোর নির্দেশ, ‘কৃষক বাঁচলেই, দেশ বাঁচবে।’
‘কৃষকদের পাশে থাকতে কৃষক দল সারা দেশে কৃষক সমাবেশ আয়োজন করছে। যারা কৃষকদের ক্ষতি করবেন, তাদের বিপক্ষে আমাদের অবস্থান থাকবে। দলের নেতাদের প্রতি সুপারিশ করব তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। আব্দুল কাইয়ুমের বিরুদ্ধে এর আগেও অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এবারও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’