টানা তিন মাসের অবরোধের পর গত ২০ মে থেকে গাজায় পুনরায় ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দেয় ইসরায়েল। তবে এই মানবিক সহায়তা ফিলিস্তিনিদের জন্য আরেক মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। মে মাসের শেষ থেকে এ পর্যন্ত ত্রাণ নিতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৭৯৮ জন।
সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর থেকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সমর্থনে পরিচালিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) ও অন্যান্য ত্রাণ কেন্দ্র থেকে খাবার আনতে গিয়ে এসব প্রাণহানি ঘটেছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
স্থানীয় সময় শুক্রবার (১১ জুলাই) জেনেভায় এক ব্রিফিংকালে এই প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরেন জাতিসংঘের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি।
এর আগে, জাতিসংঘের তত্ত্বাবধায়নে গাজায় ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা হতো। পরে জাতিসংঘের সহায়তা ব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে জিএইচএফের প্রস্তাব আনে ইসরায়েল। তবে এই সংস্থাটি কার্যক্রম শুরু করার পর থেকেই মানবিক সহায়তায় নিরপেক্ষতা লঙ্ঘনের অভিযোগে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কড়া সমালোচনার মুখে পড়ে। এমনকি সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধে সহযোগিতার অভিযোগও তোলা হয় সংস্থাটির বিরুদ্ধে।
শুক্রবার রাভিনা শামদাসানি বলেন, ‘৭ জুলাই পর্যন্ত আমরা মোট ৭৯৮টি হত্যাকাণ্ড নথিভুক্ত করেছি, যার মধ্যে ৬১৫টি ঘটেছে জিএইচএফের আশপাশে এবং বাকি ১৮৩টি ঘটেছে ত্রাণকেন্দ্রে যাওয়ার পথে।’
ইসরায়েলের অভিযোগ, জাতিসংঘ পরিচালিত সহায়তা ব্যবস্থার মাধ্যমে হামাস ত্রাণের অপব্যবহার করছে। অন্যদিকে জাতিসংঘের দাবি, এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই।
জিএইচএফ বর্তমানে চারটি খাদ্য বিতরণকেন্দ্র পরিচালনা করছে, যেখানে মার্কিন ভাড়াটে সৈন্যরা নিরাপত্তা রক্ষায় নিয়োজিত। অথচ জাতিসংঘ পরিচালিত আগের ব্যবস্থায় ৪০০টি বেসামরিক বিতরণকেন্দ্র ছিল।
এদিকে, জাতিসংঘের পরিসংখ্যানকে ‘মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর’ দাবি করে জিএইচএফের এক মুখপাত্র বলেন, ‘তাদের সহায়তাকেন্দ্রে কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। বরং সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলাগুলো হয়েছে জাতিসংঘের ত্রাণকেন্দ্রের ওপর।’
আরও পড়ুন: খাবার নিতে আসা শিশুদের ওপর ইসরায়েলের ‘অমার্জনীয়’ হামলা
জিএইচএফ আরও দাবি করেছে, তাদের পরিচালিত কোনো স্থানে কেউ আহত হয়নি। বরং দক্ষিণ ও মধ্য গাজার চারটি সহায়তাকেন্দ্রে পৌঁছাতে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালানোর জন্য তারা ইসরায়েলি সেনাদের দোষারোপ করেছে।