নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ডিএনডি এলাকায় কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা এখন জটিল আকার ধারণ করেছে। এই অসহনীয় দুর্ভোগ ও ভোগান্তি থেকে রক্ষা না পেয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির ওপর এলাকাবাসীদের মনে দেখা দিয়েছে চরম ক্ষোভ।
ডিএনডির জলাবদ্ধতার স্থায়ী নিরসনে প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প চলমান রয়েছে। এ প্রকল্পে আদৌ কি সমাধান হবে বা হলেও কতদিনে? - এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন বাসিন্দারা।
অনেকের মতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নজরদারির অভাবেই ভোগান্তিতে পড়েছেন ডিএনডিবাসীরা।
স্থানীয়রা বলেন, ‘আমরা এখন পানির মধ্যে কারাবাসে আছি! মানুষ অপরাধ করলে কারাগারে বন্দি থাকে, কিন্তু আমাদের কি অপরাধ? কী কারণে আমাদের প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে এভাবে কারাগারে থাকতে হয়! জানি না সরকার আমাদের এই কারাবাস থেকে কবে মুক্তি দেবে! আমরা মুক্তি চাই আমাদের এমপি (সংসদ সদস্য) মহোদয়ের কাছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে।’
আরও পড়ুন: ভারী বৃষ্টি: জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করছে ডিএনসিসির কুইক রেসপন্স টিম
ডিএনডি এলাকার বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট ডুবে থাকায় পয়ঃনিষ্কাশনের পানি জলাবদ্ধতার পানির সঙ্গে মিশে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে।
যে কারণে ঠাণ্ডা, জ্বর, ডায়রিয়া, চর্মরোগ, আমাশয়সহ পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ছে।
শিমরাইলে অবস্থিত পাম্প হাউজের পুরোনো চারটি পাম্পের মধ্যে তিনটি পাম্প দিয়ে পানি নিষ্কাশন করা হচ্ছে। এর একটি পাম্প দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট থাকলেও মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেই।
ডিএনডি প্রকল্পের এক কর্মকর্তা বলেন, ডিএনডি প্রকল্পের আওতাধীন ডিএনডির নিজস্ব জায়গায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ৩০-৪০টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যা উচ্ছেদ করার ক্ষেত্রে ব্যাপক আইনি জটিলতা রয়েছে। পাশাপাশি তিতাস, ডিপিডিসিসহ (ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড) বিভিন্ন সরকারি সংস্থার ভূগর্ভস্থ পাইপলাইনগুলোও সরানো হয়নি। এতে আমরা অনেক স্থানেই অবকাঠামোর কাজ করতে পারছি না।
তিনি আরও বলেন, পানি নিষ্কাশনের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো- নিষ্কাশনের শাখা খালগুলো সংস্কার করার পর আবার ময়লা-আবর্জনা ফেলে ভরে ফেলা হয়েছে। অনেক স্থানে আমরা খাল পুনরুদ্ধার করেছি, নতুন খাল খনন করেছি। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই সেগুলো আবার ময়লা দিয়ে স্থানীয় লোকজন ভরে ফেলেন।
আরও পড়ুন: ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে বৃষ্টি হলেই দেখা দেয় জলাবদ্ধতা
অন্য একটি সূত্র থেকে জানা যায়, অর্থ সংকটের কারণে ধীরে এগোচ্ছে ডিএনডির এই মেগা প্রকল্পটি। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে এ প্রকল্প বাবদ ৩৫০ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ের কার্যক্রম পরিকল্পনা করা হলেও ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এতে প্রকল্পের কর্মপরিকল্পনা থাকলেও অর্থ সংকটে অধিকাংশ চলমান কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।
ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই এলাকার জলাবদ্ধতার সমাধান চেয়েছেন সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের কাছে।
গত রবিবার দুপুরে ডিএনডি বাঁধের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, ডিএনডি এলাকার জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে তাদের সমস্যা শুনে সেটি সমাধানের তড়িৎ উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানানো হয়।
এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ-৪(ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেন, আমি নিজেই বিষয়টি দেখতে ও প্রকল্পের দায়িত্বরতদের সঙ্গে রবিবার কথা বলে কীভাবে দ্রুত সমাধান করা যায় এবং মানুষের দুর্ভোগ কীভাবে লাঘব করা যায় সেটি করার ব্যবস্থা করব।
তিনি আরও বলেন, জনপ্রতিনিধিদের ও স্থানীয়দের সঙ্গে আলোচনা করে সেটি যেভাবে দরকার সেভাবেই করব। মানুষ কষ্ট-দুর্দশা দূর করাটাই এখানে মূল লক্ষ্য।
আরও পড়ুন: জলাবদ্ধতা নিরসনে সমন্বিত উন্নয়নে সহযোগিতার আশ্বাস নেদারল্যান্ডসের